ভাষাংশ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাসংগ্রহের সূচি


দ্বিতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
চন্দ্রের অন্তঃপুর
ক্ষান্তমণি ও ইন্দুমতী

 

ইন্দু । তোমার স্বামী আদর করেই ঠাট্টা করে , সে কি আর সত্যি!
ক্ষান্তমণি । না ভাই , ঠাট্টা কি সত্যি ঠিক বুঝতে পারি নে । আর সত্যি হবারই বা আটক কী ? নিজে তো জানি নিজের গুণ কত ।
ইন্দু । তোমার স্বামীর আবার তেমনি সব বন্ধু জুটেছে , তাঁরাই পাঁচ জনে পাঁচ কথা বলে তাঁর মন উতলা করে দেয় । বিশেষ সেদিন বিনোদবাবু আর তোমার স্বামীর সঙ্গে আর-একটি বাবু আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল , তাকে দেখে আমার আদবে ভালো লাগল না , লোকটি কে ভাই ?
ক্ষান্তমণি । কী জানি ভাই! বন্ধু একটি-আধটি তো নয় , সবগুলোকে আবার চিনিও নে ।
ইন্দু । এই দেখ্‌-না তার ছবি । ( কাপড় খুঁজিয়া) এ কী হল! এই যাঃ , কোথায় ফেললুম!
ক্ষান্তমণি । কী ফেললি ?
ইন্দু । ফটোগ্রাফ ।
ক্ষান্তমণি । কার ?
ইন্দু । বিনোদবাবুর । নিশ্চয় তোমাদের এই গলি পার হয়ে আসবার সময় রাস্তায় পড়ে গেছে । আমি যাই খুঁজে আনি গে ।
ক্ষান্তমণি । ছি ছি , রাস্তার মাঝে ছবি খুঁজতে গিয়ে লোক দাঁড় করিয়ে দিবি যে! সে ছবির এতই কিসের কদর ?
ইন্দু । হায় হায় , দিদি যদি কেঁদে-কেটে অনর্থপাত করে ?
ক্ষান্তমণি । তোর দিদি ? কমল ?
ইন্দু । হাঁ গো , তার হৃদয় তো পাষাণ নয় , সে যে বড়ো কোমল , কী জানি , আজ থেকে যদি সে হাঙ্গার স্ট্রাইক শুরু করে ?
ক্ষান্তমণি । সে আবার কী ?
ইন্দু । যাকে সংস্কৃত ভাষায় বলে প্রায়োপবেশন ।
ক্ষান্তমণি । আর জ্বালাস নে , বাংলা ভাষায় কী বলে তাই বল্‌-না ।
ইন্দু । তাকে বলে উপোস ক'রে মরা ।
ক্ষান্তমণি । আমি যেন কমলকে জানি নে — তুই হলেও বা সম্ভব হত । কেন ভাই , আসল জিনিস যখন ধরা দিয়েছে তখন ছবিটার এত খোঁজ কেন ?
ইন্দু । আসল জিনিসকে ডেস্কে বসিয়ে রাখা যায় না , দেরাজে বন্ধ করা চলে না । আসল জিনিসের মেজাজের ঠিক নেই — বেশি খিদে পেলে ভালোবাসার কথা তার মনে থাকে না , বেশি ভালোবাসা পেলে অস্থির করে তোলে — কিন্তু —
ক্ষান্তমণি । আচ্ছা আচ্ছা , তোর সেই ‘ কিন্তু ' এত বেশি দুর্লভ নয় ।
ইন্দু । ক্ষান্তদিদি , তোমার সেই বন্ধু তিনটির মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তিটি কে বলো-না ।
ক্ষান্তমণি । খুব সম্ভব গদাই । সে ওদের সঙ্গে প্রায়ই থাকে বটে ।
ইন্দু । বাজি রাখতে পারি , সে গদাই নয় । তার নাম যদি গদাই হয় তা হলে আমার নাম মাতঙ্গিনী ।
ক্ষান্তমণি । তা হলে ললিত ।
ইন্দু । এই এতক্ষণে নামটি পাওয়া গেল । ললিত তার আর সন্দেহ নেই ।
ক্ষান্তমণি । চেহারাটা সুন্দর তো ?
ইন্দু । সুন্দর বৈকি ।
ক্ষান্তমণি । পাতলা , চোখে চশমা আছে ?
ইন্দু । হাঁ হাঁ , চশমা আছে । আর , সব কথাতেই মুচকে মুচকে হাসে ।
ক্ষান্তমণি । তবে আমাদের ললিত চাটুজ্জে , তাতে আর সন্দেহ নেই ।
ইন্দু । ললিত চাটুজ্জে না হয়ে যায় না । বাজি রাখতে পারি ।
ক্ষান্তমণি । কলুটোলার নিত্যকালী চাটুজ্জের ছেলে । ছোকরাটি কিন্তু মন্দ নয় ভাই । এম. এ. পাস করে জলপানি পাচ্ছে ।
ইন্দু । জলপানি পাবার মতোই চেহারা বটে । তা ওদের ঘরে স্ত্রী পুত্র পরিবার কেউ নেই নাকি ? লক্ষ্মীছাড়ার মতো টো টো করে বেড়ায় কেন ?
