বিষয়: রজনীকান্ত সেনের গান।
গান সংখ্যা:
২০১
শিরোনাম: প্রহেলিকাময় চিরন্তন


প্রহেলিকাময় চিরন্তন!
নিত্য বুদ্ধ
চিরসুপ্ত,
স্বপ্রকাশ, চিরলুপ্ত;
অবিজ্ঞেয়, অনুভূত, ভীম নিরঞ্জন!
তোমারি প্রবাহ ধরি’
নিখিল বৈচিত্র্য-তরী
ভেসে যায়, কোথা যায় নাহি নিরূপণ।
জীবন, মরণ, স্থিতি,
হর্ষ, প্রীতি, দুঃখ, ভীতি,
আনন্দ, উৎসব-গীতি, শোকের ক্রন্দন,

হে অনন্ত গরীয়ান্!
হে অখণ্ড, হে মহান্।
সকলি ও নির্ব্বিকার বক্ষের স্পন্দন!
প্রহেলিকাময় চিরন্তন!
জ্ঞানময় ওহে চিরন্তন!
অগণ্য গ্রহের মেলা
কবে কি করিবে খেলা,
কোন্ পলে কোন্ পথে করিবে ভ্রমণ,
কে কোথা পড়িবে বাঁধা,
কে কোথা পাইবে বাধা
কোন্ কোন্ গ্রহে কোথা হ’বে সংঘর্ষণ
কারণে হইবে কার্য্য
বিধিলিপি-অনিবার্য্য
উর্ব্বরতা, অনাবৃষ্টি, ভূকম্প, প্লাবন,
চেয়ে আছ স্থিরলক্ষ্যে!
সকলি ও মুক্ত চক্ষে
প্রতিভাত; যেন শুভ্র নখর-দর্পণ!
জ্ঞানময় ওহে চিরন্তন!
প্রাণময় ওহে চিরন্তন!
বিশ্ব-সজীবতা মাগি’
যে দিন উঠিলে জাগি’
অনন্তের প্রান্তে, ল’য়ে অনন্ত জীবন;
সে হ’তে নিখিল ভবে,
অবিশ্রান্ত কলরবে,
অঙ্কুরি’ উঠিছে প্রাণ মুহূর্ত্তে নূতন;
উজ্জ্বল সুষমা-ভরা,
চির-প্রাণময়ী ধরা
মধুরাস্যে, মধুহাস্যে ভাসায় ভুবন;
আনন্দ, উৎসাহ, বল,
আশা, প্রীতি, কোলাহল
ল’য়ে নিরন্তর করে চরণ-বন্দন!
প্রাণময় তুমি চিরন্তন!
মৃত্যুময় তুমি চিরন্তন!
ভবিষ্য মুহূর্ত্তগুলি
উৎকণ্ঠিত নেত্র তুলি’
বর্ত্তমানে হয় লীন, কে করে বারণ?
আঁখির পলকে হায়,
বর্ত্তমান হয়ে যায়
অতীতে অপুনর্লভ্য, চির অদর্শন!
কর্ম্মের সমীর-ভরে,
মহাসিন্ধ-বক্ষ’ পরে
জীবন-বুদ্বুদ-শ্রেণী উঠে অগণন;
মুহূর্ত্তে অকূলে ভাসি’
মিলায় যে বিম্বরাশি
তব বক্ষে, সর্ব্বগ্রাসী ওহে বিভীষণ?
মৃত্যুময় তুমি চিরন্তন!