বিষয়: নজরুলসঙ্গীত
শিরোনাম:
বসেছে শান্তি বৈঠকে বাঘ, সিংহ, হাঙ্গর, নেকড়ে
লীগ-অব-নেশন
[সিংহ-ইংরাজ॥ হস্তী - ভারতবর্ষ॥ বাঘ - ফ্রান্স॥
ভল্লুক - রুশিয়া॥ হাঙ্গর - ইটালি॥ নেকড়ে - অস্ট্রীয়া॥
শিবা – গ্রীস। হায়েনা - আমেরিকা॥ ঈগল – জার্মানী]
কোরাস্ :
বসেছে শান্তি বৈঠকে বাঘ, সিংহ, হাঙ্গর, নেকড়ে!
বৈষ্ণব গরু, ছাগ, মেষ এসে হরিবোল বলে দেখ্ রে॥
শিবা, সারমেয়, খটাস, শকুনি – দু’নয়ন লবণাক্ত,
কেঁদে কয়, ‘দাদা, নামাবলী নেবো, আর রবো না কো শাক্ত!
কেন রেষারেষি দ্বেষাদ্বেষি বৃথা, দিব ফেলে নখ দন্ত,
তপস্বী হয়ে বনে যাব সবে, পশুর হউক অন্ত।
ছাগ মেষ সব কে কোথা’ আছিস, নিয়ে আয় সব ঢাক – ঢোল,
এসেছেন গোরা, প্রেমানন্দে ন্যাজ তুলে সবে হরিবোল!
শিশু-হাসি হেসে’ নব যীশু-বেশে এসেছেন আহা বন-মাঝ,
অজিন-আসন এনে দে হরিণ, বসিবেন গোরা, পশুরাজ।’
পশুরাজ কন, ‘পশুদল, শোনো শোনো মোর বাণী স্বস্তির।’
বাঘা কয়, ‘প্রভু! দন্ত বেজায় বাড়িয়া উঠিছে হস্তীর’
প্রভু কন, ‘বাবা শান্তির এই বৈঠক তারি জন্যে!’
নেকড়ে অমনি কহে, ‘চুপ! চুপ! শুনিয়া ফেলিবে অন্যে!’
হাবাতে হাঙর খেজুর-গুঁড়ির লেজুজড় করিয়া উচ্চ,
বলে “প্রভু তুমি ধূমকেতু-তারা, এ ভক্ত তার পুচ্ছ।’
প্রভু কন, ‘আহা, এতদিন পরে মিলিল ভক্ হনুমান।’
হাঙরের চোখে সাঁতার-সলিল, বলে, ‘প্রভুর কি অনুমান!’
খেঁকুড়ে-কণ্ঠ নেকড়ে কহিল, ‘হায়েনা ত প্রভু আয়ে না!
আমরা করিব হরিনাম, আর সে নেবে আফ্রিকা চায়েনা!’
ব্যাঘ্র কহিল, ‘সে সাঙাৎ যে-রে আছে রগ ঘেঁসে আমারই!’
প্রভু কন, ‘ঐ নোড়া দিয়ে দাঁত ভাঙব ভালুক মামারই॥’
হাঙর কহিল, ‘ভালুক মামা যে ক্রমেই আসিছে রুষিয়া!’
প্রভু কন, ‘আর ক’টা দিব ব্যাটা বাঁচিবে আমড়া চুষিয়া?’
লড়ালড়ি করে হায়েনা ভালুক দু’টোরি ধরিবে হাঁপানি,
ছিনেজোঁক র’বে লাগিয়া পিছনে, পাশে চিতেবাঘ জাপানী!
হাড়-গোড়-ভাঙা ঈগল পক্ষী কহিল পক্ষ ঝাপটি;
‘প্রভু তব পিছে চাপকান-ঢাকা আফগান মারে ঘাপ্টি।’
প্রবু কন, ‘ওরি ভাবনায় বাবা ধরেছে রক্ত-আমেশা।
গোস্ত্ খাওযায়ে দোস্ত করিতে তাই ত চেষ্টা হামেশা!’
শিবা কয়, ‘প্রভু, সুর্কি রাঙানো টুপি ছাড়িয়াছে তুর্কী!’
প্রভু কন, ‘মজি’ সংসার-মোহে ছাড়িল খোদার নূর কি?
কপাল মন্দ! কি করিবে বল! অদৃষ্টে নাই ভেস্ত!’
শিবা কয়, ‘যাব আমিই ভেস্তে তা হলে, বিচার বেশ ত!’
সাত হাত দাঁত বের করে এলো এমন সময় হস্তী,
শুণ্ড বুলায়ে মুণ্ডে কুহিল, ‘কর মোরও সাথে দোস্তী!’
‘রে গমমুর্খ!’ বলি’ প্রভুপাদ পশুরাজ ওঠে গর্জি’
‘কা’র মর্জিতে তুই এলি হেথা চিড়ায়াখানারে বর্জি!’
‘গজরাজ আমি, অজ নই’ – কহে অঙ্গ দুলায়ে হস্তী,
‘চিড়িয়াখানার পিঞ্জর ভেঙে এসেছি বনে বস্তী!’
শকুনি, খটাস, শিবা, সারমেয় তুলিল ভীষণ কলরোল;
তক্ত প্রভুর তুলি’ পশুদল বলে, ‘বল হরি হরিবোল!’
- রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু
জানা যায় না। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত
'চন্দ্রবিন্দু' সঙ্গীত-সংকলনে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩২ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ:
-
চন্দ্রবিন্দু
- প্রথম সংস্করণ [সেপ্টেম্বর ১৯৩১, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ।]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১।
চন্দ্রবিন্দু। কমিক গান। শিরোনাম: লীগ-অব-নেশন। পৃষ্ঠা: ১৯৮-২০১]