গণ-আজাদী লীগ
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জুন ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার পর, জুলাই মাসে মুসলিম লীগের বাম-রাজনীতি মনোভাবাপন্ন অল্প কিছু নেতা এবং সমর্থকরা একটি ক্ষুদ্র সংগঠন তৈরি করেন। এই সংগঠনের নাম রাখা হয় গণ-আজাদী লীগ। এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান আহ্বায়ক ছিলেন কমরুদ্দীন আহমেদ। এর প্রথম সভা হয়েছিল জিন্দাবাহার প্রথম গলিতে কমরুদ্দিন আহমেদের বাসায়। এছাড়া এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, তাউদ্দীন আহমেদ, নঈমুদ্দীন, আবুল কাসেম, ফজলুর রহমান, আলী আশরাফ, আব্দুল মুনীম, মোহাম্মদ শওকত আলী, নজমুল করিম, নূরুল হক  প্রমুখ। এই সময় তাঁরা 'আশু দাবী কর্মসূচী আদর্শ' নামে একটি ম্যানিফেস্টো উপস্থাপন করে। এই ম্যনিফেস্টোর ঘোষণায় বলা হয়

'দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের স্বাধীনতা দুইটি পৃথক জিনিষ। বিদেশী শাসন হইতে একটি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করিতে পারে; কিন্তু তাহার অর্থ এই নয় যে, সেই দেশবাসীরা স্বাধীনতা পাইল। রাজনৈতিক স্বাধীনতার কোন মূল্যই নাই, যদি সেই স্বাধীনতা জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়ন না করে; কারণ অর্থনৈতিক মুক্তি ব্যতীত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি সম্ভব নয়। সুতরাং, আমরা স্থির করিয়াছি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমরা সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে থাকিব। এতদুদ্দেশ্যে আমরা দেশবাসীর সম্মূখে আদর্শ ও কর্মসূচী উপস্থিত করিতেছি।

এই ম্যানিফেস্টোটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে প্রকাশিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান পাবলিশিং হাউজ, জুমরাইল লেন ঢাকা থেকে। প্রকাশকের নাম ছিল কমরুদ্দীন আহমেদ, কনভেনার গণ-আজাদী লীগ। এর ইংরেজি সংস্করণও ছাপা হয়েছিল এই বছরের জুলাই মাসে।


এই সময় বাংলা ভাষা রাষ্ট্র ভাষা হবে কিনা সে সব নিয়ে কথা উঠে নি। গণ-আজাদী লীগের সূচনা লগ্নেই দাবি রাখা হয়েছিল বাংলা ভাষা ব্যবহারের। এদের ম্যানিফেস্টোতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল- 'মাতৃভাষার সাহায্যে শিক্ষাদান করিতে হইবে। এতে আরও বলা হয় বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষাকে দেশের যথোপযোগী করিবার জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা করিতে হইবে। বাংলা হইবে পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।'

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়- 'সিভিল লিবার্টি লীগ'।


সূত্র :