শ্যাম রে, নিপট কঠিন মন তোর।
বিরহ সাথি করি দুঃখিনী রাধা   রজনী করত হি ভোর।
একলি নিরল বিরল-'পর বৈঠত, 
নিরখত যমুনা-পানে―
বরখত অশ্রু, বচন নহি নিকসত,
পরান থেহ ন মানে।
গহনতিমির নিশি, ঝিল্লিমুখর দিশি, 
শূন্য কদমতরুমূলে
ভূমিশয়ন-’পর আকুলকুন্তল  
রোদই আপন ভুলে।
মুগুধ মৃগীসম চমকি উঠই কভু  
পরিহরি সব গৃহকাজে,
চাহি শূন্য-’পর কহে করুণস্বর—
বাজে রে বাঁশরি বাজে।
নিঠুর শ্যাম রে, কৈসন অব তুঁহুঁ 
রহই দূর মথুরায়―
রয়ন নিদারুণ কৈসন যাপসি, কৈস দিবস তব যায়!
কৈস মিটাওসি প্রেমপিপাসা,   
কঁহা বজাওসি বাঁশি!
পীতবাস তুঁহুঁ কথি রে ছোড়লি,  
কথি সো বঙ্কিম হাসি!
কনকহার অব পহিরলি কণ্ঠে,  কথি ফেকলি বনমালা!
হৃদিকমলাসন শূন্য করলি রে,   কনকাসন কর আলা!
এ দুখ চিরদিন রহল চিত্তমে,  ভানু কহে― ছি ছি কালা!
ঝটতি আও তুঁহুঁ হমারি সাথে,   বিরহব্যাকুলা বালা।
পাণ্ডুলিপির পাঠ: পাওয়া যায়নি।
	পাঠভেদ: 
	 গীতবিতানে 
	গৃহীত পাঠের সাথে 
	রবীন্দ্ররচনাবলী 
	দ্বিতীয় খণ্ডে 
	গৃহীত পাঠের পার্থক্য রয়েছে।
 
	সরলার্থ: 
	ওরে শ্যাম (কৃষ্ণ) অত্যন্ত কঠোর তোর 
	মন। তোর বিরহকে সঙ্গী করে দুঃখিনী রাধা রাত্রি অতইবাহিত করে। একলা নির্জনে বসে 
	যমুনার দিকে চেয়ে আছে। অশ্রু ছড়ছে, নির্বাক, প্রাণ-মন অস্থির। গভীর অন্ধকার 
	রাত্রি, চারদিক ঝিল্লীর শব্দ, শূন্য (কৃষ্ণবিহীন) কদমতলে আলুলায়িত কেশে নিজেকে 
	ভুল কাঁদছে। সকল গৃহকাজ ত্যাগ করে কখনো মুগ্ধ হরিণীর মত চমকে উঠে, আকাশের 
	(প্রেমহীন হৃদয়াকাশ ) দিকে চেয়ে বলে, করুণ সুরে বাজে রে বাজে বাঁশি (কৃষ্ণের 
	বাঁশি)। ওরে নিষ্ঠুর শ্যাম, মথুরা থেকে দূরে- কোথায় তুই। নিদারুণ রজনী কিভাবে 
	অতিবাহিত করিস, কোথায় তোর দিন কাটে। কোথায় তোর প্রেম-পিপাসা পূরণ করিস, কোথায় 
	তোর বাঁশি বাজাস। তোর সে পীতবাস কোথায় ত্যাগ করলি, কোথায় গেল তোর বাঁকা হাসি। 
	স্বর্ণহার গলায় পরলি, ফেলে দিলি বনমালা। হৃদয়ের পদ্মাসনকে শূন্য করে, 
	স্বর্ণাসনকে করলি আলোকিত। এ দুখ চিরদিন রহল চিত্তমে। ভানু বলে ছিছি কৃষ্ণ। 
	দ্রুত আমার সাথে এসো, দেখে যাও বিরহকাতর বালিকা (রাধা)।
  
তথ্যানুসন্ধান
		ক. রচনাকাল ও স্থান:  সুনির্দিষ্টভাবে 
		জানা যায় না। 
		১২৯১ বঙ্গাব্দের ১৮ 
		আষাঢ় তারিখে প্রকাশিত হয় ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী  গ্রন্থটি। 
		
		
		ভারতী
		
		
		পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশিত 
		১৩টি 
		কবিতা ও নতুন ৮টি কবিতা নিয়ে— 
		১২৯১ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে যে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল, তার নাম দেওয়া হয়েছিল
		
		ভানুসিংহ 
		ঠাকুরের পদাবলী।
		
		 এই 
		গ্রন্থটির প্রকাশকালে রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল- ২৩ বৎসর ২ মাস। আলোচ্য গানটি 
		এই গ্রন্থেই প্রথম প্রকাশিত হয়।
 
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
গ্রন্থ:
অখণ্ড সংস্করণ, তৃতীয় সংস্করণ (বিশ্বভারতী, চৈত্র ১৪১৩), পর্যায়: ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ৪, পৃষ্ঠা: । [নমুনা]
কাব্যগ্রন্থ প্রথম খণ্ড (ইন্ডিয়ান প্রেস ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দ)। ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ৪। পৃষ্ঠা: ৩৩২-৩৩৩।
কাব্যগ্রন্থাবলী [আদি ব্রাহ্মসমাজ প্রেস, ১৩০৩। ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী। শিরোনাম 'বিরহবেদনা'। পৃষ্ঠা: ২০] [নমুনা]
স্বরবিতান পঞ্চাশত্তম (৫০, শেফালি) খণ্ডের (বিশ্বভারতী, চৈত্র ১৪১৩), গান সংখ্যা: ৪, পৃষ্ঠা ১৯-২১।
রেকর্ডসূত্র:
			প্রকাশের 
			কালানুক্রম: 
 
গ. সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি:
স্বরলিপি: স্বরলিপি নাই।
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুর ও তাল:
রাগ : ঝিঁঝিট-পাশ্চাত্য প্রভাব। তাল : ঝাঁপতাল। [রবীন্দ্রসংগীত: রাগ-সুর নির্দেশিকা, সুধীর চন্দ, প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬], পৃষ্ঠা: ৭৯।
রাগ: খাম্বাজ। [রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত, প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি, জুলাই ২০০১], পৃষ্ঠা: ১৩৭।
বিষয়াঙ্গ:
সুরাঙ্গ:
গ্রহস্বর:
লয়: