প্রসঙ্গ : বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা।


কালের কণ্ঠ
ঢাকা, রবিবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৭, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৩১, ৩০ মে ২০১০

জিয়া ও স্বাধীনতা ঘোষণা
আহমেদ হাসান


সত্তরের দশক পর্যন্ত যে দুজন মানুষ বাংলাদেশের জনগণকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন তাঁদের একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর অন্যজন জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগের ঘোরতর সমর্থকরা আমার সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক পঙ্ক্তিতে অন্য কারো নামের উচ্চারণ তাঁরা পছন্দ করেন না। তাঁদের জন্য বলে রাখি, আমি নিজেও বিশ্বাস করি, এ দুজনের মধ্যে কোনো তুলনা চলে না। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নন, বিশ্বের সর্বকালের সেরা নেতাদের অন্যতম আর জিয়াউর রহমান ভাগ্যের বরপুত্র। তবে আমাদের বেড়ে ওঠার সময় জিয়াউর রহমানের একটি বিশাল প্রভাব ছিল এ দেশের মানুষের ওপর। জিয়াউর রহমানের নামে অনেক গল্পগাথা চালু ছিল। ওই বয়সে তার কতটুকু মিথ আর কতটুকু সত্যি তা বিবেচনা করার বোধবুদ্ধি ছিল না। আমি যে বছর (১৯৭৬) ক্যাডেট কলেজে ঢুকি, জিয়া তখন ক্ষমতায় নবাগত। দেশ থেকে আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী ইতিহাস অন্তর্হিত হয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে জিয়ার পোস্টার। ভালো ছাত্র হিসেবে স্কুলে আমার নাম থাকলেও ক্যাডেট কলেজের বিশাল লাইব্রেরি আমাকে ফাঁকিবাজের তকমা এঁটে দিয়েছে। আমার বন্ধুরা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কালেভদ্রে লাইব্রেরিতে আসে আর আমি বিভিন্ন অজুহাতে লাইব্রেরিতে পড়ে থাকি, ক্লাসের পড়া এগোয় না। সে সময় পত্রিকার বেশ উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে থাকত স্বাধীনতা ঘোষণাসহ জিয়ার আরো অনেক কৃতিত্বের কথা। স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়টি সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। তবে বিভিন্ন প্রচারণার কারণে এ সময়ই আমি প্রথম জিয়াউর রহমান নামটির সঙ্গে পরিচিত হই। তখন থেকে আমার লেখাপড়ার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে ছিলেন জিয়াউর রহমান। ক্যাডেট কলেজ লাইব্রেরিতে পুরনো পত্রিকাগুলো বাঁধাই করা থাকত। এই পত্রিকা ঘাঁটতে গিয়ে আমি ১৯৭২ সালের দৈনিক বাংলার স্বাধীনতা দিবস সংখ্যাটি পেয়ে চমৎকৃত হই। এ সংখ্যায় 'একটি জাতির জন্ম' নামে আমার প্রিয় নেতার একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। লেখাটি এক নিঃশ্বাসে পড়তে গিয়ে আমার নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার অবস্থা। কারণ তিনটি, প্রথমত, জিয়া লিখেছেন, 'এল ১লা মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সারা দেশে শুরু হলো ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলন। দ্বিতীয়ত, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমার কাছে গ্রিন সিগন্যাল বলে মনে হলো। আর তৃতীয়ত, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।'

জিয়ার এই নিবন্ধটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি নতুন দিগন্ত আমার সামনে উন্মোচন করে দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠার সময় সেটা নয়। আমি মনে মনে সেদিন থেকেই বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মেনে নিই। ৭ মার্চের ভাষণটিও আমার কাছে তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যায়। তবে বুঝতে পারি, স্বাধীনতা ঘোষণার প্রসঙ্গটি সঠিক ও তথ্যনির্ভর নয়। কারণ জিয়ার রচনায় এর কোনো উল্লেখই নেই।

