২৩২.
রাগ: ভৈরবী,
তাল:দাদ্রা
তুমি আমার সকাল বেলার সুর
হৃদয় অলস-উদাস-করা অশ্রু ভারাতুর॥
ভোরের তারার মত তোমার সজল চাওয়ায়,
ভালোবাসার চেয়ে সে যে কান্না পাওয়ায়
রাত্রি-শেষের চাঁদ তুমি গো বিদায়-বিধুর॥
তুমি আমার ভোরের ঝরা ফুল
শিশির-নাওয়া শ্রভ্র-শুচি পূজারিণীর তুল।
অরুণ তুমি,
তরুণ তুমি,
করুণ তারো চেয়ে
হাসির দেশে তুমি যেন বিষাদ-লোকের মেয়ে,
তুমি
ইন্দ্র-সভার মৌন-বীণা নীরব
নূপুর॥
ভাবসন্ধান: মধুর মিলন রাতি শেষে, আসে ভোরের বিদায়বিধূর মহূর্ত। কবি এই বেদনাকে
হৃদয়- অবসিত করা বেদনাবিধূর সকাল বেলার সুর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাত্রি শেষের
তারা যেমন রাতের অভিসার শেষে ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে বিরহবিধূর হয়ে আলো ছড়ায়, তেমনি
প্রিয়তমার সজল চোখের চাওয়া। সে দৃষ্টিতে ভালোবাসার আনন্দরসের চেয়ে করুণ রসই প্রবল
হয়ে হয়ে কবিচিত্তকে আবেশিত করে। কবি সে দৃষ্টিতে খুঁজে পান রাত্রির-শেষের
বিদায়বিধূর চাঁদের বেদনা।
বেদনার শিশিরে ধোয়া রাত্রি শেষের ফুল যেমন পূজারিণীর কাছে পূত-পবিত্র, প্রেয়সীও
তাঁর কাছে তেমনি। কবি প্রেয়সীকে অনুভব করেন নব সূর্যের তরুণ, কিন্তু বিদায় বেলায়
প্রয়সীর সেই মূর্তিই করুণ হয়ে ধরা দেয়। বিদায় সন্ধিক্ষণে কবির কাছে মনে প্রেয়সীকে
মনে হয় আনন্দলোকে থাকা বিষাদলোকের মেয়ে। যেনো দেবরাজ ইন্দ্রের সঙ্গীতসভার স্তব্ধ
বীণা, অপ্সরার নীরব নূপুর।
এই গানটির বাণী আনন্দ ও বেদনা রসের দ্বন্দ্বে এক অপূর্ব দ্বৈত অনুভূতির মধ্য
নান্দনিক রূপের জন্ম দেয়। প্রেয়সী কাছে ছিল, আছে এবং থাকবে না। এই তিনটি দশায় পাওয়া
এবং হারানোর দ্বৈত অনুভূতি হৃদয়কে যেভাবে ভাবে অলস-উদাস করে তোলে, স্থায়ীর সেই
ভাবটিই গানের অন্তরা, সঞ্চারী, আভোগকে আনন্দ ও বেদনা রসের দ্বন্দ্বে অভিষিক্ত করে।
১. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
২. রেকর্ড সূত্র : ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে এইচ.এম.ভি. রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। রেকর্ড নং- এন. ১৭৪০২.। শিল্পী ছিলেন সন্তোষ সেনগুপ্ত। সুর করেছিলেন শৈলেশ দত্তগুপ্ত।
৩.
রচনাকাল :
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না।
১৯৩৯
খ্রিষ্টাব্দের
ডিসেম্বর মাসে এইচ.এম.ভি.
রেকর্ড
কোম্পানি গানটি প্রথম রেকর্ড করে।
সেই অনুযায়ী, ধারণা করা যায় যে,
গানটি নজরুল ইসলামের ৪০ বৎসর বয়সে প্রকাশিত হয়েছিল।
৪. প্রাসঙ্গিক পাঠ :
৫. সুরকার: