বিষয়: রজনীকান্ত সেনের গান।
গান সংখ্যা:
১৩২
শিরোনাম: তব, চরণ-নিম্নে


   ভৈরবী-জলদ একতালা

তব, চরণ-নিম্নে, উৎসবময়ী শ্যাম-ধরণী সরসা,
ঊর্দ্ধে চাহ, অগণিত-মণি-রঞ্জিত-নভো-নীলাঞ্চলা
       সৌম্য-মধুর-দিব্যাঙ্গনা, শান্ত-কুশল-দরশা।
দূরে হের চন্দ্র-কিরণ-উদ্ভাসিত গঙ্গা,
নৃত্য-পুলক-গীতি-মুখর-কলুষহর-তরঙ্গা;
ধায় মত্ত-হরষে সাগরপদ-পরশে,
      কূলে কূলে করি’ পরিবেশন মঙ্গলময় বরষা।
ফিরে দিশি দিশি মলয় মন্দ, কুসুম-গন্ধ বহিয়া,
আর্য্যগরিমা-কীর্ত্তিকাহিনী মুগ্ধ জগতে কহিয়া,
হাসিছে দিগ্‌বালিকা, কণ্ঠে বিজয়মালিকা,
       নবজীবন-পুষ্পবৃষ্টি করিছে পুণ্য-হরষা।
ওই হের, স্নিগ্ধ সবিতা উদিছে পূর্ব্ব-গগনে
কান্তোজ্বল কিরণ বিতরি’, ডাকিছে সুপ্তি-মগনে।
নিদ্রালস-নয়নে, এখনও রবে কি শয়নে?
     জাগাও, বিশ্ব-পুলক-পরশে, বক্ষে তরুণ ভরসা।


ভাবসন্ধান: রাজসাহীর সভা উপলক্ষে রচিত এই গানে রাজশাহী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে।

সরলার্থ: পায়ের নিচে সুসজ্জিত (উৎসবময়ী) সরস শ্যামল পৃথিবী। মাথার উপরে তারকারূপী মণি-খচিত নীলাকাশ। যেনো দেবকন্যার মতো সুন্দর, স্নিগ্ধ, শান্ত কল্যাণময়ী। দূরে চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত গঙ্গা (পদ্মা)। তার পাপনাশী তরঙ্গ নৃত্য-গীতের মধুর ছন্দে, মত্ত আনন্দে সাগরের পানে ছুটে চলেছ। চারিদিক কুসুমগন্ধে নির্মল বাতাস আর্যগরিমা কীর্তিকাহিনির কথা মনে করিয়ে দেয়। যেন বিজয়মালিকা পরিহিতা সদাহাস্য দিগাঙ্গনা দেবী দিকে দিকে নতুন জীবনে আশীর্বাদের পুষ্প বর্ষণ করছে। দেখো, ভোরের নতুন সূর্যের স্নিগ্ধ আলো আলস্যের ঘুম থেকে জেগে উঠার আহ্বান করছে। একই সাথে কবি ঘুমন্ত মানুষকে নবজাগরণের পুলক পরশ গ্রহণ করতে আহ্বান করছেন। যার ভিতরে রয়েছে তারণ্যের উদ্দীপনা, এগিয়ে চলার ভরসা।

প্রেক্ষাপট: রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত একটি সভার জন্য এই গানটি রচনা করেছিলেন। রায় জলধর সেন এই গানটি রচনা প্রসঙ্গে বলেছেন

'রাজসাহীর লাইব্রেরীতে একটা সভা হইবার কথা ছিল। রজনী বেলা প্রায় তিনটার সময় অক্ষয়ের বাসায় আসিল। অক্ষয় বলিল, "রজনী ভায়া, খালি হাতে সভায় যাইবে। একটা গান বাঁধিয়া লও না।" রজনী যে গান বাঁধিতে পারিত, তাহা আমি জানিতাম না; আমি জানিতাম, সে গান গাহিতেই পারে। আমি, "একঘণ্টা পরে সভা হইবে, এখন কি গান বাঁধিবার সময় আছে?" অক্ষয় বলিল, রজনী একটু বসিলেই বাঁধিতে পারে।" রজনী অক্ষয়কে বড় ভক্তি করিত। সে তখন টেবিলের নিকট একখানি চেয়ার টানিয়া লইয়া অল্পক্ষণের জন্য চুপ করিয়া বসিয়া থাকিল। তাহার পরেই কাগজ টানিয়া লইয়া একটা গান লিখিয়া ফেলিল। আমি ত অবাক্। গানটা চাহিয়া লইয়া পড়িয়া দেখি, অতি সুন্দর রচনা হইয়াছে।'

গানটি এখন সর্ব্বজন পরিচিত
        তব, চরণ-নিম্নে, উৎসবময়ী শ্যাম-ধরণী সরসা,
        ঊর্দ্ধে চাহ, অগণিত-মণি-রঞ্জিত-নভো-নীলাঞ্চলা
                সৌম্য-মধুর-দিব্যাঙ্গনা, শান্ত-কুশল-দরশা।
[সূত্র: রজনীকান্ত সেন। মন্মথনাথ ঘোষ। গ্রন্থসূত্র: কান্তকবি রজনীকান্ত। অশোককুমার রায় সম্পাদিত। পাতাবাহার পাবলিকেশান প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪।]

পর্যায়: প্রকৃতি বন্দনা