বিষয়: সলিল চৌধুরীর গান
গান সংখ্যা: ২৬৯

একদিন আমরা সবাই মিলে
সূর্য দেখব বলে চললাম---টাইগার হিল।
টাইগার হিল থেকে সূর্য ওঠা দেখা ভীষণ মজার !
সোনার থালায় ভরে, আবীর গুলাল নিয়ে
ফাগুয়ার ফাগ খেলা খেলতে খেলতে না কি সূর্য আসে,
তাই দেখব বলে, সকাল হবার আগে
আমরা ক'জন মিলে চললাম
টাইগার হিল---টাইগার হিল ॥

হিমালয় যেন মৌন ঋষির মতো মগ্ন ধ্যানে,
অতন্দ্র কত যে শতাব্দি।
কত সূর্যের অস্ত উদয়,
কত রাজ্যের সৃষ্টি প্রলয়,
দেখে দেখে আজ তাই তন্দ্রাবিহীন।
আমাদের স্বপ্নের সেই সব দিন,
নিশ্চয় দেখবেই, দেখবে বলে
জেগে আছে হিমালয়।
হিমালয়---হিমালয় ॥

হঠাৎ কালো কালো মেঘ ধেয়ে এল,
ছেয়ে গেল তারা আকাশে !
শত-শত যেন নাগিনীর ফণা
বিষাক্ত শ্বাসে বাতাসে !
সনন-সনন, তুফানে তুফানে
ভীষণ-ভীষণ, ঘন-বরষণে
প্রলয়ের যেন আভাসে !
কাঁপায়ে ধরণী ত্রাসে !

নিভে গেল সেই আগামী সূর্য,
মুছে গেল হিমালয়,
শীতে থরোথরো আমরা ক'জন
খুঁজি কোথা আশ্রয় ?

তারপর
তারপর আমরা সবাই মিলে
ঘরের মুখে ফিরে চললাম ভগ্ন হৃদয়
টাইগার হিল থেকে সূর্য ওঠা
দেখা হল না সেবার।
হঠাৎ তাকিয়ে দেখি, আলোর ছটায় ভরে
ছোটো এক সূর্য পশ্চিমেতে যেন হচ্ছে উদয় !
তাই লক্ষ্য করে
আবার আশায় ভরে
আমরা ক'জন মিলে চললাম।
সূর্য নতুন---সূর্য নতুন ॥

দেখলাম---
সে নতুন সূর্য আর কিছু নয়
হাতে নিয়ে হ্যারিকেন লণ্ঠন,
আমাদের মা দাঁড়িয়ে আছেন
পথ দেখাবেন বলে আমাদের !
সেদিনের সকালের সূর্য নতুন,
আমাদের মা'র হাতের সেই লণ্ঠন !
আজও আঁধারেতে পথ
দেখায় মায়ের হাতের সেই লণ্ঠন !
আজও আঁধারে পথ যে দেখায়
মায়ের হাতের, সূর্য নতুন !
সেই লণ্ঠন---সেই লণ্ঠন ॥


তথ্যসূত্রঃ
  • সলিল চৌধুরী রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড, প্রথম প্রকাশ অগ্রহায়ণ ১৪২০, দে'জ পাবলিশিং, ১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলকাতা ৭০০০৭৩: পৃষ্ঠা ২৫৫-২৫৬