৬৭১.
রাগ:
বৃহন্নট-কেদারা,
তাল: একতাল
দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু,
দুস্তর পারাবার হে !
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার॥
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ
−
ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত।
কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত,
এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার॥
তিমির রাত্রি, মাতৃ-মন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান !
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার॥
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ,
কাণ্ডারি, আজি দেখিব তোমার মাতৃ-মুক্তি-পণ।
'হিন্দু না ওরা মুসলিম'
−
ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন,
কাণ্ডারি, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র॥
গিরি-সঙ্কট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ
−
পশ্চাৎ পথ যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ।
কাণ্ডারি, তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি'
−
নিয়েছ যে মহাভার॥
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান
−
আসি' অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
!
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ,
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কাণ্ডারি হুঁশিয়ার॥
ভাবসন্ধান:
১. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
সুর-মুকুর, (ডি. এম. লাইব্রেরী, জ্যৈষ্ঠ ১৪০৬। মে ১৯৯৯) -এর ১ম গান। পৃষ্ঠা: ৫-৮।
২. রেকর্ড সূত্র : ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে এইচ.এম.ভি. রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করে। রেকর্ড নং- এন. ২৭৬৬৬.। শিল্পী ছিলেন সত্য চৌধুরী।
উপলক্ষ
: গানটি ১৩৩৩ সালের ৬ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বঙ্গীয়
প্রাদেশিক সম্মেলনের জন্য রচিত এবং কবি কর্তৃক গীত।
[সূত্র:
নজরুল সঙ্গীত
নির্দেশিকা। ব্রহ্মমোহন ঠাকুর
(নজরুল ইন্সটিটিউট, জ্যৈষ্ঠ ১৪১৬। মে ২০০৯)
-এর ১৩৭৯ সংখ্যক গান।
পৃষ্ঠা: ৩৭৬]।
৩. রচনাকাল ও স্থান: ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ৬ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে 'কৃষ্ণনগরে' অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের জন্য গানটি রচিত এবং কবি কর্তৃক গীত হয়েছিল। এই সময় কাজী নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ২৭ বৎসর।
৪.
প্রাসঙ্গিক পাঠ:
নজরুল স্বরলিপি, পঞ্চদশ খণ্ড, (হরফ প্রকাশনী, পৌষ
১৪১৩। জানুয়ারি ২০০৭) খণ্ডে গানটির সুরান্তর পাওয়া যায়। নজরুলের মূল রচনায়
অতিরিক্ত একটি স্তবক রয়েছে। এই স্তবকটি হলো-
কাণ্ডারী ! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর
বাঙালীর খুনে লাল হ'ল যেথা ক্লাইবের খঞ্জর।*
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর।
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়ে পুনর্বার।
এই স্তবকটি নজরুল রচনাবলী ও সুর-মুকুর,
(ডি. এম. লাইব্রেরী, জ্যৈষ্ঠ ১৪০৬।
মে ১৯৯৯)-এ আছে। কিন্তু
নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ,
(নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২) -এর
পাঠে এই স্তবকটি বাদ দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
৫.
সুরকার:
ডি.এম.
লাইব্রেরী থেকে ১৩৪১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে 'সুর-মুকুর' নামে যে স্বরলিপি
গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়, তাতে সুরকার হিসেবে উল্লেখ আছে—
কাজী নজরুল ইসলাম। উল্লেখ্য, এই সুর অনুসারে স্বরলিপি করেছিলেন—
নলিনীকান্ত সরকার। কিন্তু,
১৯৪৭
খ্রিষ্টাব্দের
এপ্রিল মাসে
এইচ.এম.ভি. রেকর্ড কোম্পানি গানটির প্রথম
যে রেকর্ডটি প্রকাশ করে, তার সূত্রে জানা যায়—
গানটির সুরকার ছিলেন নিতাই ঘটক। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সংকলিত এবং সম্পাদিত
'নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি' পঞ্চদশ খণ্ড, (হরফ প্রকাশনী, ৫ই জানুয়ারি ২০০৭)-এ নিতাই
ঘটক-কৃত সুর অনুসারে স্বরলিপি করা হয়। উল্লেখ্য, সুরান্তরের এই স্বরলিপিটি করেছেন
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
৬. স্বরলিপিকার:
৭.
সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী :
রাগ:
বৃহন্নট-কেদারা।
তাল: একতাল।
পর্যায়: দেশাত্মবোধক গান।
সুরের অঙ্গ:
গ্রহস্বর: