বিষয়:
নজরুল
সঙ্গীত।
গান সংখ্যা : ৬০৫.
শিরোনাম: প্রিয় এমন রাত
যেন যায় না বৃথাই
পাঠ ও পাঠভেদ:
রাগ: ভৈরবী। তাল: কাহারবা
প্রিয় এমন রাত যেন যায় না বৃথাই
পরি চাঁপা ফুলের শাড়ি খয়েরী টিপ,
জাগি বাতায়নে জ্বালি আঁখি প্রদীপ,
মালা চন্দন দিয়ে মোর থালা সাজাই॥
তুমি আসিবে বলে সুদূর অতিথি
জাগে চাঁদের তৃষা লয়ে কৃষ্ণা তিথি,
কভু ঘরে আসি কভু বাহিরে চাই॥
আজি আকাশে বাতাসে কানাকানি,
জাগে বনে বনে নব ফুলের বাণী,
আজি আমার কথা যেন বলিতে পাই॥
ভাবসন্ধান:
কোনো এক বিরহিণী, তাঁর প্রবাসী প্রিয়জনের প্রতীক্ষা আছে। সে আসবে বলে,
বিরহিণী তার প্রেমের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। প্রিয়ের জন্য নিজেকে সাজিয়েছে অপরূপা
করে। চাঁপা রঙের শাড়ি, খয়েরি টিপ দিয়ে সে শ্রীময়ী হয়েছে। প্রেমিককে বরণ করার
জন্য মালা-চন্দনের থালা সাজিয়ে, সে বাতায়নে আঁখি প্রদীপ মেলে জেগে বসে আছে। এত
আয়োজন এত প্রতীক্ষা যেন বৃথা না হয়, সদাই তার আশঙ্কা। আশঙ্কা তার প্রিয় পুরুষ
যদি না আসে, আর এ কারণে যেন তার এর বাসর সজ্জা নিস্ফল না হয়ে যায়, স্থায়ীতে এমন
ভাবই ফুটে উঠেছে।
প্রথম অন্তরাতে বিরহিণীর মিলনের আকাঙ্ক্ষাজনীত অস্থিরতা তীব্রভাবে ফুটে উঠেছে।
তমশায় আচ্ছন্ন কৃষ্ণ পক্ষ যেমন কাঙ্ক্ষিত শুল্কপক্ষের সাথে মিলনের জন্য
প্রতীক্ষায় থাকে। প্রেমিক-বিহীন প্রেমিকার বিরহিণী জীবন ছিল কৃষ্ণপক্ষের মতোই।
চন্দ্ররূপী প্রেমিকার আগমন, তার প্রতীক্ষিত জীবনে যেন শুক্লপক্ষের আবির্ভাব।
কিন্তু বিরহিণীর কাছ থেকে প্রেমিক তখনও সুদূরে। তাই নিজেকে স্থির রাখতে না
পেরে, সে পথপানে চেয়ে থাকার ক্লান্তি নিয়ে কখনো ঘরে ফিরে আসে, কখনো প্রবল
আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাইরের দিকে চায়। প্রথম অন্তরার এই অস্থিরতার ভিতর দিয়ে শেষ
হলেও, দ্বিতীয় অন্তরাতে প্রেমিকা ভিন্ন রূপে নিজেকে ভাবে।
দ্বিতীয় অন্তরার প্রেমিকার ভাবনা, প্রেমিক এলে কি অভিব্যক্তিতে সে নিজেকে
প্রকাশ করবে। কি কথা হবে তার সাথে। আজ যেন তার প্রেমের যেন আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে
গেছে। সে কথাই যেন জেগে আছে ফুলে ফুলে তারই সাথে। সে কথা কানাকানি চলছে রাত্রির
বাতাসে, ফুলে ফুলে। এত অস্থিরতা এত উৎকণ্ঠার ভিতরেও, বিরহিণী প্রার্থনা করে,
যেন, সে তার মনের কথাটি, তার প্রেমিকাকে বলতে পারে। এতকিছুর ভিতর দিয়ে.
বিরহিণীর একান্ত আকাঙ্ক্ষা স্থায়ীতে মুখরিত হয়ে উঠে- 'প্রিয় এমন রাত যেনো যায়
না বৃথাই'।
তথ্যানুসন্ধান: