বিষয়: রজনীকান্ত সেনের গান।
গান সংখ্যা:
২৯২
শিরোনাম: কন্যাদায়ে বিব্রত হ'য়েছে


 ঝাঁকে ঝাঁকে লাখে লাখে ঐ পাখী। সুর
মতিয়ার
কন্যাদায়ে বিব্রত হ’য়েছে বিলক্ষণ;
তাই বুঝি’ সংক্ষেপে কচ্ছি ফর্দ্দ সমাপন।
নগদে চাই তিনটি হাজার,
তাতেই আবার গিন্নী বেজার,
বলেন, এবারে বরের বাজার কসা কি রকম!
(কিন্তু) তোমার কাছে চক্ষুলজ্জা লাগে কি বিষম।
(আর) পড়ার খরচ মাসে তিরিশ,
হয় না কমে, বলে ‘গিরিশ’,
কাজেই সেটা, হ্যাঁ হ্যাঁ, বেশী বলা অকারণ;
সোনার চেন ঘড়ি, আইভরি ছড়ি,
ডায়মণ্ডকাটা সোনার বোতাম,
দিও এক সেট্, কতই বা দাম?
বিলিতি বুট, ভালো শ্লিপার, বরের প্রয়োজন;
ফুল্ এস্টকিং, রেশমী রুমাল, দিও দু’ডজন!
ছাতি, বুরুশ, আয়না, চিরুণ
ফুলকাটা সার্ট, কোর্ট পেণ্টালুন,
দু’জোড়া শাল, সার্জ্জের চাদর, গরদ সুচিকণ;
জম্‌‌‌‌কালো ব্যাপার, আতর ল্যাভেণ্ডার,
খান পনের দিশি ধুতি, রেশমী না হয়, দিও সূতী;
হ্যাদ্দ্যাখো ধরি নি ‘চশ্‌মা’
কেমন ভুলো মন!
ছেলে, ঠুলি পেলে খুশী, একটু খাটো-দরশন।
খাট, চৌকী, মশারি, গদি, এর মধ্যে নেই ‘পারি যদি’
তাকিয়া, তোষক, বালিশাদি দস্তুর-মতন;
হবে দু’প্রস্থ, শয্যা প্রশস্ত,
(আর) টেবিল, চেয়ার, আল্‌না, ডে
হাতীর দাঁতের হাত-বাক্স,
স্টীলট্রাঙ্ক খুব বড়ো দু’টো, যা দেশের চলন;
(আর) তারি সঙ্গে পুরো এক সেট্ রুপোরি বাসন।
গিন্নী বলেন, বাউটি সুটে, রূপ লাবণ্য ওঠে ফুটে,
একশ’ ভরি হ’লেই হবে একটি সেট্ উত্তম;
যেন অলঙ্কার দেখে নিন্দে করে না লোকে,
দিও বারাণসী বোম্বাই,
ফর্দ্দ কিছু হ’ল লম্বাই;
তা, তোমার মেয়ে, তোমার জামাই, তোমার আকিঞ্চন;
আমার কি ভাই? আজ বাদে কা’ল মু’দ্‌ব দু’নয়ন।
(আর) দিও যাতায়াতের খরচ,
না হয় কিছু হবে করজ,
তা’
মেয়ের বিয়ে, তোমার গরজ, তোমার প্রয়োজন;
আবার আস্‌বে কুলীন-দল, তাদের চাই বিলিতি জল,
ডজন বিশেক ‘হুইস্কি’ রেখো,
নইলে বড়ো প্রমাদ, দেখো!
কি ক’র্‌ব ভাই, দেশের আজকাল এমনি চালচলন;
কেবল চক্ষু-লজ্জায় বাধ’ বাধ’ ঠেক্‌ছে যে কেমন!
ছেলেটি মোর নব কার্ত্তিক
ভাবটি আবার খাঁটি সাত্ত্বিক,
এই বয়সে ভার ভাত্তিক, কত্তাদের মতন;
যদি দিতেন একটি ‘পাশ’, তবে লাগিয়ে দিতেন ত্রাস,
ফেল্ ছেলে, তাই এত কম পণ,
এতেই তোমার উঠ্‌ল কম্পন?
কেবল তোমার বাজার যাচাই
বকা’লে অকারণ,
দেশের দশা হেরে ‘কান্ত’ করে অশ্রু-বরিষণ!