পরিশিষ্ট ২
পরিশোধ
 

রবীন্দ্রনাথ-কর্তৃক সম্পাদিত গীতবিতানের পূর্ববর্তী দুই খণ্ডে যে-সব রচনা আছে, তাহাতে কবির রচিত গানের সংকলন সম্পূর্ণ হয় নাই। অবশিষ্ট সমুদয় গান এবং অখণ্ডিত আকারে গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যগুলি তৃতীয় খণ্ডে দেওয়া গেল। অধিকাংশই রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন মুদ্রিত গ্রন্থে, কিছু রবীন্দ্রপাণ্ডুলিপিতে, কিছু সাময়িক পত্রাদিতে নিবদ্ধ ছিল।

            বর্তমান গ্রন্থ-সংকলন ও সম্পাদনের ভার শ্রীকানাই সামন্তকে দেওয়া হইয়াছিল। এই খণ্ডের পরিকল্পনা হইতে মুদ্রণ অবধি সুদীর্ঘ সময়ে শ্রীমতী ইন্দিরাদেবী, শ্রীঅনাদিকুমার দস্তিদার, শ্রীপুলিনবিহারী সেন, শ্রীশান্তিদেব ঘোষ ও শ্রীশৈলজারঞ্জন মজুমদার নানা তথ্য ও নানা সন্ধান দিয়া, নানা সংশয়ের নিরসন করিয়া, বহু সাহায্য করিয়াছেন। ফলতঃ প্রত্যেক পদে তাঁহাদের এরূপ অকুণ্ঠিত সাহায্য না পাওয়া গেলে, এই গ্রন্থপ্রকাশের আশু কোনো সম্ভাবনা ছিল না।

            ইহা ছাড়া, শ্রীঅমিয়চন্দ্র চক্রবর্তী, শ্রীঅহীন্দ্র চৌধুরী, শ্রীক্ষিতিমোহন সেন, শ্রীধীরেন্দ্রনাথ দাস, শ্রীনিত্যানন্দবিনোদ গোস্বামী, শ্রীপ্রফুল্লকুমার দাস, শ্রীপ্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, শ্রীশোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীসুকুমার সেন ও শ্রীসুধীরচন্দ্র কর বিভিন্ন প্রশ্নের সদুত্তর দিয়া এবং শ্রীমতী অরুন্ধতী চট্টোপাধ্যায়, শ্রীঅশ্বিনী কুমার দাশগুপ্ত, শ্রীতপনমোহন চট্টোপাধ্যায়, শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীযোগেশচন্দ্র বাগল ও শ্রীসনৎকুমার গুপ্ত কয়েকখানি দুর্লভ গ্রন্থ দেখিবার সুযোগ দিয়া নানা ভাবে সম্পাদনকার্যে আনুকূল্য করিয়াছেন। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ এবং সাধারণ-ব্রাহ্ম-সমাজের পাঠাগার হইতে কয়েকখানি প্রয়োজনীয় গ্রন্থ দেখিবার সুযোগ হইয়াছে। বিশ্বভারতী-গ্রন্থনবিভাগ ইহাদের সকলকেই কৃতজ্ঞতা জানাইতেছেন। বিশেষ বিষয়ে যাঁহার নিকটে বা যে রচনা হইতে সাহায্য পাওয়া গিয়াছে, গ্রন্থপরিচয়ে যথাস্থানে তাহা জানানো হইল।  ইতি

            আশ্বিন ১৩৫৭

                                                                        শ্রীচারুচন্দ্র ভট্টাচার্য

তৃতীয়খণ্ড গীতবিতানের বর্তমান সংস্করণের প্রণয়ন-ব্যাপারে শ্রীঅনাদিকুমার দস্তিদার, শ্রীপ্রফুল্লকুমার দাস, শ্রীবিশ্বজিৎ রায় ও শ্রীশোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায় নানা সময়ে গ্রন্থসম্পাদককে নানারূপ সাহায্য করেন এবং শ্রীশান্তিদেব ঘোষ কয়েকটি প্রশ্নের সদুত্তর জানাইয়া  তাঁহাকে বিশেষভাবে বাধিত করিয়াছেন।

            শ্রাবণ ১৩৬৪

তৃতীয়খণ্ড গীতবিতানের বর্তমান সংস্করণে (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ) ‘নাট্যগীতি’ বিভাগে ৪টি গান (১০৩-১০৬ সংখ্যক) ও ‘প্রেম ও প্রকৃতি’ বিভাগে ১টি (৮৯-সংখ্যক) গান রবীন্দ্রসদনে সংরক্ষিত বিভিন্ন রবীন্দ্র পাণ্ডুলিপি হইতে নূতন সংকলন করা হইয়াছে। পূর্বোক্ত গীতচতুষ্টয় শ্রীশোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের সৌজন্যে আমাদের গোচরীভূত।

            শ্রাবণ ১৩৬৭

বর্তমান সংস্করণে নূতন যোগ করা হইল- ৫৯১ পৃষ্ঠার ৭৯-সংখ্যক গান: বুঝি ওই সুদূরে ডাকিল মোরে ইত্যাদি।

            ২২ শ্রাবণ ১৩৭১

গীতবিতান তৃতীয় খণ্ডের বর্তমান সংস্করণে ভগ্নহৃদয়-ধৃত বা ভগ্নহৃদয় হইতে রূপান্তরিত গানগুলি (পৃ ৫২৯-৩৪/ সংখ্যা ৩-১৯) একত্র দেওয়ায়, অনেক গানের সন্নিবেশে পূর্ব সংস্করণ হইতে বহু পার্থক্য ঘটিয়াছে। তাহা ছাড়া, ‘মুখের হাসি চাপলে কি হয়’ গানটি বর্জিত, এ সম্পর্কে যাহা কিছু তথ্য ৬৭০ অঙ্কিত পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য।

            ২৫ বৈশাখ ১৩৭৬

বর্তমান সংস্করণে যে গানগুলি নূতন যোগ করা হইল তাহাদের সূচনা (প্রথম ছত্র) এরূপ-

            আনে জাগরণ মুগ্ধ চোখে                   পৃ ৬৮৮

            আমরা কত দল গো কত দল                  ৬৮১

            উদাসিনী সে বিদেশিনী কে                      ৬২৭

            গন্ধরেখার পন্থে তোমার শূন্যে গতি           ৬২৪

            সন্ন্যাসী,/ধ্যানে নিমগ্ন নগ্ন তোমার চিত্ত        ৬২৩

প্রত্যেক গান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পরবর্তী গ্রন্থপরিচয়ে যথাস্থানে দ্রষ্টব্য। গীতবিতানের বর্তমান সংস্করণ- প্রণয়নে শ্রীকানাই সামন্তকে নানাভাবে সাহায্য করিয়াছেন শ্রীপুলিনবিহারী সেন ও শ্রীপ্রফুল্লকুমার দাস।

            পৌষ ১৩৭৯

 

            জ্ঞাতব্যপঞ্জী

 

রবীন্দ্রনাথের গানের সংকলন               ৬৬৩

অন্যান্য বিশিষ্ট আকর গ্রন্থ                  ৬৬৬

বর্তমান গীতবিতানে বর্জিত গান           ৬৬৭

দ্বিতীয় সংস্করণের বিজ্ঞাপন                 ৬৭১

প্রথম-দ্বিতীয় খণ্ডের বিষয়বিন্যাস          ৬৭১

 

            গ্রন্থপরিচয়

 

তৃতীয় খণ্ড সম্পর্কে              ৬৭৩

সাধারণভাবে                     ৬৯৮

সংযোজন-সংশোধন             ৭০৬

 

            জ্ঞাতব্যপঞ্জী

   রবীন্দ্রনাথের গানের সংকলন

এই তালিকায় অনুষ্ঠানপত্রাদি ধরা হয় নাই

 

১. ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ১২৯১

২. রবিচ্ছায়া যোগেনন্দ্রনারায়ণ মিত্র-কর্তৃক প্রকাশিত। বৈশাখ ১২৯-২১

    অনেকগুলি গানে রাগ রাগিণীর নাম লেখা নাই। সে গানগুলিকে এখনও সুর বসান হয় নাই।...

            ‘এই গ্রন্থে প্রকাশিত অনেকগুলি গান আমার দাদা- পূজনীয় শ্রীযুক্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের সুরের অনুসারে লিখিত হয়। অনেকগুলি গানে আমি নিজে সুর বসাইয়াছি, এবং কতকগুলি গান হিন্দুস্থানী গানের সুরে বসান হয়’

                                                                                                            -রচয়িতার নিবেদন। রবীন্দ্রনাথ

৩. গানের বহি ও বাল্মীকিপ্রতিভা বৈশাখ ১৮১৫ শক। বাংলা ১৩০০ সাল। সংক্ষেপে ‘গানের বহি’ রূপে উল্লিখিত।

    ‘১-চিহ্নিত গানগুলি২ আমার পূজনীয় অগ্রজ শ্রীযুক্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের রচিত।

     ২-চিহ্নিত গানের সুর হিন্দুস্থানী হইতে লওয়া। আমার স্বরচিত অথবা প্রচলিত সুরের গানে কোন চিহ্ন দেওয়া হয় নাই।’

                                                                                                -সূচীপত্র-সূচনা। রবীন্দ্রনাথ

৪. কাব্যগ্রন্থাবলী সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় প্রকাশিত। আশ্বিন ১৩০৩

    ‘গীতিগ্রন্থ ও গীতিনাট্য ব্যতীত এই গ্রন্থাবলীর অন্যান্য পুস্তকে যে সকল গান...সূচিপত্রে তাহাদিগকে তারা-চিহ্নিত করিয়া দেওয়া গেল।’

                                                                                                -ভূমিকা। রবীন্দ্রনাথ

৫. কাব্যগ্রন্থ মোহিতচন্দ্র সেন-সম্পাদিত। অষ্টম ভাগ। ১৩১০৩

৬. রবীন্দ্র-গ্রন্থাবলী হিতবাদীর উপহার। ১৩১১

৭. বাউল জাতীয় সংগীতের সংকলন। সেপ্টেম্বর ১৯০৫

৮. গান যোগীন্দ্রনাথ সরকার-কর্তৃক প্রকাশিত। সেপ্টেম্বর ১৯০৮

৯. গান ইন্ডিয়ান প্রেস। ১৯০৯

    ‘ কিশোরকালের সকল শ্রেষ্ঠ গান হইতে আরম্ভ করিয়া এ পর্যন্ত যত গান রচনা হইয়াছে, সমস্ত প্রকাশ করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে। কিন্তু সম্পূর্ণ কৃতকার্য হইতে পারি নাই।... অনেক গানে এখনো সুর বসানো হয় নাই... বাল্মীকিপ্রতিভা ও মায়ার খেলার গান গুটিকয়েক বিবিধ সঙ্গীতের মধ্যে দ্বিতীয়বার সন্নিবেশিত [এরূপ অন্য গানও প্রচুর]... এই পুস্তকে সাতশত সাতাশটি গান আছে’ ৪

                                                                             -প্রকাশকের নিবেদন

১০. গীতাঞ্জলী শ্রাবণ ১৩১৭

১১. গীতিমাল্য জুলাই ১৯১৪

১২. গান সেপ্টেম্বর ১৯১৪

১৩. গীতালী ১৯১৪

১৪. ধর্ম্মসঙ্গীত ডিসেম্বর ১৯১৪

১৫. কাব্যগ্রন্থ ইন্ডিয়ান প্রেস। প্রথম ভাগ: ১৯১৫। দশম ভাগ: ১৯১৬

১৬. প্রবাহিণী অগ্রহায়ণ ১৩৩২

১৭. গীতিচর্চ্চা দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর-কর্তৃক সম্পাদিত। পৌষ ১৩৩২

      ‘পূজনীয়’ মহর্ষিদেবের ও পূজনীয় দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের দুইটি গান, তিনটি বেদগানও এই স্থানে সন্নিবেশিত করা হইল।‘ ৫

                                                                                                                        -প্রকাশের নিবেদন

১৮. ঋতু-উৎসব ১৩৩৩। শেষবর্ষণ শারদোৎসব বসন্ত সুন্দর ও ফাল্গুনী এই পাঁচখানি গীতিগ্রন্থ বা গীতপ্রধান গ্রন্থের সংকলন।

১৯. বনবাণী আশ্বিন ১৩৩৮। ইহার ‘নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা’ ও পরবর্তী অংশে বহু গান আছে।

২০. গীতবিতান প্রথম সংস্করণ। প্রথম-দ্বিতীয় খণ্ড: আশ্বিন ১৩৩৮

                                                তৃতীয় খণ্ড: শ্রাবণ ১৩৩৯

২১. গীতবিতান দ্বিতীয় সংস্করণ। প্রথম-দ্বিতীয় খণ্ড: মাঘ ১৩৪৮

      যথাক্রমে ১৩৪৫ ভাদ্রে ও ১৩৪৬ ভাদ্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ৬ খণ্ডের মুদ্রণ শেষ হইয়াছিল। প্রথম খণ্ডের গীতিভূমিকা ‘প্রথম যুগের উদয়দিগঙ্গনে’ ঐ গ্রন্থে ছিল না। উত্তরকালে দুই খণ্ডে নূতন আখ্যাপত্র ও প্রথমখণ্ডে গীতভূমিকা সংযোজিত।

 

                        রবীন্দ্রনাথের গানের সংকলন: টীকা

১. কবি বলেন: বিস্মৃত বাল্যকালের মুহূর্ত্ত-স্থায়ী সুখ দুঃখের সহিত দুইদণ্ড খেলা করিয়া কে কোথায় ঝরিয়া পড়িয়াছিল... এ গানগুলি আজ সাত আট বৎসর ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িয়া আছে, আমি ছাপাইতে চেষ্টা করি নাই।

‘প্রকাশকের বক্তব্য’-শেষে আছে: ১২৯১ সনের শেষ দিন পর্যন্ত রবীন্দ্রবাবু যতগুলি সঙ্গীত রচনা করিয়াছেন প্রায় সেগুলি সমস্তই এই পুস্তকে দেওয়া গেল।

২. স্পষ্টই মুদ্রণপ্রমাদ। ‘গানগুলি স্থলে ‘গানগুলির সুর’ হইবে।

৩. মোহিতচন্দ্র সেন সম্পাদিত অষ্টম ভাগ কাব্যগ্রন্থ ১৩১০ বঙ্গাব্দে মুদ্রিত বা প্রকাশিত এই তথ্য উক্ত গ্রন্থের আখ্যাপত্র-অনুযায়ী ঠিক হইলেও সম্পূর্ণ সত্য নহে। অষ্টম ভাগের প্রায় শেষে (৩২৩-৩১ পৃষ্ঠায়) সন্নিবিষ্ট- ‘মন তুমি নাথ লবে হরে’ ‘যে কেহ মোরে দিয়েছ সুখ’ ‘গরব মম হবেছ প্রভু’ ইত্যাদি অন্তত আটটি গান যে ১৩১১ বঙ্গাব্দের ২০ জ্যৈষ্ঠ হইতে ২৩ আষাঢ়ের মধ্যে রচিত তাহা শ্রীসমীরচন্দ্র মজুমদার-সংরক্ষিত রবীন্দ্রপাণ্ডুলিপি দেখিয়া জানা যায়। মনে হয় শেষ ১৬ পৃষ্ঠার একটি ফর্মা এবং আরো ১ পাতা বা ২ পৃষ্ঠা বাদে সমুদয় গ্রন্থ ১৩১০ সালেই ছাপা হইয়া থাকিবে।

৪. ‘গান’ এর এই দ্বিতীয় সংস্করণ বড়োই রহস্যময়। ইহার বিভিন্ন প্রতি মিলাইতে গিয়া দেখা গেল –সূচিপত্রসহ সমগ্র গ্রন্থের মুদ্রণ সারা হইলে, বহু গান বর্জনের ও সেই স্থলে নূতন গান সন্নিবেশের প্রয়োজন হয় এবং এজন্য স্পষ্টতই অনেকগুলি পাতা নূতন ছাপা হয়; সমস্ত সূচিপত্র পুনর্বার ছাপা সত্ত্বেও বহু বর্জিত গানের উল্লেখ থাকে, সেগুলি অধিকাংশই ছিল অন্যের রচনা। পরবর্তী ‘বর্জিত গান’ এর তালিকায় চিহ্ন দিয়া বুঝানো হইয়াছে যে, y চিহ্নিত রচনা অপরিবর্তিত ‘গান’ (১৯০৯) গ্রন্থে থাকিলেও, পরিবর্তিত ও বহুপ্রচারিত কপিগুলিতে নাই- উহার ‘সংশোধিত’ সূচিপত্রে থাক্ বা না’ই থাক্।

  এই গ্রন্থের পরবর্তী সংস্করণসমূহে এক অংশ ‘ধর্ম্মসঙ্গীত’ এবং অবশিষ্ট অংশ ‘গান’ নামে পৃথকভাবে প্রকাশিত। সুতরাং ‘গান’ এই নামের পরবর্তী গ্রন্থ প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণের অখণ্ড ‘গান’ হইতে বহুশঃ ভিন্ন।

৫. জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘বিমল প্রভাতে’ ইত্যাদি গানটিও আছে।

৬. এই খণ্ডের পরিশিষ্ট-ধৃত গান-দুটির মেক-আপ প্রুপ শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রসদনে সংরক্ষিত, তাহাতে তারিখ: 5/9/39 [১৯ ভাদ্র ১৩৪৬]

 

                        অন্যান্য বিশিষ্ট আকর গ্রন্থ

১. জাতীয় সঙ্গীত প্রথম ভাগ। দ্বিতীয় সংস্করণ। সেপ্টেম্বর ১৮৭৮

২. ভারতীয় সঙ্গীত মুক্তাবলী সংক্ষেপে ‘সঙ্গীতমুক্তাবলী’।

    নবকান্ত চট্টোপাধ্যায়-সংকলিত। প্রথম ভাগ। তৃতীয় সংস্করণ। ১৩০০

৩. ব্রহ্মসঙ্গীত ও সঙ্কীর্ত্তন প্রসন্নকুমার সেন-সংকলিত?১

৪. ব্রহ্মসঙ্গীত সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ। বিশেষভাবে সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী-কর্তৃক সংশোধিত ও সম্পাদিত একাদশ সংস্করণ (মাঘ ১৩৩৮) দেখা হইয়াছে। ‘ব্রহ্মসঙ্গীত’ উল্লেখ-মাত্রে সর্বত্র উক্ত গ্রন্থই বুঝিতে হইবে।

৫. ব্রহ্মসঙ্গীত ও সঙ্কীর্ত্তন নববিধান। দ্বাদশ সংস্করণ। ১৯৩৩

৬. বাঙ্গালীর গান বঙ্গবাসী। দুর্গাদাস লাহিড়ী-সংকলিত। ১৩১২ এই গ্রন্থে তথ্যের ও মুদ্রণের প্রমাদ অত্যন্ত বেশি।

-------------------------------------

১. স্থলিত-আখ্যাপত্র এই নামের একখানি গ্রন্থ দেখা হইয়াছে। ইহাকে আভ্যন্তরিক প্রমাণে, প্রসন্নকুমার সংকলিত এবং নববিধান-প্রকাশিত গ্রন্থের কোনো-এক সংস্করণ মনে হয়; দ্বাদশ সংস্করণের পূর্ববর্তী।

 

                        বর্তমান গ্রন্থে বর্জিত গান

         

          গানের সূচনা                     ০প্রথমসংস্করণ গীত-                       রচয়িতা

যে গ্রন্থে রবীন্দ্রগীত-রূপে প্রচার           বিতানের (খ) পরিশিষ্টে                    তৎ-সম্পর্কিত প্রমাণ

 

অন্তরের ধন প্রাণরঞ্জন স্বামী ১           নাই                                            জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

ব্রহ্মসঙ্গীত। নাম নাই                                                                         ১বীণাবাদিনী ১২/১৩০৪/২৪৩

২স্বর ৮(১৩৫৬)। শুদ্ধিপত্র দ্রষ্টব্য                                                          সঙ্গীতপ্রকাশিকা ৪/১৩১৫/২২১

আজ তোমায় ধরব চাঁদ ২                নাই                                            অ [অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী]

প্রকৃতির প্রতিশোধ                                                                           স্বরলিপি-গীতমালা

আজি এ সন্তান দুটি ৩                     নাই                                            ‘শুভদিনে এসেছে দোঁহে’

ব্রহ্মসঙ্গীত                                                                                     গানের পাঠান্তর

আজি কি হরষসমীর বহে ৪              নাই                                            দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর

                                                                                                ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৬

                                                                                                ব্রহ্মসঙ্গীত

yআমি সকলি দিনু ৫                     *চিহ্নিত                                      ইন্দিরা দেবী৩

কাব্যগ্রন্থ (১৩১০)। গান (১৯০৯)                                                         শতগান। ব্রহ্মসঙ্গীত

 

আর গো কত ঘুরি ৬                       নাই                                            দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর

দ্বিতীয়সংস্করণ গীতবিতান                                                                  ৪ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি৩

yএ কি এ মোহের ছলনা ৭              *চিহ্নিত                                      জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

গান (১৯০৯)                                                                                            ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি২

                                                                                                 সঙ্গীত প্রকাশিকা ৯/১৩১০/৭৯

এ কী ভুলে  রয়েছ মন ৮                 নাই                                            নিমাইচরণ মিত্র

কাব্যগ্রন্থ (১৩১০)                                                                           সঙ্গীতমুক্তাবলী

এ ভব-কোলাহল ৯                        নাই                                            ‘চলেছে তরণী প্রসাদপবনে’

বাঙ্গলীর গান                                                                                  গানের শেষ অংশ

yএসো দয়া গলে যাক ১০              *চিহ্নিত                                       ইন্দিরা দেবী৩

গান (১৯০৯)                                                                                  ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৫

yওই-যে দেখা যায় আনন্দধাম ১১     নাই                                              জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

কাব্যগ্রন্থ (১৩১০)। গান (১৯০৯)                                                             ব্রহ্মসঙ্গীত

প্রথমসংস্করণ গীতবিতান                                                                      সঙ্গীতপ্রকাশিকা ১/১৩১১/৬৪১

yকতদিন গতিহীন ১২                    *চিহ্নিত                                         জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

গান (১৯০৯)                                                                                     ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৫     

 

০ উক্ত গ্রন্থে ‘বাদ-দেওয়া গানের তালিকা’ বা পরিশিষ্ট (খ). পৃ ৫৯৩-৫৯৭ দ্রষ্টব্য। যে গানগুলি রবীন্দ্রনাথের রচিত নয় বলিয়া অনুমান করা হইয়াছিল ওই তালিকায় সেগুলি তারা-চিহ্নিত হইয়াছে।

১. সাময়িক পত্রের উল্লেখের আনুষঙ্গিক সংখ্যাগুলি যথাক্রমে মাস বৎসর ও পৃষ্ঠাঙ্ক-সূচক। ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’র বৎসর-গণনা অকাব্দে।

২. স্বর= স্বরবিতান। গ্রন্থোত্তর সংখ্যা সর্বদাই গ্রন্থের খণ্ড-বাচক।

৩. রচনা নিজের বলিয়া স্বীকার করেন।

৪. দ্রষ্টব্য দশম পাদটীকা, পৃ ৬৭০

y দ্রষ্টব্য চতুর্থ টীকা, পৃ ৬৬৫

 

         গানের সূচনা                                    ০প্রথমসংস্করণ গীত             রচয়িতা

যে গ্রন্থে রবীন্দ্রগীত-রূপে প্রচার           বিতানের (খ) পরিশিষ্টে         তৎ-সম্পর্কিত প্রমাণ

 

কে আমার সংশয় মিটায় ১৩             নাই                                সুরের উল্লেখ নাই

রবিচ্ছায়া                                                                          গান নহে

y কেন আনিলে গো ১৪                  আছে                              জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

গান (১৯০৯)                                                                    ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৬

                                                                                    সঙ্গীতপ্রকাশিকা ১২/১০/১২৩

গভীর-বেদনা-অস্থির প্রাণ ১৫                        নাই                                দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর

ব্রহ্মসঙ্গীত                                                                         প্রবাসী ১২/১৩৪৬/৮১৮

                                                                                    সাহিত্য-সাধক-রচিত-

                                                                                    মালা ৬৬, পৃ ২৫

y চিত মন তব পদে ১৬                 *চিহ্নিত                          জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

গান (১৯০৯)                                                                    ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৬

ছাড়িব আজি জীবনতরণী ১৭               নাই                              দয়ালচন্দ্র ঘোষ

                                                                                    ব্রহ্মসঙ্গীত ও সঙ্কীর্ত্তন

                                                                                    (১৯৩৩)

y   ছেলেখেলা কোরো না লো ১৮        *চিহ্নিত                          সুরের উল্লেখ নাই

রবিচ্ছায়া। গান (১৯০৯)                                                        গান নহে

 

              

y  জীবন বৃথায় চলে গেল রে                        আছে                              জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

গান (১৯০৯)                                                                    ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৫

                                                                                    সঙ্গীতপ্রকাশিকা

                                                                                    ৯/১৩১৪/৮২

জীবনবল্লভ তুমি দীনশরণ ২০            নাই                                পুণ্ডরীকাক্ষ মুখোপাধ্যায়

                                                                                    ব্রহ্মসঙ্গীত। ব্রহ্মসঙ্গীত ও

                                                                                    সঙ্কীর্ত্তন (১৯৩৩)

y  ডাকি তোমারে কাতরে ২১            আছে                              জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

গানের বহি। কাব্যগ্রন্থাবলী                                                      ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৩

রবীন্দ-গ্রন্থাবলী

y  তাঁরে রেখো রেখো ২২                *চিহ্নিত                          ইন্দিরা দেবী৩

ব্রহ্মসঙ্গীত। গান (১৯০৯)                                                       প্রবাসী ১১/১৩১১/৬২৪

y  তুমি আদি অনাদি ২৩                 *চিহ্নিত                          জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

গান (১৯০৯)                                                                    ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৫

                                                                                    সঙ্গীতপ্রকাশিকা

                                                                                    ৯/১৩১৪/৭৯

 

y  তোমা বিনা কে আর করে ২৪         *চিহ্নিত                          জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

গান (১৯০৯)                                                                    সঙ্গীতপ্রকাশিকা

                                                                                    ৭/১৩১৪/৩৯

তোমারি জয়, তোমারি জয় ২৫          নাই                                কৈলাশচন্দ্র সেন

দ্রষ্টব্য চতুর্থ টীকা, পৃ ৬৬৫

                                                   

           

         গানের সূচনা                                    ০প্রথমসংস্করণ গীত             রচয়িতা

যে গ্রন্থে রবীন্দ্রগীত-রূপে প্রচার           বিতানের (খ) পরিশিষ্টে         তৎ-সম্পর্কিত প্রমাণ

 

ব্রহ্মসঙ্গীত ও সঙ্কীর্ত্তন                                                ব্রহ্মসঙ্গীত ব্রহ্মসঙ্গীত ও

                                                                        সঙ্কীর্ত্তন (১৯৩৩)

দরশন দাও হে প্রভু ২৬                   নাই                    জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

সাধনা ১১/১২৯৮/৩১৯ নাম নাই                                  জ্যোতিরিন্দ্রনাথের লেখা

ব্রহ্মসঙ্গীত                                                             স্বরলিপি ও গানের খসড়া ৫

দীন দয়াময়, ভুলো না ২৭               নাই                    প্রথম প্রকাশের কালে

ব্রহ্মসঙ্গীত                                                             রবীন্দ্রনাথের বয়স ১২।

তত্ত্ববোধিনী ৬/১৭৯৪/৯৩                                          রবীন্দ্রনাথ বলেন-

রচয়িতার নাম নাই                                                  জ্যোতিরিন্দ্রনাথের রচনা।

                                                                         শনিবারের চিঠি

                                                                         ১০/১৩৪৬/৫৯১-৯২

দুজনে মিলিয়া যদি ২৮                   নাই                    সুরের উল্লেখ নাই

রবিচ্ছায়া                                                              গান নহে

নিকটে নিকটে থাকো হে ২৯             নাই                    জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

ব্রহ্মসঙ্গীত                                                             তাঁহার হাতের স্বরলিপি

                                                                         ও গানের খসড়া৫

নিঝর মিশিছে তটনীর ৩০                *চিহ্নিত              সুরের উল্লেখ নাই

রবিচ্ছায়া। গান (১৯০৯)                                            গান নহে

                       

y  নিরঞ্জন নিরাকার                        *চিহ্নিত              জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

গান (১৯০৯)                                                        ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৩

                                                                         ব্রহ্মসঙ্গীত

y  প্রভু দয়াময় ৩২                       *চিহ্নিত              জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবিচ্ছায়া। গান (১৯০৯)                                            তত্ত্ববোধিনী ৬/১৮৩৭/১১৫

বিপদভয়বারণ ৩৩                                    নাই                   যদু ভট্ট। ব্রহ্মসঙ্গীত

ব্রহ্মসঙ্গীত ও সঙ্কীর্ত্তন                                                ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ১

                       

y  বিমল প্রভাতে মিলি ৩৪              নাই                   জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

বৈতালিক। গীতিচর্চ্চা                                                            ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৫

ব্রহ্মসঙ্গীত। গান (১৯০৯)                                           স্বরলিপি ও গানের খসড়া৫

                                                                         সঙ্গীতপ্রকাশিকা

                                                                         ৯/১৩১৪/৬৭

ব্যথাই আমায় আনল ৩৫                 নাই                   অমিয়চন্দ্র চক্রবর্তী

ব্রহ্মসঙ্গীত                                                             লেখক-কর্তৃক স্বীকৃত

y  ভবভয়হর প্রভু ৩৬                    *চিহ্নিত              জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

৫ জ্যোতিরিন্দ্র-পাণ্ডুলিপিতে হিন্দি গানের সুরে বাংলা কথা বসানো। যে স্বরলিপিগুলির বাংলা কথার অংশে অল্পবিস্তর কাটাকুটি আছে সেগুলিকেই খসড়া বলা চলে; হাতের লেখা যাঁহার রচনাও তাঁহারই। রবীন্দ্রনাথের প্রখ্যাত কয়েকটি রচনার খসড়া রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখায় পাওয়া যায়।

                                               

                                   

গানের সূচনা                                 ০প্রথমসংস্করণ গীত             রচয়িতা

যে গ্রন্থে রবীন্দ্রগীত-রূপে প্রচার           বিতানের (খ) পরিশিষ্টে         তৎ-সম্পর্কিত প্রমাণ

           

গান (১৯০৯)                                                                    ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি ৫

মায়ের বিমল যশে ৩৭                    নাই                                সুরের উল্লেখ নাই

রবিচ্ছায়া                                                                          গান নহে

৬  মুখের হাসি চাপলে কি হয় ৩৮      নাই                                কেদারনাথ চৌধুরী[?]

৭  রাজা বসন্ত রায়                                                              ৯ প্রভাত-রবি, পত্র ১৮-১৯

৮  সঙ্গীতপ্রকাশিকা ২/১৩১২/১৯৭                                            দেশ, ২৮ বৈশাখ ১৩৭৫

৬  গীতবিতান (১৩৫৭-১৩৭৩)                                                সাহিত্যসংখ্যা। পৃ ১৫২

                          

                  

৬.  গীতবিতানের পূর্বসংস্করণগুলিকে এই গান ও এ সম্পর্কে বহু তথ্য গ্রন্থপরিচয় অংশে দ্রষ্টব্য। বিশেষ জ্ঞাতব্য এই যে, এ গানের ভাব ভাষার ইঙ্গিত লেখক রবীন্দ্ররচনা হইতেই সংগ্রহ করিয়াছেন:

                        হাসিরে পায়ে ধোরে             রাখিবি কেমন করে,

                        হাসির যে প্রাণের সাধ           ঐ অধরে খেলা করে!

দ্রষ্টব্য:  ভারতী ৯/১২৮৮/৪৩০। কলম ২/ বউঠাকুরানীর হাট, প্রচলিত সংস্করণ, পরিচ্ছেদ ৮।– রবীন্দ্রনাথ উত্তরকালে (১৩১৫-১৬ বঙ্গাব্দে) প্রায়শ্চিত্তে ইহার সার্থক ও সম্পূর্ণ রূপ দেন: হাসিরে কি লুকাবি লাজে ইত্যাদি।

৭.  কেদারনাথ চৌধুরী বউঠাকুরানীর হাট উপন্যাসের এই নাট্যরূপ দেন জানা যায়; এই নাটকের উল্লেখও আছে বউঠকুরানীর হাট উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণের (১৮৮৭ খৃঃ অঃ) আখ্যাপত্রে। মুদ্রিত আকারে ‘রাজা বসন্ত রায়’ পাওয়া যায় না।

৮.  জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-সম্পাদিত।

৯.  ‘মুখের হাসি চাপলে কি হয়’ রবীন্দ্রনাথের গান নহে এ পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ ইতঃপূর্বে পাওয়া যায় নাই। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথ-লিখিত পত্র না পাওয়া গেলেও, তাঁহাকে লিখিত প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের পত্রেই এ সম্পর্কে নিঃসংশয় হাওয়া যায়।

১০.  দ্বিতীয় সংস্করণে গানের সংখ্যা ১৪৪ ছিল; তন্মধ্যে ১৪২-সংখ্যক রচনা (আর গো কত ঘুরি। পৃ ১৯৯) বর্তমানে বর্জিত হইল। ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপির তৃতীয় খণ্ডে এই গান (সংখ্যা ৬) রবীন্দ্রনাথের নামে মুদ্রিত, পরে চিরকুটে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ছাপাইয়া সংশোধিত- এরূপ গ্রন্থ দেখা গিয়াছে। শ্রীমতী ইন্দিরাদেবীর অভিমতও এই সংশোধনেরই অনুকূলে।

১১.  বর্তমান মুদ্রণে এই গীতিগুচ্ছ দ্বিতীয় খণ্ডে আনুষ্ঠানিক সংগীতের প্রথম পর্যায়রূপে সংকলিত। কবির বহু গীতিসংকলনে এই গান বা এরূপ গান সংগত কারণেই অনুষ্ঠানসংগীত-রূপে গণ্য হইয়া আসিতেছে।

১২.  ১৩৪৬ ভাদ্রে গ্রন্থমুদ্রণ প্রায় শেষ হইবার পর রচিত হওয়ায় পরিশিষ্টে দেওয়া হয়। বর্তমানে তৃতীয় খণ্ডের যথোচিত স্থানে সংকলিত। এই দুটি গান সম্পর্কে পৃ ৬৬৫-ধৃত টীকা ৬ দ্রষ্টব্য।

 

                                    দ্বিতীয় সংস্করণের

                                    বিজ্ঞাপন

গীত-বিতান যখন প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল তখন সংকলন কর্তারা সত্বরতার তাড়নায় গানগুলির মধ্যে বিষয়ানুক্রমিক শৃঙ্খলা বিধান করতে পারেননি। তাতে কেবল যে ব্যবহারের পক্ষে বিঘ্ন হয়েছিল তা নয়, সাহিত্যের দিক থেকে রসবোধেরও ক্ষতি করেছিল। সেই জন্যে এই সংস্করণে ভাবের অনুষঙ্গ রক্ষা করে গানগুলি সাজানো হয়েছে। এই উপায়ে, সুরের সহযোগিতা না পেলেও, পাঠকেরা গীতিকাব্যরূপে এই গানগুলি অনুসরণ করতে পারবেন।

                                                            রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

                                    রবীন্দ্র-সম্পাদিত

                             গীতবিতানের বিষয়বিন্যাস

 

ভাগ                               গীতসংখ্যা                                    ইদানীন্তন

                                                                        গীতবিতানের পৃষ্ঠা

ভূমিকা                            ১                                  ১

পূজা                                                      

গান                                ৩২                                ৫-১৪

বন্ধু                                ৫৯                                ১৪-৩১

প্রার্থনা                             ৩৬                                ৩১-৪২

বিরহ                              ৪৭                                ৪২-৫৭

সাধনা ও সংকল্প                ১৭                                ৫৭-৬১

দুঃখ                               ৪৯                                ৬১-৭৪

আশ্বাস                            ১২                                ৭৪-৭৭

অন্তর্মুখে                          ৬                                  ৭৮-৭৯

আত্মবোধন                       ৫                                  ৭৯-৮০

জাগরণ                           ২৬                                ৮০-৮৬

নিঃসংশয়                         ১০                                ৮৬-৮৯

সাধক                             ২                                  ৮৯

উৎসব                             ৭                                  ৮৯-৯১

আনন্দ                             ২৫                                ৯১-৯৮

বিশ্ব                                ৩৯                                ৯৮-১০৮

বিবিধ১০                          ১৪৩                              ১০৮-১৪২

সুন্দর                              ৩০                                ১৪২-১৫০

বাউল                             ১৩                                ১৫০-১৫৩

পথ                                ২৫                                ১৫৪-১৬০

শেষ                               ৩৪                                ১৬০-১৬৯

পরিণয়১১                                    ৯                                  ৪২৫-৪২৭

 

                         

ভাগ                               গীতসংখ্যা                                    ইদানীন্তন

                                                                        গীতবিতানের পৃষ্ঠা

 

স্বদেশ                             ৪৬                                ১৭৩-১৮৯

প্রেম                                                                              

গান                                ২৭                                ১৯৩-১৯৯

প্রেমবৈচিত্র্য                      ৩৬৮                              ২০০-২৯৬

প্রকৃতি      

সাধারণ                           ৯                                  ২৯৯-৩০১

গ্রীষ্ম                               ১৬                                ৩০১-৩০৫

বর্ষা                                ১১৫                               ৩০৫-৩৩৬

শরৎ                               ৩০                                ৩৩৬-৩৪৪

হেমন্ত                             ৫                                  ৩৪৫-৩৪৬

শীত                               ১২                                ৩৪৬-৩৪৮

বসন্ত                              ৯৬                                ৩৪৯-৩৭৫

বিচিত্র                             ১৩৮                              ৩৭৯-৪২১

আনুষ্ঠানিক                        ৯                                  ৪২৭-৪২৯

পরিশিষ্ট১২                       ২                                  ৬২৮

 

 

                        তৃতীয় খণ্ডের গ্রন্থপরিচয়

 

রবীন্দ্রনাথের গানের ‘সম্পূর্ণ’ সংগ্রহ প্রচারের উদ্দেশ্যে ‘গীতবিতান’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড) বাংলা ১৩৩৮ সালের আশ্বিনে প্রথম প্রকাশিত হয়; তৃতীয় খণ্ডের প্রকাশ ১৩৩৯ সালের শ্রাবণে। এই সংস্করণে গানগুলি প্রধানতঃ বিভিন্ন গীতগ্রন্থে কালক্রমে সন্নিবেশিত হইয়াছিল। পরে, বিষয়ানুক্রমে সাজাইবার প্রয়োজন বোধ করিয়া কবি গানগুলিকে বিভিন্ন ভাগে ও বিভাগে বিভক্ত করিয়া দেন। এইভাবে সজ্জিত দ্বিতীয়সংস্করণ গীতবিতানের মুদ্রণ ১৩৪৬ সালের ভাদ্রেই সমাধা হয়, কিন্তু নানা কারণে ১৩৪৮ মাঘের পূর্বে বহুল প্রচারিত হয় নাই। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গীত-বিতান দ্বিতীয় সংস্করণ দুই খণ্ডে মুদ্রিত হইয়া যাওয়ার পর কবি আরও অনেকগুলি গান রচনা করিয়াছিলেন। এই সকল গান তৃতীয় খণ্ডে শীঘ্রই প্রকাশিত হইবে। অনবধানতাবশত প্রথম দুই খণ্ডে কতকগুলি গান বাদ পড়িয়াছে; তৃতীয় খণ্ডে ঐ সকল গান সংযোজিত হইবে।’

  বস্তুতঃ ১৩৫৭ আশ্বিনে ওই দীর্ঘ প্রত্যাশিত তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করা সম্ভব হইল। ইহাকে নির্‌ভুল বা নিখুঁত করিতে আরও দীর্ঘকালব্যাপী অনুসন্ধান ও সম্পাদনার প্রয়োজন ছিল। আশা করা যায়, সে কাজ পর পর অনেকগুলি সংস্করণে (১৩৬৪ ভাদ্র-১৩৭৯ পৌষ) কথঞ্চিৎ সমাধা হইয়া থাকিবে। কবির রচিত গানের সংখ্যা অল্প নহে; পাঠভেদ ‘অনন্ত’; মূলতঃ কতগুলি পত্রিকায়, অনুষ্ঠানপত্রে, পাণ্ডুলিপিতে, কবির আপন গ্রন্থে ও অন্যের কৃত সংলকনে এই-সব রচনা বিন্যস্ত বা বিক্ষিপ্ত হইয়া আছে তাহার তালিকাও অতিশয় দীর্ঘ হইবে। কবির প্রথম বয়সে তাঁহার বহু রচনা যেমন অন্যের গ্রন্থে স্থান পাইয়াছে, অন্যের একাধিক রচনা যে তাঁহার গ্রন্থে স্থান পায় নাই এমন নয়; অথচ যথোচিত প্রমাণের অভাবে বা নানা প্রমাণের পরস্পরবিরুদ্ধতায় অনিশ্চয়তা ঘুচে না। সম্পাদন-কার্যে নানা ত্রুটিবিচ্যুতির সম্ভাবনা সব সময়েই আছে।

  যাহা হউক, পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, প্রচলিত গীতবিতানের প্রথম দুইটি খণ্ডে কবির যে গান বর্জিত, যে গান সংকলিত হওয়া সম্ভবপর ছিল না বা প্রমাদবশতঃ সংকলিত হয় নাই, সে-সবই বর্তমান তৃতীয় খণ্ডে গ্রহণ করা হইয়াছে। তাহা ছাড়া পূর্বোক্ত দুই খণ্ডে ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ ও ‘মায়ার খেলা’র মাত্র অল্প কতকগুলি গান বাছিয়া লওয়া হইয়াছিল; বর্তমান তৃতীয় খণ্ডে সম্পূর্ণ ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ ও ‘মায়ার খেলা’ মুদ্রিত হইল। কেবল এই দুইটি গীতিনাট্য নয়, কবির সমুদয় গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যই, যাহার আদ্যন্তই প্রায় সুরে বাঁধা এবং প্রসঙ্গবিচ্ছন্ন হইলে যাহার অনেকাংশের অর্থ বা কবিত্বসৌষ্ঠব-অবধারণে অসুবিধা হইতে পারে, এই সর্বশেষ খণ্ডে সম্পূর্ণতঃ সংকলন করা সংগত মনে হইয়াছে। পরিশিষ্টে ‘নৃত্যনাট্য মায়ার খেলা’ (পাণ্ডুলিপি : পৌষ ১৩৪৫) এবং ‘পরিশোধ’ (প্রবাসী: কার্তিক ১৩৪৩) মুদ্রিত হইল।

 সুধীজনের নিকট বিস্তারিত ভাবে বলা বাহুল্য যে, সংগীতস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির পরিণাম প্রকৃতি ও পরিণতির পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন ও ধারণা করিতে হইলে ‘রবিচ্ছায়া’ ‘গানের বহি’ প্রভৃতি প্রাচীন কোনো গ্রন্থের কবি-রচিত কোনো গানই ত্যাগ করা চলে না। বহু রচনাকে সাধারণে নিছক কবিতা বলিয়া জানিলেও কবির বহু গ্রন্থে সেগুলি সুর-তালের উল্লেখের দ্বারা অভ্রান্তভাবে গীতরূপেও নির্দিষ্ট; সেই গানগুলি এই গ্রন্থে সংকলন করা হইল। মুদ্রিত স্বরলিপির ঠিকানা সূচিতে দেওয়া হইয়াছে; যে ক্ষেত্রে সুরের অথবা সুর ও তালের উল্লেখ মাত্র পাওয়া গিয়াছে, সেই তথ্যই সূচীতে পরিবেশিত।

  তৃতীয় খণ্ড গীতবিতানের গানগুলি সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তথ্যাদি, রচনার সন্নিবেশক্রমে পরে দেওয়া গেল। পার্শবর্তী প্রথম সংখ্যায় এই গ্রন্থের পৃষ্ঠা, আবশ্যকস্থলে পূর্ণচ্ছেদের পরবর্তী সংখ্যায় আলোচ্য গানের সংখ্যা, বুঝানো হইয়াছে।

 

৪৩৫-৫১৫           গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্য কৌতূহলী পাঠক এই নাট্যাবলী সম্পর্কে বহু তথ্য রবীন্দ্র রচনাবলীর বিভিন্ন খণ্ডের গ্রন্থপরিচয়ে দেখিয়া লইবেন। যেমন রবীন্দ্র-রচনাবলীর-

                        ‘অচলিত’ প্রথম খণ্ডে : কালমৃগয়া ও

                                    প্রথমসংস্করণ বাল্মীকিপ্রতিভা

                        প্রথম খণ্ডে : বাল্মীকিপ্রতিভা ও মায়ার খেলা

                        পঞ্চবিংশ খণ্ডে : চিত্রাঙ্গাদা চণ্ডালিকা ও শ্যামা

৪৩৫-৪৪৪           কালমৃগয়া গীতিনাট্য। প্রকাশকাল অগ্রহায়ন ১২৮৯। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গৃহে ‘বিদ্বজ্জনসমাগম’ উপলক্ষে খ্রীস্টীয় ১৮৮২ অব্দের শনিবার ২৩ ডিসেম্বর তারিখে অভিনীত।

৪৪৫ ও ৪৫৮        বাল্মীকিপ্রতিভা গীতিনাট্য। ১২৮৭ (১৮০২ শক) ফাল্গুনে প্রকাশিত। ১২৯২ ফাল্গুনে যে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হইয়াছিল তাহা বহুশঃ পৃথক গ্রন্থ; উহারই ঈষৎ-সংস্কৃত রূপ বর্তমানে প্রচলিত এবং গীতবিতান গ্রন্থে মুদ্রিত। ইহাতে ‘কালমৃগয়া’ হইতে বহু গান, কতকগুলি পরিবর্তন-সহ, কতকগুলি যথাযথ, গৃহীত হইয়াছে। ‘জীবনস্মৃতি’তে কবি বলেন, বাল্মীকিপ্রতিভায় অক্ষয় বাবুর [অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর] কয়েকটি গান আছে এবং ইহার দুইটি গানে বিহারী [লাল] চক্রবর্তী মহাশয়ের সারদামঙ্গল-সঙ্গীতের দুই-এক স্থানের ভাষা ব্যবহার করা হইয়াছে।’

 

৪৪৮ ও ৪৫০        ‘রাঙাপদপদ্মযুগে প্রণমি গো ভবদারা’ এবং ‘এত রঙ্গ শিখেছ কোথা’ অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর রচনা। দ্রষ্টব্য : রবীন্দ্রস্মৃতি, সংগীতস্মৃতি অধ্যায়।

৪৫৫                  কোথায় সে উষাময়ী প্রতিমা ‘যাও লক্ষী অলকায়’ প্রভৃতি ছত্রে ‘সারদামঙ্গল’ কাব্যের অংশবিশেষের প্রভাব আছে।

৪৫৬                  এই-যে হেরি গো দেবী আমারি ইহাতে দ্বিজেন্দ্রনাথের ‘স্বপ্ন-প্রয়াণ’ (অক্টোবর ১৮৭৫) কাব্যের ‘জয় জয় পরব্রহ্ম’ গানটির কিছু প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

৪৫৬                  দীন হীন বালিকার সাজে গান নহে, আবৃত্তির বিষয়।

৪৫৭-৪৭৩           মায়ার খেলা গীতিনাট্য। ১৮১০ শকের (বাংলা ১২৯৫) অগ্রহায়ণ মাসে প্রথম প্রকাশিত। কবি ইহার বিজ্ঞাপনে জানাইয়াছেন, ‘সখিসমিতির মহিলাশিল্পমেলায় অভিনীত হইবার উপলক্ষে এই গ্রন্থ উক্ত সমিতিকর্তৃক মুদ্রিত হইল।... আমার পূর্ব্বরচিত একটি অকিঞ্চিৎকর গদ্যনাটিকার [নলিনী’র] সহিত এ গ্রন্থের কিঞ্চিৎ সাদৃশ্য আছে।... পাঠক ও দর্শকদিগকে বুঝিতে হইবে যে, মায়াকুমারীগণ এই কাব্যের অন্যান্য পাত্রগণের দৃষ্টি বা শ্রুতিগোচর নহে।’

                        রবীন্দ্রনাথ তাঁহার প্রথম জীবনের এই গীতিনাট্যকে শেষ বয়সে (১৩৪৫ সালে) নুতন রূপ দিয়া, পুরাতন গানকে নূতন করিয়া এবং নূতন গানও যোজনা করিয়া, নৃত্যে অভিনয় করাইবার আয়োজন করিয়াছিলেন। সেই অপ্রকাশিতপূর্ব নৃত্যনাট্য ‘পরিশিষ্ট ১’ রূপে এই গ্রন্থে অন্যত্র মুদ্রিত হইল।

৪৭৫-৪৯০           চিত্রাঙ্গাদা নৃত্যনাট্য। কবির পুরাতন রচনা ‘চিত্রাঙ্গাদা’ (ভাদ্র ১২৯৯) কাব্যের কাহিনী অবলম্বনে রচিত এবং কলিকাতায় ‘নিউ এম্পায়ার থিয়েটার’ এ খ্রীস্টীয় ১৯৩৬ সালের ১১, ১২, ১৩ মার্চ তারিখে অভিনয়-উপলক্ষে প্রথম প্রকাশিত। বিজ্ঞপ্তিতে কবি জানাইয়াছিলেন, ‘এই গ্রন্থের অধিকাংশই গানে রচিত এবং সে গান নাচের উপযোগী। এ কথা মনে রাখা কর্ত্তব্য যে, এই জাতীয় রচনায় স্বভাবতই সুর ভাষাকে বহুদূর অতিক্রম করে থাকে, এই কারণে সুরের সঙ্গ না পেলে এর বাক্য এবং ছন্দ পঙ্গু হয়ে থাকে। কাব্য-আবৃত্তির আদর্শে এই শ্রেণীর রচনা বিচার্য নয়। যে পাখীর প্রধান বাহন পাখা, মাটির উপরে চলার সময় তার অপটুতা অনেক সময় হাস্যকর বোধ হয়।’

৪৭৫                  ‘ভূমিকা’ ছাড়াও ইহার-

৪৭৮                              সখী, কী দেখা দেখিলে তুমি ইত্যাদি ৫ ছত্র

৪৭৯                              হায় হায়, নারীরে করেছি ব্যর্থ ইত্যাদি ৮ ছত্র

৪৮০                  ব্রহ্মচর্য!- ইত্যাদি ৮ ছত্র

৪৮১                  এ কী দেখি! ইত্যাদি ১১ ছত্র

৪৮২                  মীনকেতু ইত্যাদি ৪ ছত্র

৪৮৩                  হে সুন্দরী, উন্মথিত যৌবন আমার ইত্যাদি ১৫ ছত্র

৪৮৪                  আজ মোরে ইত্যাদি ২০ ছত্র

৪৮৭                  রমণীর মন-ভোলাবার ছলাকলা ইত্যাদি ৯ ছত্র

৪৮৮                  হে কৌন্তেয় ইত্যাদি ৮ ছত্র

                        অংশগুলি গান নয়, ‘কাব্য-আবৃত্তির আদর্শে’ রচিত। ৪৯০ পৃষ্টায় মুদ্রিত বৈদিক মন্ত্র কয়টিও আবৃত্তির বিষয়।

৪৮৯-৪৯০           এস’ এস’ বসন্ত, ধরাতলে রূপান্তরে ‘মায়ার খেলা’য় মুদ্রিত।

                                    বিভিন্ন অভিনয়-উপলক্ষে কবিকর্তৃক এই নৃত্যনাট্যের বহুল পরিবর্তন সম্পর্কে, শ্রীশান্তিদেব ঘোষ মহাশয় যাহা জানাইয়াছেন এ স্থলে তাহার উল্লেখ করা যাইতেছে-

৪৭৮                  যাও যদি যাও তবে ইত্যাদি দ্বিতীয় দৃশ্যের প্রথম গানটি ১৯৩৬ সালের পরবর্তী অভিনয়ে প্রায়শই বাদ দেওয়া হইয়া থাকে।

৪৮০                  যে ছিল আপন শক্তির অভিমানে... হায় হায় হায় সখীগণের গানের এই তুকের পরেই নিন্মলিখিত সংলাপটুকু, ১৯৩৯ খ্রীস্টাব্দে কবিকর্তৃক সন্নিবিষ্ট হইয়া, বাঁকুড়ায় ও মেদিনীপুরে বহু অভিনয়ে গীত ও অভিনীত হইয়াছিল :

                                    চিত্রাঙ্গদা।             তুমি কি পঞ্চশর।

                                      মদন।               আমি সেই মনসিজ-

                                                নিখিলের নরনারী-হিয়া

                                                            টেনে আনি বেদনাবন্ধনে।

                                    চিত্রাঙ্গদা। কী বেদনা কী বন্ধন

                                                            জানে তাহা দাসী।

                                                তুমি কোন্ দেবতা প্রভু,

                                                            তুমি কোন্ দেবতা।

                                    [ঋতুরাজ]            আমি ঋতুরাজ, আমি

                                                 অখিলের অনন্ত যৌবন।

                                                            আমি ঋতুরাজ।

                        এই অংশটি যুক্ত হওয়াতে, সহজেই অনুমেয়, নৃত্যনাট্যের প্রচলিত সংস্করণ-অনুযায়ী মদনের যে কালে আবির্ভাব, তৎপূর্বেই তাঁহার ঋতুরাজ-সহ মঞ্চপ্রবেশ ঘটানো হইয়াছিল।

                                    শ্রীশান্তিদেব ঘোষ ইহাও জানাইয়াছেন যে-

৪৮০                  ব্রহ্মচর্য!- পুরুষের স্পর্ধা এ যে ইত্যাদি ৩ ছত্র, এ ক্ষেত্রে মদনের উক্তিরূপেই ব্যবহৃত হইয়াছিল এবং পরবর্তী

৪৮০                  পঞ্চশর, তোমারি এ পরাজয় ইত্যাদি ৫ ছত্র ছিল সখীর উক্তি।

৪৮৮                  হে কৌন্তেয় ইত্যাদি পূর্বোক্ত ৮ ছত্র সম্পর্কে শ্রীশান্তিদেব ঘোষ জানাইয়াছেন যে, প্রচলিত স্বরলিপিগ্রন্থে গানরূপে প্রচারিত না থাকিলেও, ১৯৩৮ ফেব্রুয়ারিতে এই অংশে কবি সুর দেন এবং ঐ বৎসর মার্চ্ মাসে পূর্ববঙ্গ ও আসাম-ভ্রমণকালে বহু অভিনয়ে, তেমনি পরবৎসর বাঁকুড়ায় ও মেদিনীপুরে শান্তিনিকেতনের ছাত্র-ছাত্রী গোষ্ঠী যে অভিনয় করেন তাহাতে, সুরে ও তালে গীত এবং অভিনীত হয়।

৪৯৩-৫০৪           চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্য। ১৩৪০ ভাদ্রে রবীন্দ্রনাথের ‘চণ্ডালিকা’ নাটক প্রকাশিত হয়; উহাতে দুইটি দৃশ্য এবং প্রায় বলা চলে ‘প্রকৃতি’ ও ‘মা’ এই দুইটি চরিত্রই আছে। মা ও মেয়ের সংলাপ গদ্যে রচিত। ওই নাটকের বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ নূতন ভাবে আদ্যন্ত ‘ছন্দে’ ও  সুরে রচনা করিয়া, বর্তমান নৃত্যনাট্যের প্রথম প্রকাশ বাংলা ১৩৪৪ সালের ফাল্গুনে; সর্বসাধারণ-সমক্ষে প্রথম অভিনীত হয় কলিকাতার ‘ছায়া’ রঙ্গমঞ্চে খ্রীস্টীয় ১৯৩৮ সালের ১৮, ১৯,ও ২০ মাচ্ তারিখে। পরবর্তী ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারী তারিখে (১৯৩৯ খ্রীস্টাব্দে) কলিকাতায় ‘শ্রী’ রঙ্গমঞ্চে পুনরভিনয়ের প্রাক্কালে রবীন্দ্রনাথ পূর্বোক্ত রচনাটিতে নানা পরিবর্তন সাধন করেন। পরিবর্তিত নাটকের যে পাঠ ১৩৪৫ চৈত্রে স্বরলিপি-সহ প্রচারিত, তাহাই বর্তমান গ্রন্থে সংকলন করা হইয়াছে। এই রচনা আদ্যন্তই সুরে তালে বসানো।

 

            ১৩৪৪ ফাল্গুনে প্রকাশিত ‘চণ্ডালিকা’য়, আখ্যায়িকার সারসংকলন হিসাবে মূল নৃত্যনাট্যের পূর্বে একটি ‘পরিচয়’ মুদ্রিত আছে; উহার সূচনায় কবি বলিয়াছেন, ‘সমগ্র চণ্ডালিকা নাটিকার গদ্য এবং পদ্য অংশে সুর দেওয়া হয়েছে।‘

                        বস্তুতঃ চণ্ডালিকার বহু গান সম্পূর্ণই গদ্য ছন্দে লেখ-ইহা সতর্ক পাঠকের মনোযোগ এড়াইবে না।

৫০৫-৫১৫           শ্যামা নৃত্যনাট্য। ‘কথা ও কাহিনী’ কাব্যের অন্তর্গত ‘পরিশোধ’ (২৩ আশ্বিন ১৩০৬) কবিতাটির বিষয়বস্তু লইয়া রচিত ‘পরিশোধ’ নৃত্যনাট্য (আশ্বিন ১৩৪৩) বর্তমান গ্রন্থে ‘পরিশিষ্ট ২’ রূপে মুদ্রিত। ‘শ্যামা’ উহারই পরিবর্তিত পরিবর্ধিত ও সমৃদ্ধতর রূপ বলা যায়; বাংলা ১৩৪৬ ভাদ্রে স্বরলিপি-সহ প্রথম প্রচারিত। তৎপূর্বে ১৯৩৯ খ্রীস্টাব্দের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে কলিকাতার ‘শ্রী’ রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হয়।

                        ইহাও প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত সুরে তালে বাঁধা, কোথাও ‘কাব্য-আবৃত্তি’ নাই।

৫১৯-৫২৬           ১-২০ সংখ্যা ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী বাংলা ১২৯১ সালে প্রথম প্রকাশ কালে রাগ-রাগিণীর উল্লেখ০-সহ একুশটি রচনা ছিল। আর-একটি ভানুসিংহের পদ (কো তুঁহুঁ বোলবি মোয়) ১২৯২ সালের ‘প্রচার’ মাসিক-পত্রে এবং পরে ‘কড়ি ও কোমল’ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণে মুদ্রিত হয়। বৈষ্ণব পদকর্তাদিগের অনুসরণে প্রাচীন ব্রজবুলিতে রচিত এই গান বা কবিতাগুলি কয়েক বৎসর ধরিয়া ‘ভারতী’তেও প্রকাশ পায়- যথা, বর্তমান গ্রন্থের ৮,৯,১০, ১৩, ১৪, ১৫ সংখ্যা ১২৮৪ সালে; ১৮ সংখ্যা ১২৮৫ সালে; ১৬ সংখ্যা ১২৮৬ সালে; ১৭ ও ১৯ সংখ্যা ১২৮৭ সালে এবং ১১ সংখ্যা ১২৯০ সালে। মূলতঃ ‘ভারতী’র ১২৮৪ আশ্বিন ও ১২৮৮ শ্রাবণ-সংখ্যায় মুদ্রিত দুইটি পদ-

৩০৮                  সজনী গো) শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা ইত্যাদি

২৪০                  মরণ রে তুঁহুঁ মম শ্যামসমান ইত্যাদি

                        গীতবিতানের পূর্ববর্তী অংশে মুদ্রিত হইয়াছে। বর্তমান খণ্ডে, যে গানগুলির স্বরলিপি (সংখ্যা ২, ৩, ৫, ৮, ৯, ১০, ১১) আছে সেগুলির পাঠ স্বরলিপি-অনুসারী। স্বরলিপি-বিহীন রচনার সংকলনকালে প্রায়শঃ পরবর্তী সংহত ও মার্জিত পাঠ্যই গৃহীত হইয়াছে। বলা প্রয়োজন-

৫২৩                  ১২-সংখ্যক গানের প্রাচীন পাঠ ‘গহির নীদমে’ ইত্যাদি তেমনি

৫২৬                  ১৯-সংখ্যক গানের প্রাচীন পাঠ ‘দেখলো সজনী চাঁদনী রজনী’ ইত্যাদি। ১২৯১ সালে মুদ্রিত মূলগ্রন্থ দ্রষ্টব্য।

০ রবিচ্ছায়া যে কয়টি গান (মোট ৫টি) সংকলিত তাহাতে তালেরও উল্লেখ আছে। যে-কোনো গান উল্লিখিত রাগ-তালে গাওয়া হয় কিনা তাহা স্বতন্ত্র বিচারের বিষয়। যেমন, ‘মরণ রে তুঁহুঁ মম শ্যামসমান’ গানে প্রথমতঃ ‘পূরবী’র উল্লেখ ছিল, পরে ‘ভৈরবী/কাওয়ালি’র উল্লেখ রবিচ্ছায়ায়-এই গানের স্বরলিপি দ্রষ্টব্য স্বরবিতানের একবিংশ খণ্ডে।

 

৫২৯-৫৬০           ১-১৩২ সংখ্যা নাট্যগীতি বিভিন্ন নাটক বা নাট্যকাব্যের যে গানগুলি ইতিপূর্বে সংকলিত হয় নাই, সেইগুলি এই অধ্যায়ে মুদ্রিত। কোনো নাটকের না হইলেও, নাট্যগুণোপেত অন্য কতকগুলি রচনা এই অংশে স্থান পাইয়াছে।

৫২৯।১               জ্বল্ জ্বল্ চিতা, দ্বিগুণ যেটুকুর স্বরলিপি আছে সেই সংক্ষিপ্ত পাঠ্যই গীতবিতান গ্রন্থে সংকলিত। দীর্ঘতর মূল রচনা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রণীত ‘সরোজিনী’ নাটকের (১৭৯৭ শকাব্দ) অন্তর্গত এবং জহরব্রত-উদ্‌যাপনে উদ্যতা রাজপুত-ললনাদিগের সমবেতসংগীত। ইহার রচনা সম্পর্কে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উক্তি উদ্ধারযোগ্য-

                        ...রাজপুত মহিলাদের চিতাপ্রবেশের যে একটা দৃশ্য আছে, তাহাতে পূর্ব্বে আমি গদ্যে একটা বক্তৃতা রচনা করিয়া দিয়াছিলাম। যখন এই স্থানটা পড়িয়া প্রুফ দেখা হইতেছিল, তখন রবীন্দ্রনাথ পাশের ঘরে পড়াশুনা বন্ধ করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া বসিয়া শুনিতেছিলেন। গদ্য-রচনাটি এখানে একেবারেই খাপ খায় নাই বুঝিয়া, কিশোর রবি একেবারে আমাদের ঘরে আসিয়া হাজির। তিনি বলিলেন-এখানে পদ্যরচনা ছাড়া কিছুতেই জোর বাঁধিতে পারে না। প্রস্তাবটা আমি উপেক্ষা করিতে পারিলাম না- কারণ, প্রথম হইতেই আমারও মনটা কেমন খুঁৎ-খুঁৎ করিতেছিল। কিন্তু এখন আর সময় কৈ? আমি সময়াভাবের আপত্তি উথাপন করিলে, রবীন্দ্রনাথ সেই বক্তৃতাটির পরিবর্ত্তে একটা গান রচনা করিয়া দিবার ভার লইলেন, এবং তখনই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই “জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ” এই গানটি রচনা করিয়া আনিয়া, আমাদিগকে চমৎকৃত করিয়া দিলেন।

                                                                                                -জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি (১৩২৬)পৃ১৪৭

৫২৯।২               হৃদয়ে রাখো গো, দেবী, চরণ তোমার ইহার ভাব ও ভাযা অনেকাংশে বিহারীলাল চক্রবর্তীর ‘সারদামঙ্গল’ (১২৮৬) কাব্য হইতে গৃহীত, উক্ত গ্রন্থের ১২৭৭ সালে রচনা আরম্ভ ও ১২৮১ সালে ‘আর্য্যদর্শন’ পত্রে আংশিক প্রকাশ হয়। প্রথম হইতেই এই গানটি ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র শেষে বরদাত্রী সরস্বতীর ভাষণের অব্যবহিত পূর্বে বাল্মীকি-কর্তৃক উদ্‌গীত বাণীবন্দনারূপে সন্নিবিষ্ট ছিল। ‘গান’ গ্রন্থের প্রথম প্রকাশকালে (সেপ্টেম্বর ১৯০৮) ইহা ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ হইতে বর্জিত হইয়াছে।

৫২৯-৫৩৫           ৩-১৯-সংখ্যক গানগুলি ‘ভগ্নহৃদয়’ (১২৮৮ বঙ্গাব্দ) নাট্যকাব্যের অন্তর্গত। ‘রবিচ্ছায়া’য় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুর তালের উল্লেখ-সহ, সংকলিত আছে। কয়েকটি গান (৬টি) যে ভগ্নহৃদয়েরই নানা অংশ বা অংশের রূপান্তর তাহা নূতন আবিষ্কার; এ-কয়টি গীতবিতানের ১৩৭৬-পূর্ব সংস্করণে প্রেম ও প্রকৃতি অধ্যায়ে (বর্তমান সংখ্যা ৪, ১৫.১৬, ১৯) এবং তৃতীয় পরিশিষ্টে (বর্তমান সংখ্যা ৫ ও ১৭) সংকলিত হইয়াছিল। এগুলি ভগ্নহৃদয়ে ‘গান’ বলিয়া নির্দেশ করা হয় নাই কিন্তু সবগুলি রবিচ্ছায়ায় এবং সংখ্যা ৫ অধিকন্তু ‘গানের বহি’তে (১৩০০) ও গানে (১৯০৯) গৃহীত। সংখ্যা ৫ ও ১৭ (‘সখা’ স্থলে ‘সখী’ আছে সত্য) প্রথমসংস্করণ গীতবিতানের বর্জনতালিকায় অ-রাবীন্দ্রিক বলিয়া নির্দিষ্ট!

৫৩৩। ১৫            প্রথমতঃ ‘কাব্যগ্রন্থাবলী’র (১৩০৩) সূচনায় ‘ছায়া’ (পৃ ৯) শিরোনামে মুদ্রিত ও গান বলিয়া নির্দিষ্ট, স্বিতীয়তঃ ‘গান’ অংশে (পৃ ৪৩৯) উহারই সংক্ষিপ্ত পাঠ সংকলিত-শেষোক্ত পাঠই গীতবিতানে তথা স্বরবিতানে সংকলিত।

৫৩৩।১৬             প্রথম প্রকাশ ভারতী: কার্তিক ১২৮৬, পৃ ৩২২।

৫৩৪।১৯             ইন্দিরাদেবী-কৃত স্বরলিপি অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত পাঠ সংকলিত।

৫৩৫।                 ২০ ও ২১-সংখ্যক রচনা ‘রুদ্রচণ্ড’ (১২৮৮) নাট্যকাব্যের অন্তর্গত এবং ‘রবিচ্ছায়া’য় সংকলিত। প্রথম গান (২০) প্রাপ্ত স্বরলিপি-অনুযায়ী বর্তমান গ্রন্থে সংক্ষিপ্ত আকারে সংকলন করা হইয়াছে।

৫৩৫-৩৬             ২২-২৬ সংখ্যা ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ (১২৯১) হইতে।

৫৩৫। ২৩            বৃদ্ধ ভিক্ষুকের গান; নাটকের পূর্বসংস্করণে ইহা দীর্ঘতর ছিল। ‘কাব্যগ্রন্থাবলী’তে ও পরবর্তী সংস্করণসমূহে সংক্ষিপ্ত আকারে মুদ্রিত।

৫৩৭-৩৮।৩৩-৩৫ ‘নলিনী’ (১২৯১ বৈশাখ) নাটকে মুদ্রিত। ৩৩ ও ৩৪ সংখ্যক গান পরবর্তী ‘বিবাহ-উৎসব’ গীতিনাট্যে অঙ্গীকৃত।

৫৩৬-৪০।            ২৬-৩৪ ও ৩৬-৪৫ চিহ্নিত ১৯টি গান১ ‘বিবাহ-উৎসব’ গীতিনাট্যে ব্যবহৃত হয়। (১২৯৯ ভাদ্র-আশ্বিনের ‘ভারতী ও বালক’ পত্রে ইহার প্রথম দৃশ্য স্বরলিপি-সহ প্রচারিত। ২) জানা যায় ‘কোনো পারিবারিক বিবাহ-উৎসবোপলক্ষে’ ইহার যৌথ রচনা।৩ মোট ৭টি দৃশ্যে ৪৫টি গান; তন্মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ স্বর্ণকুমারী ও অক্ষয় চৌধুরীর কতকগুলি গান থাকিলেও রবীন্দ্রনাথের রচনাই ২৮টি। তাহা ছাড়া, সবশেষে সুর-তালের উল্লেখ-হীন ‘যে তোরে বাসে রে ভালো’ ইত্যাদি কয় ছত্র ইন্দিরাদেবীর অভিমতে আবৃত্তির বিষয় মাত্র- ‘শিশু’ কাব্যে পাওয়া যাইবে। বিবাহ-উৎসব- ধৃত রবীন্দ্রনাথ-রচিত সবগুলি গান গীতবিতানে সংকলিত; তন্মধ্যে ১৯টি বর্তমান গুচ্ছে আর অবশিষ্ট ৯টি নানা সূত্রে গীতবিতানের নানা অধ্যায়ে, যথা-

                                                                        পৃষ্ঠাঙ্ক

            ও কেন চুরি ক’রে চায়                                  ২৯৫

            তারে দেখাতে পারি নে কেন                ২৭৭।৪৬১।৬৩৮

                        দেখে যা,দেখে যা, দেখে যা লো তোরা               ২৯৩

            নার্চ্, শ্যামা, তালে তালে                               ৫৩১

            বনে এমন ফুল ফুটেছে                                 ২৯২

            বুঝি বেলা বহে যায়                                     ২৯১

            মনে রয়ে গেল মনের কথা                             ২৪৪

            রিম্ ঝিম্ ঘন ঘন রে                                                ৪৫০

সখী, সে গেল কোথায়                      ২৯৪।৪৫৯।৬৩৬

............

বলা আবশ্যক, ২৬-সংখ্যক গান প্রকৃতির প্রতিশোধ (১২৯১) হইতে এই গীতিনাট্যে লওয়া হইয়াছে।

পৃষ্টা ২৪৪-৫২। ‘মহিলা শিল্পমেলায় অভিনীত।’ অপিচ দ্রষ্টব্য ভারতী ও বালক, ১২৯৯ পৌষ, পৃ ৫২৬, নীচে হইতে অষ্টম-সপ্তম ছত্রে- ‘মহিলা শিল্পমেলায় অভিনীত হইবার উদ্দেশ্যে “বিবাহ উৎসব” পুস্তক ছাপাইবার পূর্ব্বে’ ইত্যাদি। মনে হয়, মাসিক পত্রে  প্রথম দৃশ্যের স্বরলিপি-যুক্ত প্রচার ও ‘বিবাহ-উৎসব’ পুস্তিকার প্রকাশ প্রায় সমকালীন। প্রথম দৃশ্যের শেষ গানটি মাত্র রবীন্দ্রনাথ-রচিত : নাচ, শ্যামা, তালে তালে ইত্যাদি।

দ্রষ্টব্য ইন্দিরাদেবী-রচিত ‘রবীন্দ্রস্মৃতি’ গ্রন্থের ‘নাট্যস্মৃতি’ অধ্যায়ে ‘বিবাহ-উৎসব’ প্রসঙ্গ।  অপিচ দ্রষ্টব্য সরলাদেবী চৌধুরানীর ‘জীবনের ঝরা পাতা’ (১৮৭৯ শক) গ্রন্থ; তদনুযায়ী (পৃ ৫৬) হিরণ্ময়ীদেবীর বিবাহ-উপলক্ষে ইহার রচনা। জানা যায় শেষোক্ত ঘটনা রবীন্দ্রনাথের বিবাহ (২৪ অগ্রহায়ণ ১২৯০) হইতে ৩ মাস পরে; দ্রষ্টব্য : সমকালীন ১।১৩৬৪। পৃ ২০-২১।

প্রাপ্ত পুস্তিকার প্রচার তৃতীয় পাদটীকায় উল্লিখিত ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক বিশেষ বিবাহ উৎসবের সমকালীন নহে, তাহার অনেক পরে, ইহা নিঃসন্দেহ। সাহিত্য-সাধক-চরিতমালার ‘২৮’ সংখ্যায় (মাঘ ১৩৫০/পৃ ১৭) ব্রজেন্দ্রনাথ এই পুস্তিকার বেঙ্গল লাইব্রেরির তালিকা ভুক্তির যে তারিখ দিয়াছেন- ১৩মে ১৮৯২ [১ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৯]- তাহা গ্রন্থপ্রচারের খুব কাছাকাছি সময় সন্দেহ নাই। তেমনি নিঃসন্দেহে বলা যায় ইহা বিশেষ ভাবে স্বর্ণকুমারীদেবীর রচনা নহে; প্রথম দৃশ্যে ৭টি গানের মধ্যে ৬টি তাঁহার হইলেও (স্বর্ণকুমারীদেবীর বসন্ত উৎসব গীতিনাট্যের প্রথম অঙ্কের প্রথম গর্ভাঙ্ক-ধৃত) বাকি ৬টি দৃশ্যে সম্ভবতঃ তাঁহার রচনা নাই। বিবাহ-উৎসবের যে মুদ্রিত প্রতি আমরা পাইয়াছি তাহার প্রচ্ছদে বা ভিতরে কোথাও কোনো রচয়িতার নাম নাই। পুস্তিকাখানি ‘ভারতী ও বালক’ পত্রিকার ‘কার্য্যাধ্যক্ষ’ প্রকাশ করেন, মলাটের শেষ পৃষ্ঠায় অন্যান্য বহু পুস্তকের সঙ্গে সত্যেন্দ্রনাথ প্রণীত মেঘদূত

৫৩৬-৩৭             ২৮ ও ৩০ বিবাহ-উৎসব গীতিনাট্যে দ্বিতীয় দৃশ্যের অন্তর্গত ও ‘ভারতী’র ১৩০০ বৈশাখ সংখ্যায় মুদ্রিত। এ দুটি গান যে রবীন্দ্রনাথেরই রচনা ইহা জানাইয়াছেন সরলাদেবী (ভারতী: ফাল্গুন ১৩০১/পৃ ৬৮১-৮২) তাঁহার ‘বাঙ্গলার হাসির গান ও তাহার কবি’ প্রবন্ধে। বর্তমান গীতিগুচ্ছের অন্যান্য কয়েকটি গান সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞাতব্য এই যে-

৫৩৬।২৭ ‘ছবি ও গান’ (ফাল্গুন ১২৯০) কাব্যের অন্তর্গত। এখানে ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’র সংক্ষিপ্ত পাঠ গৃহীত হইয়াছে।

৫৩৮।৩৮             ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’ পুস্তকে মুদ্রিত দীর্ঘতর পাঠ রবীন্দ্রনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সম্মিলিত রচনা বলিয়া নির্দিষ্ট। ‘গানের বহি’ প্রভৃতি গ্রন্থে পূর্বোক্ত রচনার প্রথমার্ধ মাত্র গৃহীত, এজন্য ঐটুকুই রবীন্দ্ররচনা মনে হয়। অবশিষ্ট রচনাংশের শ্রী ও শৈলী পৃথক-উহাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের রচনা হইতে পারে।

                        ‘গানের বহি’তে ও ‘বিবাহ-উৎসব’ গীতিনাট্যে এক পাঠ দেখা যায়, উহাই গীতবিতানে সংকলিত।

৫৩৯                  ৪১ ও ৪৪-সংখ্যক দুটি গানই ‘গানের বহি’ (বৈশাখ ১৩০০) এবং ‘স্বরলিপি গীতিমালা’ (১৩০৪) গ্রন্থে পাওয়া যায়।

৫৩৯-৪০             ৪২ ও ৪৫-সংখ্যক গান পূর্বোক্ত ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’য় সংকলিত। শেষোক্ত গানটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের হাতে লেখা স্বরলিপিতেও রবীন্দ্রনাথের রচনা বলিয়াই নির্দিষ্ট।

৫৩৬-৩৯             ২৭, ২৯, ৩২-৩৭, ৩৯, ৪০, ৪৩-সংখ্যক গান ১২৯২ বৈশাখে প্রকাশিত ‘রবিচ্ছায়া’তেও সংকলিত আছে।

৫৪০।৪৬             প্রথমবধি ‘রাজা ও রানী’ (শ্রাবণ ১২৯৬) নাটকে মুদ্রিত।

৫৪০।৪৭             আজ আসবে শ্যাম ‘রাজা ও রানী’র প্রথম সংস্করণে ছিল।

৫৪০-৪১             ৪৮-৫১-সংখ্যক গান ‘বিসর্জন’ (প্রথম প্রকাশ: জ্যৈষ্ঠ ১২৯৭) নাটকের বিভিন্ন সংস্করণ হইতে গৃহীত।

৫৪০-৪১             ৪৮, ৫০-৫১। কলিকাতায় ‘ভারত সঙ্গীত সমাজ’ এর উদ্যোগে ১ পৌষ ১৩০৭ তারিখে ‘বিসর্জন’ এর বিশেষ অভিনয় হয়। অনুষ্ঠানপত্রে দেখা যায়- অটলকুমার সেন (গোবিন্দমাণিক্য, অমরনাথ বসু (নক্ষত্ররায়), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (রঘুপতি), হেমচন্দ্র বসুমল্লিক (জয়সিংহ), অন্নদাপ্রসাদ ঘোষ (মন্ত্রী), ভূতনাথ মিত্র (চাঁদপাল), বেণীমাধব দত্ত (নয়নরায়) এবং মণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (গুণবতী) ইহাতে অভিনয় করেন। উক্ত অভিনয়ের অনুষ্ঠানপত্রে এই তিনটি গানই পাওয়া যায়। ৪৮-সংখ্যক রচনা এ পর্যন্ত অপর কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় নাই।

৫৪১।৫২             খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে সোনার তরী’র অন্তর্গত এই কবিতার রচনাকাল: ১৯ আষাঢ় ১২৯৯। ‘ভারতী’তে ১২৯৯ চৈত্রে ইহার স্বরলিপি প্রকাশিত হয়।

৫৪১-৪৩।            ৫৩-৫৭-সংখ্যক রচনাবলী সংশোধিত ‘গান’ (১৯০৯ খ্রী:) গ্রন্থ হইতে সংকলিত। ৬৬৫ পৃষ্টায় চতুর্থ টীকা দ্রষ্টব্য।

৫৪১-৪২।৫৩-৫৪ ‘চিত্রা’ (ফাল্গুন ১৩০২) কাব্যের অন্তর্গত।

.....

            (১২৯৮), স্বর্ণকুমারীদেবীর নবকাহিনী (১২৯৯), রবীন্দ্রনাথের ‘মায়ার খেলা’ (১২৯৫) বইগুলির বিজ্ঞাপন দেখা যায়।

            বর্তমান প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য ‘রবীন্দ্রনাট্যকল্পনার বিবর্তন’ “বিশ্বভারতী পত্রিকা” বৈশাখ-আষাঢ় ১৩৭৬/ পৃ ৩৪৫-৪৭।

            ‘বিবাহ-উৎসব’ পুস্তিকার প্রচ্ছদিত ও প্রচ্ছদহীন বিভিন্ন প্রতি শ্রীপুলিনবিহারী সেনের সংগ্রহে দেখা গিয়াছে।

৫৪২।৫৫             কাব্যগ্রন্থাবলীর অন্তর্গত ‘চৈতালি’ (আশ্বিন ১৩০৩) কাব্যের ‘গান’ রচনার প্রথম ও শেষ স্তবক, মধ্যবর্তী স্তবক বর্জিত; ইহার রচনা: ২৯ চৈত্র [১৩০২]

৫৪২।৪৬।            ৫৬-৬১ সংখ্যক ‘কল্পনা (বৈশাখ ১৩০৭) কাব্যের অন্তর্গত।

৫৪৩।৫৮             ‘কল্পনা’ কাব্যে পাঠান্তর মুদ্রিত আছে। স্বরলিপি-সহ বর্তমান পাঠ কবির হস্তাক্ষরে পাওয়া গিয়াছে। প্রচলিত ‘অখণ্ড’ গীতবিতানে তাহার প্রতিলিপি দ্রষ্টব্য।

৫৪৪-৪৫             ৫৯-৬০-সংখ্যক রচনা ‘কল্পনা’ কাব্যে পূর্বাপর সুর তালের উল্লেখসহ মুদ্রিত। ৬০-সংখ্যক গানের সূচনা (ইন্দিরাদেবীর স্মৃতি-অনুযায়ী। এইরূপ-

 

।                  গা   গা  -।  ।  গা   গা  -।   ।   গা   -।   গা   ।

।                       কি   সে   র্            ত   রে   ০       অ    শ্   শ্রু

                        মা    মা   -গা  ।  রা   রা   -গা ।  -।    সা  সা  ।

                        ঝ    রে     ০      কি   সে    ০      র্    ত   রে

।                       রা    -।      রা  ।  রা    -।    -গা  । সা   -গা  -রা  ।

                        দী    র্      ঘ    ।  শ্বা     ০     স্     ব      ০   ন্

।                       গা-   ।      -।   ।  -।     -।    -।   ।  -।   -।   -মা   ।

                        ধু    ০       ০        ০      ০     ০       ০   ০    ০

 

৫৪৫-৪৬।৬১        ‘কল্পনা’র এই কবিতাটি সুর তালের উল্লেখ-সহ সংশোধিত ‘গান’ (১৯০৯) গ্রন্থে সংকলিত। দ্রষ্টব্য পৃ ৬৬৫, টীকা ৪।

৫৪৬।৬২             ‘বিনি পয়সার ভোজ’ (ব্যঙ্গকৌতুক: ১৯০৭) কৌতুকনাট্যের অন্তর্গত, ‘সাধনা’য় ১৩০০ সালের পৌষে মুদ্রিত।

৫৪৬-৪৯।            ৬৩-৮১ সংখ্যা। প্রধানতঃ ‘চিরকুমার সভা’ হইতে সংকলিত এই ১৯টি গান (ক্ষুদ্রার্থে গীতিকাও বলা চলে) উক্ত নাটকে স্বভাবকবি অক্ষয়কুমার যত্রতত্র ললিতে কেদারায় ভৈরবীতে গাহিয়া উঠেন। বন্ধুদের আক্ষেপ: গানগুলি শেষ করা হয় না কেন। অক্ষয়ের জবাব তাঁহাদের কাছে-

                        সখা, শেষ করা কি ভালো?

                             তেল ফুরোবার আগেই আমি

                                    নিবিয়ে দেব আলো।

                                                            -প্রজাপতির নির্বন্ধ

            অথবা পুরবালার কাছে-

                        তুমি জান আমার গাছে

                            ফল কেন না ফলে,                     

                        যেমনি ফুলটি ফুটে ওঠে

                             আনি চরণতলে।

                                                            -চিরকুমারসভা

            কাজেই অক্ষয়ের গানের এই অজস্রতাতেই খুশি থাকিয়া, গানগুলি চার তুকে সম্পূর্ণ হইল না যে তাহার ক্ষুণ্ণতা, শুধু বন্ধুজনকে নয়, সাধারণকেও মানিয়া লইতে হয়।

                        বলা প্রয়োজন, ‘চিরকুমারসভা’ সংলাপ প্রধান উপন্যাসের আকারে ‘ভারতী’ পত্রিকার ১৩০৭ বৈশাখ-কার্তিক পৌষ-চৈত্র এবং ১৩০৮ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত। পরে, হিতবাদী-কর্তৃক প্রচারিত ‘রবীন্দ্র-গ্রন্থাবলী’তে (১৩১১) ‘রঙ্গচিত্র’ বিভাগে স্থান পায়।

            অতঃপর, উহা ‘প্রজাপতির নির্বন্ধ’ নামে ইন্ডিয়ান-প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থাবলীর অষ্টম ভাগ রূপে (১৩১৪) প্রকাশিত হয়। গ্রন্থে কোনো কোনো অংশ পরিবর্তন করিয়া, কোনো কোনো অংশ নূতন যোগ করিয়া, রবীন্দ্রনাথ বাংলা ১৩৩১ সালের চৈত্রে বা পরবর্তী বৈশাখে ‘চিরকুমারসভা’ নাম দিয়াই যে নাটক লিখিয়া দেন তাহা ১৩৩২ সালে বহুদিন ধরিয়া (প্রথম অভিনয়: ২ শ্রাবণ ১৩৩২) সাধারণ রঙ্গমঞ্চে বিশেষ সাফল্যের সহিত অভিনীত হয়। বর্তমান গ্রন্থে উল্লিখিত সমুদয় সংস্করণ দেখিয়াই গানগুলির সংকলন।

৫৪৯।৮২             মনোমন্দিরসুন্দরী ইহাও ‘চিরকুমারসভা’য় অক্ষয়কুমারের গান। ১৩২১ সালের ‘গান’ অবধি ইহার যে রূপ ছিল তাহাতে কতকগুলি নূতন ছত্র যোগ করিয়া বর্তমান পাঠটি ১৩২৭ সালে ‘গান’ গ্রন্থের নূতন সংস্করণে মুদ্রিত হয়। প্রচলিত ‘চিরকুমারসভা’তেও এই পাঠই আছে।

৫৪৯।৮৩             ‘শিশু’ কাব্যে (কাব্যগ্রন্থ : দশম ভাগ : ১৩১০) যে কবিতা আছে এই রচনা তাহারই সংক্ষিপ্ত রূপ। ১৩৩৮ সালের ‘গীতোৎসব’ (২৮, ২৯, ৩১ ভাদ্র ও ১ আশ্বিন) উপলক্ষে কবি ইহাতে সুর দেন ও বালক নটের নৃত্য-সহযোগে তাহারই রূপ দেন।

৫৪৯।৮৪             শারদোৎসব (১৩১৫) হইতে সংকলিত।

৫৫০।                 ৮৫, ৮৬, ৮৮ ও ৮৯ সংখ্যা ‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটক (১৩১৬) হইতে গৃহীত।

৫৫০।                 ৮৭ ও ৯০-সংখ্যক গান ‘ভারতী’ মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বৌঠাকুরানীর হাট’ এর অঙ্গীভূত; যথাক্রমে ১২৮৮ মাঘ ও ১২৮৯ আশ্বিনে মুদ্রিত।

৫৫১। ৯১                        ‘বৌঠাকুরানীর হাট’ হইতে গৃহীত।

                              এই প্রসঙ্গে বলা বাহুল্য হইবে না যে, ‘বৌঠাকুরানীর হাট’ ১২৮৮ কার্তিক হইতে ১২৮৯ আশ্বিন পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে ‘ভারতী’তে মুদ্রিত হওয়ার পরে ওই বৎসরেই (১৮০৪ শক) গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটকখানি ‘বৌঠাকুরানীর হাট’ গল্পেরই বষয়বস্তু লইয়া রচিত। উহার বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছেন, ‘মূল উপন্যাসখানির অনেক পরিবর্তন হওয়াতে এই নাটকটি প্রায় নূতন গ্রন্থের মতই হইয়াছে।’

                        পূর্বালোচিত ‘রাজা বসন্ত রায়’ (দ্রষ্টব্য টীকা ৭ পৃ ৬৭০) অন্যে প্রস্তুত করিয়াছিলেন; তাহা জনপ্রিয়ও হইয়াছিল; বহু বৎসর পরে উপন্যাসটির সার্থক রূপান্তর ঘটাইবার ইচ্ছার পিছনে সেই স্মৃতি এবং সমকালীন অন্য কারণও রবীন্দ্রনাথের মনে ছিল।

৫৫০-৫১।            ৮৬-৯১ সব গানই কবি উপন্যাস বা নাটকের অন্যতম পাত্র বসন্তরায়ের কণ্ঠে দিয়াছেন।

৫৫১।৯২             ‘রাজা’ (পৌষ ১৩১৭) নাটক হইতে গৃহীত।

৫৫১।৯৩             ‘অচলায়তন’ (প্রবাসী : আশ্বিন ১৩১৮) নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যের অন্তর্গত। রবীন্দ্রসদনে সংরক্ষিত ১২৫-সংখ্যক অচলায়তন পাণ্ডুলিপিতে (রচনাশেষে তারিখ: ‘১৫ই আষাঢ়/১৩১৮/ শিলাইদা’) যে গানটি বর্জনচিহ্নিত করিবার পরে এ গান লেখা হয় সেটি হইল-

 

                                       আমরা কত দল গো কত দল!

                                    তোমায় ঘিরে ফুটেছি গো শতদল!

                                        আপন মনে নানা দিশি

                                        ছড়িয়ে আছি দিবানিশি,

                                    তবু        একটিখানে আছে মোদের পরিমল

                                                যেখানেতে পরশ কর করতল

৫৫১।৯৪             শ্রীমতী সীতাদেবীর ‘পুণ্যস্মৃতি’ গ্রন্থে (১৩৪৯/পৃ ৫৪-৫৫) পূর্বোক্ত অচলায়তন পাণ্ডুলিপি-ধৃত অথচ প্রবাসী পত্রে ও গ্রন্থে বর্জিত এই গানের বিষয় প্রথম উল্লেখ। পাণ্ডুলিপি দেখিয়া অভ্রান্ত পাঠ-নির্ণয় সম্ভবপর হওয়ায়, গানটি এখন গীতবিতানের যথোচিত স্থানে সন্নিবিষ্ট হইল। এই গান রবীন্দ্রসদনে আর-এক পাণ্ডুলিপিতেও পাওয়া যায়; কোনো পাণ্ডুলিপিতেই বর্জনচিহ্নিত নয়; ইহার স্থান অচলায়তন নাটকে দ্বিতীয় দৃশ্যের শেষে।

৫৫১-৫২।৯৫        ‘ফাল্গুনী’ (সবুজ পত্র: চৈত্র ১৩২১) হইতে সংকলিত।

৫৫২-৯৬             ‘চতুরঙ্গ’ হইতে (সবুজ পত্র: পৌষ ১৩২১) সংকলিত।

৫৫২-৫৩             ৯৭-১০০ সংখ্যা ‘ঘরে-বাইরে’ উপন্যাস হইতে। তন্মধ্যে ৯৭-৯৮ সংখ্যক গান ১৩২২ সবুজ পত্রের কার্তিক সংখ্যায়, ৯৯-সংখ্যক অগ্রহায়ণে এবং ১০০-সংখ্যক পৌষে প্রথম প্রচার লাভ করে।

৫৫৩।১০১           ‘মুক্তধারা’র এই গান ‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটকের ‘আমি ফিরব না রে, ফিরব না আর’ গানের রূপান্তর বলা যাইতে পারে।

৫৫৩।১০২           ‘মুক্তধারা’ (প্রবাসী: বৈশাখ ১৩২৯) নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর গান। এই চরিত্র ‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটকেও আছে।

৫৫৩।৫৪             ১০৩-১০৬-সংখ্যক গান রবীন্দ্রসদনে সংক্ষিপ্ত বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি হইতে শ্রীশোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায় সংকলন করেন; এগুলি ‘রক্তকরবী’ নাটকের উদ্দেশে রচিত হইলেও নাটকে ব্যবহৃত হয় নাই। ১০৩-১০৪-সংখ্যক গানে সুরের উল্লেখ ছিল। ১০৬-সংখ্যক রচনার সহিত তুলনীয় গান: আমার স্বপনতরীর কে তুই নেয়ে।

৫৫৪।১০৭           ‘রক্তকরবী’ (প্রবাসী: আশ্বিন ১৩৩১) হইতে।

৫৫৪।১০৮           ‘নটীর পূজা’ (মাসিক বসুমতী: বৈশাখ ১৩৩৩) হইতে।

৫৫৪।১০৯           এই গানটি সম্ভবতঃ ‘নটীর পূজা’ নাটকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে রচিত হইয়াছিল। এ স্থলে প্রথমসংকলন গীতবিতানের তৃতীয় খণ্ড (শ্রাবণ ১৩৩৯) হইতে গৃহীত।

৫৫৪-৫৫।১১০      তপতী (ভাদ্র ১৩৩৬) নাটকের উদ্দেশে রচিত হইলেও ব্যবহৃত হয় নাই। ইহা সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনের দপ্তর হইতে শ্রীশোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায় উদ্ধার করিয়া দিয়াছেন।

৫৫৫।১১১            ‘গৃহপ্রবেশ’ (প্রবাসী: আশ্বিন ১৩৩২) হইতে।

৫৫৫।৫৬।            ১১১-১১৪-সংখ্যক গান ‘শাপমোচন’ (কলিকাতায় মহর্ষিভবনে প্রথম ও দ্বিতীয় অভিনয়-কাল: ১৫ ও ১৬ পৌষ ১৩৩৮) নৃত্যনাট্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়। নৃত্য গীত ও কথকতার সম্মিলনে অনুষ্ঠিত কবির এই রচনা বিভিন্ন অভিনয় উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রূপ ধারণ করিয়াছিল। এ সম্পর্কে বিশদ তথ্য দ্বাবিংশখণ্ড রবীন্দ্র-রচনাবলীর গ্রন্থপরিচয়ে দ্রষ্টব্য।

৫৫৫।১১২           রচনাকাল: ১৯৩৩ খ্রীস্টাব্দ।

৫৫৫।১১৩           রচনার স্থানকাল পানাদুরা (সিংহল), ২৬ মে ১৯৩৪।

৫৫৫-৫৬।১১৪      ‘নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধূ’- ‘উর্বশী’ (২৩ অগ্রহায়ণ ১৩০২) কবিতার সংক্ষেপীকৃত ও পরিবর্তিত গীতরূপ। কবির জীবনকালে ‘শাপমোচন’-এর শেষ অভিনয় শান্তিনিকেতনে, ১৩৪৭ পৌষে। তদুদ্দেশে ১৩৪৭ অগ্রহায়ণে রচিত গানের এই পাঠ শ্রীশান্তিদেব ঘোষের সৌজন্যে পাওয়া গিয়াছে, এবং সম্প্রতি প্রথম স্তবকটি শ্রীশান্তিদেব ঘোষ গ্রামোফোন রেকর্ডেও গাহিয়াছেন।

                        শাপমোচনের বিভিন্ন অভিনয় উপলক্ষে নিম্নলিখিত কথা-অংশগুলিতেও সুর দেওয়া হইয়াছিল-

রাজা।                 অসুন্দরের পরম বেদনায় সুন্দরের আহ্বান। সূর্যরশ্মি কালো মেঘের ললাটে পরায় ইন্দ্রধনু, তার লজ্জাকে সান্ত্বনা দেবার তরে। মর্তের অভিশাপে স্বর্গের করুণা যখন নামে তখনি তো সুন্দরের আবির্ভাব। প্রিয়ে, সেই করুণা কি তোমার হৃদয়কে কাল মধুর করে নি...

রাজা।                 একদিন সইতে পারবে, সইতে পারবে, তোমার আপনার দাক্ষিণ্যে

রানী।                  তোমার এ কী অনুকম্পা অসুন্দরের তরে, তাহার অর্থ বুঝি নে। ওই শোনো, ওই শোনো উষার কোকিল ডাকে অন্ধকারের মধ্যে, তারে আলোর পরশ লাগে। তেমনি তোমার হোক-না প্রকাশ আমার দিনের মাঝে, আজি সুর্যোদয়ের কালে

                                                                                                                                                                                                                                                            -রবীন্দ্র-রচনাবলী ২২। শাপমোচন ও গ্রন্থপরিচয়

৫৫৬।১১৫           ‘চার-অধ্যায়’ (অগ্রহায়ণ ১৩৪১) গল্পে ইহার প্রথম দুটি ছত্র আছে। সমগ্র রচনাটি কবির অন্যতম পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত। রচনা ১ অগস্ট ১৯৩৪ [১৬ শ্রাবণ ১৩৪১] তারিখে বা অব্যবহিত পূর্বে। দ্রষ্টব্য শ্রীমতী নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লিখিত পত্র, সংখ্যা ২৮০: দেশ: ১১ কার্তিক ১৩৬৮।

৫৫৬।১১৬           ‘বাঁশরী’ (ভারতবর্ষ: কার্তিক-পৌষ ১৩৪০) নাটক হইতে।

৫৫৬।১১৭           ‘মুক্তির উপায়’ (অলকা: আশ্বিন ১৩৪৫) নাটক হইতে।

৫৫৬।১১৮           ‘মুক্তির উপায়’ হইতে। বলা উচিত, এই নাটক রবীন্দ্রনাথের ওই নামেরই ছোটো গল্পের নাট্যরূপ। লোকসংগ
ঈতের অনুকরণে রচিত এই গানটি গল্পেও ছিল
(সাধনা: চৈত্র ১২৯৮)।

৫৫৭-৫৮।            ১১৯-১২৬ সংখ্যা। গল্পগুচ্ছের ‘একটা আষাঢ়ে গল্প’ (সাধনা: আষাঢ় ১২৯৯) নাট্যীকৃত হইয়া ‘তাসের দেশ’ রূপ লয় (ভাদ্র ১৩৪০)। এই গানগুলি উক্ত নাটকেরই পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ (মাঘ ১৩৪৫) হইতে সংকলিত।

৫৫৮-৬০।            ১২৭-১৩২ সংখ্যা। প্রচলিত ‘ডাকঘর’ নাটকে গান নাই। কবি ১৩৪৬ সালে কতকগুলি গান যোগ করিয়া ইহাকে নূতন রূপ দিতে প্রবৃত্ত হন। বর্তমান ছয়টি গান, তাহা ছাড়া-

৫৯৮।১৩             ‘সমুখে শান্তিপারাবার’ ডাকঘরের জন্য লেখা এরূপ জানা যায়।

                           বহুদিন মহলা চলিয়াছিল; গানগুলি অধিকাংশই ঠাকুর্দার ভূমিকায় কবি নিজে গাহিতেন। কবির ভগ্ন স্বাস্থ্যের উপর অধিক পীড়নের আশঙ্কায়, শেষ-পর্যন্ত তাঁহাকে এই ‘ডাকঘর’-অভিনয়ের উদ্যম হইতে নিবৃত্ত করা হয়।

                        প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যাইতে পারে-১৯১৭ অক্টোবরে জোড়াসাঁকোর ‘বিচিত্রা’ সদনে ডাকঘরের যে অভিনয় হয় তাহার প্রয়োজনাতেও কয়েকটি গান ছিল। ‘আমি চঞ্চল হে’ ‘গ্রামছাড় ওই রাঙা মাটির পথ’ এবং ‘বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে’ এই তিনটি গানের উল্লেখ দেখা যায় শ্রীমতী সীতাদেবী-প্রণীত ‘পুণ্যস্মৃতি’ গ্রন্থে (শ্রাবণ ১৩৪৯/পৃ ১৫৮-৬০)। শেষ দুটি গান রবীন্দ্রনাথ গাহিয়াছিলেন এবং তিনি ঠাকুরদার ভুমিকাতে নামিয়াছিলেন এরূপ জানা যায়।) ১৯১৭ ডিসেম্বরের শেষে ও ১৯১৮ জানুয়ারির প্রথমে ডাকঘরের পুনরভিনয় হইয়াছিল মনে হয়। কারণ, ১৯১৭ খ্রীস্টাব্দের ২৬, ২৮, ২৯ ডিসেম্বর তারিখে কলিকাতায় ভারতের জাতীয় মহাসভার বার্ষিক অধিবেশন হয়; জানা যায় ওই সময়ে লোকমান্য টিলক, শ্রীমতী বেসান্ট্, গান্ধীজি, মালবীয়জি প্রভৃতি নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ করিয়া একদিন বিশেষ অভিনয়ের ব্যবস্থা হইয়াছিল। তদুপলক্ষ্যে মুদ্রিত বা পরে পুনরমুদ্রিত ৪ জানুয়ারী ১৯১৮ তারিখের ইংরেজি অনুষ্ঠানপত্রে জানা যায় যে, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’ গানটি এই অভিনয়ে গাওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানপত্রে আরও জানি, ঠাকুরদাই (রবীন্দ্রনাথ) কখনো ভিক্ষুক কখনো প্রহরী আর কখনো ফকির সাজেন।

৫৬৩-৬৮।            ১-১৬ সংখ্যা জাতীয় সংগীত

৫৬৩।                 ১ ও ২ সংখ্যা ‘জাতীয় সংগীত’ (১৮৭৮ খ্রীস্টাব্দ) গ্রন্থ হইতে সংকলিত। এই গান সম্পর্কে ১৩৪৬ সালের ‘শনিবারের চিঠি’র অগ্রহায়ণ (পৃ ৩১৫-১৭) ও কার্তিক (পৃ ১৫২-৫৩) সংখ্যায় মুদ্রিত ‘রবীন্দ্ররচনাপঞ্জী’ দ্রষ্টব্য। ‘অয়ি বিষাদিনী বীণা’ (২) ১৮৭৭ খ্রীস্টাব্দে ‘হিন্দুমেলা’য় পঠিত (অথবা গীত?) হইয়াছিল, এরূপ অনুমিত হইয়াছে; দুর্গাদাস লাহিড়ী-কর্তৃক সম্পাদিত ‘বাঙ্গালীর গান’ গ্রন্থে (বঙ্গবাসী: আশ্বিন ১৩১২) ইহা রবীন্দ্রনাথের নামেই সুর তালের উল্লেখ-সহ মুদ্রিত আছে।

৫৬৪-১৫।            ৩-৬-সংখ্যক গান ‘রবিচ্ছায়া’য় মুদ্রিত। বিশেষ কথা এই

৫৬৫।৫               ইহা ‘বীণাবাদিনী’তে মুদ্রিত (আশ্বিন ১৩০৫) পাঠ।

৫৬৫।৭               ‘এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন’ ১২৮৬ সালে (১৮০১ শকে) জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরুবিক্রম নাটক’এর দ্বিতীয় সংস্করণে প্রথম মুদ্রিত হয়। ১২৯২ শ্রাবণের বালক পত্রে (পৃ ১৭৮) ইহার রূপান্তরিত পুনর্‌মুদ্রণ; রচয়িতার উল্লেখ নাই। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সম্পাদিত ‘সঙ্গীতপ্রকাশিকা’র ১৩১২ অগ্রহায়ণ সংখ্যায় স্বরলিপিসহ রবীন্দ্রনাথের রচনা-রূপে যখন ছাপা হয়, ‘বন্দে মাতরম্’ ধূয়াটি নূতন দেখা যায়। গীতবিতানে ‘সঙ্গীতপ্রকাশিকা’র পাঠ অনুসৃত।

                        ‘জীবনস্মৃতি’র স্বাদেশিকতা’ অধ্যায়ে যেখানে রবীন্দ্রনাথ ‘হিন্দুমেলা’ ও ‘স্বাদেশিকের সভা’ ৫ সম্বন্ধে লিখিয়াছেন সেখানে প্রসঙ্গক্রমে এই গানের প্রথম-দ্বিতীয় ছত্র উদ্‌ধৃত হইয়াছে দেখা যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় রবীন্দ্রনাথের কোনো কাব্যগ্রন্থে এই গানটি এপর্যন্ত মুদ্রিত হয় নাই; ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থেও রচয়িতা কে সে সম্বন্ধে কোনো কথাই নাই। অথচ, ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ গীতিনাট্যে ‘এক ডোরে বাঁধা আছি মোরা সকলে’ গানটি প্রথম ছত্রেই ইহার ভাবের ও ভাষার আশ্চর্য প্রতিধ্বনি আছে, দুটি গানের সুরও প্রায় অভিন্ন।

                        ‘ভারতী ও বালক’ পত্রের ১২৯৬ কার্তিক-সংখ্যায়, ৩৬৫ পৃষ্ঠায়, ‘স্নেহলতা’ গল্পে            ‘সঞ্জীবনী’ সভার মতোই একটি সভার বর্ণনায় এই গানটি আছে-

                        এক সূত্রে গাঁথিলাম সহস্র জীবন

                        জীবন মরণে রব শপথ বন্ধন

                        ভারত মাতার তরে সঁপিনু এ প্রাণ

                        সাক্ষী পুণ্য তরবারি সাক্ষী ভগবান

                        প্রাণ খুলে আনন্দেতে গাও জয় গান

                        সহায় আছেন ধর্ম্ম কারে আর ভয়।

            গীতবিতানে-সংকলিত রচনার সহিত ভাবে ও ভাষায় ইহার কতটা সাদৃশ্য তাহা ছাড়াও লক্ষ্য করিবার বিষয় এই যে, উক্ত কাহিনী-অনুসারে এই গানটির রচয়িতা ‘চারু এখন ষোড়শবর্ষীয় বালক’ অথচ বন্ধু পরিজনপ্রশংসিত কবি, তাহাকে ‘গুপ্তসভার মেম্বর করিয়াছে- সেখানকার সে poet Laureate’, এবং ‘যখন সকলে একসঙ্গে ইহা [সংকলিত গানটি] গাহিয়া উঠিল, চারুর আপনাকে সেক্‌সপিয়ারের সমকক্ষ বলিয়া মনে হইতে লাগিল।’ উল্লিখিত ‘সঞ্জীবনী সভা’র সহিত রবীন্দ্রনাথের যোগ, সেই মণ্ডলীতে কবি হিসাবে তাঁহার সমাদর, তাঁহার তখনকার বয়স এবং কৈশোরোচিত উৎসাহ, এমন-কি ‘জীবনস্মৃতি’তে বর্ণিত (স্বদেশিকতা অধ্যায়ের শেষ অংশে) বৃদ্ধ রাজনারায়ণবাবু আর তরুণ সকল সভ্য মিলিয়া সমবেত গান গাওয়ার দৃশ্য- স্নেহশীলা ভগিনী স্বর্ণকুমারীদেবী গল্পচ্ছলে প্রায় সব কথাই বলিয়াছেন ও সবটারই একটি বাস্তব ছবি আঁকিয়াছেন দেখা যায়।

                        ‘রবীন্দ্রগ্রন্থপরিচয়’ (প্রথম সংস্করণ : পৌষ ১৩৪৯) গ্রন্থে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘গানটি যে রবীন্দ্রনাথেরই রচনা, ইহা আমরা কবির নিজের মুখেই শুনিয়াছি’।

                        শ্রীশান্তিদেব ঘোষের সাক্ষ্যও অনুরূপ।

৫৬৫-৬৬।৮          ১২৮৪ আশ্বিনের ভারতীতে মুদ্রিত ও ‘রবিচ্ছায়া’য় সংকলিত।

৫৬৬।                 ৯-১১-সংখ্যক রচনা ‘গানের বহি’তে মুদ্রিত আছে।

৫৬৭।১২             ‘কে এসে যায় ফিরে ফিরে’ ‘কল্পনা’ হইতে; রচনা: ১৩০৪।

..........................

 

৫  ইহা স্বদেশভক্তদের একরূপ গুপ্তসভা ছিল। রাজনারায়ণ বসুও ইহার সভ্য ছিলেন; ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি’ ইহাতে জানা যায় ইহার নাম ছিল ‘সঞ্জীবনী সভা’; সভার সাংকেতিক ভাষায় বলা হইত ‘হাম্‌চূপামূহাফ্’।

                        লেখিকা স্বর্ণকুমারীদেবী। পরবর্তীকালে ‘স্নেহলতা’ দুই খণ্ডে গ্রন্থ-আকারেও বাহির হয়।

                        রবীন্দ্রনাথের একটি গান: দেশ ২৬ চৈত্র ১৩৫০/পৃ ২৫৭

৫৬৭-৬৮।            ১৩ ও ১৪-সংখ্যক গান ১৩১০ সালের ‘কাব্যগ্রন্থ’ অষ্টম ভাগে প্রথম সংকলিত হয়।

৫৬৮।১৫             ‘ওরে ভাই, মিথ্যাভেবো না’ ‘সঙ্গীতপ্রকাশিকা’র ১৩১২ পৌষ সংখ্যায় স্বরলিপি-সহ প্রকাশিত। তৎপূর্বে ইহা ‘ভাণ্ডার’ মাসিক পত্রের কার্তিক সংখ্যায় মুদ্রিত হইয়াছিল।

৫৬৮।১৬             ‘আজ সবাই জুটে আসুক ছুটে’ কবির অন্যতম পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত। রচনা: ২৪ আশ্বিন [১৩১২]

৫৭১-৯২             ১-৮৩ সংখ্যা পূজা ও প্রার্থনা।–

৫৭১।১               শক ১৭৯৬ ফাল্গুনের (১২৮১) ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ হইতে; তখন কবির বয়ঃক্রম চতুর্দশ বৎসর মাত্র। ইহা গুরু নানকের যে গানের প্রথমাংশের ভাষান্তর, তাহা পরে দেওয়া গেল (‘ব্রহ্মসঙ্গীত’ গ্রন্থে আরও বারো ছত্র দেখা যায়)-

                                                                        জয়জয়ন্তী। তেওরা

                                    গগনময়্ থাল, রবি চন্দ্র দীপক বনে,

                                    তারকা-মণ্ডলা জনক মোতি।

                                    ধূপ মলয়ানিলো, পবন্ চব্ঁ‌রো করে,

                                    সকল বনরাই ফুলন্ত জ্যোতি।

                                    ক্যায়্‌সী আরতি হোবে্ ভব্‌খণ্ডনা তেরী আরতি,

                                    অনাহত শব্দ বাজন্ত ভেরী।               

                                                                                                -ব্রহ্মসঙ্গীত

                        বাংলা গানের রচয়িতা সম্পর্কে পূর্বে নানা সংশয় থাকিলেও, কবির জীবন্দশায় ‘রবীন্দ্র-রচনাপঞ্জী’তে লেখা হয়-

                        আদি ব্রাহ্মসমাজ হইতে প্রকাশিত ‘ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি (দ্বিতীয় ভাগ) পুস্তকে ইহা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নামে বাহির হইয়াছে। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন, এটি তাঁহার রচনা।

                                                                        -শনিবারের চিঠি ১০।১৩৪৬ পৃ ৫৯০

৫৭১।২               ‘প্রবাসী’ (চৈত্র ১৩২০) হইতে। অমৃতসর-গুরুদরবারে-প্রচলিত ভজনের অনুসূতি। মূল গান নিম্নে দেওয়া গেল-

                                                            সিন্ধুড়া। তেতালা

                                    এ হরি সুন্দর, এ হরি সুন্দর!

                                    তেরো চরণপর সির নাবেঁ।

                                    সেব্‌ক জনকে সেব্ সেব্ পর,

                                    প্রেমী জনাঁকে প্রেম প্রেম পর্,

                                    দুঃখী জনাঁকে বেদন বেদন,

                                    সুখী জনাঁকে আনন্দ এ।

                                    বনা-বনাঁমে সাঁব্‌ল সাঁব্‌ল,

                                    গিরি-গিরিমেঁ উন্নতি উন্নতি,

                                    সলিতা-সলিতা চঞ্চল চঞ্চল,

                                    সাগর সাগর গম্ভীর এ।

                                    চন্দ্র সূরজ বরৈ নিরমল দীপা,

                                    তেরো জগমন্দির উজার এ।

                                                                                    -ব্রহ্মসঙ্গীত

.....................................

৮ ‘শতগান’ গ্রন্থে ঈষৎ ভিন্ন পাঠ ও স্বরলিপি আছে। রবীন্দ্রনাথের রূপান্তর গ্রন্থেরও (১৩৭২/পৃ ১৯৪) সংকলন অন্যরূপ।

৯ ‘প্রবাসী’তে ঈষৎ ভিন্ন পাঠ আছে।

 

৫৭১-৭৯।            ৩-৩৬ সংখ্যা ‘রবিচ্ছায়া’ হইতে সংকলিত। অধিকাংশই বাংলা ১২৮৭ সাল বা ১৮০২ শক (কবির বয়ঃক্রম ২০ বৎসর) হইতে নিম্নলিখিত ক্রমে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় প্রকাশিত-

                        ৩-৬, ১২                         ফাল্গুন ১৮০২ শক

                        ৭-১০                             ফাল্গুন ১৮০৪

                        ১১, ১৩                           জ্যৈষ্ঠ ১৮০৫

                        ১৪-১৮                           ফাল্গুন ১৮০৫

                        ১৯-২০                           জ্যৈষ্ঠ ১৮০৬

                        ২১                                ভাদ্র ১৮০৬

                        ৩৬                                কার্তিক ১৮০৬

                        ২২-২৩ ও২৬                    অগ্রহায়ণ ১৮০৬

                        ২৪-২৫ ও২৭-৩৪              ফাল্গুন ১৮০৬

                        ৩৫                                বৈশাখ ১৮০৭

৫৮০।                 ৩৭-৩৮ সংখ্যা ‘রাজর্ষি’ (১২৯৩) উপন্যাসে বালক ধ্রুবের গান। ‘হরি তোমায় ডাকি’ (৩৭) গানের ‘বালক’ পত্রে (ভাদ্র ১২৯২) প্রকাশিত বা ‘রাজর্ষি’তে মুদ্রিত পাঠ ঈষৎ ভিন্ন: বহু ব্রহ্মসংগীতসংকলনে যে পাঠ দেখা যায় এ স্থলে তাহাই গৃহীত। ‘আমাছজনায় মিলে’ (৩৮) ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় ফাল্গুন ১৮০৮ শকে (১২৯৩) প্রকাশিত।

৫৮০-৮৩।            ৩৯-৫৩ সংখ্যা। ৪৭-সংখ্যক গানটি গীতবিতানের প্রথম সংস্করণ হইতে। তদ্‌ব্যতীত সবই ‘গানের বহি’ গ্রন্থে মুদ্রিত। ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় প্রকাশ-

                        ৪১                    ফাল্গুন ১৮০৭ শক

                        ৪২-৪৩               চৈত্র ১৮০৭

                        ৪৪-৪৫               বৈশাখ ১৮০৮

                        ৪৬-৫১               ফাল্গুন ১৮০৮

                        ৫২                    ফাল্গুন ১৮০৯।

                        ৫৩                    ফাল্গুন ১৮১৪

 

৫৮৩-৮৪।            ৫৪-৫৬ ‘কাব্যগ্রন্থাবলী’তে (১৩০৩) মুদ্রিত। শেষোক্ত গান (মহাবিশ্বে মহাকাশে ইত্যাদি) সম্পর্কে বক্তব্য এই যে, ইহা প্রচলিত গীতবিতান গ্রন্থের ১৪০ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত পাঠান্তরের সহিত অবিরোধে ১৩১০ সালের কাব্যগ্রন্থে বা ১৯০৮ ও ১৯০৯ খ্রীস্টাব্দের ‘গান’ গ্রন্থে মুদ্রিত ছিল; পরবর্তী গীতসংকলনগুলি হইতে ভ্রষ্ট। ইহার জ্যোতিরিন্দ্রনাথ-কৃত স্বরলিপি বিশ্বভারতী পত্রিকায় মুদ্রিত ও প্রচলিত চতুর্থখণ্ড স্বরবিতানে সংকলিত হইয়াছে।

৫৮৪।৫৭             স্বরলিপিযুক্ত রবীন্দ্র-পাণ্ডলিপিতে ও ‘বীণাবাদিনী’র ১৩০৫ ভাদ্র সংখ্যায় পাওয়া যায়।

৫৮৩।৫২             ৫৮-৬৯-সংখ্যক রচনা ‘কাব্যগ্রন্থ’ (১৩১০) হইতে গৃহীত। ৬৩-৬৫ ও ৬৭-৬৯-সংখ্যক গান আখর-বিহীন ভাবে গীতবিতান গ্রন্থের প্রথম খণ্ডেই মুদ্রিত আছে।

৫৮৭।৬৭             ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে’ গানের আখর-বিহীন পাঠ অন্যত্র সংকলিত। এই গানের প্রসঙ্গে কবি বলেন-

                             পূর্বেই বলিয়াছি একদিন আমার রচিত দুইটি পারমার্থিক কবিতা শ্রীকণ্ঠবাবুর নিকট শুনিয়া পিতৃদেব হাসিছিলেন। তাহার পরে বড়ো বয়সে আর-একদিন আমি তাহার শোধ লইতে পারিয়াছিলাম। সেই কথাটা এখানে উল্লেখ করিতে ইচ্ছা করি।

                        একবার মাঘোৎসবে [মাঘ ১২৯৩] সকালে ও বিকালে আমি অনেকগুলি গান তৈরী করিয়াছিলাম। তাহার মধ্যে একটা গান-‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।’

                        পিতা তখন চুঁচুড়ায় ছিলেন। সেখানে আমার এবং জ্যোতিদাদার ডাক পড়িল। হারমোনিয়ামে জ্যোতিদাদাকে বসাইয়া আমাকে তিনি নূতন গান সব-ক’টি একে একে গাহিতে বলিলেন কোনো কোনো গান দুবারও গাহিতে হইল।

                        গান গাওয়া যখন শেষ হইল তখন তিনি বলিলেন, ‘দেশের রাজা যদি দেশের ভাষা জানিত ও সাহিত্যের আদর বুঝিত, তবে কবিকে তো তাহারা পুরস্কার দিত। রাজার দিক হইতে যখন তাহার কোনো সম্ভাবনা নাই তখন আমাকেই সে কাজ করিতে হইবে।’ এই বলিয়া তিনি একখানি পাঁচ-শ টাকার চেক আমার হাতে দিলেন।

                                                                                                -জীবনস্মৃতি। হিমালয়যাত্রা

৫৮৮।৭০             ইহা কবির কোনো গ্রন্থে মুদ্রিত হয় নাই। ‘সমালোচনী’ পত্রিকায় প্রকাশ: মাঘ-ফাল্গুন ১৩০৮।

৫৮৮-৮৯।৭১        ‘বসুধা’ মাসিক পত্রিকায় প্রকাশ: কার্তিক ১৩১২। রবীন্দ্রসদনের পাণ্ডুলিপি-বিচারে মনে হয় ১৩১২ আশ্বিনেরই রচিত।

৫৮৯।৭২             ‘গীতাঞ্জলি’ হইতে। রচনা : ২৬ আষাঢ় ১৩১৭।

৫৮৯-৯০।৭৩-৭৪  শান্তিনিকেতন-আশ্রমের অন্যতম উৎসব-অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়: ২৫ বৈশাখ ১৩৩২। এ দুটি যে গান তাহা শ্রীঅনাদিকুমার দস্তিদারের সাক্ষ্যে ও সৌজন্যে জানা গিয়াছে। ‘গিতালি’-অনুযায়ী রচনাকাল যথাক্রমে ১৬ এবং ২৫ আশ্বিন ১৩২১।

৫৯০।৭৫             বাউল সুরের নির্দেশ-সহ ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ইহার প্রকাশ: মাঘ ১৩২৪। ‘গীতাপঞ্চাশিকা’য় (আশ্বিন ১৩২৫) রচনাটি থাকিলেও স্বরলিপি নাই।

৫৯০।৭৬             রবীন্দ্রনামাঙ্কিত গ্রন্থে এ রচনাটির প্রথম সাক্ষাৎ পাই ‘নবগীতিকা’র (১৩২৯) দ্বিতীয় খণ্ডে।

৫৯১।৭৭-৭৮        ‘শান্তিনিকেতন’ পত্রিকায় প্রকাশ: ফাল্গুন ১৩২৯।

৫৯১।৭৯             ১৩৩০ সনে ‘বিসর্জন’ অভিনয়ে গাওয়া হয়। স্বর্গীয় প্রফুল্লচন্দ্র (বুলা) মহলানবিশের নিকট ইহার কথা ওসুর পাওয়া গিয়াছিল। সম্প্রতি শ্রীমতী সাহানাদেবী এই গান টেপ্-রেকর্ডে গাহিয়াছেন; রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে তাহার সহিতও মিলাইয়া দেখা হইয়াছে।

৫৯১।৮০             ইহার নানারূপ পাঠ কাব্যে নাটকে অনুষ্ঠানপত্রে ও স্বরলিপিগ্রন্থে মুদ্রিত। তন্মধ্যে দুই-একটি ‘পাঠ’ মুদ্রণপ্রমাদ মাত্র। বর্তমান পাঠ সম্পূর্ণতঃ ‘প্রবাহিণী’ গ্রন্থের অনুরূপ। এই গান ১৩৩০ ভাদ্রে ‘বিসর্জন’ নাটকের অভিনয়ে গাওয়া হইয়াছিল।

৫৯১।৮১-৮২        এই দুটি হিন্দীভাঙা গান ‘আদর্শ’-সহ পাওয়া গিয়াছে শ্রীসমীরচন্দ্র মজুমদার-সংরক্ষিত রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপিতে।

৫৯২।৮৩             ‘নবীন’ গীতিাভিনয়ের সমকালে (চৈত্র ১৩৩৭) রচিত এবং শ্রীমতী সাবিত্রীগোবিন্দের গাওয়া গ্রামোফোন রেকর্ড্ রূপে প্রচারিত।

                           রবীন্দ্রসদনে সংরক্ষিত একখণ্ড জীর্ণ কাগজে মূল-সহ পূর্বোক্ত গানের এক পূর্বপাঠ পাওয়া যায়। এক-পিঠ-সাদা ওই কাগজের আর-এক অজ্ঞাতপূর্ব ‘ভাঙা’ গানের খসড়া রহিয়াছে; রবীন্দ্রনাথ যেভাবে লিখিয়াছেন মূল-সহ তাহা নিম্নে উদ্‌ধৃত হইল (জীর্ণ কাগজে কয়েকটি অক্ষর কেবল অনুমানগম্য এবং শেষ ছত্রের উ-কারও লুপ্ত)-

                        মনুয়া, যো জগমে

                                    লীপ্‌টায়ো অন্ধকারে।

                        এ রোকয়ি নহী হা সহায়ো।

                        য়হ সংসার স্বপ্নকী মায়া

                        বিরসাভর ম ভুলায়ো

                                    ব্রহ্মানন্দ ছোড় ভববন্ধন

                        মোক্ষদুয়ার           আর পারয়ো

                                                পারাবারে

                                    --------

                        আনে জাগরণ মুগ্ধ চোখে

                                    কেন সংশয়শঙ্কিত চিত্ত

                                    মগন কেন অবসাদে

                        রুদ্ধ বন্ধ কেন ভয়বন্ধনে

                                    জীর্ণ [কেন] দুখশো [কে]

 

৫৯৫-৯৯।            ১-১৭ সংখ্যা। আনুষ্ঠানিক সংগীত।

৫৯৫।১               ‘বর্দ্ধমান দুর্ভিক্ষ উপলক্ষে রচিত’। ১২৯২ বৈশাখে প্রকাশিত ‘বরিচ্ছায়া’ গ্রন্থের সর্বশেষ গান।

৫৯৫।২               ‘ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ’ আচার্য জগদীশচন্দ্রকে সম্বর্ধনা জানাইতে ১৯ মাঘ ১৩০৯ বা ২ ফেব্রুয়ারী ১৯০৩ তারিখে যে সারস্বত সম্মিলনের আয়োজন করেন, তদুপলক্ষে রচিত। সম্প্রতি চিঠিপত্রের ষষ্ঠ খণ্ডে পাণ্ডুলিপির প্রতিচিত্র এবং আনুষঙ্গিক বিবরণ (পৃ ২৪৬)-সহ প্রচারিত হইয়াছে।

৫৯৫।৩               মাতৃমন্দির-পুণ্য-অঙ্গন ইত্যাদি যে গান গীতবিতানের প্রথম খণ্ডে (স্বদেশ: ১৭ সংখ্যা) মুদ্রিত, তাহার বহু পাঠান্তরের মধ্যে এটিকে বিশিষ্ট বলা চলে। ১৯৪০ অগস্টে অক্‌সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃক শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রনাথকে ‘ডক্টর’ উপাধি দেওয়া হয়, তদুপলক্ষ্যে রচিত। শ্রীশান্তিদেব ঘোষের ‘রবীন্দ্রসংগীত’ গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।

৫৯৫-৯৬             ৪-৬ সংখ্যা ‘রবিচ্ছায়া’ হইতে সংকলিত। তন্মধ্যে ‘জগতের পুরোহিত তুমি’ (৪) গানটি রচনার বিশেষ উপলক্ষ্য ১৫ শ্রাবণ , ১২৮৮ (২৯ জুলাই ১৮৮১) তারিখে কৃষ্ণকুমার মিত্রের সহিত রাজনারায়ণ বসু মহাশয়ের চতুর্থ কন্যা লীলাবতীর বিবাহ। এই সময় রবীন্দ্রনাথ আরও যে দুইটি গান লিখিয়া দেন বলিয়া জানা যায় তাহা হইল ‘দুই হৃদয়ের নদী’ ও ‘শুভদিনে এসেছে দোঁহে’- উভয় গানই গীতবিতান গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে ‘আনুষ্ঠানিক’ অধ্যায়ে সংকলিত, সংখ্যা যথাক্রমে ৬ ও ৯। রবীন্দ্রজীবনীর প্রথম খণ্ডে (১৩৭৭/পৃ ১৫১) লীলাবতী দেবীর দিনপঞ্জী উদ্ধার করিয়া বলা হইয়াছে: ‘নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, সুন্দরীমোহন দাস, অন্ধ চুনীলাল ও নরেন্দ্রনাথ দত্ত [পরে স্বামী বিবেকানন্দ] মহাশয়গণ সংগীত করিয়াছিলেন। ... শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়... সংগীত রচনা করিয়া গায়কদিগকে শিখাইয়া দিয়াছিলেন।’ রবীন্দ্রনাথের এক চিঠিতে (রবীন্দ্রসদন-সংগ্রহ) শেষোক্ত গানের পূর্বপাঠ পাওয়া যায়: মহাগুরু দুটি ছাত্র এসেছে তোমার ইত্যাদি।

৫৯৬-৯৭।৭-৮      কৃষ্ণকুমার মিত্র মহাশয়ের কন্যা কুমুদিনী মিত্র (বসু) এবং বাসন্তী মিত্র (চক্রবর্তী) এতদুভয়ের পরিণয়োপলক্ষ্যে রচিত, পরে ‘ব্রহ্মসঙ্গীত’ এ মুদ্রিত। শ্রীমতী বাসন্তী চক্রবর্তীর পত্রে এই দুই রচনা সম্পর্কে তথ্য জানা যায়; ইহাও জানা গিয়াছে যে, রচনাদুটিতে কবি স্বয়ং সুর দেন নাই, তবে ‘তাঁহার অসীম মঙ্গললোক হতে’ (৮) রচনায় সাহানা সুর দেওয়া হয় এরূপ অভিপ্রায় প্রকাশ করিয়াছিলেন।

৫৯৭-৯৮             ৯-১১ সংখ্যা। কবি শান্তিনিকেতন-আশ্রমে পৌত্রী ‘কল্যাণীয়া নন্দিনী’র পরিণয় (১৪ পৌষ ১৩৪৬) উপলক্ষ্যে এই তিনটি গান রচনা করেন। ‘প্রেমের মিলনদিনে সত্য সাক্ষী যিনি’ (১০) রচনাটির পূর্বতন পাঠ ছিল ‘দুজনের মিলনের সত্যসাক্ষী যিনি’ ইত্যাদি এবং পরবর্তী ‘জীবনের সব কর্ম’ স্থলে ছিল ‘তোমাদের সব কর্ম’।

৫৯৮।১২             ১২৯৩ সালে ‘কড়ি ও কোমল’ এ মুদ্রিত (উত্তরকালে ‘শিশু’ কাব্যে সংকলিত), ‘আশীর্বাদ’ কবিতার সূচনাংশ এবং শেষ স্তবক মিলাইয়া এই গানটি ঠিক কোন্ সময়ে রচিত জানা যায় না। তবে ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’-কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্রহ্মসঙ্গীত’এ সুর-তালের উল্লেখ-সহ বহু বৎসর ধরিয়া (১৩১১ মাঘে প্রকাশিত অষ্টম সংস্করণ দেখা হইয়াছে) মুদ্রিত হইয়া আসিতেছে। কবি স্বয়ং ইহার সুরকার কিনা তাহা জানা যায় না কিন্তু তাঁহার জীবদ্দশায় বিশিষ্ট গ্রন্থে বহুলভাবে প্রচারিত হওয়ায় মনে করা অন্যায় হইবে না যে, অন্ততপক্ষে তাঁহার অনুমোদন ছিল। আকর কবিতার মূল ছত্রগুলি হইতে দু-এক স্থানে সামান্য পাঠান্তর দেখা যায়।

৫৯৮।১৩             ইহার রচনা ৩ ডিসেম্বর ১৯৩৯ তারিখে নবপরিকল্পিত ‘ডাকঘর’ নাটকের শেষ দৃশ্যে ‘সুপ্ত’ অমলের শিয়রে ঠাকুরদার গান-রূপে। উল্লিখিত নাটক শেষ পর্যন্ত মঞ্চস্থ হইতে পারে নাই। শুনা যায় কবি অভিপ্রায় প্রকাশ করেন যে, গানটি তাঁহার দেহত্যাগের পূর্বে যেন প্রচারিত না হয়; তাঁহার শ্রাদ্ধবাসরে ইহা প্রথম সাধারণসমক্ষে গীত হয়। উল্লিখিত ‘ডাকঘর’ নাটকের অন্য গানগুলি এই গ্রন্থের ৫৫৮-৫৯ পৃষ্ঠায় (সংখ্যা ১২৭-১৩২) মুদ্রিত।

৫৯৮।১৪             ২৫ ডিসেম্বর ১৯৩৯ তারিখে খ্রীস্টদিবসের উদ্‌যাপন-উদ্দেশে রচিত, ‘প্রবাসী’র ১৩৪৬ মাঘ-সংখ্যায় ‘বড়দিন’ শিরোনামে মুদ্রিত।

৫৯৯।১৫             ‘অন্ধদের দুঃখলাঘব শিবির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে’ কলিকাতায় ২ নভেম্বর ১৯৪০ তারিখে রচিত। ‘প্রবাসী’র ১৩৪৭ অগ্রহায়ণ সংখ্যায় ২৭০ পৃষ্ঠার দ্বিতীয় সম্পাদকীয় মন্তব্যটি দ্রষ্টব্য।

৫৯৯।১৬             ‘সৌম্য আমাকে বলেছে মানবের জয়গান গেয়ে একটা কবিতা লিখতে... তাই একটা কবিতা রচনা করেছি, সেটাই হবে নববর্ষের গান।’ কবির এবংবিধ উক্তি হইতে জানিতে পারি, শ্রীসৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরোধে কবি মানব-সাধারণের অভ্যুখান সম্পর্কেই এইটি রচনা করেন ১ বৈশাখ ১৩৪৮ তারিখে। এই রচনা সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য এবং পাঠান্তর শ্রীশান্তিদেব ঘোষের ‘রবীন্দ্রসংগীত’ (প্রচলিত সংস্করণ) গ্রন্থে পাওয়া যাইবে।

৫৯৯।১৭             ‘হে নূতন’ গান সম্পর্কে পূর্বোক্ত গ্রন্থে শ্রীশান্তিদেব ঘোষ বলেন, ‘এই তাঁর জীবনের সর্বশেষ গান।’ কবি বহুদিন পূর্বে (২৫ বৈশাখ ১৩২৯) যে কবিতা (পঁচিশে বৈশাখ: পূরবী) লিখিয়াছিলেন তাহারই শেষ দিকের কতকগুলি ছত্র লইয়া, একটু আধটু পরিবর্তন করিয়া, ইহার রচনা ও সুরযোজনা বাংলা ১৩৪৮ সালের ২৩ বৈশাখ তারিখে: কবির পরবর্তী জন্মোৎসবে গাওয়া হয়।

৬০৩-৬৩২           ১-১০১ সংখ্যা প্রেম ও প্রকৃতি

৬০৪-০৬।            ৫-১১ সংখ্যা ‘শৈশবসঙ্গীত’ (১২৯১) কাব্যে মুদ্রিত। তন্মধ্যে-

৬০৪।৬               ‘ফুলবালা’র অন্তর্গত ‘গান’

৬০৫।০৫             ৭-৮ ‘ভগ্নতরী’র অন্তর্গত ‘গান’ এবং

৬০৬।১১             ‘অপ্সরাপ্রেম’ এর অন্তর্গত ‘গান’। শেষোক্ত গাথায় ধৃত সুদীর্ঘ ‘গীত’ ‘কেন গো এমন চপল’ ইত্যাদি গীতবিতানে সংকলন করা হয় নাই।

৬০৪-৬১৪।          ১-৬ এবং ৮-৪৪-সংখ্যক গানগুলি ‘রবিচ্ছায়া’ (বৈশাখ ১২৯২) গ্রন্থ হইতে সংকলিত। কবি এই গ্রন্থের নামকরণ বা ‘নিবেদন’ উপলক্ষ্যে ‘শৈশবসঙ্গীত’ অথবা ‘বাল্যলীলা’ (দ্রষ্টব্য টীকা ১/পৃ ৬৬৫) বলিয়া এই সময়ের গানগুলির প্রকাশে বিশেষ সংকোচ দেখাইয়াছেন। ইহার মধ্যে যেগুলি প্রেমের গান তাহাতে আবার প্রায়শই একটি ‘নাটকীয়তা’ও দেখা যায়। এখানে সংকলিত প্রথম ও দ্বিতীয় গান ইংরেজির অনুবাদ এবং ২৯-সংখ্যক গান একটি গাথায় ব্যবহৃত হওয়াতে, তাহার কারণও বুঝা যায়; অন্যগুলি যে ঐরূপ কেন তাহা আজও গবেষকগণের অনুসন্ধান-সাপেক্ষ বলা চলে।

                        তথাপি এটুকু বলিতে বাধা নাই যে- ‘মানসী’ কাব্যে ‘ভুলে’ ‘ভুল-ভাঙা’ ‘নারীর উক্তি’ ‘পুরুষের উক্তি’ এবং আরো বহু কবিতায় মধুরভাবের সূক্ষ্ণ-ঘাত-প্রতিঘাত-ময় যে বিচিত্র প্রকাশ রসোত্তীর্ণ এবং পরম রমণীয়তায় উদ্ভাসিত, তাহারই পূর্বাভাস ‘শৈশবসঙ্গীত’ ও ‘রবিচ্ছায়া’র প্রেমের গান’ গুলিতে পাওয়া যায়। কতকগুলি বস্তুতই উজ্জ্বলরসোপেত গীতনাট্যে ব্যবহৃত হইয়াছিল বলিয়া জানা যায়, সেরূপ বিশেষ একটি গুচ্ছ পূর্ববর্তী ৬১০-১৫ পৃষ্টায় (গীতসংখ্যা ২৭-৩৪ ও ৩৬-৪৫) সংকলিত হইয়াছে।

৬০৩-০৬।            ১-১১ সংখ্যার মধ্যে যেগুলি ‘ভারতী’ পত্রিকায় মুদ্রিত দেখা যায় মাস ও বর্ষ উল্লেখ-পূর্বক তাহার তালিকা দেওয়া গেল-

৬০৩।১               ভারতী: কার্তিক ১২৮৬। ইহা Thomas Mooreএর Irish Melodies গ্রন্থের Love’s Young Dream কবিতার পর-পৃষ্ঠায়-সংকলিত প্রথম ও শেষ স্তবকের অনুবাদ-

                        Oh! the days are gone, When beauty bright

                                    my heart’s chain wove;

                        When my dream of life, from morn till night

                                    was love, still love.

                                    New hope may bloom,

                                    and days may come

                                    of milder calmer beam,

                        but there’s nothing half so sweet in life

                                    as love’s young dream.

                        No, there’s nothing half so sweet in life

                                    as love’s young dream.

                                                …..

                        No,- that hallow’d form is ne’er forgot

                                    which first love thac’d;

                        still it lingering haunts the greenest spot

                                    on memory’s waste.

                                    ‘Twas odour fied

                                     as soon as shed;

                        ‘twas morning’s winged dream;

                        ‘twas a light that ne’er can shine again

                                    on life’s dull stream:

                        oh! ‘twas light that ne’er can shine again

                                    oh! life’s dull stream.

 

৬০৩।২               ভারতী: কার্তিক ১২৮৬। ওয়েল্‌স’ এর কবি Talhaiarn’  এর ইংরেজী অনুবাদ হইতে অনুদিত।

৬০৩।৩               ভারতী: ফাল্গুন ১২৮৮। ‘গানের বহি’র সংক্ষিপ্ত পাঠ গৃহীত।

৬০৪।৪               ভারতী: ভাদ্র ১২৯১।

৬০৪।৫               ভারতী: অগ্রহায়ণ ১২৮৭।

৬০৪।৬               ভারতী: কার্তিক ১২৮৫।

৬০৪-০৫। ৭-৮     ভারতী: আষাঢ় ১২৮৬।

৬০৫।১০             ভারতী: ফাল্গুন ১২৮৬।

৬০৬।১১             ভারতী: ফাল্গুন ১২৮৫।

৬১১।২৯             ভারতী: চৈত্র ১২৮৬/পৃ ৫৫৫: গাথা (খড়্গ-পরিণয়)-শীর্ষক একটি দীর্ঘ কবিতার অন্তর্গত। স্বর্ণকুমারীদেবীর উক্ত কবিতা তাঁহার ‘গাথা’ কাব্যে সংকলন-কালে মূল কবিতায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তনপূর্বক গানটি বর্জিত হইয়াছে।

৬১৫।৪৫-৪৬        বাংলা ১৩০০ বৈশাখের ‘গানের বহি’তে মুদ্রিত।

৬১৫।৪৭-৪৮        ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’ (১৩০৪ সাল) হইতে সংকলিত। প্রথমোক্ত গানটি পরবর্তী ‘গান’ (১৯০৯ খ্রীস্টাব্দ) গ্রন্থেও দেখা যায়। অন্য গানটি (৪৮) জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বহুপুরাতন ১২৮৮ সালের ‘স্বপ্নময়ী’ নাটকেও পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের বহু গান ওই নাটকের অঙ্গীভূত রহিয়াছে।

৬১৬।৪৯             এই রচনা মূলতঃ ‘মানসী’ কাব্যের অন্তর্গত; রচনাকাল: আষাঢ় ১২৯৪। ১৩২৬ পৌষের ‘কাব্যগীতি’তে ইহার স্বরলিপি মুদ্রিত।

৬১৬।৫০             ‘নৃত্যনাট্য মায়ার খেলা’র মহলা উপলক্ষে, ‘জীবনে আজ কি প্রথম এল বসন্ত’ (পৃ ৪৫৭ ও ৬৩৫) গানটিতে বহুবিধ পরিবর্তন করিয়া বর্তমান গানটি রচনা হয় ১৩৪৫ সালে। উক্ত নৃত্যনাট্যের কবি কর্তৃক সংশোধিত ও সম্পাদিত যে পরবর্তী পাঠ পাওয়া গিয়াছে তাহাতে গৃহীত হয় নাই।

৬১৭।৫১             বর্তমানে গানটি রচনার উপলক্ষ্যও একই। আরম্ভের চারিটি ছত্র লইয়াই গীতিনাট্য ‘মায়ার খেলা’র গান (পৃ ৪৬৮)-শেষ চার ছত্র সম্পূর্ণ নূতন। নৃত্যনাট্যের পরবর্তী পাঠ হইতে পূরা গানটি কবি-কর্তৃক বর্জিত হইয়াছে।

৬১৭।৫২             মূলতঃ ‘সোনার তরী’র অন্তর্গত; রচনা: ১২ আষাঢ় ১৩০০। মূল কবিতার কেবল প্রথম ও শেষ স্তবক লইয়া রচিত এই পাঠ সংশোধিত ‘গান’ (১৯০৯ খ্রীস্টাব্দ) গ্রন্থে পাওয়া যায়।

৬১৭।৫৩             ১৩০৩ আশ্বিনের ‘কাব্যগ্রন্থাবলী’তে ‘চিত্রা’ কাব্যের অন্তর্গত; রচনা: ১৩ জ্যৈষ্ঠ [১৩০১]

৬১৮                  ৫৪-৫৫-সংখ্যক এই দুটি গান ইন্দিরাদেবীর ‘গানের বহি’তে রবীন্দ্রনাথের হস্তাক্ষরে পাওয়া গিয়াছে। ‘বৃথা গেয়েছি বহু গান’ (৫৫) অন্য একটি পাণ্ডুলিপিতেও সুরের উল্লেখ-সহ পাওয়া যায়।

৬১৮।৫৬             ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ গানটির বর্তমান পাঠ ‘বীণাবাদিনী’র ১৩০৫ জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা হইতে সংকলিত; ইহা ‘কল্পনা’য় ও ‘গীতবিতান’ এর পূর্ববর্তী ‘প্রেম’ অধ্যায়ে মুদ্রিত পাঠ হইতে বহুশঃ ভিন্ন। ইন্দিরাদেবীর ‘গানের বহি’তে কবির হস্তাক্ষরে এই পাঠই দেখা যায়; রচনাকাল: ৯ আশ্বিন ১৩০৪।

৬১৮।৫৭             ‘বিধি ডাগর আঁখি যদি দিয়েছিলে’ গানের রচনাকাল: ১০ আশ্বিন ১৩০৪। ‘সঙ্গীতপ্রকাশিকা’য় ১৩১২ শ্রাবণে প্রকাশিত এবং ১৯০৯ খ্রীস্টাব্দের ‘গান’-এ সংকলিত।

৬১৯।৫৮             ইন্দিরাদেবীর ‘গানের বহি’তে রবীন্দ্র-হস্তাক্ষরে পাওয়া যায়; ১০ আশ্বিন ১৩০৪ তারিখে রচিত। ওই বৎসরেই কার্তিক-সংখ্যা ‘বীণাবাদিনী’তে কথা ও স্বরলিপি প্রকাশিত।

৬১৯।৫৯             ইহা ‘কার হাতে যে ধরা দেব প্রাণ’ (পৃ ৫৪৮) গানের পাঠান্তর; ‘প্রজাপতির নির্বন্ধ’ হইতে সংকলিত। ১৩১০ সালের ‘কাব্যগ্রন্থ’ অষ্টম ভাগেও দেখা যায়।

৬১৯।৬০             বাংলা ১৩১৬ বৈশাখে ‘বিজ্ঞাপিত’ প্রায়শ্চিত্ত নাটকের একটি গানের (দ্রষ্টব্য পৃ ৩৯৮/সাখ্যা ৬৩) এই পাঠভেদ ১৩২৯ বৈশাখে প্রকাশিত ‘মুক্তধারা’য় পাওয়া যায়।

৬১৯।৬১             ‘অচলায়তন’ (প্রথম প্রকাশ: প্রবাসী: ১৩১৮ আশ্বিন) গ্রন্থ হইতে গৃহীত।

৬২০।৬২             আদৌ ‘খেয়া’ কাব্যে সংকলিত; রচনা: ২৪ মাঘ ১৩১২।

৬২০।৬৩             ‘বলাকা’য় সংকলিত কবিতার পাঠান্তর; মূল কবিতার রচনা: ৭ কার্তিক ১৩২২।

৬২০।৬৪             ভাসে (গান)-এই শিরোনামে বাংলা ১৩২৯ ভাদ্রের ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত। রচনা: ৩১ আষাঢ় [১৩২৯]

৬২০।৬৫             ‘অনেক দিনের মনের মানুষ’ (দ্বিতীয়খণ্ড নবগীতিকা: ১৩২৯) গানের এই রূপান্তরিত পাঠ ‘নৃত্যনাট্য মায়ার খেলা’র পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত। নৃত্যনাট্য হইতে পরে বাদ দেওয়া হয়।

৬২০।৬৬             ‘হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর বৈশাখী ঝড় আসে, (রচনা: জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯) গানের এই অভিনব পাঠ ১৩৩৭ ফাল্গুনে ‘নবীন’ এর অনুষ্ঠানপত্রে মুদ্রিত হয়।

৬২১।৬৭             ইহার রচনা: ২৪ চৈত্র ১৩২৯। গীতবিতানের ৩৭০ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত পাঠের আখরওয়ালা রূপান্তর। দ্বিতীয়খণ্ড স্বরবিতানের প্রচল সংস্করণে দুটি গানেরই স্বরলিপি পাওয়া যাইবে।

৬২১।৬৮             পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত। ১৩২৯ সালের ফাল্গুন-চৈত্রের মধ্যেই রচিত মনে হয়। ইহার সুর ‘পিয়া বিদেশ গয়ে’ এরূপ একটি হিন্দি গানের অনুরূপ এই অনুমান করা হয়।

৬২১।                 ৬৯-৭১ সংখ্যা। ‘প্রবাহিণী’ (অগ্রহায়ণ ১৩৩২) হইতে গৃহীত। ‘অবেলায় যদি এসেছ আমার বনে’ গানটি (৭০) তৎপূর্বেই ‘সঙ্গীতবিজ্ঞান প্রবেশিকা’য় প্রচারিত হইয়াছিল।

৬২২।৭২             প্রথমসংস্করণ ‘গীতবিতান’ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ড (১৩৩৯) হইতে সংকলিত। রচনা: ফাল্গুন ১৩৩২।

৬২২।৭৩             সুরেন্দ্রনাথ করের সৌজন্যে প্রাপ্ত রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত। আনুমানিক রচনাকাল: ফাল্গুন ১৩৩২।

৬২৩।৭৪             প্রথমসংস্করণ ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে মুদ্রিত; রচনা: ফাল্গুন ১৩৩২। বর্তমান পাঠে, প্রকাশিত স্বরলিপির অনুসরণ করা হইয়াছে। কবি ‘দালিয়া’ ছোটো গল্পের আখ্যান লইয়া নাটক রচনা করার সংকল্প করিয়াছিলেন শুনা যায়; ইহা তাহারই প্রস্তাবনা গীত।

৬২৩।৭৫             ১৩৩৪ আষাঢ়ের বিচিত্রায় প্রচারিত (পৃ ২০-২১) এবং বনবাণী কাব্যের (১৩৩৮ আশ্বিন) নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা অধ্যায়ে সংকলিত ‘বৈশাখ’ কবিতার (ধ্যাননিমগ্ন নীরব নগ্ন ইত্যাদি) এই পূর্বরূপ তথা গীতরূপ শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রসদনের একাধিক রবীন্দ্রপাণ্ডুলিপিতে বর্তমান। ইহা যে গানই সে বিষয়ে সমকালীন দু-একজন ব্যক্তি সাক্ষ্য দেন। রচনাকাল: ফাল্গুন ১৩৩৩।

৬২৩।৭৬             ‘নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা’র অন্তর্গত এই গানটি যে পাঠ ১৩৩৪ আষাঢ়ের ‘বিচিত্রা’য় প্রকাশিত তাহাই অধিক প্রচলিত এবং এই গ্রন্থের ৩৬১ পৃষ্ঠায় (সংখ্যা ২৩৩) মুদ্রিত। মূলতঃ বসন্তের গান (রচনা: ১৯ ফাল্গুন ১৩৩৩), শরতের প্রসঙ্গে ব্যবহার করায় ‘বনবাণী’ কাব্যে, অর্থাৎ ‘নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা’র সর্বশেষে পাঠে, যেমনটি দেখা দেখা যায় তাহাই এ স্থলে সংকলিত হইল।

৬২৪।৭৭             ‘নটরাক-ঋতুরঙ্গশালা’র অঙ্গীভূত ‘চঞ্চল’ কবিতা: ওরে প্রজাপতি মায়া দিয়ে কে যে পরশ করিল তোরে ইত্যাদি। দিনেন্দ্রনাথ-কৃত ইহার যে গীতরূপ ১৩৪৫ বৈশাখের তৃতীয়খণ্ড স্বরবিতানে সংকলিত (পরে ১৩৫৪ আশ্বিনের দ্বিতীয়খণ্ড গীতবিতানে), কবিতা হিসাবে তাহার ছন্দ পৃথক্, ভাষাতেও বহু পরিবর্তন। অল্পকালের মধ্যেই কবিতা হিসাবে রবীন্দ্রনাথ এ রচনায় আরও বহুবার বহু পরিবর্তন করিলেও (বিভিন্ন রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপিতে ৮।৯টি রূপের কম নয়), বর্তমান সংকলনের বিশেষ গুরুত্ব নানা কারণে। প্রথমতঃ ইহা মূল কবিতার কেবল ভিন্ন ছন্দে লেখা ভিন্ন রূপই নয়, একেবারে রূপান্তর বা জন্মান্তর। দ্বিতীয়তঃ ইহা যে গান তাহাও জানি শ্রীমতী নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা রবীন্দ্রনাথের এক চিঠিতে (দেশ: ২৮ মাঘ ১৩৬৭/পৃ ৯৯); ‘নিম্নলিখিত গানটি পুরাতনের নবীকরণ।’ স্মরণ করা যাইতে পারে মূল রচনা ১৩৩৩ সনের ২৭ ফাল্গুনে এবং ওই চিঠি (সম্ভবতঃ গানটিও) লেখা হয় ৩০ অগস্ট্ ১৯২৮ (১৪ ভাদ্র ১৩৩৫) তারিখে। চিঠিতে লিখিয়া পাঠানোর পরেও গানটিতে কিছু পরিবর্তন করা হয়; শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রসদনের রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপি হইতে সেই পরবর্তী পাঠই এ স্থলে গৃহীত।

৬২৪।৭৮             ‘এবার বুঝি ভোলার বেলা হল’ গানটি ১৩৩৬ চৈত্রের ‘প্রবাসী’তে মুদ্রিত; রচনা: ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০। ভাষা ও ভাবের দিক দিয়া অন্যত্র মুদ্রিত ‘স্বপনে দোঁহে ছিনু কী মোহে’ গানের সহিত তুলনীয়।

৬২৪।৭৯             হিন্দি আদর্শ ও স্বরলিপি-সহ ১৩৬৪ বৈশাখ-আষাঢ়ের বিশ্বভারতী পত্রিকায় মুদ্রিত। সম্ভবতঃ ১৩৩৮ সালে রচনা করিয়া, কবি স্বয়ং ইহা শ্রীমতি অমিয়া ঠাকুরকে শিখাইয়াছিলেন; তাঁহারই সৌজন্যে পাওয়া গিয়াছে।

৬২৪।৮০             নবীন (ফাল্গুন ১৩৩৭) গীতিনাট্যের বহুখ্যাত গানের এই রূপান্তর ১৩৪১ শ্রাবণে প্রকাশিত ‘শ্রাবণগাথা’র অঙ্গীভূত।

৬২৫।৮১             রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত। শ্রীশান্তিদেব ঘোষের সৌজন্যে জানা যায়: ইহার রচনা ১৩৩৮ বৈশাখের প্রথম দিকে।

৬২৫।                 ৮২-৮৩ সংখ্যা। মধু বসুর পরিকল্পনায় রবীন্দ্রনাথের ‘দালিয়া’ ছোটো গল্পটি নাট্যীকৃত হইয়া ১৯৩৩ সনের ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে কলিকাতায় ‘এম্পায়ার থিয়েটার’ রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হয়। তাঁহারই সৌজন্যে দেখিবার সুযোগ হইয়াছে যে, উক্ত নাট্যের যে পাঠ রচিত হইয়াছিল তাহাতে কবি স্বহস্তে বহু পরিবর্তন করেন এবং সূচনায় এই রচনা দুটি লিখিয়া দেন। ‘ওগো জলের রানী’ (৭৪) গানটির সহিত’ও জলের রানী’র (৮২) সাদৃশ্য নাই; ইহার সূচনায় কবি এরূপ সুর দেন- সা-।-। । রা গা-। । রগা-রসা-। ও ০০ জ লে র্ রা০নী০০

৬২৫।৮৪             প্রথম প্রকাশ ১৩৪০ জ্যৈষ্ঠের ‘সন্দেশ’ মাসিক পত্রে; পরে ইহা ‘বিচিত্রিতা’ (শ্রাবণ ১৩৪০) গ্রন্থে সংকলিত। বাউল সুরের গান। শ্রীশান্তিদেব ঘোষ ৩ অগস্ট ১৯৫৭ তারিখের পত্রে জানাইয়াছেন: কবি যখন এই কবিতায় সুর দেন তখন ‘নুটুদি’ (শ্রীমতী রমা মজুমদার বা কর/মৃত্যু: মাঘ ১৩৪১) ছিলেন, তাঁকেও শিখিয়েছিলেন।’

৬২৬।৮৫-৮৬        ১৩৪২ সালের শ্রাবণ উদ্‌যাপিত বর্ষামঙ্গলের অনুষ্ঠানপত্র হইতে সংকলিত। এই দুটি গানেরই পাঠান্তর ‘বীথিকা’ (ভাদ্র ১৩৪২) কাব্যে এবং গীতবিতান গ্রন্থের পূর্বতন ভাগে ৩২৯ এবং ২০৫ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত আছে।

৬২৬।৮৭             ‘বীথিকা’য় মুদ্রিত এই গানের রচনা: ২৮ শ্রাবণ ১৩৪২। শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহে কবির পরম স্নেহভাজন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহসা মৃত্যু হয়। স্বভাবতই মনে হয় যে, সেই ‘সকল নাটের কাণ্ডারী আমার সকল গানের ভাণ্ডারী’ পরমাত্মীয়ের অশ্রুগূঢ় স্মৃতি ১৩৪২ বর্ষামঙ্গলের এই রচনায় মিলিয়া মিশিয়া আছে।

৬২৭।৮৮             ১৩৪২ শ্রাবণে বর্ষামঙ্গলের অনুষ্ঠানপত্রে প্রথম প্রচারিত। পূর্ববর্তী ৮-৭-সংখ্যক রচনার সহিত তুলনীয়। বর্তমান পাঠে, মুদ্রিত স্বরলিপি অনুসৃত হইয়াছে।

৬২৭।৮৯             রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপি হইতে গৃহীত। পত্রপুট কাব্যের পঞ্চম কবিতায় (২৫ অক্টোবর ১৯৩৫) ইহার সূচনার কয়েক ছত্র সংকলিত।

৬২৭।৯০             রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত এই গান ১৩৪৩ সালের দোলপূর্ণিমায় রচিত।

৬২৭।৯১             মায়াবিনী বেশে বিদেশিনী কে সে ইত্যাদি যে রবীন্দ্র-লেখাঙ্কনের প্রতিচ্ছবি ‘শনিবারের চিঠি’তে (১৩৪৮ চৈত্র /পৃ ৬৩৫), তাহাই অন্যে নকল করেন রবীন্দ্রসদনের ১৯১- সংখ্যক পাণ্ডুলিপির ‘৩১’ পৃষ্ঠায়। (এখানি মুখ্যতঃ সমসাময়িক নকলের খাতা।) রবীন্দ্রনাথ স্বহস্তে সূচনায় ও শেষের দিকে দুটি পদ বদল করিলে পাই পরিচিত গীতিকবিতা: উদাসিনী-বেশে ইত্যাদি। বর্তমান-সংকলন আরও-পরে –রচিত গীতরূপ তাহাতে সন্দেহ নাই; কবি স্বহস্তে এটি লেখেন পূর্বোক্ত খাতায় সামনের রচনারিক্ত ‘৩০’ পৃষ্ঠায়। পূর্ব রচনার অথবা কবিতার (তখনও সুর হয়তো দেন নাই) নিখুঁত ছন্দোবন্ধ স্বেচ্ছায় শিথিল করিয়া এই নূতন গীতরূপের উৎপত্তি বা পরিপূর্তি। কাব্যছন্দের বাঁধাবাঁধি ভাঙিয়া এরূপ পরীক্ষা বা পরিবর্তন কবি পূর্বেও করিয়াছেন। কদাচিৎ আগের ও পরের উভয় রচনাতেই সুর দিয়াছেন। এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্র-রাগরূপ হারাইয়া গিয়া থাকিলে, মুক্ত ছন্দের কবিতারূপেই ইহার  সমাদর হইবে। মূল রচনা শান্তিনিকেতনে ৮ ভাদ্র ১৩৪৫ তারিখে (২৫।৮।১৯৩৮)- মনে হয় এটির রচনা অল্পকাল পরে।

৬২৮                  ৯২-৯৩ সংখ্যা। এই গান দুটি দ্বিতীয়সংস্করণ ‘গীতবিতান’ এর পরিশিষ্ট হইতে সংকলিত। আনুমানিক রচনাকাল: ভাদ্র ১৩৪৬। দ্রষ্টব্য পাদটীকা ১২, পৃ ৬৭০।

৬২৮ ও৬২৯।        ৯৪ ও ৯৬ সংখ্যা। বাংলা ১৩৪৬ সালের ২৯ ও ২৮ চৈত্র রচিত। রবীন্দ্র-সদনের পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত।

৬২৯।৯৫             ১৩৪৬ চৈত্রের এই রচনা ‘সানাই’ কাব্যের ‘ভালোবাসা এসেছিল’
(১৫ চৈত্র ১৩৪৬) কবিতার সহিত তুলনীয়।

৬২৯।৯৭             ইহা ১৬ ভাদ্র ১৩৪৭ তারিখে রচিত ও পরবর্তী ১৮ ভাদ্র

তারিখে শান্তিনিকেতন আশ্রমের বর্ষামঙ্গল উৎসবে গীত হয়।

৬২৯।৯৮             পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত। রচনা: ২০ ভাদ্র ১৩৪৭।

৫৫৮-৬০।            ১২৭-১৩২ সংখ্যা।

৫৯৭-৯৯             ৯-১১ ও ১৩-১৫ সংখ্যা।

৬২৮-৩০।            ৯৪-৯৮ সংখ্যা- সম্ভাবিত তৃতীয়সংস্করণ ‘গীতবিতান’ এ সংকলনের উদ্দেশে এই সতেরোটি গানের টাইপ –কপি, ‘অপ্রকাশিত নূতন গান’ এই পরিচয়ে, রবীন্দ্রনাথ বর্তমানেই প্রস্তুত করা হইয়াছিল।

৬৩০।৯৯             ৩ নভেম্বর ১৯৪০ তারিখের সকালে কলিকাতার বেতার-কেন্দ্র হইতে রবীন্দ্রসংগীতের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। উহা শুনিয়া কলিকাতায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবি এই গানটি রচনা করিয়া শ্রীমতী অমিতা ঠাকুরকে শিখাইয়া দেন। তাঁহারই সৌজন্যে মুদ্রিত পাঠ নির্ধারিত হইয়াছে। শ্রীশৈলজারঞ্জন মজুমদার আমাদিগকে এই গানের সন্ধান দেন।  

                        এই বৎসর ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে কালিম্পঙে কবি নিদারুণ ভাবে পীড়িত হইয়াছিলেন; কলিকাতায় আসিয়া রোগমুক্তির পর ৩০ অক্টোবর তারিখে একটি কবিতা রচনা করেন: একা ব’সে আছি হেথায় ইত্যাদি। দ্রষ্টব্য রোগশয্যায়। ‘যারা বিহান বেলায় গান এনেছিল আমার মনে’ উক্ত রচনারই গীতরূপ বলা যায়।

৬৩০।                 ১০০-১০১ সংখ্যা। রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত এই রচনা দুটি যে গানই, শ্রীশান্তিদেব ঘোষের সৌজন্যে তাহা জানা গিয়াছে। রচনা ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে। ‘পাখি তোর সুর ভুলিস নে’ গানটি পরে কবিতায় পরিবর্তন হইয়া ‘শেষ লেখা’র তৃতীয় কবিতা-রূপে মুদ্রিত আছে- ‘আমার হারিয়ে যাওয়া দিন, গানের একটি পাঠান্তর অন্যতম রবীন্দ্র পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত হইল-

                                    হারিয়ে যাওয়া দিন

                        আর কি খুঁজে পাব তারে-

                                    অশ্রুসজল আকাশপারে

                                                ছায়ায় হল লীন।

                                    করুণ মুখচ্ছবি

                        বাদল-হাওয়ায় মেলে দিল

                                                বিরহী ভৈরবী।

                        অনেক কাশের স্তব্ধবাণী

                                    কাহার অপেক্ষায়

                                                আছে বচনহীন     

                        শান্তিনিকেতন

            ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১। বিকাল

 

৬৩৫-৪৬             পরিশিষ্ট ১ নৃত্যনাট্য মায়ার খেলা রবীন্দ্রসদনে সংরক্ষিত ১৩৪৫ পৌষের একখানি পাণ্ডুলিপি হইতে সংকলিত। পাণ্ডুলিপির অধিকাংশ অন্যের হাতের নকল হইলেও রবীন্দ্রনাথ স্বহস্তে বহু বর্জন ও পরিবর্তন করিয়াছেন, বহু নূতন অংশ যোগ করিয়াছেন দেখা যায়। পাণ্ডুলিপি দেখিয়া মনে করিবার কারণ আছে যে, রচনা একরূপ পূর্ণতা প্রাপ্ত হইয়াছিল। ব্যক্তিগত সাক্ষ্যে এরূপ জানা যায় যে, ১৩৪৫ অগ্রহায়ণে এই নৃত্যনাট্যের কল্পনা ও রচনা শুরু হয়; কিছুকাল মহলা চলিবার পর ওই বৎসরে দোলপূর্ণিমার উৎসব উপলক্ষ্যে নৃত্যগীতযোগে শান্তিনিকেতন-আশ্রমে ইহার অংশবিশেষ অভিনীত হইয়াছিল। সম্পূর্ণ নৃত্যনাট্যের অভিনয় কখনোই হয় নাই। পাণ্ডুলিপিতে প্রবেশ-প্রস্থান ইত্যাদি নাট্যনির্দেশে যে যে  স্থলে সংশয়ের অবকাশ আছে, বর্তমান মুদ্রণে সম্ভবপর নির্দেশ বন্ধনী-মধ্যে দেওয়া গেল। পূর্বসংকলিত (পৃ ৫৫৭-৭৩) গীতিনাট্যের সহিত বর্তমান নৃত্যনাট্যের তুলনা করিলে১০  রবীন্দ্রনাথের কবি ও শিল্পী-মানসের বিস্ময়কর পরিণতির কিছু আভাস পাওয়া যাইবে আশা করা যায়। হয়তো ইহাও বুঝা যাইবে কেন রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন, ‘প্রথম বয়সে আমি হৃদয়ভাব প্রকাশ করবার চেষ্টা করেছি গানে, আশা করি সেটা কাটিয়ে উঠেছি পরে। পরিণত বয়সের গান ভাব বাৎলাবার জন্যে নয়, রূপ দেবার জন্য। তৎসংশ্লিষ্ট কাব্যগুলিও অধিকাংশই রূপের বাহন।’১১

৬৪৪                  ‘যে ছিল আমার স্বপনচারিণী’ এই গানটি ‘আমি কারেও বুঝি নে, শুধু বুঝেছি তোমারে’ (পৃ ৪৬৯) গানের রূপান্তর; নূতন সৃষ্টিই বলা চলে। ইহাতে ‘পরিণত বয়সের গান ভাব বাৎলাবার জন্যে নয়, রূপ দেবার জন্য’ এ উক্তির অর্থ বুঝা যায়।

৬৪৭-৫৩             পরিশিষ্ট ২ পরিশোধ এই নৃত্যনাট্য ১৩৪৩ কার্তিকের ‘প্রবাসী’ হইতে সংকলিত। কবি-কর্তৃক লিখিত মুখবন্ধ (পৃ ৬৪৭) দ্রষ্টব্য। ১৩৪৩ আশ্বিনে ইহার রচনা। ১৩৪৩ সালের ২৪ ও ২৫ কার্তিক তারিখে কলিকাতার ‘আশুতোষ হল’ এ ইহার অভিনয়। এই রচনা পরে নানা ভাবে পরিবর্তিত হইয়া ‘শ্যামা’ (পৃ ৫০৫-১৫) নৃত্যনাট্যে পরিণত হয়।

৬৫৫-৫৭             পরিশিষ্ট ৩ প্রথমসংস্করণ গীতবিতান’এ ‘বাদ-দেওয়া গানের তালিকা’য় (পরিশিষ্ট খ) কতকগুলি গান কবির ‘স্বরচিত নহে’ বলিয়া নির্দিষ্ট। তাহারই একাংশের বিবরণ বর্তমান গ্রন্থের জ্ঞাতব্যপঞ্জীতে (পৃ ৬৬৩-৭০) দ্রষ্টব্য; অন্য অংশ এ স্থলে তৃতীয় পরিশিষ্টরূপে সংকলিত- এগুলি যে রবীন্দ্রনাথের রচিত নয়, এ সম্পর্কে প্রথমসংস্করণ ‘গীতবিতান’ এর উক্ত বিজ্ঞপ্তির অতিরিক্ত অন্য মুদ্রিত ও নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। অপর পক্ষে তৃতীয় ও সপ্তম ব্যতীত সব গান ১২৯২ সালের ‘রবিচ্ছায়া’য়, তৃতীয় ও অষ্টম ব্যতীত সব গান ১৩০০ সালের ‘গানের বহি’তে, এবং প্রথম হইতে নবম অবধি সব গানই ১৯০৯ খ্রীস্টব্দের ‘গান’ গ্রন্থে পাওয়া যায়। ১৩০৩ সালের ‘কাব্যগ্রন্থাবলী’ গ্রন্থে এক পাঁচ সাত আট ও নয়-

            ...............

