বিষয়: সলিল চৌধুরীর গান
গান সংখ্যা: ৩৮৩
চলচ্চিত্রের গান

কোনো এক বনের পশুর কথা তোমায় শোনাই শোনো
আজব কথা নয় সে নয়,
কী করে হিংস্র ভীষণ সিংহকে সে
ফেললো মেরে, ফন্দি করে
কাহিনি শোনাই শোনো।

একদিন জঙ্গলে জানোয়ার জন্তরা
মিলে মিশে নাচে আর গায়রে,
হাতি, ঘোড়া, ভল্লুক, হনুমান, উল্লুক
খরগোস আর তার মায়েরে।

আমরা জানোয়ার ধারি না তো ধার
জঙ্গলে যা পাই তা খেয়ে করি জীবন পার।
ঝগড়া করি না, বিবাদ করি না
মিথ্যে বলি না, করি না অসৎ ব্যবহার ॥

ওরে ব্যাটা পশুরা, কী যে গাস্‌ বে-সুরা
কানে তালা ধরে মারা যাইরে।
দেব ঘাড় মুটকে পিণ্ডিটা চটকে
হাউ মাউ খাউ কাকে খাইরে?

ও মাগো মা কোথায় গেলি মা,
শূন্য বনে, একা একা থাকার চেয়ে, ভালো যে মরা ॥

না কেঁদো না, অন্যায় জুলুম যারা করে,
মানুষ যেমন সহ্য করে,
পশুদের তা শোভা পায় না,
নাও প্রতিশোধ ॥

সাত ভাই জন্তু জাগোরে জাগোরে
গুম সুম থেকো না সিংহেরই ডরে।
একটি খরগোস বোন আমি তোদের
আমার মা কে খেলে
চলো সবাই মিলে
ভুলে ভয়ের যত বালাই,
দেব সিংহকে ধোলাই !

তার চেয়ে কর সত্যাগ্রহ
প্রত্যক্ষ সংগ্রামে যাবার
মোটেই ভালো নয় আগ্রহ।

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে
খরগোস একলা চল্‌ রে।

দুরন্ত খরগোস, যাস না যাস না
সিংহ কাছে পেলে খানখান খানখান
টুকরো টুকরো করে ফেলবে খেয়ে
শোনরে মানা !

সিংহী মামা তোমার জবাব নাই
যেমনি গোঁফের জোড়া, তেমনি কেশর !
আহা কী মিষ্টি গন্ধ যে গায়ে তোমার,
চারটি থাবায় তোমায় সেলাম জানাই !
সাবাস !

কিন্তু !
শুনো শুনো পশুরাজ শুনো দিয়া মন
বিচিত্র কাণ্ডের কথা করি বর্নন, শুনো শুনো শুনো।

একা বনের পথে আমি
আসতে ছিলেম যবে,
আর একটা প্রকাণ্ড সিংহ রাস্তা রুখে তবে বলে
যাচ্ছিস কুথা?

যাচ্ছিস কুথা---বললাম, হেথা আমার সিংহী মামা থাকে
শুনে বললে এ জঙ্গলে অন্য সিংহ থাকলে
তাকে আনত ডেকে।

তাকে আনত ডেকে---তার মুণ্ডুটা চটকে, আচার করে,
হরিণ মাংসের সঙ্গে মেখে চেখে চেখে খাব,
তখন জমবে ভালো
তখন জমবে ভালো !

দাঁড়ারে সিংহ ব্যাটা, এত তোর বুকের পাটা
আমার গাটায় শেষ বেলাটায় ঢুকলি এসে !
দমাদম মারব লাথি, ভেঙে তোর বুকের ছাতি
কলজে পাতির রক্ত খাব চুষে চুষে !
দাঁড়ারে সিংহ ব্যাটা !
কোথায় সে?
ঐ দেখো সিংহ মশাই কুয়োর ভেতর বসে আছে
ওর সাথে লড়াই করে পারবে নাকো, ওঠো গাছে।
কি? ওরে বাবা রে !

বা বাহবা সাবাস সাবাস দুরন্ত খরগোস
একী এই সিংহ মেরে জঙ্গলেতে আনলি রে সন্তোষ,
সবার শান্তি পরিতোষ ॥


তথ্যসূত্রঃ
  • সলিল চৌধুরী রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড, প্রথম প্রকাশ অগ্রহায়ণ ১৪২০, দে'জ পাবলিশিং, ১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলকাতা ৭০০০৭৩: পৃষ্ঠা ৩৫৫-৩৫৮