সম্ভবত ক্লাস এইটে পড়ার সময় আমি প্রথমবার জিয়াকে দেখি। কোনো একটি কারণে তিনি আমাদের ক্যাডেট কলেজ পরিদর্শনে এসেছিলেন। আমাদের কলেজে ভিআইপিদের স্বাগত জানানোর জন্য ছাত্রদের রাস্তার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা স্বাগতম করতে হতো না। তবে চাটুকারিতা সে সময়ও ছিল। জিয়া আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগে জিয়ার দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা নকল করে দেখাতে বলা হয় উঁচু ক্লাসের একজন বড় ভাইকে। জিয়া খুব সংক্ষিপ্ত একটি ভাষণ দিয়ে বিদায় নেন। আমার কাছে একজন রাষ্ট্রপতিকে চাক্ষুষ দেখার চেয়ে সে ভাষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

জিয়াকে দ্বিতীয়বার দেখি ১৯৭৯ সালের ১ ডিসেম্বর উলশী যদুনাথপুর প্রকল্পের খাল খনন অনুষ্ঠানে (১ ডিসেম্বর তারিখটি আরো একবার তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে ১৯৯৬ সালে। ওই দিন পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়)। জিয়ার খাল খনন কর্মসূচির বিপ্লবের সূচনা এখানেই। প্রতিটি ক্লাসের তিনজন করে ছাত্র পাঠানো হয়েছিল আমাদের কলেজ থেকে। আমাকে কেন পাঠানো হলো, আমি জানি না। কলেজে বাগান করার সময় মাটি কোপানো ছিল আমার জন্য সবচেয়ে বিরক্তির কাজ। খাল কাটার কাজে আগ্রহী হওয়ার কোনো কারণই ছিল না। তবু খালকাটা দলে নিজের নাম দেখে উল্লসিত হলাম।
কারণ এই অজুহাতে অন্তত ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়া হবে। যদুনাথপুর যাওয়ার পর মনটা অন্য রকম হয়ে গেল, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে শুধু নয়, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ জড়ো হয়েছে অনুষ্ঠানে। অনেকের আসার কারণ রাষ্ট্রপতিকে একনজর দেখা। তিনি হেলিকপ্টার থেকে নেমে বেশ খানিকটা পথ হেটে পৌঁছান অনুষ্ঠানে। আমাদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সম্ভবত ক্যাডেট কলেজের ইউনিফর্ম পরে কোদাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এই ড্রেস পরে কাজ করতে পারবে? আমরা ১৮ কিশোর বিপুল উৎসাহে অনেকটা মাটি খুঁড়ে ফেলি। খাল খনন নিয়ে পরবর্তী সময় অনেক সমালোচনা এবং নিষ্ঠুর রসিকতা হয়েছে। তবে অনেক পরিবেশবাদী মনে করেন, খাল খনন কর্মসূচি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে সেচব্যবস্থা নিয়ে কৃষককে দুশ্চিন্তা করতে হতো না।

ততদিনে জিয়ার সুনামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমালোচনাও ডালপালা মেলেছে। সার্কের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে বাংলাদেশের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন করে আগ্রহী হয়ে উঠলেও দেশে অন্তর্ঘাত বেড়েছে। শাহ আজিজুর রহমানের মতো একজন চিহ্নিত রাজাকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় স্বাধীনতাবিরোধীরা ডানা বিস্তার করতে শুরু করেছে। সামরিক বাহিনীতে একের পর এক বিদ্রোহ ঠেকাতে ঠেকাতে নিষ্ঠুর হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন জিয়া। ১৭টি বিদ্রোহ দমনের পর শেষ পর্যন্ত ১৮ বারে তিনি নিহত হলেন ৩০ মে ১৯৮১ সালে।

বিভিন্ন সমালোচনা সত্ত্বেও মৃত্যুর সময় পর্যন্ত যথেষ্ট জনপ্রিয়তা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন জিয়া। এদিকে জিয়ার উত্তরসূরি রাষ্ট্রপতি সাত্তার সেই লগ্নেই বুঝতে পেরেছিলেন বিএনপিতে জিয়ার কোনো বিকল্প নেই। সম্ভবত সেই সময়ের গণ-আবেগকে পুঁজি করে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় খরচে জিয়ার সন্তানদের পড়ালেখার সুযোগ করে দেন এবং রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করে খালেদা জিয়ার নামে দুটি বাড়ি বরাদ্দ করেন। মূলত এ সময় থেকেই বিএনপি নীতিনির্ধারকরা দল ও ব্যক্তিস্বার্থে জিয়াকে ভাঙাতে শুরু করেন। বিভিন্ন মাপের দলছুট নেতার সমন্বয়ে গড়া বিএনপিতে ভাঙন ঠেকাতে একসময় খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে টেনে আনা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার ব্যতিক্রম হওয়াটাই হতো অস্বাভাবিক।

১৯ নভেম্বরের জনসভায় বেগম খালেদা জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষক বিষয় বক্তব্যে আমি বিভ্রান্ত হইনি। মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার অনুসারীদের খোলস বদল আমাকে একটি সরীসৃপের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। জেড ফোর্সের ব্রিগেড মেজর এবং জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহচর অলি আহমদকে দেওয়া একটি পারফরম্যান্স অ্যাপ্রাইজাল (সামরিক বাহিনীতে প্রচলিত
Annual Confidential Report) আমার হাতে এসেছে। তৎকালীন কর্নেল মীর শওকত আলী অলি আহমদ সম্পর্কে লিখেছেন : His achievements during war was commendable- he in fact was the first officer who took risk and on his own initiative informed General Ziaur Rahman regarding declaration of Independence on night 25/26 March, 1971. অর্থাৎ যুদ্ধের সময় তাঁর (অলি আহমদের) অর্জন প্রশংসনীয়। বস্তুত তিনিই (অলি আহমদ) প্রথম অফিসার যিনি একাত্তরের ২৫-২৬ মার্চ মধ্যরাতে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষণার কথা জানিয়েছিলেন।

এই প্রতিবেদনের শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনকারী হিসেবে জিয়াউর রহমান স্বয়ং স্বাক্ষর করেছেন। এরপর স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে আর কোনো সন্দেহ থাকে কি? এই ডকুমেন্টটি দেখার পর আমি বুঝতে পারি, একটি জাতির জন্মে তিনি কেন স্বাধীনতা ঘোষণার কথা লেখেননি। জিয়ার এই পরিমিতি বোধের জন্যই অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও জিয়াকে আমি শ্রদ্ধা করি। আর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের অন্তহীন মিথ্যার বেসাতিই তাদের টেনে এনেছে ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে।
লেখক : প্রাবন্ধিক
ahmedhasan6810@yahoo.com


কালের কণ্ঠ
ঢাকা, শনিবার ৩১ মার্চ ২০১২, ১৭ চৈত্র ১৪১৮, ৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩

জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার কথা জানান অলি
'ভুল ব্যাখ্যা ও অনুবাদের অভিযোগ'
তারিক হোসেন খান
 

অগি্নগর্ভ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সর্বত্র যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার খবর কর্নেল অলি আহমদই জিয়াউর রহমানকে দেন। খোদ জিয়াউর রহমান এবং পরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিএনপির অন্যতম নেতা মীর শওকত আলীও ১৯৭৪ সালে এটি নিশ্চিত করেছেন। সেনাবাহিনীতে থাকাকালে কর্নেল অলির বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের (এসিআর) পঞ্চম পৃষ্ঠায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এখন অবস্থান যা-ই হোক, ২০০৮ সালে প্রকাশিত 'Revolution : Military Personnel and the War of Liberation in Bangladesh' গ্রন্থের ২৫৮ পৃষ্ঠায় অলি আহমদ নিজেই এটি সংযুক্ত করেছেন। এই সংযুক্তির মাধ্যমে তিনি জাতিকে জানাতে চেয়েছেন, কিভাবে বীরত্বের সঙ্গে সে রাতে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে অলি জানান, তাঁর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভুল ব্যাখ্যা ও অনুবাদ করা হচ্ছে।

কালের কণ্ঠের হাতে আসা কর্নেল অলির বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্রিগেড কমান্ডার মীর শওকত আলী নিজে বীরবিক্রম অলি আহমদ সম্পর্কে লিখেছেন-
'He in fact was the first officer who took risk and on his own initiatives informed Gen. Ziaur Rahman regarding declaration of Independence on night 25/26 March 71. যার অর্থ দাঁড়ায়, বস্তুত তিনিই প্রথম কর্মকর্তা যিনি ঝুঁকি নিয়ে নিজ উদ্যোগে একাত্তরের ২৫/২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে অবহিত করেন।' মীর শওকতের এই প্রতিবেদনটি পরবর্তী সিনিয়র অফিসার হিসেবে জিয়াউর রহমান নিজেই সত্যায়িত করেছেন। প্রতিবেদনের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে জিয়াউর রহমানের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে, 'Do you support recommendations''। এর পাশেই জিয়াউর রহমান 'হ্যাঁ' সূচক উত্তর (yes) লিখেছেন। তারপর নিজ হাতের লেখায় অলি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, 'An extremely loyal officer who is very brave and upright. He is very intelligent and full of initiative' (তিনি খুবই অনুগত, সাহসী ও চৌকস অফিসার। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও উদ্যমী)।

জেনারেল জিয়াউর রহমানের নিজ হাতে লেখা ও স্বাক্ষরকৃত এই প্রতিবেদন স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কিত বিএনপির দাবিকে খারিজ করে দেয় বলে মনে করছেন অনেকে। তবে অলি দাবি করেন, মীর শওকতের ইংরেজি লেখার ভুল অনুবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এর সত্যিকার অনুবাদ হলো, তিনি মেজর জিয়াকে অনুরোধ করেন ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার জন্য। তবে অলির এই দাবি খুব একটা যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন অনেকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. খুরশীদা বেগমকে টেলিফোনে মীর শওকতের ইংরেজি লেখাটি পড়ে শুনানো হয়। তিনি বলেন, অলি আহমদের দাবি ঠিক নয়। প্রতিবেদনের অনুবাদটি ঠিক আছে। কেননা মীর শওকতের লেখায়
'Inform' শব্দটি আছে, যার অর্থ তথ্য প্রদান করা; অনুরোধ নয়।

অলি আহমদ তাঁর গ্রন্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য জানিয়েছেন। আর তা হলো, ২৬ মার্চ সকাল ১০টার দিকে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্য ও অফিসাররা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করার জন্য শপথ করেন। সৈন্যরা এই বলে শপথ করেন- 'মাতৃভূমি রক্ষায় আমরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যুদ্ধ করব এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুগত থাকব।' অলির মতে, এই শপথবাক্য পাঠ করান জিয়াউর রহমান। নিজের পিএইচডি থিসিসে (যা পরবর্তী সময়ে গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত) অলি আরো লিখেছেন, ২৬ মার্চ নয়; ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। তিনি জানিয়েছেন, বেলাল মহম্মদসহ কয়েকজন বেতারকর্মী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তাঁকেসহ মেজর জিয়াকে অনুরোধ করেন স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের জন্য।

অলি আহমেদ অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিকের '
Witness to Surrender' গ্রন্থের সূত্র (reference) দিয়েছেন। কিন্তু এই বইয়ে বিবৃত বঙ্গবন্ধু কর্তৃক (আগে রেকর্ডকৃত) স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের বিষয়টি অলি আহমদ তাঁর গ্রন্থের মূল অংশে কোথাও ব্যবহার করেননি। অবশ্য গ্রন্থের পরিশিষ্টে তিনি তা সংযুক্ত করেছেন।

অলির বার্ষিক প্রতিবেদন মীর শওকত আলীর বিশ্বাসযোগ্যতা ও সততাও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কেননা ১৯৭৪ সালে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজ হাতে লিখেছেন, ২৫/২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতা ঘোষণা হওয়ার খবর অলিই জেনারেল জিয়াকে দেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নব্বইয়ের দশকে আবার মীর শওকতই দাবি করেন, 'ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।'


দেখুন : http://www.kalerkantho.com/index.php