বিজু
এটি ত্রিপুরা, মার্মা, চাকমা এবং তঞ্চংগ্যা ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর নববর্ষ উৎযাপনের অংশ। এদের সম্মিলিত এই উৎসবের নাম
বৈসাবি। নবর্ষ উপলক্ষে ত্রিপুরারা যে উৎসব করে থাকে বৈসু। এর অন্যান্য নাম বৈসুক, বাসুই। মারমাদের অনুষ্ঠানের নাম সাংগ্রাই আর চাকমা এবং তঞ্চংগ্যাদের অনুষ্ঠানের নাম বিজু। এই তিনটি উৎসবের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে তৈরি হয়েছে বৈসাবি (বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু )।

এই উৎসবটির মুখ্য উদ্দেশ্য হল পুরাতন বছরকে বিদায় জানানো এবং নতুন বছরকে সাদরে গ্রহণ করা। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন এবং পহেলা বৈশাখ নিয়ে মোট তিন দিন ধরে বিজু উৎসব চলে। বিজু উৎসবে তিন দিনের আলাদা নাম করণ করা হয়েছে। যেমন
প্রথম দিন ফুল বিজু, দ্বিতীয় দিন মূল বিজু ও তৃতীয় দিন গোজ্যাপোজ্যা।

নদীর ঘাটে ফুল দিয়ে
পানির দেবতা
গোঙামা'র পূজা

ফুল বিজু: এই দিনে ফুল দিয়ে ঘর সাজানো হয়। সূর্যোদয়ের সময় নদীর ঘাটে ফুল দিয়ে পানির দেবতা 'গোঙামা' -কে পূজা দেওয়া হয়। এছাড়া সকল দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে ভক্তি ও শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে কলা পাতায় ফুল ও বাতি প্রজ্জ্বলিত করে নদী, ছড়া, খাল কিংবা পুকুরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত নৈবেদ্যতে থাকে আতপ চাল, ফল-মুল, চিনি বা গুড়। এই দিনে নিকটস্থ বৌদ্ধ বিহার পরিষ্কার করা হয় এবং বুদ্ধমূর্তি স্নান করানো হয়। যুবক-যুবতীরা নদী কিংবা ছড়া থেকে পানি তুলে গ্রামের বুড়ো-বুড়িদের স্নান করায়।

মূল বিজু: এই দিনে ঘরে ঘরে নানাবিধ খাদ্যের আয়োজন করা হয়। এই দিনে বত্রিশ প্রকার সব্জি দিয়ে এক প্রকার খাবার তৈরি করা হয়। এই খাদ্যকে বলা হয় 'পাজন' ৩৬ রকমের পদ দিয়ে প্রকৃত পাজন বানানো হয়। তবে নিতান্তই সকল উপকরণ না পাওয়া গেলে কমপক্ষে ২০টি পদ পাজনে থাকেই। সচারচর পাজন-এর যে সকল , লো বুনো আলু, চিংড়ি মাছ, কাঁচা কাঁঠাল, মটর, ছোলা, সিমের বিচি, কচি বেত, বাঁশের ডগা এবং অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন সব্জি। পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের একে অন্যের ঘরে গিয়ে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা বিনিময় করেন।

গোজ্যাপোজ্যা, এই দিনে নিকট আত্মীয়-স্বজনকে আপ্যায়ন করা হয়। নতুন বছরের শুভ কামনায় বিহারে গিয়ে বুদ্ধের আশীর্বাদ গ্রহণ করা হয় এবং পাড়ার ছোটরা বয়স্কদের কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করে। উৎসবের শেষ দিনটিতে চাকমারা আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠে। আনন্দের উপকরণ হিসাবে  নৃত্যগীত ও মাত্রাধিক মদ্য পান করে করে।

বিজু উৎসবকে সামনে রেখে দুই ধরনের মদ তৈরি করা হয়।
১. দো-চোয়ানি : ভাত পচিয়ে তার রস পাতিত করে এই মদ তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়া দুই বার পরিস্রুত করে এ্যালকোহলের পরিমাণ বাড়ানো হয়। দুই বার পাতন করার কারণে একে দো-চোয়ানি বলে। দো-চোয়ানির রঙ একেবারে পানির মতো স্বচ্ছ হয়ে থাকে। বিন্নি চালের ভাত থেকে মানের দোচায়ানি তৈরি হয়। এতে প্রায় ৭০ -৭৫ ভাগ এ্যালকোহল থাকে।

২.  জগরা বা কাঞ্জি : পচা ভাতের রস থেকে উৎপন্ন মদ। এই মদে ঈষৎ সাদা রঙের হয়। এর স্বাদ অম্লমধুর। এতে অ্যালকোহলের পরিমাণ থাকে খুবই কম। চাকমা'রা একে অনেক সময় 'চাকমা বিয়ার' বলে।


তথ্য নির্দেশক : প্রিয়াঙ্কা চাকমা

 

বহির্সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Khagrachari_District