বিষয়: সলিল চৌধুরীর গান
গান সংখ্যা: ৩৫৯
চলচ্চিত্রের গান

শুনো শুনো গো সবে, শুনো দিয়া মন
বিচিত্র কাহিনি এক করি বরণন।
এক দেশে এক বনের ধারে
ছোট্ট নদীর তীরে
ছিল এক রাখাল ছেলে
এক ছোটো কুটিরে।
আপন বলে তার
কেউ ছিল না দুনিয়ায়
সারাটি দিন ধেনু চরাত বনে।
থামায়ে ডাকাডাকি
শুনিত পশুপাখি
যখন বাজাত বেণু
নিজেরেই মনে।
পশুপাখি, হরিণ, হাতি
সাথি ছিল তার
সঙ্গে তাদের হেসে খেলে
দিন যে যেত তার।
বুঝত সে তাদেরই কথা
তারা বুঝত তার
এমনি করে কয়েক বছর
হয়ে গেল পার।
হঠাৎ কী হল মনে
ভাবল রাখাল কী কারণে
মানুষের সঙ্গ বিনা
আর থাকা না যায়।
যা ছিল ধূলি কড়ি
তাই নিয়ে সে দিল পাড়ি
যাবার আগে সবার কাছে
নিল সে বিদায়।
হাতি প্রথমে কেঁদে বলল
থেকে যাও !
গরু, বাছুর, ছাগল সবাই
বলল সঙ্গে নাও !
এর পরে পাখিরা এল
সকলে দল বেঁধে,
বলল মোরা গান শুনিয়ে রাখব তোমায় বেঁধে !
কিন্ত সে রাখালের মনে
কী হয়েছিল কে জানে?
গেল সে ইস্টিশনে
বাধা না মেনে।
রেলের গাড়িতে চড়ে
গেল সে দূর শহরে,
সঙ্গী-সাথি, পশু-পাখি
ফেলে পিছনে।
শহরে এসে রাখালের
লেগে গেল তাক !
বিরাট বিরাট বাড়ি গাড়ি
কত না হাঁক ডাক।
মানুষে মেশিনে সেথা
চলে লেন-দেন,
আকাশে সেখানে উড়ে বেড়ায় এরোপ্লেন।
সেই শহরের রাজমহলের
এক কোণে এক আস্তাবলে
ঘোড়া দেখাশোনার ছলে
পেয়ে গেল কাজ,
কিন্তু সে রাখালের ছেলে
জঙ্গলেতে থাকার ফলে
মানুষে কী কথা বলে
ভুলে গেছে আজ !
তার ভাষাও কেউ বোঝে না
করে হাসাহাসি !
মনের দুঃখে রাখাল ছেলে
বাজায় বসে বাঁশি।
বাঁশি শুনে সেই শহরের
যত কুকুর ছিল,
রাখাল ছেলের সঙ্গে তাদের
ভারি দোস্তি হল।
কিন্ত বাঁশির গুণপনার
ভক্ত ছিল আর এক জনা
সেই প্রাসাদের রাজার কন্যা
চম্পাবতী নাম।
রাখাল ছেলের আগোচরে
রোজ নিশীথে তার শিয়রে
একশো চাঁপা ফুলের গোড়ে
দিয়ে যেত দাম।
কিছুই জানে না রাখাল
শুধু মনে ভাবে,
সরস্বতীর আশীর্বাদের
ফুল বুঝি বা হবে।
এর পরে---এক রাতে হঠাৎ
ভেঙে যায় ঘুম !
দ্যাখে চম্পাবতী শিয়রে তার
দাঁড়িয়ে নিঝুম।
অগাধ রূপের রাশি,
মুখে মধুর হাসি,
বলে তোমার বাঁশির
আমি যে দাসী।
ও গো রাখাল ছেলে
কোন্‌ সে দেশে খুঁজে পেলে
এ কোন্‌ সুরের জালে
বাঁধলে গো আসি?
বুঝল না সে রাখাল ছেলে
রাজকুমারীর ভাষা
রইল চেয়ে বোকার মতন
দু'চোখ ভাসা ভাসা।
রাজকুমারী ভাবলো বুঝি
কোন্‌ দেশী এ চাষা !
চলে গেল ধীরে ধীরে
মুখে তার হতাশা।
এর পরে এক রাজার কুমার
"অ্যাম্বাসাডর" গাড়ি চড়ে তার
এল জিতে নিল কন্যার
কোমল হৃদয়।
বলল চম্পাবতী হাসি
ওগো রাখাল সন্ন্যাসী
এবার তুমি বাজাও বাঁশি
দাও করে বিদায়।
সেই প্রাসাদে বন্দি ছিল
এক যে খাঁচার টিয়ে
বলল রাখাল ছেলে শোনো
যা বলি মন দিয়ে---
“ফিরে যাও ফিরে যাও...বনে ফিরে যাও...”
যাও ফিরে যাও
বনে তোমার
কেউ বুঝবে না কথা তোমার,
মানুষের ব্যাপার-স্যাপার
আলাদা রকম।
এর পরে যা হবার হল,
রাখাল ছেলে চলে গেল
আমার কথাটি ফুরাল
কাহিনি "খতম"।
বিদায় আমিও নিলাম
করিয়া প্রণাম !
যেন চিরসুখী হয় দম্পতি
পুরে মনস্কাম!
এবার সবাই মিলে প্রাণ খুলে ভাই
বলো রাম রাম ॥


তথ্যসূত্রঃ
  • সলিল চৌধুরী রচনা সংগ্রহ প্রথম খণ্ড, প্রথম প্রকাশ অগ্রহায়ণ ১৪২০, দে'জ পাবলিশিং, ১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলকাতা ৭০০০৭৩: পৃষ্ঠা ৩৩১-৩৩৪