ক্ষান্তমণি । স্ত্রী পুত্র থেকেই বা কী হয় ? ওর তো তবু নেই । বলে যে , রোজগার না ক'রে বিয়ে করবে না ।
ইন্দু । জানিস , ক্ষান্তদিদি , ওদের তিন জনের ছবিতে যেন তিন কাল মূর্তিমান । চন্দ্রবাবু অতীত , বিনোদবাবু বর্তমান , আর ললিতবাবু ভাবী ।
ক্ষান্তমণি । ভাবী ? কার ভাবী লো ?
ইন্দু । সে কথাটা রইল ভবিষ্যতের গর্ভে ।
ক্ষান্তমণি । দেখ্‌ ভাই ইন্দু , তোকে সত্যি করে বলি । তোরা তো আমাকে বঙ্কিমবাবুর বইগুলো পড়ালি , ভেবেছিলুম একটুও বুঝতে পারব না — কিন্তু বেশ লাগছে ।
ইন্দু । এই দেখ্‌ , মুশকিলে ফেললি তো । তোর মনটা এখন আয়েষা হয়ে দাঁড়িয়েছে , কিন্তু ওজনমত জগৎসিংহ পাবি কোথা ?
ক্ষান্তমণি । তা বলিস নে ইন্দু । আমি যেরকম মাপের আয়েষা সেরকম মাপের জগৎসিংহও ঘরে মজুদ আছে । কিন্তু —
ইন্দু । চাল-চলনটা দোরস্ত হয় নি । মনে মনে আয়েষা হয়েছ , ব্যবহারে আয়েষাগিরি করে উঠতে পারছ না ।
ক্ষান্তমণি । কতকটা তাই বটে ।
ইন্দু । প্র্যাক্‌টিক্যাল্‌ এডুকেশনটা হয় নি আর-কি । কিছুদিন প্র্যাক্‌টিস্‌ চাই ।
ক্ষান্তমণি । তোর ইংরিজি আমি বুঝতে পারি নে , ভাই ।
ইন্দু । আমার বক্তব্য হচ্ছে , বঙ্কিমের কাছে মন্ত্র পেয়েছ , আমার কাছ থেকে তার সাধনা পেতে হবে ।
ক্ষান্তমণি । তোমার কাছ থেকে ?
ইন্দু । আমার কাছ থেকে হলেই নিরাপদ হবে । মনুসংহিতার সঙ্গে বঙ্কিমবাবুর মিল রক্ষা করেই আমি তোমাকে শিক্ষা দেব । আজ এখনি হোক হাতে-খড়ি । আচ্ছা , এক কাজ করা যাক । মনে করো , আমি চন্দ্রবাবু , আপিস থেকে ফিরে এসেছি , খিদেয় প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে — তার পর তুমি কী করবে বলো দেখি। রোসো ভাই , চন্দ্রবাবুর ঐ চাপকান আর শামলাটা পরে নিই , নইলে আমাকে চন্দ্রবাবু মনে হবে না ।

                 আপিসের বেশ পরিধান ও ক্ষান্তর উচ্চহাস্য
ক্ষান্তমণি, স্বামীর প্রতি পরিহাস অত্যন্ত গর্হিত কার্য । পতিব্রতা রমণী কদাপি উচ্চহাস্য করেন না । কোনো কারণে হাস্য অনিবার্য হইলে সাধ্বী স্ত্রী প্রথমে স্বামীর অনুমতি লইয়া পরে বদনে অঞ্চল দিয়া নয়ন নত করিয়া ঈষৎ স্মিতহাস্য হাসিতে পারেন । এই গেল মনুসংহিতা , এবার এসো নবীন কবির গীতিকাব্যে । আমি আপিস থেকে ফিরে এসেছি , এখন তোমার কী কর্তব্য বলো।
ক্ষান্তমণি । প্রথমে তোমার চাপকানটি এবং শামলাটি খুলে দিই , তার পরে জলখাবার —
ইন্দু । নাঃ , তোমার কিছু শিক্ষা হয় নি । আচ্ছা , তুমি তবে চন্দ্রবাবু সাজো , আমি তোমার স্ত্রী সাজছি —
ক্ষান্তমণি । না ভাই , সে আমি পারব না —
ইন্দু । আচ্ছা , তবে আর-একবার চেষ্টা করো । বড়োবউ , চাপকানটা খুলে আমার ধুতি-চাদরটা এনে দাও তো ।
ক্ষান্তমণি । ( উঠিয়া) এই দিচ্ছি ।
ইন্দু । ও কী করছ! তুমি ঐখানে হাতের উপর মাথা রেখে বসে থাকো — বলো , ‘ নাথ , আজ সন্ধেবেলায় কী সুন্দর বাতাস দিচ্ছে! আজ আর কিছুতে মন লাগছে না , ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়ে যাই ' ।
ক্ষান্তমণি । ( যথাশিক্ষিত) নাথ , আজ সন্ধেবেলায় কী সুন্দর বাতাস দিচ্ছে! আজ আর কিছুতে মন লাগছে না , ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়ে যাই ।
ইন্দু । কোথায় উড়ে যাবে ? তার আগে আমায় লুচি দিয়ে যাও , ভারি খিদে পেয়েছে —
ক্ষান্তমণি । ( তাড়াতাড়ি উঠিয়া) এই দিচ্ছি —
ইন্দু । এই দেখো , সব মাটি করলে । অস্থানে মনুসংহিতা এসে পড়ে । তুমি যেমন ছিলে তেমনি থাকো , বলো , ‘লুচি? কই , লুচি তো আজ ভাজি নি । মনে ছিল না । আচ্ছা , লুচি কাল হবে এখন । আজ , এসো , এখানে এই মধুর বাতাসে বসে—'
চন্দ্র (নেপথ্য হইতে) । বড়োবউ!
ইন্দু । ঐ চন্দ্রবাবু আসছেন! আমাকে দেখতে পেয়েছেন বোধ হল । তুমি বোলো তো ভাই , বাগবাজারের চৌধুরীদের কাদম্বিনী । আমার পরিচয় দিয়ো না , লক্ষ্মীটি , মাথা খাও ।
 

[ পলায়ন
পাশের ঘর

                                               গদাই আসীন । চাপকান-শামলাপরা ইন্দুর ছুটিয়া প্রবেশ
 
গদাই । একি!
ইন্দু । ও মা , এ যে সেই ললিতবাবু! আর তো পালাবার পথ নেই । ( সামলাইয়া লইয়া ধীরে ধীরে চাপকান-শামলা খুলিয়া গদাইয়ের প্রতি) তোমার বাবুর এই শামলা আর এই চাপকান । সাবধান করে রেখো , হারিয়ো না। আর শীগগির দেখে এসো দেখি , বাগবাজারের চৌধুরীবাবুদের বাড়ি থেকে পালকি এসেছে কিনা ।
গদাই । ( হাসিয়া) যে আজ্ঞা । [ প্রস্থান
ইন্দু । ছি ছি! ললিতবাবু কী মনে করলেন! যা হোক , আমাকে তো চেনেন না । ভাগ্যিস , হঠাৎ বুদ্ধি জোগালো , বাগবাজারের চৌধুরীদের নাম করে দিলুম। চন্দ্রবাবুর এ বাসাটিও হয়েছে তেমনি । অন্দর বাহির সব এক । এখন আমি কোন্‌ দিক দিয়ে পালাই ? ঐ আবার আসছে । মানুষটি তো ভালো নয় ।
                           গদাইয়ের প্রবেশ
গদাই । ঠাকরুন , পালকি তো আসে নি । এখন কী আজ্ঞা করেন ?
ইন্দু । এখন তুমি তোমার কাজে যেতে পারো । না , না , এ যে তোমার মনিব এ দিকে আসছেন । ওঁকে আমার খবর দেবার কোনো দরকার নেই , আমার পালকি নিশ্চয় এসেছে ।     [ প্রস্থান
গদাই । কী চমৎ কার ! আর কী উপস্থিত বুদ্ধি! বা বা! আমাকে হঠাৎ একদম চাকর বানিয়ে দিয়ে গেল — সেও আমার পরম ভাগ্যি । বাঙালির ছেলে চাকরি করতেই জন্মেছি , কিন্তু এমন মনিব কি অদৃষ্টে জুটবে ? নির্লজ্জতাও ওকে কেমন শোভা পেয়েছে! আহা , এই শামলা আর এই চাপকান চন্দরকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না । বাগবাজারের চৌধুরী! সন্ধান নিতে হচ্ছে।
                      চন্দ্রের প্রবেশ
চন্দ্রকান্ত । তুমি এ ঘরে ছিলে নাকি ? তবে তো দেখেছ ?
গদাই । চক্ষু থাকলেই দেখতে হয় — কিন্তু কে বলো দেখি ।
চন্দ্রকান্ত । বাগবাজারের চৌধুরীদের মেয়ে কাদম্বিনী । আমার স্ত্রীর একটি বন্ধু ।
গদাই । ওঁর স্বামী বোধ করি স্বাধীনতাওয়ালা ?
চন্দ্রকান্ত । ওঁর আবার স্বামী কোথায় ?
