বিসর্জন
তৃতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
মন্দির
   
রঘুপতি। তোরা এখানে সব কী করতে এলি?
    সকলে। আমরা ঠাকরুন দর্শন করতে এসেছি।
    রঘুপতি। বটে! দর্শন করতে এসেছ? এখনো তোমাদের চোখ দুটো যে আছে সে কেবল বাপের পুণ্যে। ঠাকরুন 
কোথায়! ঠাকরুন এ রাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন। তোরা ঠাকরুনকে রাখতে পারলি কই? তিনি চলে 
গেছেন।
    সকলে। কী সর্বনাশ! কে কী কথা ঠাকুর! আমরা কী অপরাধ করেছি?
    নিস্তারিণী।
আমার বোনপো'র ব্যামো ছিল বলেই যা আমি ক'দিন পুজো দিতে আসতে পারি নি।
    গোবর্ধন। আমার পাঁঠা দুটো ঠাকরুনকেই দেব বলে অনেক দিন থেকে মনে করে রেখেছিলুম, এরই মধ্যে 
রাজা বলি বন্ধ করে দিলে তো আমি কী করব!
    হারু। এই আমাদের গন্ধমাদন যা মানত করেছিল তা মাকে দেয় নি বটে, কিন্তু মাও তো তেমনি তাকে 
শাস্তি দিয়েছেন। তার পিলে বেড়ে ঢাক হয়ে উঠেছে– আজ ছ'টি মাস বিছানায় প'ড়ে। তা বেশ 
হয়েছে, আমাদেরই যেন সে মহাজন, তাই বলে কি মাকে ফাঁকি দিতে পারবে!
    অক্রূর। চুপ কর্ তোরা। মিছে গোল করিস নে। আচ্ছা ঠাকুর, মা কেন চলে গেলেন, আমাদের কী অপরাধ 
হয়েছিল?
    রঘুপতি। মার জন্যে এক ফোঁটা রক্ত দিতে পারিস নে, এই তো তোদের ভক্তি?
    অনেকে। রাজার আজ্ঞা, তা আমরা কী করব?
    রঘুপতি। রাজা কে? মার সিংহাসন তবে কি রাজার সিংহাসনের নীচে? তবে এই মাতৃহীন দেশে তোদের 
রাজাকে নিয়েই থাক্, দেখি তোদের রাজা কী করে রক্ষা করে।
                   
সকলের সভয়ে গুন্গুন্ স্বরে কথা
    অক্রূর। চুপ কর্। 
–সন্তান যদি অপরাধ করে থাকে মা তাকে দণ্ড দিক, কিন্তু একেবারে ছেড়ে চলে 
যাবে এ কি মা'র মতো কাজ? বলে দাও কী করলে মা ফিরবে।
    রঘুপতি। তোদের রাজা যখন রাজ্য ছেড়ে যাবে, মাও তখন রাজ্যে ফিরে পদার্পণ করবে।
                   
নিস্তব্ধভাবে পরস্পরের মুখাবলোকন
    রঘুপতি। তবে তোরা দেখবি? এইখানে আয়। অনেক দূর থেকে অনেক আশা করে ঠাকরুনকে দেখতে এসেছিস, তবে 
একেবার চেয়ে দেখ্।
                   
মন্দিরের দ্বার-উদ্ঘাটন। প্রতিমার পশ্চাদ্ভাগ দৃশ্যমান
    সকলে। ও কী! মার মুখ কোন্ দিকে?
    অক্রূর। ওরে, মা বিমুখ হয়েছেন!
    সকলে। ও মা, ফিরে দাঁড়া মা! ফিরে দাঁড়া মা! ফিরে দাঁড়া মা! একবার ফিরে দাঁড়া! মা কোথায়! 
মা কোথায়! আমরা তোকে ফিরিয়ে আনব মা! আমরা তোকে ছাড়ব না। চাই নে আমাদের রাজা। যাক 
রাজা! মরুক রাজা!
               
রঘুপতির নিকট আসিয়া
    জয়সিংহ। প্রভু, আমি কি একটিও কথাও কব না?
    রঘুপতি। না।
    জয়সিংহ। সন্দেহের কি কোনো কারণ নেই?
    রঘুপতি। না।
    জয়সিংহ। সমস্তই কি বিশ্বাস করব?
    রঘুপতি। হাঁ।
                       
অপর্ণার প্রবেশ
                       
পার্শ্বে আসিয়া
অপর্ণা।      
জয়সিংহ! এস জয়সিংহ, শীঘ্র এসো
               
এ মন্দির ছেড়ে।
জয়সিংহ।                           
বিদীর্ণ হইল বক্ষ।
               
[ রঘুপতি অপর্ণা ও জয়সিংহের প্রস্থান
                       
রাজার প্রবেশ
প্রজাগণ।   
রক্ষা করো মহারাজ, আমাদের রক্ষা
               
করো–
মাকে ফিরে দাও!
গোবিন্দমাণিক্য।                   
বৎসগণ, করো
               
অবধান। সেই মোর প্রাণপণ সাধ
               
জননীরে ফিরে এনে দেব।
প্রজাগণ।                                   
জয় হোক
               
মহারাজ, জয় হোক তব।
গোবিন্দমাণিক্য।                           
একবার
               
শুধাই তোদের, তোরা কি মায়ের গর্ভে
               
নিস নি জনম? মাতৃগণ, তোমরা তো
               
অনুভব করিয়াছ কোমল হৃদয়ে
               
মাতৃস্নেহসুধা–বলো দেখি মা কি নেই?
               
