বিষয়: নজরুলসঙ্গীত
শিরোনাম: দ্যাখো হিন্দুস্থান সায়েব মেমের
তৌবা, রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ। তাল: দাদরা
দ্যাখো হিন্দুস্থান সায়েব মেমের, রাজা আংরেজ হারেম-খোর।
ওদের পোশাকের চেয়ে অঙ্গই বেশি, হাঁটু দেখা যায় হাঁটিলে জোর
আর মেয়েরা ওদের মদ্দের সাথে রাজপথে করে গলাগলি,
আরে শুধু তাই নয়, নাচে গলা ধ’রে ব্যান্ড বাজায়ে ধলা-ধলী॥
কোরাস্: যাবে আরে তৌবা! আরে তৌবা!!
আরে যাবে কোথা মিঞা? চৌদিকে ঘিরে টিকি বেঁধে শিরে কাফের, হায়
খাই আমরা হারাম সুদ? আরে যাও, ওরো যে তেমনি ক্যাঁক্ড়া খায়!
দ্যাখো ষাঁড়-পোড়া খেলে হাড় মোটা হয়, সোজা কথাটি কি বুঝিলি ছাই!
আর খাসি নাহি ক’রে বোকা পাঁঠা ধরে কেটে খায়, করে নাকো জবাই!
কোরাস্ আরে তৌবা! আরে তৌবা!!
দ্যাখো মেয়েরা ওদের বোর্কা না দিয়ে রেল ও জাহাজে চড়িয়া যায়,
মোদের বোর্কা দেখিলে ছেলেরা ওদের জুজু বুড়ী ব’লে ভীর্মি খায়।
আরে ইজ্জৎ তবু থাকে তো মোদের, যক্ষ্মায় নয় মরে শতক,
ওরে উহাদের মত বেরুলে বিবিরা যদি কেউ দেখে হয় ‘আশক’!
কোরাস: আরে তৌবা! আরে তৌবা!!
আরে আমাদের মত দাড়ি কৈ ওদের? লাগিলে যুদ্ধ নাড়িবে কি?
আর উহাদের মত কাছা কোঁচা নাই, ধরিলে মোদের ফারিবে কি?
ছার অস্ত্র লইয়া কি হবে, আমরা বস্ত্র যা পরি থান থানিক,
তাতে তৌবা তৌবা করি যদি, যাবে কামানের গোলা আটকে ঠিক॥
কোরাস্: সোব্হান আল্লা! সোব্হান আল্লা!!
দ্যাখো তুর্কিরা বটে ছাঁটিয়া ফেলেছে তুর্কি নূর ও মাথার ফেজ,
আর ‘দ্বীন-ই-ইসলাম’ ছেড়ে দিয়ে শুধু তলোয়ারে তারা দিতেছে তেজ!
আরে বাপ দাদা ক’রে গিয়েছে লড়াই, আমরা খাম্কা, কেন লড়ি!
দেহে ইসলামী জোশ আনাগোনা করে ‘ছহি জঙনামা’ যবে পড়ি!!
কোরাস্: সোব্হান আল্লা! সোব্হান আল্লা!!
মোরা মসজিদে বসি’ নামাজ পড়ি যে, রক্ষা কি আছে বিধর্মীর
ওরা ‘কাফুরের মত যাইবে ফুরায়ে’ অভিশাপ যদি হানেন পীর!
দ্যাখো পায়জামা চেপে রেখেছি আজিও আমাদের এই পায়ের জোর,
আরে অক্কাই যদি পেতে হয় – দিব মক্কার পানে সরল দৌড়!!
কোরাস্: মাশা আল্লা! ইন্শা আল্লা!!
জানো, দুনিয়ায় মোরা যত পাব দুখ, বেহেশ্তে পাব ততই সুখ;
আর মেরে যদি হাত-চুলকুনি মেটে, নে বাবা, তোদেরি আশা মিটুক!
সবে পশ্চাৎ দিয়ে করিব জবাই, আসুন ‘মেহেদী’, থাম দুদিন!
বাবা, মুষল লইয়া কুশল পুছিতে আসিছে কাবুলি মুসলেমীন॥
কোরাস্: আল্লাহু আক্বর! আল্লাহু আক্বার!!
- রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু
জানা যায় না। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত
'চন্দ্রবিন্দু' সঙ্গীত-সংকলনে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩২ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ:
-
চন্দ্রবিন্দু
- প্রথম সংস্করণ [সেপ্টেম্বর ১৯৩১, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ।]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১।
চন্দ্রবিন্দু। কমিক গান। শিরোনাম: তৌবা। বেহাগ-খাম্বাজ-দাদরা। পৃষ্ঠা: ১৮৭-১৮৯]