১০ দ্রষ্টব্য শ্রীকানাই সামন্ত-কর্তৃক আলোচনা: রূপসৃষ্টি: মায়ার খেলার রূপান্তর: তরুণের স্বপ্ন (চৈত্র ১৩৬৩), পৃ ৯৪২-৫৪ অথবা রবীন্দ্রপ্রতিভা (১৩৬৮), পৃ ৩২০-৩০।

১১ দ্রষ্টব্য ১৩ জুলাই ১৯৩৫ তারিখের পত্র: সুর ও সঙ্গতি। সংগীতচিন্তা (১৩৭৩) গ্রন্থে সংকলিত, দ্রষ্টব্য পৃ ১৭৯।

                        সংখ্যক গান, এবং ‘১৩১০’ সালে প্রকাশিত ‘কাব্যগ্রন্থ’ অষ্টম ভাগে তিন পাঁচ ও সাত সংখ্যক গান পাওয়া যায়। ‘নিত্য সত্যে চিন্তন করো রে’ (৩) ‘ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি’র চতুর্থ ভাগে এবং ‘সঙ্গীতপ্রকাশিকা’য় (চৈত্র ১৩১৩) স্বরলিপি –সহ রবীন্দ্রনাথের নামেই প্রচারিত। ‘মা আমি তোর কী করেছি’ (৪) গানটি ‘ভারতী’তে ‘বৌঠাকুরানীর হাট’ গল্পের অঙ্গীভূত হইয়া ১২৮৯ আষাঢ় প্রথম প্রকাশিত; গ্রন্থের প্রথম-দ্বিতীয় সংস্করণেও মুদ্রিত। ‘না সজনী, না, আমি জানি’ (৯) ‘স্বরলিপি গীতিমালা’য় রবীন্দ্রনাথের রচনা বলিয়াই নির্দিষ্ট হইয়াছে।

৬৫৯-৬০             পরিশিষ্ট ৪ সংকলিত রচনাগুলি ইতঃপূর্বে রবীন্দ্র-নামাঙ্কিত কোনো গ্রন্থে বা রচনায় পাওয়া যায় নাই।

৬৫৯।১               এই রচনা স্বরলিপি-সহ ‘বালক’এর ১২৯২ আষাঢ় সংখ্যায় ও পরে ‘স্বরলিপি গীতিমালা’য় মুদ্রিত; তৎপূর্বে দীর্ঘতর আকারে ১২৮৬ ভাদ্রের ‘ভারতী’তে প্রকাশিত। একমাত্র ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’য় রচয়িতা সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়-

                                                                                                                                                                                                                                                                                    কথা:-শ্রীজ্যো-

                                                                                                                                                                                                                                                                                                -শ্রীর

                        কিন্তু, সুরকারের উল্লেখ না থাকায় ‘হিন্দিভাঙা’ সুর বলিয়া মনে হয়। প্রথম প্রকাশের কাল (ওই সময়ের ‘ভারতী’তে রবীন্দ্রনাথের ‘য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র’ ধারাবাহিক ভাবে মুদ্রিত হইতেছিল) এবং রচনাশৈলীর বিচার ইহা প্রধানতঃ রবীন্দ্রনাথের রচনা বলিয়া অনুমান হয়। বর্তমান পাঠ ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’র অনুসারী।

৬৫৯।২-৩            ১৮৮০ খ্রীস্টাব্দে প্রচারিত ‘মানময়ী’ গীতিনাট্যের অঙ্গীভূত। ইন্দিরাদেবী-লিখিত ‘রবীন্দ্রস্মৃতি’ (বিশ্বভারতী-কর্তৃক প্রকাশিত: ১৩৬৭/পৃ ২৭-২৮) দ্রষ্টব্য। এক সময়ে গান দুটি পড়িয়া শুনাইলে পর, রবীন্দ্রনাথ ‘নিজের বলিয়া সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন।’ দ্রষ্টব্য ‘রবীন্দ্র-রচনাপঞ্জী’ : শনিবারের চিঠি: ফাল্গুন ১৩৪৬/পৃ ৭৬১।

৬৫৯-৬০।৪          জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘স্বপ্নময়ী’ (১২৮৮) নাটক হইতে সংকলিত। ভাব ভাষা ছন্দের বৈশিষ্ট্য এবং রবীন্দ্রজীবনের বিশেষ অনুষঙ্গ বা স্মৃতি ছাড়া ইহা যে রবীন্দ্রনাথেরই রচনা সে সম্পর্কে অন্য প্রমাণ দুর্লভ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাটকগুলিতে রবীন্দ্রনাথেরই গানের অজস্র ব্যবহার দেখা যায়। ‘স্বপ্নময়ী’তে পাই-

                                                            গীতবিতান। পৃষ্ঠা

অনন্তসাগরমাঝে                                         ৬১৪

আঁধার শাখা উজল করি                                 ৫৫১

আমি স্বপনে রয়েছি ভোর                               ৬০৭

আয় তবে, সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি              ২৯০

কে যেতেছিস আয় রে হেথা                             ৬১৭

ক্ষমা করো মোরে সখী                                  ৫৩০

দেখে যা দেখে যা দেখে যা লো তোরা                ২৯৩

দেশে দেশে ভ্রমি তব দুখগান গাহিয়ে                 ৫৬৫

বল্ গোলাপ, মোরে বল্                                 ২৯৬

বলি গো সজনী, যেয়ো না, যেয়ো না                  ৬১৫

বুঝেছি বুঝেছি, সখা, ভেঙেছে প্রণয়                   ৫৩৪

হাসি কেন নাই ও নয়নে                                ৬০৮

হৃদয় মোর কোমল অতি                                ৬০৬

 

                        তৃতীয় অঙ্কের চতুর্থ গর্ভাঙ্কে ‘দেলো সখি দে পরাইয়ে চুলে’ গানটি রবীন্দ্রনাথের যদি বা হয়, ‘মায়ার খেলা’র

                                    ‘দেলো সখি, দে, পরাইয়ে গলে ১২ সাধের বকুলফুলহার।

                        আধফুট’ জুঁইগুলি যতনে আনিয়া তুলি’ ইত্যাদি সুপরিচিত গান তবু নয়। উভয় গানের সাদৃশ্য উদ্‌ধৃত দুই ছত্রেই সীমাবদ্ধ। ইন্দিরাদেবীর অভিমত এই যে, ‘স্বপ্নময়ী’র গানটি  জ্যোতিরিন্দ্রনাথের রচনা, অথবা অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর হইলেও  হইতে পারে।

৬৬০।৫               ‘ব্রহ্মসঙ্গীত ও সঙ্কীর্ত্তন’ (৬৬৬ পৃষ্ঠায় ‘আকর গ্রন্থ’ তালিকার তৃতীয়) গ্রন্থে এবং ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’এর ব্রহ্মসঙ্গীত’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের নামে মুদ্রিত।

৬৬০।৬               ‘সাধারণ-ব্রহ্ম-সমাজ’ এর ‘ব্রহ্মসঙ্গীত’ গ্রন্থ হইতে (মাঘ ১৩৩৮) সংকলিত। অন্যান্য নানা গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের নামেই প্রচারিত। ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় ইহার প্রথম প্রকাশ (রচয়িতার নাম মুদ্রিত হয় নাই) ১৮০৮ শক বা বাংলা ১২৯৩ চৈত্রে।

.....................

১২ ‘মায়ার খেলা’ প্রথম সংস্করণের পাঠ। ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’য় এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথের হাতের স্বরলিপি লিখনে এই পাঠই এই পাঠই আছে। সম্পূর্ণ গানটির সম্পর্কে ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’র সংকেতে জানি রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ, আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথের হাতের লেখায় স্পষ্টই পাই-‘শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’।

           

            রবীন্দ্রসংগীতের যাঁহারা বিশেষ চর্চা করেন তাঁহারা সকলেই জানেন যে, পূর্বপ্রচলিত বিলাতি বা বৈঠকি গানের অথবা লোকসংগীতের আত্মীকরণ এবং প্রথম জীবনের কিছু রচনায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সুরসংযোজন –ইহা ছাড়া রবীন্দ্রনাথের নামে প্রচারিত প্রায় সব গানের সুরস্রষ্ঠাও রবীন্দ্রনাথ। কৈশোরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাহচর্যে ও উৎসাহদানে কবি কীভাবে গীতিরচনায় প্রবৃত্ত হন সে সম্পর্কে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ হইতে আমরা অনেক কথা জানিতে পারি। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘সরোজিনী’ নাটকের জন্য ‘জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ’ গানটি রবীন্দ্রনাথ কীভাবে রচনা করেন তাহা পূর্বেই (পৃ ৬৭৭) বলা হইয়াছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কথায় আরও জানিতে পারি-

            সরোজিনী-প্রকাশের পর হইতেই, আমরা রবিকে প্রমোশন দিয়া আমাদের সমশ্রেণীতে উঠাইয়া লইলাম। এখন হইতে সঙ্গীত ও সাহিত্যচর্চ্চাতে আমরা হইলাম তিনজন-অক্ষয় (চৌধুরী), রবি ও আমি।..... এই সময়ে আমি পিয়ানো বাজাইয়া নানাবিধ সুর রচনা করিতাম। আমার দুই পার্শ্বে অক্ষয়চন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ কাগজ পেন্সিল লইয়া বসিতেন। আমি যেমনি একটি সুর-রচনা করিলাম, অমনি ইঁহারা সেই সুরের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ কথা বসাইয়া গান-রচনা করিতে লাগিয়া যাইতেন। একটি নূতন সুর তৈরী হইবামাত্র, সেটি আরও কয়েকবার বাজাইয়া ইহাদিগকে শুনাইতাম। সেই সময় অক্ষয়চন্দ্র চক্ষু মুদিয়া বর্ম্মা সিগার টানিতে টানিতে মনে মনে কথার চিন্তা করিতেন। পরে যখন তাঁহার নাক মুখ দিয়া অজস্রভাবে ধূমপ্রবাহ বহিত, তখনি বুঝা যাইত যে এইবার তাঁহার মস্তিষ্কের ইঞ্জিন চলিবার উপক্রম করিয়াছে। তিনি অমনি বাহ্যজ্ঞানশূন্য হইয়া চুরুটের টুক্‌রাটি, সম্মুখে যাহা পাইতেন এমন কি পিয়ানোর উপরেই, তাড়াতাড়ি রাখিয়া দিয়া হাঁফ ছাড়িয়া “হয়েছে হয়েছে” বলিতে বলিতে আনন্দদীপ্ত মুখে লিখিতে শুরু করিয়া দিতেন। রবি কিন্তু বরাবর শান্তভাবেই ভাবাবেশে রচনা করিতেন। রবীন্দ্রনাথের চাঞ্চল্য কৃচিৎ লক্ষিত হইত। অক্ষয়ের যত শীঘ্র হইত, রবির রচনা তত শীঘ্র হইত না। সচরাচর গান বাঁধিয়া তাহাতে সুর-সংযোগ করাই প্রচলিত রীতি, কিন্তু আমাদের পদ্ধতি ছিল উল্টো। সুরের অনুরূপ গান তৈরী হইত।

               স্বর্ণকুমারীও অনেক সময় আমার রচিত সুরে গান প্রস্তুত করিতেন। সাহিত্য এবং সঙ্গীতচর্চায় আমাদের তেতলা মহলের আবহাওয়া তখন দিবা-রাত্রি সমভাবে পূর্ণ হইয়া থাকিত। রবীন্দ্রনাথের সর্বপ্রথম রচনা “কালমৃগয়া”১৩ গীতিনাট্য এবং তাঁহার দ্বিতীয় রচনা “বাল্মীকি-প্রতিভা”১৪ গীতিনাট্যেও উত্তরূপে আমার রচিত সুরের অনেক গান দেওয়া হইয়াছিল।

                                                                                    -জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি। পৃ,১৫১, ১৫৫-৫৬

           

            এই প্রসঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের লেখা হইতে জানিতে পারি-

            এই সময়ে পিয়ানো বাজাইয়া জ্যোতিদাদা নূতন নূতন সুর তৈরী করায় মাতিয়াছিলেন। প্রত্যহই তাঁহার অঙ্গুলিনৃত্যের সঙ্গে সঙ্গে সুরবর্ষণ হইতে থাকিত। আমি এবং অক্ষয়বাবু তাঁহার দেই সদ্যোজাত সুরগুলিকে কথা দিয়া বাঁধিয়া রাখিবার চেষ্টায় নিযুক্ত ছিলাম। গান বাঁধিবার শিক্ষানবিশি এইরূপে আমার আরম্ভ হইয়াছিল।

                                                                        -জীবনস্মৃতি। গীতচর্চা

            রবীন্দ্রনাথ ইংলণ্ড হইতে ফিরিয়া আসিবার পর, ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’য় দেশী-বিলাতি উভয় প্রকার সংগীত লইয়া কী ভাবে পরীক্ষা চলিয়াছিল তাহা ‘জীবনস্মৃতি’তে বর্ণিত হইয়াছে-

 

........

            ১৩ এক হিসাবে ‘কালমৃগয়া’ রবীন্দ্রনাথের ‘সর্বপ্রথম’ গীতিনাট্য হইতে পারে না। ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র যে রূপ অধুনা অপ্রচলিত (দ্রষ্টব্য রবীন্দ্ররচনাবলী ‘অচলিত প্রথম খণ্ড’) উহা ‘কালমৃগয়া’র প্রায় দুই বৎসর পূর্বে রচিত বা অভিনীত হয়। ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র প্রচলিত দ্বিতীয় সংস্করণ অবশ্যই ‘কালমৃগয়া’র পরবর্তী।

            ১৪ ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি’ (ফাল্গুন ১৩২৬) গ্রন্থে (পৃ ৩৩) অনুলেখক শ্রীবসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় (অবশ্যই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বাক্যানুসারে) এরূপ লিখিতেছেন যে, ‘বাল্মীকিপ্রতিভার প্রায় সব গানের সুরই জ্যোতিবাবুর সংযোজিত।’ এ উক্তির সত্যতা-নির্ণয় কিঞ্চিত গবেষণা-সাপেক্ষ। সত্য হইলেও, সম্ভবতঃ এ উক্তির লক্ষ্য হইল বাল্মীকিপ্রতিভার প্রথম সংস্করণ। দ্বিতীয় সংস্করণে অন্তরবর্তীকালীন ‘কালমৃগয়া’ গীতিনাট্যের বহু নূতন ‘গান পরিবর্তিত আকারে অথবা বিশুদ্ধ আকারে’ গৃহিত-আর, ‘কালমৃগয়া’তে রবীন্দ্রনাথের মৌলিক বা স্বাধীন স্বতন্ত্র সুরসৃষ্টির পর্ব ভালোভাবে আরম্ভ হইয়া গিয়াছে এরূপ মনে করিবার সংগত কারণ আছে।

            ....

            এই দেশী ও বিলাতি সুরের চর্চার মধ্যে বাল্মীকিপ্রতিভার জন্ম হইল। ইহার সুরগুলি অধিকাংশই দিশি, কিন্তু এই গীতিনাট্যে তাহাকে তাহার বৈঠকি মর্যাদা হইতে অন্য ক্ষেত্রে বাহির করিয়া আনা হইয়াছে; উড়িয়া চলা যাহার ব্যবসায় তাহাকে মাটিতে দৌড় করাইবার কাজে লাগানো গিয়াছে। যাঁহারা এই গীতিনাট্যের অভিনয় দেখিয়াছেন তাঁহারা আশা করি এ কথা সকলেই স্বীকার করিবেন যে, সংগীতকে এইরূপ নাট্যকার্যে নিযুক্ত করাটা অসংগত বা নিষ্ফল হয় নাই। বাল্মীকিপ্রতিভা গীতিনাট্যের ইহাই বিশেষত্ব। সংগীতের এইরূপ বন্ধনমোচন ও তাহাকে নিঃসংকোচে সকলপ্রকার ব্যবহারে লাগাইবার আনন্দ আমার মনকে বিশেষভাবে অধিকার করিয়াছিল। বাল্মীকিপ্রতিভার অনেকগুলি গান বৈঠকি-গান-ভাঙা, অনেকগুলি জ্যোতি-দাদার রচিত গতের সুরে বসানো এবং গুটিতিনেক গান বিলাতি সুর হইতে লওয়া। আমাদের বৈঠকি গানের তেলেনা অঙ্গের সুরগুলিকে সহজেই এইরূপ নাটকের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাইতে পারে-এই নাট্যে অনেক স্থলে তাহা করা হইয়াছে। বিলাতি সুরের মধ্যে দুইটিকে ডাকাতদের মত্ততার গানে লাগানো হইয়াছে এবং একটি আইরিশ সুর বনদেবীর বিলাপগানে বসাইয়াছি [পৃ ৭০১ দ্রষ্টব্য]। বস্তুত, বাল্মীকিপ্রতিভা পাঠযোগ্য কাব্যগ্রন্থ নহে, উহা সংগীতের একটি নূতন পরীক্ষা- অভিনয়ের সঙ্গে কানে না শুনিলে ইহার কোনো স্বাদগ্রহণ সম্ভবপর নহে। য়ুরোপীয় ভাষায় যাহাকে অপেরা বলে বাল্মীকিপ্রতিভা তাহা নহে- ইহা সুরে নাটিকা; অর্থাৎ সঙ্গীতই ইহার মধ্যে প্রধান্য লাভ করে নাই, ইহার নাট্যবিষয়টাকে সুর করিয়া অভিনয় করা হয় মাত্র- স্বতন্ত্র সংগীতের মাধুর্য ইহার অতি অল্প স্থলেই আছে।

 

            আমার বিলাত যাইবার আগে হইতে আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে বিদ্বজ্জনসমাগম নামে সাহিত্যিকদের সম্মিলন হইত। সেই সম্মিলনে গীতবাদ্য কবিতা-আবৃত্তি ও আহারের আয়োজন থাকিত। আমি বিলাত হইতে ফিরিয়া আসার পর একবার এই সম্মিলনী আহূত হইয়াছিল [১৬ ফাল্গুন ১২৮৭]- ইহাই শেষবার। এই সম্মিলনী উপলক্ষেই বাল্মীকিপ্রতিভা রচিত হয়। আমি বাল্মিকী সাজিয়াছিলাম এবং আমার ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রতিভা সরস্বতী সাজিয়াছিল- বাল্মীকিপ্রতিভা নামের মধ্যে সেই ইতিহাসটুকু রহিয়া গিয়াছে।

                                                                                                            -জীবনস্মৃতি। বাল্মীকিপ্রতিভা

            উল্লিখিত সংগীতসৃষ্টিতে সকলে কিরূপ মাতিয়া উঠেন, এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ছিল কতখানি,সে বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছেন-

            বাল্মীকিপ্রতিভা ও কালমৃগয়া যে উৎসাহে লিখিয়াছিলাম সে উৎসাহে আর কিছু রচনা করি নাই। ওই দুটি গ্রন্থে আমাদের সেই সময়কার একটা সংগীতের উত্তেজনা প্রকাশ পাইয়াছে। জ্যোতিদাদা তখন প্রত্যহই প্রায় সমস্ত দিন ওস্তাদি গানগুলোকে পিয়ানো যন্ত্রের মধ্যে ফেলিয়া তাহাদিগকে যথেষ্ট মন্থন করিতে প্রবৃত্ত ছিলেন। তাহাতে ক্ষণে ক্ষণে রাগিণীগুলির এক-একটি অপূর্ব মূর্তি ও ভাবব্যঞ্জনা প্রকাশ পাইত। যে-সকল সুর বাঁধা নিয়মের মধ্যে মন্দগতিতে দস্তুর রাখিয়া চলে তাহাদিগকে প্রথাবিরুদ্ধ বিপর্যস্ত ভাবে দৌড় করাইবা মাত্র সেই বিপ্লবে তাহাদের প্রকৃতিতে নূতন নূতন অভাবনীয় শক্তি দেখা দিত এবং তাহাতে আমাদের চিত্তকে সর্বদা বিচলিত করিয়া তুলিত। সুরগুলো যেন নানা প্রকার কথা কহিতেছে এইরূপ আমরা স্পষ্ট শুনিতে পাইতাম। আমি ও অক্ষয়বাবু অনেক সময়ে জ্যোতিদাদার সেই বাজনার সঙ্গে সঙ্গে সুরে কথাযোজনার চেষ্টা করিতাম... এইরূপ একটা দস্তুরভাঙা গীত-বিপ্লবের প্রলয়ানন্দে এই দুটি নাট্য লেখা। এইজন্য উহাদের মধ্যে তাল-বেতালের নৃত্য আছে এবং ইংরেজি বাংলার বাছ-বিচার নাই। আমার অনেক মত ও রচনারীতি আমি বাংলাদেশের পাঠকসমাজকে বারম্বার উত্ত্যক্ত করিয়া তুলিয়াছি- কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, সংগীত সম্বন্ধে উক্ত দুই গীতিনাট্যে যে দুঃসাহসিকতা প্রকাশ পাইয়াছে তাহাতে কেহই কোনো ক্ষোপ প্রকাশ করেন নাই এবং সকলেই খুশি হইয়া ঘরে ফিরিয়াছেন।

                                                                                                                        -জীবনস্মৃতি। বাল্মীকিপ্রতিভা

            ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ ও ‘কালমৃগয়া’র সহিত ‘মায়ার খেলা’র পার্থক্যের বিষয়ে কবি বলিয়াছেন-

            মায়ার খেলা... গীতনাট্য.... ভিন্ন জাতের জিনিস। তাহাতে নাট্য মুখ্য নহে, গীতই মুখ্য। বাল্মীকিপ্রতিভা ও কালমৃগয়া যেমন গানের সূত্রে নাট্যের নাট্যের মালা, মায়ার খেলা তেমনি নাট্যের সূত্রে গানের মালা। ঘটনাস্রোতের ‘পরে তাহার নির্ভর নহে, হৃদয়াবেগই তাহার প্রধান উপকরণ।

                                    -জীবনস্মৃতি। বাল্মীকিপ্রতিভা

            কবি নিজের সংগীতচর্চা ও সংগীতসৃষ্টি সম্পর্কে বহু কথা ‘জীবনস্মৃতি’ ও ‘ছেলেবেলা’তে বলিয়াছেন। সংগীত সম্বন্ধে তাঁহার সুচিন্তিত অভিমত ‘সঙ্গীতের মুক্তি’ প্রবন্ধে (সবুজপত্র: ভাদ্র ১৩২৪) এবং মাসিক পত্রিকাদিতে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত অন্য প্রবন্ধে ও পত্ররাজিতে, তথা ‘সুর ও সঙ্গতি’ পুস্তকে নিবন্ধ পত্রালাপেও, অনেকটা জানিতে পারা যাইবে। সংগীত সম্বন্ধে তাঁহার বহু পুরাতন রচনা হিসাবে ‘সঙ্গীত ও ভাব’ (ভারতী: জ্যৈষ্ঠ ১২৮৮) উল্লেখ করা যাইতে পারে; তবে, কবি-যে দীর্ঘ জীবনের সংগীতসাধনার পথে এই প্রবন্ধের ভাবনাধারা কালে পিছনে ফেলিয়া আসিয়াছেন তাহা ‘জীবনস্মৃতি’র ‘গান সম্বন্ধে প্রবন্ধ’ অধ্যায়ে স্পষ্ট ভাবেই বলা আছে। রবীন্দ্রনাথের গান-সম্পর্কিত এই-সকল ও অন্যান্য রচনা, চিঠিপত্র, আলাপ, বিশ্বভারতী-কর্তৃক ‘সংগীত-চিন্তা’ গ্রন্থে (বৈশাখ ১৩৭৩) প্রকাশিত হইয়াছে। এই গ্রন্থে তাঁহার পরিণত অভিমতের এবং তাহার বিকাশেরও একটি পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়। সৃষ্টিতেই স্রষ্টার সব কথা নিঃশেষে নিহিত থাকিলেও, ভাষ্য-ব্যতীত বুদ্ধি দিয়া তাহা আয়ত্ত করা সকলের পক্ষে সম্ভবপর হয় না; এবং এ কথা বলিলে অত্যুক্তি হইবে না যে, আজ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথই রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার। যেমন ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ প্রভৃতি রচনায় বহু ক্ষেত্রে বিলাতি সুরের ব্যবহারের কথা ‘জীবনস্মৃতি’ হইতে জানা গেল, ভারতীয় ও য়ুরোপীয় সংগীতের মধ্যে প্রকৃতিগত পার্থক্য কোথায় জানিতে হইলেও রবীন্দ্রনাথের মন্তব্যই উদ্ধারযোগ্য (ভারতীয় সংগীত সম্পর্কে রবীন্দ্র মন্তব্য তাঁহার আপন সৃষ্টি সম্পর্কেও সত্য সন্দেহ নাই)-

 

            য়ুরোপীয় সংগীতের মর্মস্থানে আমি প্রবেশ করিতে পারিয়াছি, এ কথা বলা আমাকে সাজে না। কিন্তু বাহির হইতে যতটুকু আমার অধিকার হইয়াছিল তাহাতে য়ুরোপের গান আমার হৃদয়কে এক দিক দিয়া খুবই আকর্ষণ করিত। আমার মনে হইত এ সংগীত রোমান্টিক। রোমান্টিক বলিলে যে ঠিকটি কী বুঝায় তাহা বিশ্লেষণ করিয়া বলা শক্ত। কিন্তু, মোটামুটি বলিতে গেলে রোমান্টিকের দিকটা বিচিত্রতার দিক, প্রাচুর্যের দিক, তাহা জীবনসমুদ্রের তরঙ্গলীলার দিক; তাহা অবিরাম গতিচাঞ্চল্যের উপর আলোক ছায়ার দ্বন্দ্ব-সম্পাতের দিক; আর-একটা দিক আছে যাহা বিস্তার, যাহা আকাশনীলিমার নির্নিমেষতা, যাহা সুদূর দিগন্তরেখায় অসীমতার নিস্তব্ধ আভাস। যাহাই হউক, কথাটা পরিষ্কার না হইতে পারে, কিন্তু আমি যখনই য়ুরোপীয় সংগীতের রসভোগ করিয়াছি তখনই বারম্বার মনের মধ্যে বলিয়াছি ইহা রোমান্টিক- ইহা মানবজীবনের বিচিত্রতাকে গানের সুরে অনুবাদ করিয়া প্রকাশ করিতেছে। আমাদের সংগীতে কোথাও কোথাও সে চেষ্টা নাই যে তাহা নহে, কিন্তু সে চেষ্টা প্রবল ও সফল হইতে পারে নাই। আমাদের গান ভারতবর্ষের নক্ষত্রখচিত নিশীথিনীকে ও নবোন্মোষিত অরুণরাগকে ভাষা দিতেছে; আমাদের গান ঘনবর্ষার বিশ্বব্যাপী বিরহবেদনা ও নববসন্তের বনান্তপ্রসারিত গভীর উন্মাদনার বাক্যবিস্মৃত বিহ্বলতা।                      

                                                            -জীবনস্মৃতি। বিলাতি সংগীত

            রবীন্দ্রনাথের প্রথম বয়সের কোন কোন রচনায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সুর দিয়াছিলেন ‘গানের বহি ও বাল্মীকিপ্রতিভা’র সূচীপত্রে সংকেতে তাহা বিজ্ঞাপিত। তদনুসারে এবং ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’ (১৩০৪) দেখিয়া যত দূর জানা যায়, নিম্নলিখিত রচনাবলীর সুরস্রষ্টা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ-

 

                                                                                    গীতবিতান। পৃষ্ঠা

            অনেক দিয়েছ নাথ আমায়১৫                                       ১১৭

            এত দিন পরে, সখী                                                 ৬১০

            এমন আর কত দিন চলে যাবে রে                                 ৬৫৫

            ওকি সখা, মুছ আঁখি                                                 ৬১০

            কে যেতেছিস আয় রে হেথা১৬                                      ৬১৫

            খুলে দে তরণী১৬                                                     ৬০৬

            গেল গো-ফিরিল না, চাহিল না                                     ২৯৬

            দাঁড়াও, মাথা খাও                                                   ৬১৫

            ...................

১৫ ‘শতগান’-অনুযায়ী সুরকার রবীন্দ্রনাথ। ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’য় নাই।

১৬ ‘গানের বহি’তে নাই।

                                                                        গীতবিতান। পৃষ্ঠা

দে লো সখী, দে পরাইয়ে গলে                                                ৪৫৯/৬৩৭

দেশে দেশে ভ্রমি তব দুখগান গাহিয়ে                                   ৫৬৫

না সজনী, না, আমি জানি জানি                                    ৬৫৭

নিমেষের তরে শরমে বাধিল                                       ৪৬৭

নীরব রজনী দেখো মগ্ন জোছনায়                                  ৫২৯

প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন                                           ৫৩৮

ভুল করেছিনু, ভুল ভেঙেছে                                        ৪৬৮

সকলি ফুরাইল১৬                                                    ৬১৩

সখা হে, কী দিয়া আমি তুষিব তোমায়                            ৬১৩

সখী, বল্ দেখি লো (বলো দেখি সখী লো)                       ২৯২

সমুখেতে বহিছে তটিনী                                             ৪৩৬

সহে না যাতনা                                                       ৬১৪

হল না, হল না সই (হল না লো, হল না সই)                    ২৯৫

হা সখী, ও আদরে                                                   ৬১০

হায় রে, সেই তো বসন্ত ফিরে এল                                ৩৭৪

হাসি কেন নাই ও নয়নে                                            ৬০৭

হৃদয়ের মণি আদরিণী মোর                                        ৬০৬

 

‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র গান ছাড়া ‘গানের বহি ও বাল্মীকিপ্রতিভা’য় প্রায় সাড়ে তিনশত গান আছে। ইহার মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ একুশ-বাইশটিতে সুর দিয়াছেন দেখা গেল। উক্ত গ্রন্থে ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র গানের সূচি না থাকাতে, উহার কোন গানের সুরকার কে বিস্তারিতভাবে তাহা জানা যায় না; জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ও রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ হইতে সাধারণভাবে যাহা জানা যায় তাহা পূর্বেই সংকলিত হইয়াছে। ‘গানের বহি’তে হিন্দিগান বিশেষের রাগ-রাগিণীর অনুসরণে রচিত হইয়াছে এরূপ গানের সংখ্যা অনেক বেশি; ‘গানের বহি’র সূচীপত্রের সংকেত এবং ইন্দিরাদেবীর সন্ধান১৭ অনুযায়ী মোট ৯০/৯২টি হইবে মনে হয়। বলা উচিৎ, এই গণনায় অল্পসংখ্যক কানাড়ি, গুজরাটি, মাদ্রাজি, মহীশূরি ও পঞ্জাবি গান-ভাঙা রচনাও ধরা হইয়াছে; ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র গান ধরা হয় নাই।

 

            আর-একটা কথাও উল্লেখযোগ্য যে, কালমৃগয়া (প্রকাশ: অগ্রহায়ণ ১২৮৯) ও দ্বিতীয়সংস্করণ বাল্মীকিপ্রতিভা (প্রকাশ: ফাল্গুন ১২৯২) এই দুইখানি নীতিনাট্য সারা করিয়া কবি ‘মায়ার খেলা’য় (প্রকাশ: অগ্রহায়ণ ১২৯৫) হাত দেন, স্বরলিপি-গীতিমালায় শেষোক্ত গ্রন্থের যতগুলি গান সংকলিত দেখা যায়, প্রায় সবেরই সুরকার রবীন্দ্রনাথ।

              ‘গানের বহি’র পরবর্তী গ্রন্থসমূহেও ‘হিন্দিভাঙা’ গানের অসদ্ভাব নাই। সে-সব গান ও সেগুলির আদর্শস্বরূপ গানের বিশদ তালিকা ইন্দিরাদেবীর ‘রবীন্দ্র-সংগীতের ত্রিবেদীসংগম’ পুস্তিকায় দ্রষ্টব্য। পুরাতন ‘গান ভাঙিয়া’ নূতন গান রচনা করার মধ্যেও রবীন্দ্রনাথ সর্বদাই অপরূপ বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য দেখাইয়াছেন। অন্য সহস্রাধিক গানে যেমন এ-সকল ক্ষেত্রেও তেমনি আপনার জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে স্রষ্টা রচনায় আপনার সীলমোহর অঙ্কিত করিয়া দিয়াছেন। ‘ভাঙা গান’ ও বিশেষভাবে রাবীন্দ্রিক হইয়া উঠিয়াছে ইহা আমাদের অজানা নয়।

              ‘কালমৃগয়া’ ও ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র কতকগুলি গানে ইংরেজি স্কচ আইরিশ প্রভৃতি গানের সুর দেওয়া হইয়াছে। ‘রবীন্দ্রসংগীতের ত্রিবেণীসংগম’ অনুযায়ী তাহার তালিকা-

 

                                    কালমৃগয়া                                                        গীতবিতান। পৃষ্ঠা

            ও দেখবি রে ভাই, আয় রে ছুটে: The vicar of Bray                 ৪৩৫

            ১৮ তুই আয় রে কাছে আয়: The British Grenadiers                ৪৩৫

            ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে: Ye banks and braes              ৪৩৬

            মানা না মানিলি : Go where glory waits thee            ৪৩৮

            সকলই ফুরালো: Robin Adair                                           ৪৪৪

            .............