মাতৃস্নেহ সব হতে পবিত্র প্রাচীন;
               
সৃষ্টির প্রথম দণ্ডে মাতৃস্নেহ শুধু
               
একেলা জাগিয়া বসে ছিল, নতনেত্রে
               
তরুণ বিশ্বেরে কোলে লয়ে। আজিও সে
               
পুরাতন মাতৃস্নেহে রয়েছে বসিয়া
               
ধৈর্যের প্রতিমা হয়ে। সহিয়াছে কত
               
উপদ্রব, কত শোক, কত ব্যথা, কত
               
অনাদর–চোখের সম্মুখে ভায়ে ভায়ে
               
কত রক্তপাত, কত নিষ্ঠুরতা, কত
               
অবিশ্বাস–
বাক্যহীন বেদনা বহিয়া
               
তবু সে জননী আছে বসে, দুর্বলের
               
তরে কোল পাতি, একান্ত যে নিরুপায়
               
তারি তরে সমস্ত হৃদয় দিয়ে। আজ
               
কী এমন অপরাধ করিয়াছি মোরা
               
যার লাগি সে অসীম স্নেহ চেলে গেল
               
চিরমাতৃহীন করে অনাথ সংসার!
                
বৎসগণ, মাতৃগণ, বলো, খুলে বলো–
               
কী এমন করিয়াছি অপরাধ?
কেহ কেহ।                                         মা'র
               
বলি নিষেধ করেছ! বন্ধ মা'র পূজা!
গোবিন্দমাণিক্য।   
নিষেধ করেছি বলি, সেই অভিমানে
               
বিমুখ হয়েছে মাতা! আসিছে মড়ক,
                
উপবাস, অনাবৃষ্টি, অগ্নি, রক্তপাত–
               
মা তোদের এমনি মা বটে! দণ্ডে দণ্ডে
               
ক্ষীণ শিশুটিরে স্তন্য দিয়ে বাঁচাইয়ে
               
তোলে মাতা। সে কি তার রক্তপানলোভে?
               
হেন মাতৃ-অপমান মনে স্থান দিলি
               
যবে, আজন্মের মাতৃস্নেহস্মৃতিমাঝে
               
ব্যথা বাজিল না? মনে পড়িল না মা'র
                
মুখ?– "রক্ত চাই' "রক্ত চাই' গরজন
               
করিছে জননী, অবোলা দুর্বল জীব
               
প্রাণভয়ে কাঁপে থরথর–
নৃত্য করে
                
দয়াহীন নরনারী রক্তমত্ততায়–
               
এই কি মায়ের পরিবার? পুত্রগণ,
               
এই কি মায়ের স্নেহছবি?
প্রজাগণ।                               
মূর্খ মোরা
               
বুঝিতে পারি নে।
গোবিন্দমাণিক্য।           
বুঝিতে পার না! শিশু
               
দু দিনের, কিছু যে বোঝে না আর, সেও
               
তার জননীরে বোঝে। সেও বোঝে, ভয়
               
পেলে নির্ভয় মায়ের কাছে; সেও বোঝে
               
ক্ষুধা পেলে দুগ্ধ আছে মাতৃস্তনে; সেও
               
ব্যথা পেলে কাঁদে মার মুখ চেয়ে।–
তোরা
               
এমনি কি ভুলে ভ্রান্ত হলি, মাকে গেলি
               
ভুলে? বুঝিতে পারো না মাতা দয়াময়ী!
               
বুঝিতে পার না জীবজননীর পূজা
               
জীবরক্ত দিয়ে নহে, ভালোবাসা দিয়ে!
               
বুঝিতে পার না–
ভয় যেথা মা সেখানে
               
নয়, হিংসা যেথা মা সেখানে নাই, রক্ত
               
যেথা মা'র সেথা অশ্রুজল! ওরে বৎস,
               
কী করিয়া দেখাব তোদের, কী বেদনা
               
দেখেছি মায়ের মুখে, কী কাতর দয়া,
               
কী ভর্ৎসনা অভিমান-ভরা ছলছল
               
নেত্রে তাঁর। দেখাইতে পারিতাম যদি,
               
সেই দণ্ডে চিনিতিস আপনার মাকে।
               
দয়া এল দীনবেশে মন্দিরের দ্বারে,
               
অশ্রুজলে মুছে দিতে কলঙ্কের দাগ
               
মা'র সিংহাসন হতে–
সেই অপরাধে
               
মাতা চলে গেল রোষভরে, এই তোরা
               
করিলি বিচার?
                       
