সলিল চৌধুরীর গান
৫
আয়রে ও আয়রে
ভাইরে ও ভাইরে
ভাই বন্ধু চল যাইরে
ও রাম রহিমের বাছা
ও বাঁচা আপন বাঁচা
চলো ধান কাটি আর কাকে ডরি
নিজ খাবার নিজে ভরি, কাস্তেটা শানাই রে।
এই মাটিতে কলিজার আশায় স্বপনের বীজ বুনি
আর চোখেরি জল সেচ দিয়ে ফসলের কাল শুনি
ক্ষেতের আলে আলে আজ সোনালী ঢেউ খেলে
আহা মাটি মাতা দুই হাতে অন্ন চালে
ফের ঘরে ঘরে নবান্নে বই হবে কি রোশনাইরে।
আহা কার ঘরে জ্বলেনি দীপ কে আছ আঁধারে
আহা কার বাছার জোটেনি দুধ আছ অনাহারে
আয় আয় মাটির টানে কণ্ঠ ভরি গানে
মাটি মোদের মাতা আমরাই তো বিধাতা
এই মাটিতে নবজীবনের রঙমহলে নাইরে।
প্রাসঙ্গিক পাঠ: সলীল চৌধুরী তেভাগা আন্দোলন উপলক্ষে এই গানটি রচনা করেছিলেন। বর্তমানে যে গানটির যে আদি শ্রবণ নমুনা পাওয়া যায়, সেটি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সে কণ্ঠে ধৃত হয়ৈছিল।
গানটির আদি রূপ ছিল
আয়রে ও আয়রে
ভাইরে ও ভাইরে
ভাই বন্ধু চল যাইরে
ও রাম রহিমের বাছা
ও বাঁচা আপন বাঁচা
চলো ধান কাটি আর কাকে ডরি
নিজ খাবার নিজে ভরি, কাস্তেটা শানাই রে।
(এই) চাষী হবে জমির মালিক স্বরাজ হলে শুনি
এখন মালিক যত ঘুঘু শালিক পেশাদারি খুনি
আর নেতা বড় বড়, সব বক্তৃতাতে দড়
এখন নিজ হাতে ভাগ্য গড়ার এসেছে সময় রে।
লাল বাঁদরের পোষা হাতির অত্যাচারে কত
(এই) ভেঙেছে ঘর মরেছে ভাই মা-বোন লক্ষ শত
ঐ কমলাপুর বড়া, আর কাকদ্বীপ ডোঙ্গাজোড়া
এসেছে ডাক চলোনা সবাই সোনা তুলি ঘরে।
ও গাঁয়ের যত জোয়ান মরদ লাঠি নিও হাতে
ঐ খুনে রাঙা ঝান্ডা যেন থাকে সবার সাথে
আর দুশমন যদি আসে, যেন চোখের জলে ভাসে
যেন লুটে খাবার ক্ষুধা তাহার মেটে একেবারে।
ও গাঁয়ের যত মা-বোন আছে, তোমরা থেকো ঘরে
ঐ আঁশবটি আর কাটারিটা রেখো হাতে করে
যেন দালাল বেইমান যত, পায় শিক্ষা উচিত মতো
(এই) বাংলাদেশের মা-বোন কত শক্তি হাতে ধরে।
সলিল চৌধুরীর সংগ্রামী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছিল গানটিতে। ভারতীয়
গণনাট্য সংঘের বম্বে অধিবেশনে সলিল চৌধুরী এই গানটিই নিজেই গেয়েছিলেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে
তিনি যখন রেকর্ড করানোর ব্যবস্থা নিলেন, তখন গানের বক্তব্য কিছুটা নরম করেন। তাছাড়া কংগ্রেস সরকারের গ্রহণযোগ্য না
হলে, হেমন্তবাবু গান করতে অস্বীকার করেন। এবং রেকর্ড কোম্পানীও ব্যবসায়ীক স্বার্থে
রেকর্ড প্রকাশ নাও করতে পারে। তাই গানটিকে তিনি কিছুটা পরিবর্তন করেন।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে সলিল চৌধুরী তাঁর ‘ঘুম ভাঙার গান’ ক্যাসেটে এই গানটি স্থান
পেয়েছে।
প্রাসঙ্গিক তথ্য: এটি একটি ব্যাঙ্গাত্মক গান।
প্রেক্ষাপট: তেভাগা আন্দোলন উপলক্ষে গানটি রচিত।
সুরকার: সলীল চৌধুরী