ভারতবর্ষ
একটি বাংলা মাসিক সাহিত্য পত্রিকা।
পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে (১ আষাঢ়, ১৩২০)। পত্রিকাটির
প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩)। ১৯৬৯-৭০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষ পত্রিকার প্রকাশনা
বন্ধ হয়ে যায়।
এই পত্রিকাটি প্রকাশের পূর্বে- ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে মেট্রোপলিটন কলেজের শিক্ষার্থীরা
সুকিয়া স্ট্রীটে ‘ফ্রেণ্ডস ড্রামাটিক ক্লাব’ নামে একটি ‘মিলনী’ গঠন করেছিল।
মতানৈক্যের কারণে এই ক্লাবের প্রধান দুই প্রবর্তক সদস্য হরিদাস চট্টোপাধ্যায় ও
প্রমথনাথ ভট্টাচার্্য ক্লাব ত্যাগ করেন। এবং ‘কলিকাতা ইভিনিং ক্লাব’ নামে একটি
নতুন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় দ্বিজেন্দ্রলাল এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে
পড়েন এবং ক্লাবের সভাপতির পদ গ্রহণ করেন। একটা নূতন ধরণের আদর্শ মাসিক পত্রিকা
দ্বিজেন্দ্রলালের বহুদিনের ইচ্ছা ছিল। এই ক্লাবের সাথে যুক্ত হওয়ার, তিনি তাঁর
আদর্শিক পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। প্রথম দিকে ক্লাবের অন্যতম সদস্য হরিদাস
চট্টোপাধ্যায় অর্থাভাবের কথা ভেবে পত্রিকা প্রকাশে সম্মতি দেন নি। পরে তিনি মত
পরিবর্তন করেন এবং পত্রিকা প্রকাশের জন্য একটি শর্ত দেন। শর্তটি ছিল
'দ্বিজেন্দ্রলাল রায় যদি পত্রিকার সম্পাদক হন'। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এই শর্তে রাজি
হলে- পত্রিকা প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং- ১৯১৩
খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে (১ আষাঢ়, ১৩২০) পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
পত্রিকটি প্রকাশের পূর্বে ১৩১৯ বঙ্গাব্দের ৭ই চৈত্র একটি প্রচার পত্র বিলি করা হয়।
এই পত্রে উল্লেখ ছিল –
“বাংলাদেশে যে সর্ব্বাঙ্গসুন্দর পত্রিকার অভাব আছে, তাহা কেহই অস্বীকার করিতে পারিবেন না। অন্যান্য সভ্যদেশের তুলনায় আমাদের দেশে মাসিক পত্রিকার সংখ্যা যে কম তাহা আর বলিতে হইবে না। এই সকল বিষয় চিন্তা করিয়া আমরা একখানি সর্ব্বাঙ্গসুন্দর মাসিক পত্রিকা প্রকাশের ইচ্ছা করিয়াছি। বঙ্গ সাহিত্যের জনৈক সুপ্রসিদ্ধ মনীষী আমাদের সঙ্কলিত পত্রিকার সম্পাদনাভার গ্রহণ করিতে স্বীকৃত হইয়াছেন।'
পত্রিকার নাম নিয়ে ক্লাবের সদস্যদের ভিতরে
তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রস্তাবিত নাম 'ভারতবর্ষ' রাখা হয়।
এই পত্রিকা
প্রকাশের ভার নিয়েছিলেন গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এ্যান্ড সন্স। এই পত্রিকার জন্য তিনি
সহকারী হিসাবে নিয়েছিলেন অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ। কিন্তু পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা
প্রকাশিত হওয়ার আগেই ৩রা জ্যৈষ্ঠ (১৩২০) তারিখে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের
মৃত্যু বরণ করেন। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় শেষের পৃষ্ঠায় মুদ্রিত হয়েছিল '২০১ নং
কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট হইতে শ্রীসুধাংশুশেখর চট্টোপাধ্যায় কর্ত্তৃক প্রকাশিত ও/২০৩।১।১
নং কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট হইতে শ্রীগোপালচন্দ্র রায় দ্বারা মুদ্রিত।'
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের
মৃত্যুর পর পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন জলধর সেন ও অমূল্যচরণ
বিদ্যাভূষণ। প্রথম বর্ষের শেষে সহ-সম্পাদক অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ এই
পত্রিকা ত্যাগ করে ‘মানসী ও মর্ম্মবাণী’ পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর
জলধর সেনের সাথে
সম্পাদনায় যুক্ত হয়েছিলেন উপেন্দ্রকৃষ্ণ
বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে অল্পকিছুদিন পর তিনিও চলে যান। এরপর প্রায় ২৬-২৭ বছর জলধর
একাই সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন।