গীতিমাল্য
৯০-৯৯
৯০
আমায় বাঁধবে যদি কাজের ডোরে
কেন পাগল কর এমন ক'রে ?
বাতাস আনে কেন জানি
কোন্ গগনের গোপন বাণী,
পরানখানি দেয় যে ভ’রে
পাগল করে এমন ক’রে।
সোনার আলো কেমনে হে,
রক্তে নাচে সকল দেহে।
কারে পাঠাও
ক্ষণে ক্ষণে
আমার খোলা
বাতায়নে,
সকল হৃদয় লয় যে হ’রে,
পাগল করে এমন ক’রে ॥
২৪ চৈত্র [১৩২০]
৯১
কেন চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেম না
শুকনো ধুলো যতো ?
কে জানিত আসবে
তুমি গো
অনাহূতের মতো।
তুমি পার হয়ে এসেছ মরু,
নাই যে সেথায়
ছায়াতরু,
পথের দুঃখ
দিলেম তোমায়
এমন ভাগ্যহত।
তখন আলসেতে বসে ছিলেম আমি
আপন ঘরের ছায়ে,
জানি নাই যে
তোমার কত ব্যথা
বাজবে পায়ে পায়ে।
তবু ওই বেদনা আমার বুকে
বেজেছিল গোপন
দুখে,
দাগ দিয়েছে
মর্মে আমার
গভীর হৃদয় ক্ষত।
শান্তিনিকেতন
২৪ চৈত্র [১৩২০]
দাও না
ছুটি,
ধর ত্রুটি,
নিই নে কানে।
মন ভেসে
যায় গানে গানে।
আজ যে
কুসুম-ফোটার বেলা,
আকাশে আজ রঙের মেলা,
সকল দিকেই
আমায় টানে
গানে গানে।
কলিকাতা
২৭ চৈত্র [১৩২০]
৯৫
সেদিনে আপদ আমার যাবে কেটে
পুলকে হৃদয় যেদিন পড়বে ফেটে॥
তখন তোমার গন্ধ তোমার মধু
আপনি বাহির হবে বঁধু হে,
তারে আমার ব’লে ছলে বলে
কে বলো আর রাখিবে এঁটে।
আমারে নিখিল ভুবন দেখছে চেয়ে
রাত্রিদিবা।
আমি কি জানি নে তার অর্থ কিবা?
তারা যে জানে আমার চিত্তকোষে
অমৃতরূপ আছে বসে গো,
তারেই প্রকাশ
করি, আপনি মরি,
তবে আমার দুঃখ মেটে।
কলিকাতা
২৭ চৈত্র [১৩২০]
৯৬
মোর প্রভাতের এই প্রথমখনের
কুসুমখানি,
তুমি জাগাও তারে ওই নয়নের
আলোক হানি।
সে যে দিনের বেলায় করবে খেলা হাওয়ায় দুলে,
রাতের অন্ধকারে নেবে তারে বক্ষে তুলে;
ওগো
তখনি তো গন্ধে তাহার
ফুটবে বাণী।
আমার বীণাখানি পড়ছে আজি
সবার চোখে।
হেরো তারগুলি তার দেখছে গুনে
সকল লোকে।
ওগো কখন সে যে সভা ত্যেজে আড়াল হবে,
শুধু সুরটুকু তার উঠবে বেজে করুণ রবে;
যখন
তুমি তারে বুকের ’পরে
লবে টানি।
শান্তিনিকেতন
১ বৈশাখ ১৩২১