গদাই । মরেছে বুঝি ? আপদ গেছে । কিন্তু বিধবার মতো বেশ তো —
চন্দ্রকান্ত । বিধবা নয় হে — কুমারী । যদি হঠাৎ স্নায়ুর ব্যামো ঘটে থাকে তো বলো , ঘটকালি করি ।
গদাই । তেমন স্নায়ু হলে এতদিনে গলায় দড়ি দিয়ে মরতুম ।
চন্দ্রকান্ত । তা হলে চলো , একবার বিনোদকে দেখে আসা যাক । তার বিশ্বাস , সে ভারি একটা অসমসাহসিক কাজ করতে প্রবৃত্ত হয়েছে , তাই একেবারে সপ্তমে চড়ে রয়েছে — যেন তার পূর্বে বঙ্গদেশে বাপ-পিতামহর আমল থেকে বিবাহ কেউ করে নি!
গদাই । মেয়েমানুষকে বিয়ে করতে হবে , তার আবার ভয় কিসের ?
চন্দ্রকান্ত । বলো কী গদাই ? বিধাতার আশীর্বাদে জন্মালুম পুরুষ হয়ে , কী জানি কার শাপে বিয়ে করতে গেলুম মেয়েমানুষকে , এ কি কম সাহসের কথা ? গদাই , যেয়ো না হে! তোমাকে দরকার আছে , এখনি আসছি ।
                                                                         [ প্রস্থান
গদাই । ( পকেট হইতে নোটবুক ও পেন্সিল বাহির করিয়া) আর তো পারছি নে । মাথার ভিতরটা যেরকম ঘুলিয়ে গেছে , আজ বোধ হয় একটা দুষ্কর্ম করব । কবিতা লিখে ফেলব । বুদ্ধি পরিষ্কার থাকলে কবিতার ব্যাক্‌টিরিয়া জন্মাতেই পারে না । চিত্তের অবস্থাটা খুব অস্বাস্থ্যকর হওয়া চাই । আজ আমার মগজের ভিতরে ঐ কীটাণুগুলি কেবলই চোদ্দ অক্ষর খুঁজে কিলবিল করে বেড়াচ্ছে ।     [ লিখিতে প্রবৃত্ত
                  কাদম্বিনী যেমনি আমায় প্রথম দেখিলে ,
                 কেমন করে ভৃত্য বলে তখনি চিনিলে ।
ভাবটা নতুন রকমের হয়েছে , কিন্তু হতভাগা ছন্দটাকে বাগাতে পারছি নে । ( গণনা করিয়া) প্রথম লাইনটা হয়েছে ষোলো , দ্বিতীয়টা হয়েছে পনেরো । কিন্তু কাকে ফেলে কাকে রাখি । ( চিন্তা) ‘ আমায় ' -কে ‘ আমা ' বললে কেমন শোনায় ? কাদম্বিনী যেমনি আমা প্রথম দেখিলে — কানে তো নেহাত খারাপ ঠেকছে না । তবুও একটা অক্ষর বেশি থাকে । কাদম্বিনীর ‘ নী ' টা কেটে যদি সংক্ষেপ করে দেওয়া যায় ? পুরো নামের চেয়ে সে তো আরো আদরের শুনতে হবে । কাদম্বি — না , ঠিক শোনাচ্ছে না । কদম্ব — ঠিক হয়েছে —
               কদম্ব যেমনি আমা প্রথম দেখিলে ,
              কেমন করে ভৃত্য বলে তখনি চিনিলে ।
উঁ হুঁ , ও হচ্ছে না । ‘ কেমন করে ' কথাটাকে তো কমাবার জো নেই । ‘ কেমন করিয়া ' — তাতে আরো একটা অক্ষর বেড়ে যায় । ‘ তখনি চিনিলে 'র জায়গায় ‘ তৎক্ষনাৎ চিনিলে' বসিয়ে দিতে পারি , কিন্তু সুবিধে হয় না । দূর হোক গে! ছন্দে লেখাটা বর্বরতা । যে সময় পুরুষমানুষ কানে কুন্ডল , হাতে অঙ্গদ পরত , পদ্য জিনিসটা সেই যুগের ; ডিমক্রাটিক যুগের জন্যে গদ্য । হওয়া উচিত ছিল — ‘ বলি ও কাদম্বিনী , যেমনি আমার উপর নজর পড়ল অমনি আমাকে গোলাম বলে চিনে নিলে কেমন করে খুলে বলো তো ' । এর মধ্যে বিক্রমাদিত্যের নবরত্নসভার সীলমোহরের ছাপ নেই — একেবারে খাস শ্রীযুক্ত গদাইচন্দ্রের গোমুখী-বিনির্গত ।
শিবচরণের প্রবেশ
শিবচরণ । কী হচ্ছে গদাই ?
গদাই । আজ্ঞে , ফিজিয়লজির নোটগুলো একবার দেখে নিচ্ছি ।
শিবচরণ । ফিজিয়লজির কোন্‌ জায়গাটাতে আছ ?
