ভানুসিংহ
ঠাকুর । ভানু। ভানুসিংহ
রবীন্দ্রনাথ বৈষ্ণব কবিদের অনুকরণে কিছু পদ রচনা করেছিলেন। পদরচয়িতা হিসাবে
নিজের প্রকৃত নামের পরিবর্তে তিনি ছদ্মনাম হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন'ভানুসিংহ
ঠাকুর'। রবীন্দ্রসাহত্যে সঙ্কলিত এই পদগুলোর নাম হলো- ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী। কি
বিবেচনা করে রবীন্দ্রনাথ এই নাম নির্বাচন করেছিলেন, তার কোন প্রত্যক্ষ তথ্য পাওয়া
যায় না। কিন্তু 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'-এর সাথে 'ভানুসিংহ ঠাকুর' নামের অর্থগত মিল
আছে, এ কথা বলা যায়। যেমন-
রবীন্দ্রনাথ শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়- রবি +ইন্দ্র +নাথ
ভানুসিংহ শব্দটি ভাঙ্লে পাওয়া যায়- ভানু +সিংহ
প্রথম শব্দ হলো- রবি। এর সাধারণ অর্থ হলো- সূর্য। সূর্যের সমার্থক শব্দ তালিকার
ভানু শব্দটি পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় শব্দ -ইন্দ্র।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে ইন্দ্র হলেন দেবতাদের রাজা। রাজশক্তি বা
অধিপতির ঐতিহ্যের বিচারে ইন্দ্র শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে ভানুসিংহ-
শব্দের সিংহ হলো- পশুদের রাজা। যা অধিপতির ঐতিহ্যের বিচারে ইন্দ্রের তুল্য।
নাথ শব্দটিকে বাদ দিলে রবীন্দ্র-এর প্রতীকী নাম 'ভানুসিংহ' প্রায় সমার্থক হয়ে উঠে।
বলাই বাহুল্য পদবী হিসাবে 'ঠাকুর'-কে উভয় নামের ক্ষেত্রে সমান অর্থ বহন করে।
ভানুসিংহ
ঠাকুরের পদাবলীতে ভণিতা হিসাবে যে সকল নাম পাওয়া যায় তা হলো-
ভানু
ঐস বৃথা ভয় না কর বালা ভানু নিবেদয় চরণে [ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (গীতবিতান) ৩।১৫]
কহে ভানু অব —বুঝবে না, সখি, কোহি মরমকো বাত—[ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (গীতবিতান)১৪।১৩]
গরজে ঘন ঘন, বহু ডর পাওব, কহে ভানু তব দাস [(গীতবিতান) প্রকৃতি ৩১। ১২]
ভানু কহে— অতি গহন রয়ন অব, বসন্তসমীরশ্বাসে [ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (গীতবিতান) ১।১২]
ভানু কহে চুপি, মানভরে রহে, আও বনে ব্রজনারী [ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (গীতবিতান)১৯।১৩]
ভানু কহে, বৃকভানুনন্দিনী, প্রেমসিন্ধু মম কালা [ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (গীতবিতান)১৩।১১]
ভানু গায়— শূন্যকুঞ্জ, শ্যামচন্দ্র নাহি রে [ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (গীতবিতান) ২।১২]
ভানুসিংহ : তৃষিতনয়ন ভানুসিংহ কুঞ্জপথম চাহিয়া
[ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী
(গীতবিতান) ৫।১১]
: শ্যামকো
পদারবিন্দ ভানুসিংহ বন্দিছে
[ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী
(গীতবিতান) ৮।১২]
: ভানুসিংহ ভনয়ে, শুন কালা
[ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী
(গীতবিতান) ১৫।১৭]