বিষয়: রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান সংখ্যা :
শিরোনাম:
জড়ায়ে আছে বাধা,
ছাড়ায়ে যেতে চাই
পাঠ ও পাঠভেদ:
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উত্কল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিস মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয়, জয় হে॥
অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী
হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খৃস্টানী
পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন-পাশে
প্রেমহার হয় গাঁথা।
জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয়, জয় হে॥
পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থা, যুগ-যুগ ধাবিত যাত্রী।
হে চিরসারথি, তব রথচক্রে মুখরিত পথ দিনরাত্রি।
দারুণ বিপ্লব-মাঝে তব শঙ্খধ্বনি বাজে
সঙ্কটদুঃখত্রাতা।
জনগণপথপরিচায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে॥
ঘোরতিমিরঘন নিবিড় নিশীথে পীড়িত মূর্ছিত দেশে
জাগ্রত ছিল তব অবিচল মঙ্গল নতনয়নে অনিমেষে।
দুঃস্বপ্নে আতঙ্কে রক্ষা করিলে অঙ্কে
স্নেহময়ী তুমি মাতা।
জনগণদুঃখত্রায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে॥
রাত্রি প্রভাতিল, উদিল রবিচ্ছবি পূর্ব-উদয়গিরিভালে—
গাহে বিহঙ্গম, পুণ্য সমীরণ নবজীবনরস ঢালে।
তব করুণারুণরাগে নিদ্রিত ভারত জাগে
তব চরণে নত মাথা।
জয় জয় জয় হে, জয় রাজেশ্বর ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে॥
পাণ্ডুলিপির পাঠ: পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় নাই।
পাঠভেদ:
পাঠভেদ আছে।
স্বরবিতান-৪৭এর ১০৯
পৃষ্ঠায় মুদ্রিত পাঠভেদ অনুসারে
নিচের
পাঠভেদটি দেওয়া হলো।
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা
: সংগীত-গীতাঞ্জলী (১৯২৭)
পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মারাঠা : ধর্ম্মসঙ্গীত (ডিসেম্বর ১৯১৪)
: গীতবিতান (আশ্বিন ১৩৩৮)
তথ্যানুসন্ধান
ক. রচনাকাল ও স্থান:
ডিসেম্বর
১৯১১
কলিকাতা।
গানটি
রবীন্দ্রনাথের ৫০
বৎসর বয়সের রচনা।
কংগ্রসের ২৬তম অধিবেশন কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১১ ডিসেম্বর মাসের ২৬-২৮
তারিখে। ২৭শে ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে
এই গানটি দিয়ে। গানটিকে ভারতের 'জাতীয় সঙ্গীত' হিসাবে গ্রহণের প্রস্তাব উঠলে-
রবীন্দ্রনাথের বিরোধীরা দাবী করেন যে-সম্রাট পঞ্চম
জর্জের কলকাতায় আগমন
উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ এই গানটি রচনা করেছিলেন। এই দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য
বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র পুলিনবিহারী সেন রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠি লিখেন।
রবীন্দ্রনাথ এর উত্তরে ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের ৪ অগ্রহায়ণ, রবিবার (২০ নভেম্বর,
১৯৩৭) জানান-
সে বৎসর ভারতসম্রাটের
আগমনের আয়োজন চলছিল। রাজসরকারে প্রতিষ্ঠাবান আমার কোনো বন্ধু সম্রাটের জয়গান
রচনার জন্যে আমাকে বিশেষ করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শুনে বিস্মিত হয়েছিলুম, সেই
বিস্ময়ের সঙ্গে মনে উত্তাপেরও সঞ্চার হয়েছিল। তারই প্রবল প্রতিক্রিয়ার ধাক্কায়
আমি জনগণমনঅধিনায়ক গানে সেই ভারতভাগ্যবিধাতার জয়ঘোষণা করেছি; পতনঅভ্যুদয়বন্ধুর
পন্থায় যুগযুগধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসারথী, যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথপরিচায়ক,
সেই যুগযুগান্তরের মানবভাগ্যরথচালক যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ বা কোনো জর্জই কোনোক্রমেই
হতে পারেন না সে কথা রাজভক্ত বন্ধুও অনুভব করেছিলেন। কেন না তাঁর ভক্তি যতই
প্রবল থাক বুদ্ধির অভাব ছিল না।
উল্লেখ্য প্রবোধচন্দ্র সেন "ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত" (১৩৫৬) গ্রন্থে
রবীন্দ্রনাথের উল্লেখ করা 'রাজভক্ত বন্ধু'-র পরিচয় প্রসঙ্গে পাদটীকায় লিখেছেন-
'সম্ভবত শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী....'।
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ:
গীতপঞ্চাশিকা (আশ্বিন ১৩২৫, বঙ্গাব্দ)। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
গীতবিতানের স্বদেশ পর্যায়ের ১৩ সংখ্যক গান।
ধর্ম্মসঙ্গীত (গান : ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯১৪ খ্রীষ্টাব্দ, ৬ আশ্বিন ১৩২১ বঙ্গাব্দ)।
ভারততীর্থ (শ্রাবণ ১৩৫৪, বঙ্গাব্দ)। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
সঙ্গীত-গীতাঞ্জলি (১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দ)। ভীমরাও শাস্ত্রী-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল।
স্বরবিতান ষোড়শ (১৬, গীতপঞ্চাশিকা। আশ্বিন ১৪১৩) খণ্ডের ৫০ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ১৮১-১৮৭।
স্বরবিতান সপ্তচত্বারিংশ (৪৭, পৌষ ১৪১২) খণ্ডের ১ম গান। পৃষ্ঠা: ৫-১১।
Twenty-six songs of Rabindranath Tagore (1935)/ A.A. Bake-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছিল।
পত্রিকা:
আনন্দ সঙ্গীত (জ্যৈষ্ঠ।১৩২২, বঙ্গাব্দ)। মিশ্র-কাওয়ালি। বজ্রমোহন গাঙ্গুলি-কৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
তত্ত্ববোধনী (মাঘ ১৮৩৩ শকাব্দ, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ)। শিরোনাম: ভারতবিধাতা।