অপর্ণার প্রবেশ
প্রজাগণ।                       
আপনি চাহিয়া দেখো,
               
বিমুখ হয়েছে মাতা সন্তানের 'পরে।
               
মন্দিরের দ্বারে উঠিয়া
অপর্ণা।      
বিমুখ হয়েছে মাতা! আয় তো মা, দেখি,
               
আয় তো সমুখে একবার!
                       
প্রতিমা ফিরাইয়া
                                           
এই দেখো
               
মুখ ফিরায়েছে মাতা।
সকলে।                               
ফিরেছে জননী!
               
জয় হোক! জয় হোক! মাতঃ, জয় হোক
                       
সকলে মিলিয়া গান
থাকতে আর তো পারলি নে মা, পারলি কই?
       
কোলের সন্তানেরে ছাড়লি কই?
দোষী আছি অনেক দোষে, ছিলি বসে ক্ষণিক রোষে,
       
মুখ তো ফিরালি শেষে, অভয় চরণ কাড়লি কই?
                   
[ সকলের প্রস্থান
           
জয়সিংহ ও রঘুপতির প্রবেশ
জয়সিংহ।   
সত্য বলো, প্রভু, তোমারি এ কাজ?
রঘুপতি।   
সত্য
               
কেন না বলিব? আমি কি ডরাই সত্য
               
বলিবারে? আমারি এ কাজ। প্রতিমার
               
মুখ ফিরায়ে দিয়েছি আমি। কী বলিতে
               
চাও বলো। হয়েছ গুরুর গুরু তুমি,
               
কী ভর্ৎসনা করিবে আমারে? দিবে কোন
               
উপদেশ?
জয়সিংহ।                       
বলিবার কিছু নাই মোর।
রঘুপতি।   
কিছু নাই? কোনো প্রশ্ন নাই মোর কাছে?
               
সন্দেহ জন্মিলে মনে মীমাংসার তরে
               
চাহিবে না গুরু-উপদেশ? এত দূরে
               
গেছ? মনে এতই কি ঘটেছে বিচ্ছেদ?
               
মূঢ়, শোনো। সত্যই তো বিমুখ হয়েছে
               
দেবী, কিন্তু তাই ব'লে প্রতিমার মুখ
               
নাহি ফিরে। মন্দিরে যে রক্তপাত করি
               
দেবী তাহা করে পান, প্রতিমার মুখে
               
সে রক্ত উঠে না। দেবতার অসন্তোষ
               
প্রতিমার মুখে প্রকাশ না পায়। কিন্তু
               
মূর্খদের কেমনে বুঝাব! চোখে চাহে
               
দেখিবারে, চোখে যাহা দেখাবার নয়।
               
মিথ্যা দিয়ে সত্যেরে বুঝাতে হয় তাই।
               
মূর্খ, তোমার আমার হাতে সত্য নাই।
               
সত্যের প্রতিমা সত্য নহে, কথা সত্য
                
নহে, লিপি সত্য নহে, মূর্তি সত্য নহে–
               
চিন্তা সত্য নহে। সত্য কোথা আছে–কেহ
               
নাহি জানে তারে, কেহ নাহি পায় তারে।
               
সেই সত্য কোটি মিথ্যারূপে চারি দিকে
               
ফাটিয়া পড়েছে। সত্য তাই নাম ধরে
               
মহামায়া, অর্থ তার "মহামিথ্যা'। সত্য
                
মহারাজ বসে থাকে রাজ-অন্তঃপুরে–
               
শত মিথ্যা প্রতিনিধি তার, চতুর্দিকে
                
মরে খেটে খেটে।–
                               
শিরে হাত দিয়ে, ব'সে
               
ব'সে ভাবো–
আমার অনেক কাজ আছে!
               
আবার গিয়েছে ফিরে প্রজাদের মন।
জয়সিংহ।   
যে তরঙ্গ তীরে নিয়ে আসে, সেই ফিরে
               
অকূলের মাঝখানে টেনে নিয়ে যায়।
               
সত্য নহে, সত্য নহে, সত্য নহে–
সবই
               
মিথ্যা! মিথ্যা! মিথ্যা! দেবী নাই প্রতিমার
               
মাঝে, তবে কোথা আছে? কোথাও সে নাই!
               
দেবী নাই! ধন্য ধন্য ধন্য মিথ্যা তুমি!
 
দ্বিতীয় দৃশ্য
প্রাসাদকক্ষ
গোবিন্দমাণিক্য ও চাঁদপাল
চাঁদপাল।   
প্রজারা করিছে কুমন্ত্রণা। মোগলের
               
সেনাপতি চলিয়াছে আসামের দিকে
               
যুদ্ধ-লাগি, নিকটেই আছে, দুই-চারি
               
দিবসের পথে–
প্রজারা তাহারি কাছে
               
পাঠাবে প্রস্তাব তোমারে করিতে দূর
               
সিংহাসন হতে।
গোবিন্দমাণিক্য।               
আমারে করিবে দূর?
               
মোর 'পরে এত অসন্তোষ?
চাঁদপাল।                                   
মহারাজ,
               
সেবকের অনুনয় রাখো–
পশুরক্ত
               
এত যদি ভালো লাগে নিষ্ঠুর প্রজার
               
দাও তাহাদের পশু, রাক্ষসী প্রবৃত্তি
               
পশুর উপর দিয়া যাক। সর্বদাই
               
ভয়ে ভয়ে আছি কখন কী হয়ে পড়ে।
গোবিন্দমাণিক্য।   
আছে ভয় জানি চাঁদপাল, রাজকার্য
               
সেও আছে। পাথার ভীষণ, তবু তরী
               
তীরে নিয়ে যেতে হবে। গেছে কি প্রজার
               
দূত মোগলের কাছে?
চাঁদপাল।                               
এতক্ষণে গেছে।
গোবিন্দমাণিক্য।   
চাঁদপাল, তুমি তবে যাও এই বেলা,
                
মোগলের শিবিরের কাছাকাছি থেকো–
               
যখন যা ঘটে সেথা পাঠায়ো সংবাদ।
চাঁদপাল।   
মহারাজ, সাবধানে ড়েকো হেথা প্রভু,
               
অন্তরে বাহিরে শত্রু।
                                           
[ প্রস্থান
                   
গুণবতীর প্রবেশ
গোবিন্দমাণিক্য।                   
প্রিয়ে, বড়ো শুষ্ক,
               
বড়ো শূন্য এ সংসার। অন্তরে বাহিরে
               
শত্রু। তুমি এসে ক্ষণেক দাঁড়াও হেসে,
               
ভালোবেসে চাও মুখপানে। প্রেমহীন
               
অন্ধকার ষড়যন্ত্র বিপদ বিদ্বেষ
               
সবার উপরে, হোক তব সুধাময়
               
আবির্ভাব, ঘোর নিশীথের শিরোদেশে
               
নির্নিমেষ চন্দ্রের মতন। প্রিয়তমে,
               
নিরুত্তর কেন? অপরাধ-বিচারের
               
এই কি সময়? তৃষার্ত হৃদয় যবে
               
মুমূর্ষুর মতো চাহে মরুভূমি-মাঝে
               
সুধাপাত্র হাতে নিয়ে ফিরে চলে যাবে?
                                       
[ গুণবতীর প্রস্থান
               
চলে গেলে! হায়, দুর্বহজীবন!
                           
নক্ষত্ররায়ের প্রবেশ
                                   
স্বগত
নক্ষত্ররায়।    যেথা যাই সকলেই বলে, "রাজা হবে?'–
               
"রাজা হবে?'–
এ বড়ো আশ্চর্য কাণ্ড। একা
                
বসে থাকি, তবু শুনি কে যেন বলিছে–
               
রাজা হবে? রাজা হবে? দুই কানে যেন
               
বাসা করিয়াছে দুই টিয়ে পাখি, এক
               
বুলি জানে শুধু–
রাজা হবে? রাজা হবে?
               
ভালো বাপু, তাই হব, কিন্তু রাজরক্ত
               
সে কি তোরা এনে দিবি?
গোবিন্দমাণিক্য।                           
নক্ষত্র!
                           
নক্ষত্র সচকিত
নক্ষত্র!       
আমারে মারিবে তুমি? বলো, সত্য বলো,
               
আমারে মারিবে? এই কথা জাগিতেছে
               
হৃদয়ে তোমার নিশিদিন? এই কথা
               
মনে নিয়ে মোর সাথে হাসিয়া বলেছ
               
কথা, প্রণাম করেছ পায়ে, আশীর্বাদ
               
করেছ গ্রহণ, মধ্যাহ্নে আহারকালে
               
এক অন্ন ভাগ করে করেছ ভোজন
               
এই কথা নিয়ে? বুকে ছুরি দেবে? ওরে
               
ভাই, এই বুকে টেনে নিয়েছিনু তোরে
               
এ কঠিন মর্তভূমি প্রথম চরণে
               
তোর বেজেছিল যবে–
এই বুকে টেনে
               
নিয়েছিনু তোরে, যেদিন জননী, তোর
               
শিরে শেষ স্নেহহস্ত রেখে, চলে গেল
               
ধরাধাম শূন্য করি–
আজ সেই তুই
               
সেই বুকে ছুরি দিবি? এক রক্তধারা
               
বহিতেছে দোঁহার শরীরে, যেই রক্ত
               
পিতৃপিতামহ হতে বহিয়া এসেছে
                
চিরদিন ভাইদের শিরায় শিরায়–
               
সেই শিরা ছিন্ন করে দিয়ে সেই রক্ত
               
ফেলিবি ভূতলে? এই বন্ধ করে দিনু
               
দ্বার, এই নে আমার তরবারি, মার্
               
অবারিত বক্ষে, পূর্ণ হোক মনস্কাম!
নক্ষত্ররায়।   
ক্ষমা করো! ক্ষমা করো ভাই! ক্ষমা করো!
গোবিন্দমাণিক্য।   
এস বৎস, ফিরে এস! সেই বক্ষে ফিরে
               
