বিষয়:
রজনীকান্ত সেনের গান।
গান সংখ্যা: ২৯৭
শিরোনাম: ভারি সুনাম ক'রেছে নিধিরাম
খাম্বাজ−কাওয়ালী। “মাতঃ শৈলসুতা”−সুর
ভারি সুনাম ক’রেছে নিধিরাম?
শোন বলি গুণ-গ্রাম;
খবরের কাগজে ক’রে ধর্ম্মমীমাংসা,
(যত) মাসিকে ও সাপ্তাহিকে পেলে প্রশংসা;
না যায় অন্ন পেটে, শুধু শাস্ত্র ঘেঁটে,
কেবল, পুরাতত্ত্বে আছেন মত্ত হ’য়ে অবিরাম।
সর্ব্বধর্ম্মসমন্বয়ে ছিলেন নিযুক্ত;
কি প্রশস্ত ধর্ম্মপথ ক’রেছেন মুক্ত!
তত্ত্ব-সুধার সিন্ধু, ব্রাহ্ম, মুসলমান, হিন্দু,
(কিন্তু) সবারি পিপাসা গেল সিদ্ধ মনস্কাম!
তিনি বলেন, হরি বল চৈতন্যের মত;
(কিন্তু) মতি রেখো প্রভু যীশুখ্রীষ্টের পদ,
বুদ্ধের পথও মন্দ নয়, নানক যে সব কথা কয়,
তার, এক একটি কথার যে ভাই ভারি ভারি দাম!
ব্রাহ্মমতে আকাশশূন্য ব্রহ্মেতে মজ,
(কিন্তু) কালী নামের নাই তুলনা, মায়েরে ভজ;
(ও যা) বলেন মহম্মদ, ভারি, বেজায় তার কিম্মত,
‘খোদাতালা আল্লা’ ব’লে কর ভাই সেলাম।
(ভজ) ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, মহেন্দ্র আর অরুণ,
(ভজ) বিশ্বকর্ম্মা, গণপতি, বায়ু, যম, বরুণ;
(ভজ) দেবদেবীদের যান, ইন্দুর, গরুড়, হনুমান,
(কর) ময়ূর, ষণ্ড, সিংহ, মহিষ, পেঁচারে প্রণাম।
(ভজ) ঋষ্যশৃঙ্গ, অষ্টাবক্র, মরীচি, ক্রতু,
(ভজ) পূলহ, পৌলস্ত, অত্রি, অঙ্গিরা, য়তু,
(পূজ) বিশ্বামিত্রে, গৌতম, অনিরুদ্ধে,
(ভজ) শ্রীদাম, সুদাম, গুহক, নন্দী, ভৃঙ্গী, গুণধাম!
(চল) গয়া, কাশী, বৃন্দাবন, কামাখ্যা, কালীঘাট,
(চল) শ্রীক্ষেত্র, নৈহাটী, শ্রীধাম, নবদ্বীপ, শ্রীপাট,
যখন যাবে হরিদ্বার, সেই রাস্তা হ’য়ে পার,
মক্কা হয়ে ‘হজ’ ক’রে ভাই, ফিরো নিজগ্রাম।
মাঝে মাঝে চার্চ্চে যেয়ো বগলে বাইবেল,
(একটা) সময় ক’রে কোরাণ সরিফ্ প’ড়ো, খুলে দেল্,
কভু গীতাটাও দেখো, আবার শিয়রে রেখো
শাস্ত্রী ম’শার ব্রাক্ষ্মধর্ম্ম-তত্ত্ব দু’একখান।
অহিংসা পরমধর্ম্ম, খেয়ো নিরামিষ;
আবার গোপনে রমজানের কাছে নিয়ো দু’এক ডিস্;
হরিনামের মালা, হাতে ফিরিয়ো দু’বেলা,
সন্ধ্যা ক’রো, নামাজ দিয়ো, কেউ হবে না বাম।
ক’রো, বাইশ রোজা, একাদশী, হইয়ে শুচি,
খেয়ো শুক্তিনী ও ফাউলকারী, বিস্কুট ও লুচি;
চাই, টিকিটে মজবুত, যেন ফোঁটায় থাকে যুত,
ক’রো, ঈদ, মহরম, চড়ক, আর দোল, হইয়ে নিষ্কাম।
হুইস্কিতে তিলতুলসী করিয়ে অর্পণ,
‘জগৎ তৃপ্ত’ ব’লে গিয়ে ক’রো পিতার তর্পণ;
ক’রে কৃষ্ণে নিবেদন, ক’র্বে বীফষ্টিক্ ভোজন;
রেখো বদ্না, কমোড, কোশাকুশী আদি সরঞ্জাম।
খেয়ো প্রকাশ্যেতে আতপান্ন, গোপনে ফাউল;
খোদার নামে দরবেশ সেজো, হরিনামে বাউল।
দীন কান্ত বলে ভালো, নিধির বলিহারি যাই!
এই অপূর্ব্ব খিচুড়ী খেয়ে, আমি ত’ গেলাম!