গদাই । হার্টের ফাংশন নিয়ে ।
শিবচরণ । দেখি তোমার নোটবইটা । আমি তোমাকে হয়তো কিছু —
গদাই । আজ্ঞে , এ একেবারে লেটেস্‌ট্‌ থিওরি নিয়ে — বোধ হয় মাসখানেক হল এর ডিস্‌কভারি হয়েছে । এখনো সকলে জানে না ।
শিবচরণ । সত্যি নাকি ? আমি আবার চশমাটা আনি নি । সব্‌জেক্‌টটা ইন্টারেস্‌টিং , পরে শুনে নেব তোর কাছ থেকে । কিন্তু , এখানে করছিস কী ?
গদাই । এক্‌জামিনটা খুব কাছে এসেছে — চন্দ্রবাবুর বাসাটা নিরিবিলি আছে , তাই এখানে —
শিবচরণ । দেখো বাপু , একটা কথা আছে । তোমার বয়স হয়েছে , তাই আমি তোমার জন্যে একটি কন্যা ঠিক করেছি ।
গদাই । ( স্বগত) কী সর্বনাশ!
শিবচরণ । নিবারণবাবুকে জানো বোধ করি —
গদাই । আজ্ঞে হাঁ , জানি ।
শিবচরণ । তাঁরই কন্যা ইন্দুমতী । মেয়েটি দেখতে শুনতে ভালো , বয়সেও তোমার যোগ্য । দিনও একরকম স্থির ।
গদাই । একেবারে স্থির করেছেন ? কিন্তু এখন তো হতে পারে না ।
শিবচরণ । কেন বাপু ?
গদাই । এক্‌জামিন কাছে এসেছে —
শিবচরণ । তা হোক্‌‍-না এক্‌জামিন । বউমাকে বাপের বাড়ি রেখে দেব , এক্‌জামিন হয়ে গেলে ঘরে আনা যাবে।
গদাই । ডাক্তারিটা পাস না করেই কি —
শিবচরণ । কেন বাপু , তোমার সঙ্গে তো একটা শক্ত ব্যায়রামের বিয়ে দিচ্ছি নে । মানুষ ডাক্তারি না জেনেও বিয়ে করে । কিন্তু , আপত্তিটা কিসের জন্যে ?
গদাই । উপার্জনক্ষম না হয়ে বিয়ে করাটা —
শিবচরণ । উপার্জন ? আমি কি তোমাকে আমার বিষয় থেকে বঞ্চিত করতে যাচ্ছি ? তুমি কি সাহেব হয়েছ যে , বিয়ে করেই স্বাধীন ঘরকন্না করতে যাবে ?                       [গদাই নিরুত্তর
তোমার হল কী! বিয়ে করবে , তার আবার এত ভাবনা কী! আমি কি তোমার ফাঁসির হুকুম দিলুম!
গদাই । বাবা , আপনার পায়ে পড়ি , আমাকে এখন বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন না ।
শিবচরণ । ( সরোষে) অনুরোধ কী বেটা! হুকুম করব । আমি বলছি , তোকে বিয়ে করতেই হবে ।
গদাই । আমাকে মাপ করুন , আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করতে পারব না ।
শিবচরণ । ( উচ্চস্বরে) কেন পারবি নে! তোর বাপ পিতামহ, তোর চৌদ্দপুরুষ বরাবর বিয়ে করে এসেছে , আর তুই বেটা দু পাতা ইংরিজি উলটে আর বিয়ে করতে পারবি নে!
গদাই । আমি মিনতি করে বলছি বাবা , একেবারে মর্মান্তিক অনিচ্ছে না থাকলে আমি কখনোই এ প্রস্তাবে —
শিবচরণ । তুমি বেটা আমার বংশে জন্মগ্রহণ করে হঠাৎ একদিনে এত বড়ো বৈরাগী হয়ে উঠলে কোথা থেকে । এমন সৃষ্টিছাড়া অনিচ্ছেটা হল কেন , সেটা তো শোনা আবশ্যক ।
গদাই । আচ্ছা , আমি মাসিমাকে সব কথা বলব , আপনি তাঁর কাছে জানতে পারবেন ।
শিবচরণ । আচ্ছা ।                [ প্রস্থান
গদাই । আমার ছন্দ মিল ভাব সমস্ত ঘুলিয়ে গেল ; এখন যে আর এক লাইনও মাথায় আসবে এমন সম্ভাবনা দেখি নে ।
                                     চন্দ্রের প্রবেশ
চন্দ্রকান্ত । আজ বিনোদের বিয়ে , মনে আছে তো গদাই ?
গদাই । তাই তো , ভুলে গিয়েছিলুম বটে ।
চন্দ্রকান্ত । তোমার স্মরণশক্তির যেরকম অবস্থা দেখছি , এক্‌জামিনের পক্ষে সুবিধে নয় । এইখানে বৈঠক হবে , চলো ওদের ধরে নিয়ে আসিগে ।
গদাই । আজ শরীরটা তেমন ভালো ঠেকছে না , আজ থাক্‌ —
চন্দ্রকান্ত । বিনোদের বিয়েটা তো বছরের মধ্যে সদাসর্বদা হবে না গদাই! যা হবার আজই চুকে যাবে । অতএব আজ তোমাকে ছাড়ছি নে , চলো ।
গদাই । চলো ।                       [ প্রস্থান
ক্ষান্তমণি ও ইন্দুর প্রবেশ
ইন্দু । বর তো তোমাদের এখান থেকেই বেরোবেন ? তাঁর তিন কূলে আর কেউ নেই নাকি ?
ক্ষান্তমণি । বাপ-মা নেই বটে , কিন্তু শুনেছি দেশে পিসি-মাসি সব আছে — তাদের খবরও দেয় নি । বলে যে , বিয়ে করছি, হাট বসাচ্ছি নে তো । আবার বলে কী , এ তো আর শুম্ভ-নিশুম্ভর যুদ্ধু না , কেবল দুটিমাত্র প্রাণীর বিয়ে , এত শোরশরাবৎ লোক-লস্করের দরকার কী ?
ইন্দু । একবার আমাদের হাতে পড়ুক-না , দুটিমাত্র প্রাণীর বিয়ে যে কিরকম ধুন্দুমার ব্যাপার , তা তাঁকে একরকম মোটামুটি বুঝিয়ে দেব । — আজ যে তুমি বাইরের ঘরে ?
ক্ষান্তমণি । এই ঘরে সব বরযাত্রী জুটবে । দেখ্‌-না ভাই , ঘরের অবস্থাখানা । তারা আসবার আগে একটুখানি গুছিয়ে নেবার চেষ্টায় আছি ।
ইন্দু । তোমার একলার কর্ম নয় , এসো ভাই , দুজনে এ জঞ্জাল সাফ করা যাক । এগুলো দরকারি নাকি ?
ক্ষান্তমণি । কিচ্ছু না । যত রাজ্যির পুরোনো খবরের কাগজ জুটেছে । কাগজগুলো যেখানে পড়া হয়ে যায় সেইখানেই পড়ে থাকে ।
ইন্দু । এগুলো ?
ক্ষান্তমণি । এগুলো মকদ্দমার কাগজ — হারাতে পারলে বাঁচেন বোধ হয় । কেন যে হারায় না তাও তো বুঝতে পারি নে। কতকগুলো গদির নীচে গোঁজা , কতক আলমারির মাথায় , কতক ময়লা চাপকানের পকেটে । যখন কোনোটার দরকার পড়ে বাড়ি মাথায় করে বেড়ান , আস্তাকুঁড় থেকে আর বাড়ির ছাত পর্যন্ত এমন যায়গা নেই যেখানে না খুঁজতে হয় ।
ইন্দু । এর সঙ্গে যে ইংরেজি নভেলও আছে — তারও আবার পাতা ছেঁড়া! কতকগুলি চিঠি — এ কি দরকারি!
ক্ষান্তমণি । ওর মধ্যে দরকারি আছে অ-দরকারিও আছে , কিচ্ছু বলবার জো নেই । খুব গোপনীয়ও আছে , সেগুলো চারি দিকে ছড়ানো । খুব বেশি দরকারি চিঠি সাবধান করে রাখবার জন্যে বইয়ের মধ্যে গুঁজে রাখা হয়, সে আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না ।
ইন্দু । এ-সব কী । কতকগুলো লেখা , কতকগুলো প্রুফ , খালি দেশলাইয়ের বাক্স , কাননকুসুমিকা , কাগজের পুঁটুলির মধ্যে ছাতাধরা মসলা , একখানা তোয়ালে , গোটাকতক দাবার ঘুঁটি , একটি ইস্কাবনের গোলাম , ছাতার বাঁট — এ চাবির গোছা ফেলে দিলে বোধ হয় চলবে না ?
ক্ষান্তমণি । এই দেখো! এই চাবির মধ্যে ওঁর যথাসর্বস্ব । আজ সকালে একবার খোঁজ পড়েছিল , কোথাও সন্ধান না পেয়ে শেষে উমাপতিদের বাড়ি থেকে সতেরোটা টাকা ধার করে নিয়ে এলেন । দাও তো ভাই , এ চাবি ওঁকে সহজে দেওয়া হবে না । ঐ ভাই , ওরা আসছে , চলো ও ঘরে পালাই ।     [ প্রস্থান
                       বিনোদ চন্দ্রকান্ত গদাই নলিনাক্ষ শ্রীপতি ভূপতির প্রবেশ
বিনোদ । ( টোপর পরিয়া) সঙ তো সাজলাম , এখন তোমরা পাঁচ জনে মিলে হাততালি দাও — উৎসাহ হোক , মনটা দমে যাচ্ছে ।
চন্দ্রকান্ত । এরই মধ্যে ? এখনো তো রঙ্গমঞ্চ চড় নি ?
বিনোদ । আচ্ছা চন্দর , অভিনয়ে আমার পার্ট কী হবে বুঝিয়ে দাও দেখি ।
চন্দ্রকান্ত । মহারাণীর বিদূষক ।
বিনোদ । সাজটিও যথোপযুক্ত হয়েছে । ইংরেজ রাজাদের যে ফুল্‌গুলো ছিল তাদেরও টুপিটা এই টোপরের মতো ।
চন্দ্রকান্ত । সেজের বাতি নিবিয়ে দেবার ঠোঙাগুলোরও ঐরকম চেহারা । এই পঁচিশটা বৎসরের যত-কিছু শিক্ষাদীক্ষা , যত-কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা — ভারতের ঐক্য , বাণিজ্যের উন্নতি , সমাজের সংস্কার , সাহেবের ছেলে পিটোনো প্রভৃতি যে-সকল উঁচু উঁচ ভাবের পলতে মগজের ঘি খেয়ে খুব উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠেছিল সেগুলো ঐ টোপর চাপা পড়ে একদম নিবে যাবে ।
শ্রীপতি । চন্দরদা , তুমি তো বিয়ে করেছ , বলো-না কী করতে হবে । হাঁ করে সবাই মিলে দাঁড়িয়ে থাকলে কি ‘ বিয়ে-বিয়ে ' মনে হয় ?
চন্দ্রকান্ত । সে তো ভাই , স্টোন্‌-এজ্‌ , আইস্‌-এজের কথা । সে যুগে না ছিল পূর্বরাগের কোমলতা , না ছিল অপূর্ব অনুরাগের উত্তাপ । কেবল বিবাহের যিনি আদ্যাশক্তি সেই মহামায়াই আজও আছেন অন্তরে-বাহিরে , আর সমস্তই ভুলেছি ।
ভূপতি । শ্যালীর হাতের কানমলা ?
চন্দ্রকান্ত । হায় পোড়াকপাল! শ্যালী থাকলে তবু বিবাহের সংকীর্ণতা অনেকটা কাটে , ওরই মধ্যে একটুখানি পাশ ফেরবার জায়গা পাওয়া যায় — শ্বশুরমশায় একেবারে কড়ায় গন্ডায় ওজন করে দিয়েছেন , সিকি পয়সার ফাউ দেন নি ।
বিনোদ । বাস্তবিক , বর পছন্দ করবার সময় যেমন জিজ্ঞাসা করে কটি পাস আছে , কনে পছন্দ করবার সময় তেমনি খোঁজ নেওয়া উচিত কটি ভগিনী আছে ।
চন্দ্রকান্ত । চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে । ঠিক বিয়ের দিনটিতে বুঝি চৈতন্য হল ? নিতান্ত বঞ্চিত হবে না ; তোমার কপালে একটি আছে , নামটি হচ্ছে ইন্দুমতী ।
গদাই । ( স্বগত) যাঁকে আমার স্কন্ধের উপর উদ্যত করা হয়েছে — সর্বনাশ আর-কি ।
শ্রীপতি । বিনোদ , একটুখানি বোসো ।
বিনোদ । না ভাই , তা হলে আর উঠতে পারব না , মনটা দেহের উপর যেন পাথরের কাগজচাপা হয়ে চেপে রাখবে ।
ভূপতি । এসো তবে , বর-কনের উদ্দেশে থ্রী চিয়ার্‌স্‌ দিয়ে বেরিয়ে পড়া যাক । হিপ্‌ হিপ্‌ হুরে —
চন্দ্রকান্ত । দেখো , আমার প্রিয়বন্ধুর বিয়েতে আমি কখনোই এরকম অনাচার হতে দেব না ; শুভকর্মে অমন বিদেশী শেয়াল-ডাক ডেকো না । তার চেয়ে সবাই মিলে উলু দেবার চেষ্টা করো-না ।
নলিনাক্ষ । এই তবে আমাদের অবিবাহিত বন্ধুত্বের শেষ মিলন। জীবনস্রোতে তুমি এক দিকে যাবে , আমি এক দিকে যাব। প্রার্থনা করি তুমি সুখে থাকো। কিন্তু মুহূর্তের জন্যে ভেবে দেখো বিনু , এই মরুময় জগতে তুমি কোথায় যাচ্ছ —
চন্দ্রকান্ত । বিনু , তুই বল্‌ , মা , আমি তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি । তা হলে কনকাঞ্জলিটা হয়ে যায় ।
শ্রীপতি । এইবার তবে উলু আরম্ভ হোক ।              [ সকলে উলুর চেষ্টা ও প্রস্থান
                          ইন্দু ও ক্ষান্তমণির প্রবেশ
ক্ষান্তমণি । শুনলি তো ভাই , আমার কর্তাটির মধুর কথাগুলি ?
ইন্দু । কেন ভাই , আমার তো মন্দ লাগে নি ।
ক্ষান্তমণি । তোর মন্দ লাগবে কেন ? তোর তো আর বাজে নি । যার বেজেছে সেই জানে —
ইন্দু । তুমি যে একেবারে ঠাট্টা সইতে পার না । তোমার স্বামী কিন্তু ভাই তোমাকে সত্যি ভালোবাসে । দিনকতক বাপের বাড়ি গিয়ে বরং পরীক্ষা করে দেখো-না —
ক্ষান্তমণি । তাই একবার ইচ্ছা করে , কিন্তু জানি থাকতে পারব না । তা যা হোক , এখন তোদের ওখানে যাই । ওরা তো বউবাজারের রাস্তা ঘুরে যাবে , সে এখনো ঢের দেরি আছে ।
ইন্দু । তুমি এগোও ভাই , তোমার স্বামীর এই বইগুলি গুছিয়ে দিয়ে যাই ।    [ ক্ষান্তর প্রস্থান
ললিতবাবু তাঁর এই খাতাটা ফেলে গেছেন । এটা না দেখে আমি যাচ্ছি নে । ( খাতা খুলিয়া) ওমা! এ যে কবিতা। কাদম্বিনীর প্রতি । আ মরণ । সে পোড়ারমুখি আবার কে ।
                    জল দিবে অথবা বজ্র , ওগো কাদম্বিনী ,
                    হতভাগ্য চাতক তাই ভাবিছে দিনরজনী ।
ভারি যে অবস্থা খারাপ! জলও না , বজ্রও না , হতভাগ্য চাতকের জন্যে কবিরাজের তেলের দরকার ।
                    আর কিছু দাও বা না-দাও , অয়ি অবলে সরলে ,
                    বাঁচি সেই হাসিভরা মুখ আর-একবার দেখিলে ।
আহাহাহা! অবলে সরলে! পুরুষগুলো ভারি বোকা! মনে করলে , ওঁর প্রতি ভারি অনুগ্রহ করে সে হেসে গেল । হাসতে নাকি সিকি পয়সা খরচ হয় । কই আমাদের কাছে তো কোনো কাদম্বিনী সাত পুরুষে এমন করে হাসতে আসে না! অবলে সরলে! সত্যি বাপু , মেয়ে জাতটাই ভালো নয় । এত ছলও জানে । ছি ছি! এ কবিতাও তেমনি । আমি যদি কাদম্বিনী হতুম তো এমন পুরুষের মুখ দেখতাম না । যে লোক চোদ্দটা অক্ষর সামলে চলতে পারে না তার সঙ্গে আবার প্রণয়! এ খাতা আমি ছিঁড়ে ফেলব ; পৃথিবীর একটা উপকার করব ; কাদম্বিনীর দেমাক বাড়তে দেব না ।
                            পুরুষের বেশে হরিলে পুরুষের মন ,
                    এবার     নারীবেশে কেড়ে নিয়ে যাও জীবন মরণ ।
এর মানে কী!
                            কদম্ব যেমনি আমা প্রথম দেখিলে ,
                          কেমন করে ভৃত্য বলে তখনি চিনিলে!
ওমা! ওমা! ওমা! এ যে আমারই কথা । এইবার বুঝেছি পোড়ারমুখি কাদম্বিনী কে! (হাস্য) তাই বলি , এমন করে কাকে লিখলেন! ওমা , কত কথাই বলেছেন । আর-একবার ভালো করে সমস্তটা পড়ি । কিন্তু কী চমৎকার হাতের অক্ষর! একেবারে যেন মুক্তো বসিয়ে গেছে ।
নীরবে পাঠ
                        পশ্চাৎ হইতে খাতা অন্বেষণে গদাইয়ের প্রবেশ
কিন্তু ছন্দ থাক্‌ না-থাক্‌ পড়তে তো কিছুই খারাপ হয় নি । সত্যি , ছন্দ নেই বলে আরো মনের সরল ভাবটা ঠিক যেন প্রকাশ হয়েছে । আমার বেশ লাগছে । আমার বোধ হয় ছেলেদের প্রথম ভাঙা কথা যেমন মিষ্টি লাগে কবিদের প্রথম ভাঙা ছন্দ তেমনি মিষ্টি । ( খাতা বুকে চাপিয়া) এ খাতা আমি নিয়ে যাব । এ তো আমাকেই লিখেছেন । আমার এমনি আনন্দ হচ্ছে । ( প্রস্থানোদ্যম । পশ্চাতে ফিরিয়া গদাইকে দেখিয়া)ওমা! (মুখ আচ্ছাদন)
গদাই । ঠাকরুন , আমি একখানা খাতা খুঁজতে এসেছিলুম ।  [ইন্দুমতীর দ্রুত পলায়ন
জন্ম জন্ম কেবলই আমার খাতাই হারাক । কবিতার বদলে যা পেয়েছি কালিদাস তাঁর কুমারসম্ভব শকুন্তলা বাঁধা রেখে এমন জিনিস পায় না!  [ মহা উল্লাসে প্রস্থান