এস! ক্ষমা ভিক্ষা করিতেছ? এ সংবাদ
               
শুনেছি যখন, তখনি করেছি ক্ষমা।
               
তোরে ক্ষমা না করিতে অক্ষম যে আমি।
নক্ষত্ররায়।   
রঘুপতি দেয় কুমন্ত্রণা। রক্ষ মোরে
               
তার কাছ হতে।
গোবিন্দমাণিক্য।           
কোনো ভয় নেই ভাই!
তৃতীয় দৃশ্য
অন্তঃপুরকক্ষ
গুণবতী
গুণবতী।    
তবু তো হল না। আশা ছিল মনে মনে
               
কঠিন হইয়া থাকি কিছুদিন যদি
               
তাহা হলে আপনি আসিবে ধরা দিতে
               
প্রেমের তৃষায়। এত অহংকার ছিল
               
মনে। মুখ ফিরে থাকি। কথা নাহি কই,
               
অশ্রুও ফেলি নে, শুধু শুষ্ক রোষ, শুধু
               
অবহেলা–
এমন তো কতদিন গেল!
               
শুনেছি নারীর রোষ পুরুষের কাছে
                
শুধু শোভা আভাময়, তাপ নাহি তাহে–
               
হীরকের দীপ্তিসম! ধিক্ থাক্ শোভা!
               
এ রোষ বজ্রের মতো হত যদি, তবে
               
পড়িত প্রাসাদ-'পরে, ভাঙিত রাজার
               
নিদ্রা, চূর্ণ হত রাজ-অহংকার, পূর্ণ
               
হত রানীর মহিমা! আমি রানী, কেন
               
জন্মাইলে এ মিথ্যা বিশ্বাস! হৃদয়ের
               
অধীশ্বরী তব–
এই মন্ত্র প্রতিদিন
               
কেন দিলে কানে? কেন না জানালে মোরে
               
আমি ক্রীতদাসী, রাজার কিংকরী শুধু,
               
রানী নহি–
তাহা হলে আজিকে সহসা
               
এ আঘাত, এ পতন সহিতে হত না!
                           
ধ্রুবের প্রবেশ
ধ্রুব।                       
আমারে ডেকেছে রাজা। 
                           
[ প্রস্থান
গুণবতী।   
রাজার হৃদয়রত্ন এই সে বালক!
               
ওরে শিশু, চুরি করে নিয়েছিস তুই
               
আমার সন্তানতরে যে আসন ছিল।
               
না আসিতে আমার বাছারা, তাহাদের
               
পিতৃস্নেহ-'পরে তুই বসাইলি ভাগ!
               
রাজহৃদয়ের সুধাপাত্র হতে, তুই
               
নিলি প্রথম অঞ্জলি–
রাজপুত্র এসে
                
তোরি কি প্রসাদ পাবে ওরে রাজদ্রোহী!–
               
মা গো মহামায়া, এ কী তোর অবিচার!
               
এত সৃষ্টি, এত খেলা তোর–
খেলাচ্ছলে
               
দে আমারে একটি সন্তান–
দে জননী,
               
শুধু এইটুকু শিশু, কোলটুকু ভ'রে
               
যায় যাহে। তুই যা বাসিস ভালো, তাই
               
দিব তোরে।
                       
নক্ষত্ররায়ের প্রবেশ
               
যাও কেন? এত ভয় কারে তব? আমি
               
নারী, অস্ত্রহীন, বলহীন, নিরুপায়,
               
অসহায়–
আমি কি ভীষণ এত?
নক্ষত্ররায়।                                       
না, না,
               
মোরে ডাকিয়ো না।
গুণবতী।                         
কেন, কী হয়েছে?
নক্ষত্ররায়।                                   
আমি
               
রাজা নাহি হব।
গুণবতী।                           
নাই হলে, তাই বলে
               
এত আস্ফালন কেন?
নক্ষত্ররায়।                               
চিরকাল বেঁচে
               
থাক্ রাজা, আমি যেন যুবরাজ থেকে
               
মরি।
গুণবতী।           
তাই মরো। শীঘ্র মরো। পূর্ণ হোক
               
মনোরথ। আমি কি তোমার পায়ে ধ'রে
               
রেখেছি বাঁচিয়ে?
নক্ষত্ররায়।                       
তবে কী বলিবে বলো।
গুণবতী।   
যে চোর করিছে চুরি তোমারি মুকুট
               
