|
অচলায়তন
৩
মহাপঞ্চক, উপাধ্যায়, সঞ্জীব, বিশ্বম্ভর, জয়োত্তম
বিশ্বম্ভর। আচার্য অদীনপুণ্য যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন তবে তিনি যেমন আছেন
থাকুন, কিন্তু আমরা তাঁর কোনো অনুশাসন মানব না।
জয়োত্তম। তিনি বলেন, তাঁর গুরু তাঁকে যে আসনে বসিয়েছেন তাঁর গুরুই তাঁকে সেই আসন
থেকে নামিয়ে দেবেন সেইজন্যে তিনি অপেক্ষা করছেন।
একটি ছাত্রের প্রবেশ
মহাপঞ্চক। কী হে তৃণাঞ্জন।
তৃণাঞ্জন। আজ দ্বাদশী, আজ আমার লোকেশ্বর ব্রতের পারণের দিন। কিন্তু কী করব, আমাদের
আচার্য যে কে তার তো কোনো ঠিক হল না—আমাদের যে সমস্ত ক্রিয়াকাণ্ড পণ্ড হতে বসল এর
কী করা যায়!
মহাপঞ্চক। সে তো আমি তোমাদের বলে রেখেছি—এখন আশ্রমে যা-কিছু কাজ হচ্ছে, সমস্তই
নিষ্ফল হচ্ছে।
উপাধ্যায়। শুধু নিষ্ফল হচ্ছে তা নয়, আমাদের অপরাধ ক্রমেই জমে উঠছে।
সঞ্জীব। এ যে বড়ো সর্বনেশে কথা।
জয়োত্তম। কিন্তু আমাদের গুরু আসবার তো দেরি নেই, এর মধ্যে আর কত অনিষ্টই বা হবে।
সঞ্জীব। আরে রাখো তোমার তর্ক। অনিষ্ট হতে সময় লাগে না। মরার পক্ষে এক মুহূর্তই
যথেষ্ট।
অধ্যেতার প্রবেশ
উপাধ্যায়। কী গো অধ্যেতা, ব্যাপার কী।
অধ্যেতা। তোমরা তো আমাকে বলে এলে সুভদ্রকে মহাতামসে বসাতে—কিন্তু বসায় কার সাধ্য।
মহাপঞ্চক। কেন, কী বিঘ্ন ঘটেছে।
অধ্যেতা। মূর্তিমান বিঘ্ন রয়েছে তোমার ভাই!
মহাপঞ্চক। পঞ্চক?
অধ্যেতা। হাঁ। আমি সুভদ্রকে হিঙ্গুমর্দন কুণ্ডে স্নান করিয়ে সবে উঠেছি এমন সময়
পঞ্চক এসে তাকে কেড়ে নিয়ে গেল।
মহাপঞ্চক। না, এই নরাধমকে নিয়ে আর চলল না। অনেক সহ্য করেছি। এবার ওকে নির্বাসন
দেওয়াই স্থির। কিন্তু অধ্যেতা, তুমি এটা সহ্য করলে?
অধ্যেতা। আমি কি তোমার পঞ্চককে ভয় করি! স্বয়ং আচার্য অদীনপুণ্য এসে তাকে আদেশ
করলেন, তাই তো সে সাহস পেলে।
তৃণাঞ্জন। আচার্য অদীনপুণ্য!
সঞ্জীব। স্বয়ং আমাদের আচার্য!
বিশ্বম্ভর। ক্রমে এ-সব হচ্ছে কী! এতদিন এই আয়তনে আছি, কখনো তো এমন অনাচারের কথা
শুনি নি। যে স্নাত তাকে তার ব্রত থেকে ছিন্ন করে আনা! আর স্বয়ং আমাদের আচার্যের এই
কীর্তি!
জয়োত্তম। তাঁকে একবার জিজ্ঞাসা করেই দেখা যাক-না।
বিশ্বম্ভর। না না, আচার্যকে আমরা—
মহাপঞ্চক। কী করবে আচার্যকে, বলেই ফেলো।
বিশ্বম্ভর। তাই তো ভাবছি কী করা যায়। তাকে না হয়—আপনি বলে দিন না কী করতে হবে।
মহাপঞ্চক। আমি বলছি তাঁকে সংযত করে রাখতে হবে।
সঞ্জীব। কেমন করে?
মহাপঞ্চক। কেমন করে আবার কী! মত্ত হস্তীকে যেমন করে সংযত করতে হয় তেমনি করে।
জয়োত্তম। আমাদের আচার্যদেবকে কি তা হলে—
মহাপঞ্চক। হাঁ, তাঁকে বন্ধ করে রাখতে হবে। চুপ করে রইলে যে! পারবে না?
তৃণাঞ্জন। কেন পারব না। আপনি যদি আদেশ করেন তা হলেই—
জয়োত্তম। কিন্তু শাস্ত্রে কি এর—
মহাপঞ্চক। শাস্ত্রে বিধি আছে।
তৃণাঞ্জন। তবে আর ভাবনা কী?
উপাধ্যায়। মহাপঞ্চক, তোমার কিছুই বাধে না, আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে।
আচার্যের প্রবেশ
আচার্য। বৎস, এতদিন তোমরা আমাকে আচার্য বলে মেনেছ, আজ তোমাদের সামনে আমার বিচারের
দিন এসেছে। আমি স্বীকার করছি অপরাধের অন্ত নেই, অন্ত নেই, তার প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই
করতে হবে।
তৃণাঞ্জন। তবে আর দেরি করেন কেন। এদিকে যে আমাদের সর্বনাশ হয়।
জয়োত্তম। দেখো তৃণাঞ্জন, আস্তাকুঁড়ের ছাই দিয়ে তোমার এই মুখের গর্তটা ভরিয়ে দিতে
হবে। একটু থামো না।
আচার্য। গুরু চলে গেলেন, আমরা তাঁর জায়গায় পুঁথি নিয়ে বসলুম; তার শুকনো পাতায়
ক্ষুধা যতই মেটে না ততই পুঁথি কেবল বাড়াতে থাকি। খাদ্যের মধ্যে প্রাণ যতই কমে তার
পরিমাণ ততই বেশি হয়। সেই জীর্ণ পুঁথির ভাণ্ডারে প্রতিদিন তোমরা দলে দলে আমার কাছে
তোমাদের তরুণ হৃদয়টি মেলে ধরে কী চাইতে এসেছিলে! অমৃতবাণী? কিন্তু আমার তালু যে
শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে! রসনায় যে রসের লেশমাত্র নেই! এবার নিয়ে এসো সেই বাণী, গুরু,
নিয়ে এসো হৃদয়ের বাণী। প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে যাও।
পঞ্চক। (ছুটিয়া প্রবেশ করিয়া) তোমার নববর্ষার সজল হাওয়ায় উড়ে যাক সব শুকনো পাতা—আয়
রে নবীন কিশলয়—তোরা ছুটে আয়, তোরা ফুটে বেরো। ভাই জয়োত্তম, শুনছ না, আকাশের ঘন নীল
মেঘের মধ্যে মুক্তির ডাক উঠেছে—‘আজ নৃত্য কর্ রে নৃত্য কর্'।
গান
ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে
তারে আজ থামায় কে রে!
সে যে আকাশ পানে হাত পেতেছে,
তারে আজ নামায় কে রে!
প্রথম জয়োত্তমের, পরে বিশ্বম্ভরের, পরে সঞ্জীবের নৃত্যগীতে যোগ
মহাপঞ্চক। পঞ্চক, নির্লজ্জ বানর কোথাকার, থাম্ বলছি, থাম্।
গান
পঞ্চক। ওরে, আমার মন মেতেছে
আমারে থামায় কে রে।
মহাপঞ্চক। উপাধ্যায়, আমি তোমাকে বলি নি একজটা দেবীর শাপ আরম্ভ হয়েছে? দেখছ, কী করে
তিনি আমাদের সকলের বুদ্ধিকে বিচলিত করে তুলছেন—ক্রমে দেখবে অচলায়তনের একটি পাথরও আর
থাকবে না।
পঞ্চক। না থাকবে না, থাকবে না, পাথরগুলো সব পাগল হয়ে যাবে; তারা কে কোথায় ছুটে
বেরিয়ে পড়বে, তারা গান ধরবে—
ওরে ভাই, নাচ্ রে ও ভাই নাচ্ রে—
আজ ছাড়া পেয়ে বাঁচ্ রে-
লাজ ভয় ঘুচিয়ে দে রে।
তোরে আজ থামায় কে রে!
মহাপঞ্চক। উপাধ্যায়, হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখছ কী! সর্বনাশ শুরু হয়েছে, বুঝতে পারছ না!
ওরে সব ছন্নমতি মূর্খ, অভিশপ্ত বর্বর, আজ তোদের নাচবার দিন?
পঞ্চক। সর্বনাশের বাজনা বাজলেই নাচ শুরু হয় দাদা।
মহাপঞ্চক। চুপ কর্ লক্ষ্মীছাড়া! ছাত্রগণ, তোমরা আত্মবিসমৃত হোয়ো না। ঘোর বিপদ আসন্ন
সে কথা স্মরণ রেখো।
বিশ্বম্ভর। আচার্যদেব, পায়ে ধরি, সুভদ্রকে আমাদের হাতে দিন, তাকে তার প্রায়শ্চিত্ত
থেকে নিরস্ত করবেন না।
আচার্য। না বৎস, এমন অনুরোধ কোরো না।
সঞ্জীব। ভেবে দেখুন, সুভদ্রের কতবড়ো ভাগ্য। মহাতামস কজন লোকে পারে। ও যে ধরাতলে
দেবত্ব লাভ করবে।
আচার্য। গায়ের জোরে দেবতা গড়বার পাপে আমাকে লিপ্ত কোরো না। সে মানুষ, সে শিশু,
সেইজন্যই সে দেবতাদের প্রিয়।
তৃণাঞ্জন। দেখুন, আপনি আমাদের আচার্য, আমাদের প্রণম্য, কিন্তু যে অন্যায় আজ করছেন,
তাতে আমরা বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হব।
আচার্য। করো, বলপ্রয়োগ করো, আমাকে মেনো না, আমাকে মারো, আমি অপমানেরই যোগ্য,
তোমাদের হাত দিয়ে আমার যে শাস্তি আরম্ভ হল তাতেই বুঝতে পারছি গুরুর আবির্ভাব হয়েছে।
কিন্তু সেইজন্যেই বলছি শাস্তির কারণ আর বাড়তে দেব না। সুভদ্রকে তোমাদের হাতে দিতে
পারব না।
তৃণাঞ্জন। পারবেন না?
আচার্য। না।
মহাপঞ্চক। তা হলে আর দ্বিধা করা নয়। তৃণাঞ্জন, এখন তোমাদের উচিত ওঁকে জোর করে ধরে
নিয়ে ঘরে বন্ধ করা। ভীরু, কেউ সাহস করছ না? আমাকেই তবে এ কাজ করতে হবে?
জয়োত্তম। খবরদার—আচার্যদেবের গায়ে হাত দিতে পারবে না।
বিশ্বম্ভর। না না, মহাপঞ্চক, ওঁকে অপমান করলে আমরা সইতে পারব না।
সঞ্জীব। আমরা সকলে মিলে পায়ে ধরে ওঁকে রাজি করাব। একা সুভদ্রের প্রতি দয়া করে উনি
কি আমাদের সকলের অমঙ্গল ঘটাবেন?
তৃণাঞ্জন। এই অচলায়তনের এমন কত শিশু উপবাসে প্রাণত্যাগ করেছে—তাতে ক্ষতি কী হয়েছে!
সুভদ্রের প্রবেশ
সুভদ্র। আমাকে মহাতামস ব্রত করাও।
পঞ্চক। সর্বনাশ করলে! ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে আমি এখানে এসেছিলুম, কখন জেগে চলে এসেছে।
আচার্য। বৎস সুভদ্র, এসো আমার কোলে। যাকে পাপ বলে ভয় করছ সে পাপ আমার—আমিই
প্রায়শ্চিত্ত করব।
তৃণাঞ্জন। না না, আয় রে সুভদ্র, তুই মানুষ না, তুই দেবতা।
সঞ্জীব। তুই ধন্য।
বিশ্বম্ভর। তোর বয়সে মহাতামস করা আর কারো ভাগ্যে ঘটে নি। সার্থক তোর মা তোকে গর্ভে
ধারণ করেছিল।
উপাধ্যায়। আহা সুভদ্র, তুই আমাদের অচলায়তনেরই বালক বটে।
মহাপঞ্চক। আচার্য, এখনো কি তুমি জোর করে এই বালককে এই মহাপুণ্য থেকে বঞ্চিত করতে
চাচ্ছ?
আচার্য। হায় হায়, এই দেখেই তো আমার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তোমরা যদি ওকে কাঁদিয়ে
আমার হাত থেকে ছিঁড়ে কেড়ে নিয়ে যেতে তা হলেও আমার এত বেদনা হত না। কিন্তু দেখছি
হাজার বছরের নিষ্ঠুর বাহু অতটুকু শিশুর মনকেও পাথরের মুঠোয় চেপে ধরেছে, একেবারে
পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিয়েছে রে। কখন সময় পেল সে? সে কি গর্ভের মধ্যেও কাজ করে!
পঞ্চক। সুভদ্র, আয় ভাই, প্রায়শ্চিত্ত করতে যাই—আমিও যাব তোর সঙ্গে।
আচার্য। বৎস, আমিও যাব।
সুভদ্র। না না, আমাকে যে একলা থাকতে হবে—লোক থাকলে যে পাপ হবে!
মহাপঞ্চক। ধন্য শিশু, তুমি তোমার ঐ প্রাচীন আচার্যকে আজ শিক্ষা দিলে। এসো তুমি আমার
সঙ্গে।
আচার্য। না, আমি যতক্ষণ তোমাদের আচার্য আছি ততক্ষণ আমার আদেশ ব্যতীত কোনো ব্রত
আরম্ভ বা শেষ হতেই পারে না। আমি নিষেধ করছি। সুভদ্র, আচার্যের কথা অমান্য কোরো
না—এসো পঞ্চক, ওকে কোলে করে নিয়ে এসো।
[ সুভদ্রকে লইয়া পঞ্চকের ও আচার্যের এবং উপাধ্যায়ের প্রস্থান]
মহাপঞ্চক। ধিক্। তোমাদের মতো ভীরুদের দুর্গতি হতে রক্ষা করে এমন সাধ্য কারও নেই।
তোমরা নিজেও মরবে অন্য সকলকেও মারবে। তোমাদের উপাধ্যায়টিও তেমনি হয়েছেন—তাঁরও আর
দেখা নেই।
পদাতিকের প্রবেশ
পদাতিক। রাজা আসছেন।
মহাপঞ্চক। ব্যাপারখানা কী! এ যে আমাদের রাজা মন্থরগুপ্ত।
রাজার প্রবেশ
রাজা। নরদেবগণ, তোমাদের সকলকে নমস্কার।
সকলে। জয়োস্তু রাজন্।
মহাপঞ্চক। কুশল তো?
রাজা। অত্যন্ত মন্দ সংবাদ। প্রত্যন্তদেশের দূতেরা এসে খবর দিল যে দাদাঠাকুরের দল
এসে আমাদের রাজ্যসীমার প্রাচীর ভাঙতে আরম্ভ করেছে।
মহাপঞ্চক। দাদাঠাকুরের দল কারা?
রাজা। ঐ যে শোণপাংশুরা।
মহাপঞ্চক। শোণপাংশুরা যদি আমাদের প্রাচীর ভাঙে তা হলে যে সমস্ত লণ্ডভণ্ড করে দেবে।
রাজা। সেইজন্যেই তো ছুটে এলুম। তোমাদের কাছে আমার প্রশ্ন এই যে, আমাদের প্রাচীর
ভাঙল কেন?
মহাপঞ্চক। শিখাসচ্ছন্দ মহাভৈরব তো আমাদের প্রাচীর রক্ষা করছেন।
রাজা। তিনি অনাচারী শোণপাংশুদের কাছে আপন শিখা নত করলেন! নিশ্চয়ই তোমাদের
মন্ত্র-উচ্চারণ অশুদ্ধ হচ্ছে, তোমাদের ক্রিয়াপদ্ধতিতে স্খলন হচ্ছে, নইলে এ যে
স্বপ্নের অতীত।
মহাপঞ্চক। আপনি সত্যই অনুমান করেছেন মহারাজ।
সঞ্জীব। একজটা দেবীর শাপ তো আর ব্যর্থ হতে পারে না।
রাজা। একজটা দেবীর শাপ! সর্বনাশ! কেন তাঁর শাপ।
মহাপঞ্চক। যে উত্তরদিকে তাঁর অধিষ্ঠান এখানে একদিন সেই দিককার জানলা খোলা হয়েছে।
রাজা। (বসিয়া পড়িয়া) তবে তো আর আশা নেই।
মহাপঞ্চক। আচার্য অদীনপুণ্য এ-পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে দিচ্ছেন না।
তৃণাঞ্জন। তিনি জোর করে আমাদের ঠেকিয়ে রেখেছেন।
রাজা। তবে তো মিথ্যা আমি সৈন্য জড়ো করতে বলে এলুম। দাও, দাও, অদীনপুণ্যকে এখনই
নির্বাসিত করে দাও।
মহাপঞ্চক। আগামী অমাবস্যায়—
রাজা। না না, এখন তিথিনক্ষত্র দেখবার সময় নেই। বিপদ আসন্ন। সংকটের সময় আমি আমার
রাজ-অধিকার খাটাতে পারি—শাস্ত্রে তার বিধান আছে।
মহাপঞ্চক। হাঁ আছে। কিন্তু আচার্য কে হবে?
রাজা। তুমি, তুমি। এখনই আমি তোমাকে আচার্যের পদে প্রতিষ্ঠিত করে দিলুম। দিক্পালগণ
সাক্ষী রইলেন, এই ব্রহ্মচারীরা সাক্ষী রইলেন।
মহাপঞ্চক। অদীনপুণ্যকে কোথায় নির্বাসিত করতে চান?
রাজা। আয়তনের বাহিরে নয়—কী জানি যদি শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগ দেন। আমার পরামর্শ এই
যে, আয়তনের প্রান্তে যে দর্ভকদের পাড়া আছে এ-কয়দিন সেইখানে তাঁকে বদ্ধ করে রেখো।
জয়োত্তম। আচার্য অদীনপুণ্যকে দর্ভকদের পাড়ায়! তারা যে অন্ত্যজ পতিত জাতি।
মহাপঞ্চক। যিনি স্পর্ধাপূর্বক আচার লঙ্ঘন করেন, অনাচারীদের মধ্যে বাস করলেই তবে
তাঁর চোখ ফুটবে। মনে কোরো না আমার ভাই বলে পঞ্চককে ক্ষমা করব—তারও সেইখানে গতি।
রাজা। দেখো মহাপঞ্চক, তোমার উপরই নির্ভর, যুদ্ধে জেতা চাই। আমার হার যদি হয় তবে সে
তোমাদের অচলায়তনেরই অক্ষয় কলঙ্ক।
মহাপঞ্চক। কোনো ভয় করবেন না।
|