বিষয়: সলিল চৌধুরীর গান
গান সংখ্যা: ৪

কোনো এক গাঁয়ের বধুর
কথা তোমায় শোনাই শোনো
রুপকথা নয় সে নয়,
জীবনের মধুমাসের কুসুম ছিঁড়ে
গাঁথা মালা শিশির ভেজা
কাহিনি শোনাই শোনো ॥

একটুখানি শ্যামলঘেরা
কুটিরে তার স্বপ্ন শত শত,
দেখা দিত ধানের শীষের ইশারাতে
দিবাশেষে কিষান যখন আসত ফিরে,
ঘি মৌ মৌ আম কাঁঠালের
পিঁড়িটিতে বসত তখন,
সবখানি মন উজাড় করে
দিত তারে কিষানি
সেই কাহিনি শোনাই শোনো।।

ঘুঘু ডাকা ছায়ায় ঢাকা
গ্রামখানি কোন মায়া ভরে,
শ্রান্তজনে হাতছানিতে
ডাকত কাছে আদর করে
সোহাগ ভরে।
নীল শালুকে দোলন দিয়ে রঙ ফানুসে ভেসে
ঘুমপরী সে ঘুম পাড়াত
এসে কখন জাদু করে,
ভোমরা যেত গুনগুনিয়ে
ফোটা ফুলের পাশে।

আকাশে বাতাসে সেথায় ছিল
পাকা ধানের বাসে বাসে সবার নিমন্ত্রণ
সেখানে বারো মাসে তেরো পাবন
আষাঢ় শ্রাবণ-কি বৈশাখে
গাঁয়ের বধূর শাঁখের ডাকে,
লক্ষ্মী এসে ভরে দিত
গোলা সবার ঘরে ঘরে
হায় রে কখন এল শমন
অনাহারের বেশেতে
সেই কাহিনী শোনাই শোনো ॥

ডাকিনী যোগিনী এল শত নাগিনী
এল পিশাচেরা এল রে
শতপাকে বাঁধিয়া নাচে তাতা তাধিয়া
নাচে তাতা তাধিয়া নাচে রে।
কুটিলের মন্ত্রে শোষণের যন্ত্রে
গেল প্রাণ শত প্রাণ গেল রে
মায়ার কুটিরে নিল রস লুটিরে
মরুর রসনা এল রে॥

হায় সেই মায়াঘেরা সন্ধ্যা
ডেকে যেত কত নিশিগন্ধা,
হায় বধু সুন্দরী কোথায় তোমার সেই
মধুর জীবন মধুছন্দা?
হায় সেই সোনাভরা প্রান্তর
সোনালি স্বপন ভরা অন্তর,
হায় সেই কিষানের কিষানির জীবনের
ব্যথার পাষাণ আমি বহি রে॥

আজও যদি তুমি
কোনো গাঁয়ে দেখো ভাঙা কুটিরের সারি,
জেনো সেইখানে সে গাঁয়ের বধূর
আশা স্বপনের সমাধি ॥