তাহারে সরায়ে দাও। বুঝেছ কি?
নক্ষত্ররায়।                                       
সব
               
বুঝিয়াছি, শুধু কে সে চোর বুঝি নাই।
গুণবতী।   
ওই-যে বালক ধ্রুব। বাড়িছে রাজার
               
কোলে, দিনে দিনে উঁচু হয়ে উঠিতেছে
               
মুকুটের পানে।
নক্ষত্ররায়।                       
তাই বটে! এতক্ষণে
               
বুঝিলাম সব। মুকুট দেখেছি বটে
               
ধ্রুবের মাথায়। আমি বলি শুধু খেলা।
গুণবতী।   
মুকুট লইয়া খেলা? বড়ো কাল-খেলা।
               
এই বেলা ভেঙে দাও খেলা–
নহে তুমি
               
সে খেলার হইবে খেলেনা।
নক্ষত্ররায়।                           
তাই বটে! 
               
এ তো ভালো খেলা নয়।
গুণবতী।                                   
অর্ধরাত্রে আজি
               
গোপনে লইয়া তারে দেবীর চরণে
               
মোর নামে কোরো নিবেদন। তার রক্তে
               
নিবে যাবে দেবরোষানল, স্থায়ী হবে
               
সিংহাসন এই রাজবংশে–পিতৃলোক
               
গাহিবেন কল্যাণ তোমার। বুঝেছ কি?
নক্ষত্ররায়।  
বুঝিয়াছি।
গুণবতী।   
তবে যাও। যা বলিনু করো।
               
মনে রেখো, মোর নামে কোরো নিবেদন।
নক্ষত্ররায়।   তাই হবে। মুকুট লইয়া খেলা! এ কী
               
সর্বনাশ! দেবীর সন্তোষ, রাজ্যরক্ষা,
               
পিতৃলোক–
বুঝিতে কিছুই বাকি নেই।
চতুর্থ দৃশ্য
মন্দিরসোপান
জয়সিংহ
জয়সিংহ।   
দেবী, আছ, আছ তুমি। দেবী, থাকো তুমি।
               
এ অসীম রজনীর সর্বপ্রান্তশেষে
               
যদি থাকো কণামাত্র হয়ে, সেথা হতে
               
ক্ষীণতম স্বরে সাড়া দাও, বলো মোরে
               
"বৎস, আছি'–
নাই, নাই, নাই, দেবী নাই!
               
নাই? দয়া করে থাকো! অয়ি মায়াময়ী
               
মিথ্যা, দয়া কর্, দয়া কর্ জয়সিংহে,
               
সত্য হয়ে ওঠ্। আশৈশব ভক্তি মোর,
               
আজন্মের প্রেম তোরে প্রাণ দিতে নারে?
               
এত মিথ্যা তুই?–
এ জীবন কারে দিলি
               
জয়সিংহ! সব ফেলে দিলি সত্যশূন্য,
               
দয়াশূন্য, মাতৃশূন্য সর্বশূন্য-মাঝে!
                               
অপর্ণার প্রবেশ
               
অপর্ণা, আবার এসেছিস? তাড়ালেম
               
মন্দিরবাহিরে, তবু তুই অনুক্ষণ
               
আশে-পাশে চারি দিকে ঘুরিয়া বেড়াস
               
সুখের দুরাশা-সম দরিদ্রের মনে?
                
সত্য আর মিথ্যায় প্রভেদ শুধু এই!–
               
মিথ্যারে রাখিয়া দিই মন্দিররের মাঝে
               
বহুযত্নে, তবুও সে থেকেও থাকে না।
               
সত্যেরে তাড়ায়ে দিই মন্দিরবাহিরে
               
অনাদরে, তবুও সে ফিরে ফিরে আসে।
               
অপর্ণা, যাস নে তুই–
তোরে আমি, আর
               
ফিরাব না। আয়, এইখানে বসি দোঁহে।
               
অনেক হয়েছে রাত। কৃষ্ণপক্ষশশী
               
উঠিতেছে তরু-অন্তরালে। চরাচর
               
সুপ্তিমগ্ন, শুধু মোরা দোঁহে নিদ্রাহীন।
               
অপর্ণা, বিষাদময়ী, তোরেও কি গেছে
               
ফাঁকি দিয়ে মায়ার দেবতা? দেবতায়
               
কোন্ আবশ্যক! কেন তারে ডেকে আনি
               
আমাদের ছোটোখাটো সুখের সংসারে?
               
তারা কি মোদের ব্যথা বুঝে? পাষাণের
               
মতো, শুধু চেয়ে থাকে! আপন ভায়েরে
               
প্রেম হতে বঞ্চিত করিয়া, সেই প্রেম
               
দিই তারে–
সে কি তার কোনো কাজে লাগে?
               
এ সুন্দরী সুখময়ী, ধরণী হইতে
                
মুখ ফিরাইয়া, তার দিকে চেয়ে থাকি–
               
সে কোথায় চায়? তার কাছে ক্ষুদ্র বটে,
               
তুচ্ছ বটে, তবু তো আমার মাতৃধরা;
               
তার কাছে কীটবৎ, তবু তো আমার
               
ভাই; অবহেলে অন্ধরথচক্রতলে
               
দলিয়া চলিয়া যায়, তবু সে দলিত,
               
উপেক্ষিত, তারা তো আমার আপনার।
               
আয় ভাই, নির্ভয়ে দেবতাহীন হয়ে
               
আরো কাছাকাছি সবে বেঁধে বেঁধে থাকি।
               
রক্ত চাই? স্বরগের ঐশ্বর্য ত্যজিয়া
               
এ দরিদ্র ধরাতলে তাই কি এসেছ?
               
সেথায় মানব নেই, জীব নেই কেহ,
                
রক্ত নেই, ব্যথা পাবে হেন কিছু নেই–
               
তাই স্বর্গে হয়েছে অরুচি? আসিয়াছ
               
মৃগয়া করিতে, নির্ভয়বিশ্বাসসুখে
               
যেথা বাসা বেঁধে আছে মানবের ক্ষুদ্র
               
পরিবারে? অপর্ণা, বালিকা, দেবী নাই!
অপর্ণা।       
জয়সিংহ, তবে চলে এস, এ মন্দির
               
ছেড়ে।
জয়সিংহ।   
যাব, যাব, তাই যাব, ছেড়ে চলে
               
যাব। হায় রে অপর্ণা, তাই যেতে হবে।
               
তবু, যে রাজত্বে আজন্ম করেছি বাস
               
পরিশোধ ক'রে দিয়ে তার রাজকর
               
তবে যেতে পাব। থাক্ ও-সকল কথা।
               
দেখ্ চেয়ে গোমতীর শীর্ণ জলরেখা
               
জ্যোৎস্নালোকে পুলকিত–
কলধ্বনি তার
               
এক কথা শতবার করিছে প্রকাশ।
               
আকাশেতে অর্ধচন্দ্র পাণ্ডুমুখচ্ছবি
               
শ্রান্তিহীন–
বহু রাত্রিজাগরণে যেন
               
পড়েছে চাঁদের চোখে আধেক পল্লব
               
ঘুমভারে। সুন্দর জগৎ! হা অপর্ণা,
               
এমন রাত্রির মাঝে দেবী নাই। থাক্
               
দেবী। অপর্ণা, জানিস কিছু সুখভরা
               
সুধাভরা কোনো কথা? শুধু তাই বল্।
               
যা শুনিলে মুহূর্তে অতলে মগ্ন হয়ে
               
ভুলে যাব জীবনের তাপ, মরণ যে
               
কত মধুরতাময় আগে হতে পাব
               
তার স্বাদ। অপর্ণা, এমন কিছু বল্
               
ওই মধুকণ্ঠে তোর, ওই মধু-আঁখি
               
রেখে মোর মুখপানে, এই জনহীন
               
স্তব্ধ রজনীতে, এই বিশ্বজগতের
               
নিদ্রামাঝে, বল্ রে অপর্ণা, যা শুনিলে
               
মনে হবে চারি দিকে আর কিছু নাই,
               
শুধু ভালোবাসা ভাসিতেছে, পূর্ণিমার
               
সুপ্তরাত্রে রজনীগন্ধার গন্ধসম।
অপর্ণা।        হায় জয়সিংহ, বলিতে পারি নে কিছু–
               
বুঝি মনে আছে কত কথা।
জয়সিংহ।                                   
তবে আরো
               
কাছে আয়। মন হতে মনে যাক কথা।
                
–এ কী করিতেছি আমি। অপর্ণা, অপর্ণা,
               
চলে যা মন্দির ছেড়ে! গুরুর আদেশ!
অপর্ণা।      
জয়সিংহ, হোয়ো না নিষ্ঠুর! বার বার
               
ফিরায়ো না! কী সহেছি অন্তর্যামী জানে!
জয়সিংহ।   
তবে আমি যাই। এক দণ্ড হেথা নহে।
               
কিয়দ্দূর গিয়া ফিরিয়া
               
অপর্ণা, নিষ্ঠুর আমি? এই কি রহিবে
               
তোর মনে, জয়সিংহ নিষ্ঠুর, কঠিন!
               
কখনো কি হাসিমুখে কহি নাই কথা?
               
কখনো কি ডাকি নাই কাছে? কখনো কি
               
ফেলি নাই অশ্রুজল তোর অশ্রু দেখে?
               