            ১৭ রবীন্দ্রসংগীতের ত্রিবেণীসংগম: পৌষ ১৩৬১

            ১৮ গানের প্রথম ছত্র: ও ভাই, দেখে যা কত ফুল তুলেছি।

                                    মায়ার খেলা

       আহা, আজি এ বসন্তে। Go where glory waits thee               ৪৭১

                                                বাল্মীকিপ্রতিভা

            তবে আয় সবে আয়। অজ্ঞাত                                                              ৪৪৬

            কালী কালী বলো রে আজ। Nancy Lee                                              ৪৪৬

            মরি, ও কাহার বাছা। Go where glory waits thee                             ৪৪৭

                                    অন্যগান

            ওহে দয়াময়। Go where glory waits thee                                     ৬৫৫

            কতবার ভেবেছিনু। Drink to me only                                              ৬০৮

            পুরানো সেই দিনের কথা। Auld Lang syne                                       ৬১২

           

            লোকপ্রচলিত বা পুরাতন বাংলা গানের সুরেও কবি কতকগুলি গান বাঁধিয়াছেন; সে সম্পর্কে জানিতে পারি-

            এবার তোর মরা গাঙে। মন-মাঝি সামাল সামাল১৯              ১৭৪

            যদি তোর ডাক শুনে। হরিনাম দিয়ে জগত মাতালে১৯          ১৭৪

            আমার সোনার বাংলা। আমি কোথায় পাব তারে১৯ y            ১৭৩

            বেঁধেছ প্রেমের পাশে। চাঁচর চিকুর আধো২০                      ১১০

            ক্ষমা করো আমায়-আমায়। জয় জয় ব্রহ্মণ ব্রহ্মণ                ৪৭৯

           

            কাজেই যত দূর জানা যায়, বাংলা কতকগুলি পূর্বপ্রচলিত সংগীতের সুর, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের বহু বৈঠকি গানের সুর, অতি অল্পসংখ্যক বিলাতি গানের সুর এবং কবির তরুণ বয়সে কিছু জ্যোতিরিন্দ্রনাথের দেওয়া সুর, ইহা ব্যতীত-রবীন্দ্রসংগীতে কথাও যেমন সুরও তেমনি সর্বদাই রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব সৃষ্টি। তবে-

            কথা কও, কথা কও, অনাদি অতীত: ‘কথা ও কাহিনী’র প্রথম প্রবেশকের অংশ বিশেষ: শিশিরকুমার ভাদুড়ী-কর্তৃক প্রযোজিত ও অভিনীত ‘সীতা’ নাটকের সূচনায়-

               তবে আমি যাই গো তবে যাই: শিশু’ কাব্যের ‘বিদায়’ কবিতা

               দিনের শেষে ঘুমের দেশে: ‘খেয়া’র প্রথম কবিতা

               পথের পথিক করেছ আমায়: উৎসর্গ

               হে মোর দুর্ভাগা দেশ: গীতাঞ্জলি

            এই গানগুলি সময়বিশেষ প্রচলিত বা আদৃত হইলেও, এগুলির কোনটিতেই কবি সুর না দেওয়াতে, এগুলিকে রবীন্দ্রসংগীত বলিয়া গণনা করা সম্ভবপর হয় নাই। অন্যের যে-সব রচনায় রবীন্দ্রনাথ সুর আরোপ করিয়াছেন২১ সেগুলির তালিকা পরে দেওয়া গেল-

.......................

১৯ ‘শতগান’ গ্রন্থে স্বরলিপি দেওয়া আছে।

y মূল বাউল সংগীতটি কবি শিলাইদহে গগন হরকরার নিকট পাইয়াছিলেন। দ্রষ্টব্য: কথা ও স্বরলিপি: প্রবাসী: বৈশাখী ১৩২২/পৃ ১৫২-৫৪ এবং জ্যৈষ্ঠ ১৩২২/পৃ ৩২৪।

২০ কাফি কনাড়া-কাওয়ালি। দ্রষ্টব্য: সঙ্গীতপ্রকাশিকা ৪। ১৩১১।২১৯

২১ এই প্রসঙ্গে ‘গীতবিতান বার্ষিকী’তে (১৩৫০) মুদ্রিত শ্রীনির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রবীন্দ্রগীতজিজ্ঞাসা’ প্রবন্ধ বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য।

 

সুহাসচন্দ্র মজুমদার বলেন যে, বাল্যকালে দেখিয়াছেন ‘ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ’ যে বার মনোমোহন রায় প্রণীত ‘রিজিয়া’ নাটকের অভিনয় করান তাহার রিহার্সালে রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত আসিতেন এবং গানও শিখাইতেন; কয়েকটি গানের সুর নাকি কবি রচনা করেন, ‘থিয়েটারি’ সুর হইতে সেই-সব সুরের বিশেষ পার্থক্য আছে। সুহাসবাবুর উক্তি রিহার্সালের সাক্ষী ও শ্রোতা তাঁহার মাতুল শ্রীনিত্যরঞ্জন মল্লিক ও শ্রীসত্যরঞ্জন মল্লিক মহাশয়েরা সমর্থন করেন। ‘রিজিয়া’ নাটকের ব্রজবুলিতে রচিত একটি গানে (বধুয়া, সুধা ঢালয়ি পরাণে ইত্যাদি) কয়েক স্থলে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীর স্পষ্ট প্রভাব দেখা যায় এবং বাংলা ১৩১০ সনে প্রচারিত এই গ্রন্থের প্রথম সংস্করণেই এ যেমন বিজ্ঞাপিত হইতে দেখি যে ‘বিশেষ আনন্দের সহিত প্রকাশ করিতেছি যে, রিজিয়া “ভারতীয় সঙ্গীত সমাজ” কর্ত্তৃক অভিনয়ার্থ মনোনীত হইয়াছে; দ্বিতীয় সংস্করণের বিজ্ঞাপনে তেমনি মহাসমারোহে ঐ প্রতিষ্ঠানে অভিনীত হওয়ার সংবাদও দেওয়া হইয়াছে।

 

                        প্রথম ছত্র                                     রনয়িতা                           স্বরলিপি

            এ ভরা বাদর মাহ ভাদর                                বিদ্যাপতি                         শতগান। স্বরবিতান ১১, ২১

            সুন্দরী রাধে আওয়ে বনি                                গোবিন্দদাস                      শতগান। স্বর ২১

            বন্দে মাত্‌রম্ (অংশ)                                   বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়          শতগান। স্বর ৪৬

            মিলে সবে ভারতসন্তান২২                                         সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর               শতগান

            বুঝতে নারি নারী কী চায়                               অক্ষয়কুমার বড়াল               শতগান

            গান জুড়েছেন গ্রীষ্মকালে                                সুকুমার রায়                      ঋতুপত্র: হেমন্ত। ১৩৬২

            ওহে সুনির্মল সুন্দর উজ্জ্বল                             হেমলতা দেবী                    জ্যোতিঃ

            বালক-প্রাণে আলোক জ্বালি                            হেমলতা দেবী                    জ্যোতিঃ

            ইহা ছাড়া রবীন্দ্রনাথ কতকগুলি বেদমন্ত্রে ও বৌদ্ধ মন্ত্রে সুর দেন২৩-

                                    বৈদিক মন্ত্র                        আকর                             স্বরলিপি

            য আত্মদা বলদা                                         ঋগ্বেদ                শতগান। ব্রহ্মসঙ্গীত-স্বরলিপি

            তমীশ্বরাণাং                                               শ্বেতাশ্বতর            আনন্দসঙ্গীত ৪।১৩২২। ব্র স্ব ২

            যদেমি প্রস্ফুরন্নিব                                       ঋগ্বেদ                ভারতী ও বালক ১০। ১২৯৯। ৫৮৮

                                                                                                আনন্দসঙ্গীত ১।১৩২২। ১৩৮। ব্র স্ব ৩

            শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ                             ঋগ্বেদ                আনন্দসঙ্গীত ৪।১৩২০।৬

                                                                                                তত্ত্ববোধিনী ৯। ১৮৪৫। ২৩৩। ব্র স্ব ৩

            সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বম্                                   ঋগ্বেদ

            উষো বাজেণ বাজিনি                                    ঋগ্বেদ (ভৈরবী)

            অচ্ছা বদ তবসং গীর্ভিরাভিঃ                            ঋগ্বেদ (চৌতাল)    হিন্দী বিশ্বভারতী পত্রিকা

                                                                                                            ৭-৯। ১৯৪৬। ৫২৫

            এতস্য বা অক্ষরস্য প্রশাসনে                           বৃহদারণ্যক

            ধীরা ত্বস্য মহিনা                                         ঋগ্বেদ

            উদু ত্যাং জাতবেদসম্’ (ঋগ্বেদ), ‘বায়ুরনিলমমৃতমথেদম্’ (ঈশ), ‘অদ্যা দেবা উদিতা সূর্যস্য’ (ঋগ্বেদ) এবং ‘পৃথিবী শান্তিরন্তরিক্ষম্’ (অথর্ব বেদ) ইত্যাদি শ্লোকসমূহ২৪ রবীন্দ্রনাথ-কর্তৃক ব্যবহৃত, তবে রাগ-তালে গাওয়া হয় না, সুরে আবৃত্তি হয় মাত্র। বৌদ্ধমন্ত্রে সুর-যোজনার তালিকা-

                                    বৌদ্ধ মন্ত্র                         সুর

            ওঁ নমো বুদ্ধায় গুরবে২৫                                 ভৈরবী

            উত্তমঙ্গের বন্দেহং২৫                                     কাফি

            নথি মে শরণং২৫                                         মিশ্ররামকেলি

            নমো নমো বুদ্ধদিবাকরায়২৫                            বেহাগ

            বুদ্ধো সুসুদ্ধো করুণামহাণ্ণবো                           মিশ্ররামকেলি

           

            কোনো গান কবির প্রথম রচনা এ বিষয়ে রবীন্দ্রসংগীতরসিকের মনে কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক। ‘শনিবারের চিঠি’র পূর্বসংকলিত সাক্ষ্যে ‘গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে’ গানটি ১২৮১ সালের মধ্যেই রচিত। ‘জ্বল্ জ্বল্ চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ’ পরবর্তী স্বাধীন রচনা, ১২৮২ সালের মধ্যে রচিত। ‘এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন’ ১২৮৬ সালের মধ্যে। এগুলির কোনোটিতে কবি স্বয়ং সুর দিয়াছিলেন কি না বলা যায় না। রবীন্দ্রনাথ যে গানকে নিজের যথার্থ প্রথম রচনা বলিয়া স্বীকার করেন সে সম্পর্কে লিখিয়াছেন-

                        এই শাহিবাগ প্রাসাদের চূড়ার উপরকার একটি ছোটো ঘরে আমার আশ্রয় ছিল। শুক্লপক্ষের গভীর রাত্রে সেই নদীর দিকের প্রকাণ্ড ছাতটাতে একলা ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়ানো আমার আর-একটা উপসর্গ ছিল। এই ছাদের উপর নিশাচর্য করিবার সময়ই আমার নিজের-সুর-দেওয়া সর্বপ্রথম গানগুলি রচনা করিয়াছিলাম। তাহার মধ্যে ‘বলি ও আমার গোলাপবালা’ গানটি এখনো আমার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আসন রাখিয়াছে। 

                                                                        -জীবনস্মৃতি। আমেদাবাদ

.........................

২২ ইন্দিরাদেবীর অভিমত: রবীন্দ্রনাথের সুর নয়।

২৩ দ্রষ্টব্য: ‘বরীন্দ্র গতিজিজ্ঞাসা’- গীতবিতান বার্ষিকী (১৩৫০)।/ব্র স্ব ব্রক্ষসঙ্গীত স্বরলিপি: সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ-প্রকাশিত নূতন গ্রন্থমালা।

২৪ ‘তপতী’ নাটকে

২৫ ‘নটীর পূজা’য়    ‘চণ্ডালিকা’ নৃত্যনাট্যে প্রযুক্ত।

পুনশ্চ ‘জীবনস্মৃতি’র পাণ্ডুলিপিতে-

            শুক্লপক্ষের কত নিস্তব্ধ রাত্রে আমি সেই নদীর দিকের প্রকাণ্ড ছাতটাতে একলা ঘুরিয়া বেড়াইয়াছি। এরূপ একটা রাত্রে আমি যেমন-খুশি ভাঙা ছন্দে একটা গান তৈরী করিয়াছিলাম-তাহার প্রথম চারটে লাইন উদ্‌ধৃত করিতেছি।

                        নীরব রজনী দেখো মগ্ন জোছনায়,

                        ধীরে ধীরে অতি ধীরে গাও গো!

                        ঘুমঘোরভরা গান বিভাবরী গায়,

                        রজনীর কণ্ঠ সাথে সুকণ্ঠ মিলাও গো!২৬

            ইহার বাকি অংশ পরে ভদ্র ছন্দে বাঁধিয়া পরিবর্তিত করিয়া তখনকার গানের বহিতে [‘রবিচ্ছায়া’] ছাপাইয়াছিলাম- কিন্তু সেই পরিবর্তনের মধ্যে সেই সাবরমতী নদীতীরের, সেই ক্ষিপ্ত বালকের নিদ্রাহারা গ্রীষ্মরজনীর, কিছুই ছিল না। ‘বলি ও আমার গোলাপবালা’ গানটা এমনি আর রাত্রে লিখিয়া বেহাগ সুরে বসাইয়া গুন্ গুন্ করিয়া গাহিয়া বেড়াইতেছিলাম। ‘শুন নলিনী, খোলো গো আঁখি’ ‘আঁধার শাখা উজল করি’ প্রভৃতি আমার ছেলেবেলাকার অনেকগুলি গান এইখানেই লেখা।

                                                                        -জীবনস্মৃতি (প্রচল সংস্করণ)। গ্রন্থ পরিচয়

            ‘নীরব রজনী দেখো মগ্ন জোছনায়’ রবীন্দ্রনাথের প্রথম স্বাধীন রচনা। এটি কবির প্রথম গীতিগ্রন্থ ‘রবিচ্ছায়া’র প্রথম গান বটে (গীতবিতানে সংকলিত পাঠ), কিন্তু বলা যায় ‘এ গান সে গান নয়’ এবং ‘স্বরলিপি-গীতিমালা’য় ইহার যে সুর লিপিবদ্ধ তাহাও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের রচনা। এই প্রসঙ্গে বলা উচিত যে, কবির উল্লিখিত ‘নীরব রজনী দেখো’ ও আঁধার শাখা উজল করি’ গান দুটি ‘ভগ্নহৃদয়’ (১২৮৮ সাল) কাব্যে এবং ‘বলি, ও আমার গোলাপবালা’ ও ‘শুন নলিনী, খোলো আঁখি’ ‘শৈশবসঙ্গীত’ (১২৯১ সাল) কাব্যে প্রথম সংকলিত হয়। তাহা ছাড়া ১২৮৭ সালের ‘ভারতী’ পত্রে ‘ভগ্নহৃদয়’ এর প্রথম ছয় সর্গের প্রকাশ, সেই সম্পর্কে মাঘে (পৃ ৪৭৬) ‘আঁধার শাখা উজল করি’ এবং ফাল্গুনে (পৃ ৫০৮) ‘নীরব রজনী দেখো’ মুদ্রিত হয়; ‘ভারতী’তে ‘বলি ও আমার গোলাপবালা’র প্রকাশ ১২৮৭ অগ্রহায়ণে তরুণ রবীন্দ্রনাথ ১২৮৫ সালের ৫ আশ্বিন তারিখে বিলাত-অভিমুখে যাত্রা করেন, উল্লিখিত গানগুলি তৎপূর্বেই রচিত।২৭

            ‘জীবনস্মৃতি’র পাণ্ডুলিপি হইতে উদ্‌ধৃত রচনায় রবীন্দ্রনাথ ‘যেমন খুশি ভাঙা ছন্দে’র কথা বলিয়াছেন, এবং পরে ‘ভদ্র ছন্দে’ ‘শুদ্ধি’ করিয়া তাহা যে নষ্ট করিতে প্রবৃত্তি হইয়াছিল এজন্য খেদও প্রকাশ করিয়াছেন। কবিতায় বা গানে নব নব পথের সন্ধান, নব নব মুক্তির আস্বাদন, নূতন নূতন আঙ্গিকের পরীক্ষায় নিত্য নূতন সিদ্ধি লাভ- এ প্রবণতা স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথের জীবনে শুরু হইতে শেষ পর্যন্তই দেখা যায়। ২৩ শ্রাবণ ১৩৩৬ তারিখে রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠিতে লেখেন, ‘কখনো কখনো গদ্য রচনায় সুর সংযোগ করবার ইচ্ছা হয়। লিপিকা কি গানে গাওয়া যায় না ভাবছ?’২৮ ‘লিপিকা’য় কোনোদিন সুর দেওয়া হইয়াছিল কি না জানা নেই, ‘শাপমোচন’ এর বিভিন্ন অভিনয়ে কতকগুলি গদ্য অংশে সুর দেওয়া হইয়াছিল, তাহা পূর্বেই উল্লিখিত ও উদ্‌ধৃত হইয়াছে। উত্তরকালে অমিত্রাঙ্কর ছন্দে বা ‘পুনশ্চ’ অনুগামী গদ্য ছন্দে গান রচনার দৃষ্টান্ত দুর্লভ নয় যে, তাহা ‘নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা’র আলোচনায় বুঝা যায় এবং কবি নিজেও তাহা বলিয়া দিয়াছেন-‘সমগ্র চণ্ডালিকা নাটিকার গদ্য এবং পদ্য অংশে সুর দেওয়া হয়েছে’। অমিত্রাঙ্কর রচনার প্রাচীন ও সুন্দর দৃষ্টান্ত হইল ১৩১০ সালের কাব্যগ্রন্থে মুদ্রিত: এ ভারতে রাখো নিত্য, প্রভু, তব শুভ আশীর্বাদ ইত্যাদি। এই ভাবগম্ভীর রচনায় যে আনুপূর্বিক চরণে  চরণে মিল নাই, সাধারণতঃ সে কেহই লক্ষ্য করেন না। ইহা হইতে পুরাতন অল্পাধিক অমিত্রাঙ্কর রচনা অনেক পাওয়া যাইবে না তাহাও নয়; যেমন-

....................

            ২৬ অব্যবহিত পরে অতিরিক্ত ৪ ছত্র ‘ভগ্নহৃদয়’ পাণ্ডুলিপিতে গ্রন্থে, তথা ভারতী পত্রে। রবিচ্ছায়ায় বর্জিত। রবীন্দ্র-সুর হারাইলেও, কথা হয়তো হারায় নাই।

            ২৭ এই প্রসঙ্গে শ্রীনির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘রবীন্দ্রগীতজিজ্ঞাসা’ (গীতবিতান-বার্ষিকী ১৩৫০) হইতে, ও তৎসম্পাদিত ‘জীবনস্মৃতি’র (১৩৫৪ জ্যৈষ্ঠ) গ্রন্থপরিচয় হইতে যথেষ্ট দিশা পাওয়া গিয়াছে।

            ২৮ ২৯ -সংখ্যার পত্র: পত্রে ও পত্রের প্রান্তে

                                                                        গীতবিতান। পৃষ্ঠা

            বাজাও তুমি কবি                                                    ৮৩

            দুখ দূর করিলে দরশন দিয়ে                                       ৫৭৭

            তোমায় যতনে রাখিব হে                                           ৫৭৯

            আইল আজি প্রাণসখা                                               ৫৭৯

            অসীম আকাশে অগণ্য কিরণ                                       ১১৫

            অধিক দৃষ্টান্ত বাড়াইয়া লাভ নাই। উক্ত রচনাগুলি ‘রবিচ্ছায়া’ বা ‘গানের বহি’তে প্রথম সংকলিত হয়, অর্থাৎ কবির প্রথম জীবনের রচনা। কেবলমাত্র এই দিক দিয়াও ১৩০৩ সালের কাব্যগ্রন্থাবলীতে প্রকাশিত ‘বিশ্ববীণারবে বিশ্বজন মোহিছে’২৮ বিস্ময়কর। সুরাশ্রয়ী কবিতার বন্ধন-মুক্তিতে কবির পরীক্ষা যে ফুরায় নাই, তাহার বিশেষ পরিচয় পাই বহুদিন পরে, ১৩৩৭ ফাল্গুনের গীতিগুচ্ছে (অনুষ্ঠানপত্র: নবীন)-

 

                                                            গীতবিতান। পৃষ্ঠা    

            বাসন্তী, হে ভুবনমোহনী (গদ্য?)                       ৩৬৩

            বেদনা কী ভাষায় রে                                                ৩৬৫

            বাজে করুণ সুরে                                        ২৪৫

            এই গানগুলিতে অন্তর্লীন অনুপ্রাসের মাধুরীতে চমৎকৃত হইয়া, কখনো-বা অনিয়মিত মিলের কৌশলে ভুলিয়া, গীতবধির কোনো কাব্যরসিকও হয়তো নিয়মিত অন্তানুপ্রাসের অভাব বোধ করিবেন না। গীতজ্ঞ ব্যক্তিগণ একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য করিবেন যে, উল্লিখিত গানগুলি সবই পূর্বপ্রচলিত হিন্দি গানের, বা বঙ্গবহির্বর্তী কোনো প্রদেশের কোনো গানের, সুরে রচিত। পরবর্তী তালিকার গানগুলি সম্পর্কে বোধ হয় সে কথা বলা যায় না।

                                                                        গীতবিতান। পৃষ্ঠা

            ঢাকো রে মুখ, চন্দ্রমা, জলদে                                     ৫৬৫

            দিনান্তবেলায় শেষের ফসল নিলেম (দিলেম?)                  ২৫৬

            ধূসর জীবনের গোধূলিতে                                           ২৫৬

            আজি কোন্ সুরে বাঁধিব                                             ৬২৮

 

            শেষ তিনটি গান, বিশেষতঃ শেষ গানটি (২৯ চৈত্র ১৩৪৬), গদ্যে রচিত বলিয়াই মনে হয়। ছন্দোবদ্ধ কবিতা হউক, তবু রবীন্দ্রনাথের জীবনের সর্বশেষ গান ‘হে নূতন’ (পৃ ৫৯৯) কথা ও কাব্যছন্দ-গত আঙ্গিকের দিক দিয়া অল্প বিস্ময়জনক নয়।

              রবীন্দ্রনাথ গীতিনাট্যে নৃত্যনাট্যে যেমন সুরের তেমনি ভাষা ও ছন্দের কত নূতন পরীক্ষা করিয়া কোথায় উত্তীর্ণ হওয়াছেন, সে বিষয়ে যথাকালে অনুসন্ধান ও আলোচনা হইবে আশা করা যায়। কেবল বলা বাহুল্য না হইতে পারে, যাহা free verse বা মুক্তছন্দ, যে ক্ষেত্রে নানা ছন্দের বা ছন্দশৈথিল্যেরও সুষ্ঠু মিশ্রণ হইয়া থাকে, তাহারও সার্থক উদাহরণ নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’ বা ‘শ্যামা’ খুঁজিলে পাওয়া যাইবে। পূর্বোক্ত অনেকগুলি অমিত্রাক্ষর রচনাও যে নিঃশব্দচরণে’ ও ‘নির্জন রাতে নিঃশব্দচরণপাতে’ (পৃ ৬২৯) রচনা দুটি অথবা ‘পূজা ও প্রার্থনা’ অধ্যায়ে (পৃ ৫৯১-৯২) ৭৭, ৭৮, ৮১ ও ৮৩-অঙ্কিত ‘ভাঙা’ গান কয়টি। (এ পর্যন্ত কবিতার ছন্দ লইয়াই আলোচনা করা গেল। গানের ছন্দ সম্পর্কে বর্তমান গ্রন্থ-সম্পাদকের বিশেষ জ্ঞান নাই) এরূপ হওয়ার কার্যকারণ ঠিক –ঠিক বুঝিতে হইলে- সুর, তাল, লয়, কথা, বিশেষ উপলক্ষ্য, এ-সবের অন্যোন্যনির্ভর বৈশিষ্ট্যের সর্বাঙ্গীণ আলোচনা করিতে হইবে, বলাই বাহুল্য।

             রবীন্দ্রনাথের গানের বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র ও সংখ্যা বিস্ময়কর। আলোচনার ও অনুসন্ধানের ক্ষেত্র সুদূরপ্রসারিত।

........................

            ২৮ মজুমদার-পাণ্ডুলিপিতে দেখা যায় রচনা ১৩০২ আশ্বিনে। ঐ বৎসর (শক ১৮১৭)  ফাল্গুনের ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় পাঠ্যন্তর মুদ্রিত: বিশ্বরাজালয়ে বিশ্ববীণা বাজিছে ইত্যাদি।                দ্রষ্টব্য: অখণ্ড গীতবিতান/পৃ ৪৩০

            পৃষ্ঠা ও গান-সংখ্যার উল্লেখ

৫২৯।৩   ‘ভগ্নহৃদয়’ পাণ্ডুলিপিতে ও গ্রন্থে (১২৮৭ ফাল্গুনের ভারতীতে) সংকলিত পাঠের চতুর্থ ও পঞ্চম ছত্রের অবকাশে রহিয়াছে:

                                    নিশীথের সুনীরব সমীরের সম,

                                    নিশীথের সুনীরব সমীরের সম,

                                    নিশীথের সুনীরব জোছনা-সমান

                                    অতি- অতি- অতি ধীরে কর সখি গান!

            দ্রষ্টব্য পুরোগামী রবীন্দ্র-উদ্‌ধৃতি ও তৎসম্পর্কে পাদটীকা-২৬।

            পৃ ৭০৩।