১৭৩০
রাগ: নির্ঝরিণী। তাল : ত্রিতাল
রুম্ ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্ রুম্ ঝুম্ কে বাজায়
জল
ঝুমঝুমি। ॥
ভাবসন্ধান: নব রাগমালিকার দ্বিতীয় গান নজরুল নির্ঝরিণী রাগে ত্রিতালে নিবদ্ধ।গীতিনাট্যের কারণে এই গানের শুরুতেই রয়েছে- নির্ঝরিণী তথা ঝর্নাধারার ধ্বনি মাধুর্যে উদ্বেলিত তীর-ধনুক হাতে বন-কিশোরের গেয়ে উঠা গান। নব রাগমালিকা গীতিনাট্যের শুরুর দুটি পংক্তিতে তারই আভাষ মেলে এই ভাবে-
'নিবিড় অরণ্য মাঝে বয়ে যায় ঝর্ণাধারা। অবিচ্ছিন্ন ঝর ঝর সুরের প্রবাহে পাখির পালক বাঁধা তীর-ধনুক হাতে গেয়ে উঠে ঝর্ণা তীরে বনের কিশোরঃ'
এই বর্ণনাটুকু এই গানের ভূমিকা হিসেবেও গ্রহণ করা যায়। এই ভূমিকার পরেই
'বন-কিশোর'-এর গানে উদ্ভাসিত হয় 'ঝর্নার ধ্বনি ও রূপসৌন্দর্য। এ গানের সুরকে বাদ
দিলেও, শুধু বাণী হয়ে উঠে এক অনির্বচনীয় নান্দনিক অভিব্যক্তি। বনকিশোরের এই গানে
আমরা পাই অরণ্য-নির্ঝরের ধ্বনিচিত্র। যা মনের গভীর তলে দর্শন ও শ্রবণের এক নান্দনিক
চিত্র। যে শুধু দেখার নয়, শুধু শোনার নয়। শধুই অনুভবের।
গানটি শুরু হয়েছে উচ্ছল ঝর্নার চলমান মধুর ধ্বনির মোহিত ধ্বনি সৌন্দর্যের কথা। কবি
কল্পনায় তা জল-ঝুমঝুমী। গানটির প্রথম পংক্তির 'রুম্ ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্ রুম্ ঝুম্',
অনুপ্রাসের ধ্বনি-প্রবহমানতার ধ্বনিমাধুর্যে অলঙ্কৃত হয়ে উঠে। অবিরাম জল-ঝুমঝুমীর
শব্দে ঘুমন্ত অরণ্য জেগে উঠে। বনের হরিণী রঙের খেলায় মেতে উঠে, পুষ্পকোড়ক বর্ণিল দল
মেলে দেয়, বনকোকিলের কুহু ধ্বনিতে ভরে উঠে, গাছের পাতার শব্দও হয়ে উঠে ঝিরি ঝিরি
বাতাসের সাথে মিশে বীণার মধুরধ্বনি। সব মিলিয়ে অরণ্য হয়ে উঠে ধ্বনি ও দৃশ্যের
মোহনীয় আবেশে নান্দনিক। এই আবেশে অরণ্যকে উদ্বেলিত করে রাখালিয়াকে। তার বাঁশির সুরে
লাগে জল-ঝুমঝুমীর ছোঁয়া, পল্লীপ্রান্তর আবেশিত হয়, রোমাঞ্চিত হয়।