আদি তুর্কি শাসন
১২০৬-১২৯০ খ্রিষ্টাব্দ

ঘোর রাজবংশের সুলতান মোহম্মদ ঘোরীর মৃত্যুর আগে, তাঁর ভারতীয় সাম্রাজ্যকে কুতুবুদ্দিন আইবক-কে প্রদান করেন। ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে আততায়ীর হাতে মোহম্মদ ঘোরীর নিহত হন। এই সূত্রে কুতুবুদ্দিন আইবক রাজত্ব লাভ করেন। কিন্তু কুতুব উদ্দীন ঘোর বংশের কেউ ছিলেন না। তিনি ছিলেন ঘোরীর কৃত্দাস। এই কারণে, ঘোরী এবং উত্তরসূরীদের রাজত্বকালকে দাসবংশীয় রাজত্বকাল বলা হয়। অন্যদিকে ঐতিহাসিকরা এই বংশের সুলতানদেরকে 'মামেলুক সুলতান' নামে অভিহিত করে থাকেন। কিন্তু ঘোরীর কাছে আসার পরে কুতুবুদ্দিন আইবক-এর দাসত্ব ছিল না। বরং অন্যান্য সম্ভ্রান্ত লোকের চেয়ে রাজদরবারে তাঁর প্রতিপত্তি ছিল। ঘোরী যখন কুতুবুদ্দিন আইবক-কে তাঁর রাজ্যের উত্তরাধিকার নির্বাচন করেন, তখন তিনি স্বাধীন সুলতানে পরিণত হন। ইলতুৎমিসর আমলে তুর্কি ইলবারি'রা ক্ষমতার শীর্ষস্থান দখল করেন।

১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১২৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন তুর্কি বংশোদ্ভুত সুলতানরা দিল্লীর সিংহাসন অধিকার করে ছিলেন। এই সময়কালের শাসনকে দি তুর্কি শাসন হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। এই শাসনামলের সুলতানদের তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।

নাসিরুদ্দিন মাহমুদ মৃত্যুর সাথে সাথে লতুৎমিস -এর বংশধরদের শাসনকাল শেষ হয়ে যায়। এরপর ১২৬৫ খ্রিষ্টাব্দ ক্ষমতায় আসেন গিয়াসউদ্দিন বলবন। ১২৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর দ্বিতীয় পুত্র বঘরা খাঁকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। কিন্তু বঘরা খাঁ এই দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে, সুলতান মাহমুদের পুত্র কাইখুস্‌রুকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন বলবন-এর মৃত্যুর পর, আমিররা কাইখুস্‌রুকে বাতিল করে বঘরা খাঁ'র পুত্র কায়কোবাদকে সিংহাসনে বসান। কায়কোবাদ ১৮ বৎসর বয়সে রাজত্ব লাভ করেন। তিনি রাজ্য চালনায় অনভিজ্ঞ ছিলেন এবং ইন্দ্রিয়পরায়ণ ছিলেন। ফলে কেন্দ্রীয় শাসন ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় তুর্কি এবং খলজিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বে তুর্কিরা পরাজিত হলে, খলজিরা ক্ষমতা দখল করে। এরা কাবকোবাদকে হত্যা করে এবং তাঁর শিশুপুত্র কায়ুমার্সকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। ১২৯০ খ্রিষ্টাব্দে খলজি নেতা জালালউদ্দিন নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন। জালালউদ্দিনের সূত্রে দিল্লীতে খলজি বংশের রাজত্ব শুরু হয়।


সূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।