অপর্ণা, সে সব কথা পড়িবে না মনে,
               
শুধু মনে রহিবে জাগিয়া জয়সিংহ
               
নিষ্ঠুর পাষাণ? যেমন পাষাণ ওই
                
পাষাণের ছবি, দেবী বলিতাম যারে?–
               
হায় দেবী, তুই যদি দেবী হইতিস,
               
তুই যদি বুঝিতিস এই অন্তর্দাহ!
অপর্ণা।      
বুদ্ধিহীন ব্যথিত এ ক্ষুদ্র নারী-হিয়া
               
ক্ষমা করো এরে। এই বেলা চলে এস,
               
জয়সিংহ, এস মোরা এ মন্দির ছেড়ে
               
যাই।
জয়সিংহ।   
রক্ষা করো! অপর্ণা, করুণা করো!
               
দয়া ক'রে, মোরে ফেলে চলে যাও। এক
               
কাজ বাকি আছে এ জীবনে, সেই হোক
               
প্রাণেশ্বর–
তার স্থান তুমি কাড়িয়ো না।
                                           
[ দ্রুত প্রস্থান
অপর্ণা।       
শতবার সহিয়াছি, আজ কেন আর
               
নাহি সহে! আজ কেন ভেঙে পড়ে প্রাণ!
পঞ্চম দৃশ্য
মন্দির
নক্ষত্ররায় রঘুপতি ও নিদ্রিত ধ্রুব
রঘুপতি।   
কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে। জয়সিংহ
               
এসেছিল মোর কোলে অমনি শৈশবে
               
পিতৃমাতৃহীন। সেদিন অমনি করে
               
কেঁদেছিল নূতন দেখিয়া চারি দিক,
               
হতাশ্বাস শ্রান্ত শোকে অমনি করিয়া
               
ঘুমায়ে পড়িয়াছিল সন্ধ্যা হয়ে গেলে
               
ওইখানে দেবীর চরণে! ওরে দেখে
               
তার সেই শিশু-মুখ শিশুর ক্রন্দন
               
মনে পড়ে।
নক্ষত্ররায়।    ঠাকুর কোরো না দেরি আর–
               
ভয় হয় কখন সংবাদ পাবে রাজা।
রঘুপতি।   
সংবাদ কেমন করে পাবে? চারি দিক
               
নিশীথের নিদ্রা দিয়ে ঘেরা।
নক্ষত্ররায়।   
একবার
               
মনে হল যেন দেখিলাম কার ছায়া!
রঘুপতি।    
আপন ভয়ের।
নক্ষত্ররায়।           
শুনিলাম যেন কার
               
ক্রন্দনের স্বর!
রঘুপতি।                       
আপনার হৃদয়ের।
               
দূর হোক নিরানন্দ। এস পান করি
               
কারণসলিল।
                           
মদ্যপান
                           
মনোভাব যতক্ষণ
                
মনে থাকে, ততক্ষণ দেখায় বৃহৎ–
               
কার্যকালে ছোট হয়ে আসে, বহু বাষ্প
               
গলে গিয়ে একবিন্দু জল। কিছুই না,
               
শুধু মুহূর্তের কাজ। শুধু শীর্ণশিখা
               
প্রদীপ নিবাতে যতক্ষণ। ঘুম হতে
               
চকিতে মিলায়ে যাবে গাঢ়তর ঘুমে
               
ওই প্রাণরেখাটুকু–শ্রাবণনিশীথে
               
বিজুলিঝলক-সম, শুধু বজ্র তার
               
চিরদিন বিঁধে রবে রাজদম্ভ-মাঝে।
               
এস এস যুবরাজ, ম্লান হয়ে কেন
               
বসে আছে এক পাশে–
মুখে কথা নেই,
               
হাসি নেই, নির্বাপিতপ্রায়! এস, পান
               
করি আনন্দসলিল।
নক্ষত্ররায়।                               
অনেক বিলম্ব
               
হয়ে গেছে। আমি বলি, আজ থাক্। কাল
               
পূজা হবে।
রঘুপতি।                   
বিলম্ব হয়েছে বটে। রাত্রি
               
শেষ হয়ে আসে।
নক্ষত্ররায়।                       
ওই শোনো পদধ্বনি।
রঘুপতি।   
কই? নাহি শুনি।
নক্ষত্ররায়।                       
ওই শোনো, ওই দেখো
               
আলো।
রঘুপতি।   
সংবাদ পেয়েছে রাজা! আর তবে
               
এক পল দেরি নয়। জয় মহাকালী!
                           
খড়্গ-উত্তোলন
               
গোবিন্দমাণিক্য ও প্রহরীগণের প্রবেশ
           
রাজার নির্দেশক্রমে প্রহরীর দ্বারা রঘুপতি ও নক্ষত্ররায় ধৃত হইল
গোবিন্দমাণিক্য।   
নিয়ে যাও কারাগারে, বিচার হইবে।