মগ
মোঙ্গোলীয় মহাজাতির একটি
শাখা। এরা
বাংলাদেশের বান্দরবান
জেলায় এবং মায়ানমারে বাস করে। বাংলাদেশের মগরা নিজেদেরকে মার্মা নামে অভিহিত করে।
কিন্তু নৃবিজ্ঞানীরা মগদেরকে মার্মা'র জ্ঞাতিগোষ্ঠীর একটি শাখা
হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। মূলত
মার্মা বলতে ব্রহ্মদেশের অধিবাসী বোঝায়। পক্ষান্তরে বাঙালি এবং ইংরেজদের প্রদত্ত
অধিক পরিচিত 'মগ' বলতে তারা ঘৃণাবোধ করে। কারণ বাঙালি এবং ইংরেজদের কাছে
মগরা দস্যু বা লুণ্ঠনকারী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মগদের আগমনকাল ততটা
প্রাচীন নয় বলেই ধারণা করা হয়। কারণ, ব্রহ্মদেশ থেকে আগত আদিবাসীরা চীন ও তিব্বত
থেকে আগত সমগোত্রীয় লোকদের অনেক পরে বাংলাদেশে এসেছে। সম্ভবত ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দের
পরই এরা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাস শুরু করে।
ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে উত্তর ভারতের মগধ থেকে আগত বলে আরাকানী এই জনগোষ্ঠীর নাম অপভ্রংশাকারে মগধ থেকে মগ হয়েছিল। Mc Crindle -এর মতানুসারে, 'গঙ্গার অপর পারে পার্বত্য অঞ্চলে ব্রহ্মদেশীয় মাক্কোকালিঙ্গ নামে এক প্রকারের উপজাতি বাস করে তাদেরকেই মগ বলা হয়। মগদের চেহারাগত বৈশিষ্ট্য বিচার করে স্যার রিজলী বলেন, এদের মধ্যে ৮৪.৫ জন মঙ্গোলীয় আকৃতির লোক দৃষ্ট হয়।
এদের চুল সটান ও কালো। মাথার আকার হয় সাধারণত
গোল। নাক মাঝারি হতে চ্যাপ্টা, তবে নিগ্রোয়েডদের মতো মাংসল নয়। চোখের উপরের পল্লব
ঝুলে থাকে সামনের দিকে। চোখের পাতায় থাকে বিশেষ ধরনের ভাঁজ, যাকে বলা হয়
এপিক্যান্থিক ফোল্ড। নাকের গোড়া অক্ষিকোটর থেকে যথেষ্ট উন্নত
নয়, কিন্তু কপোলতলের হাড় প্রশস্ত ও উন্নত বলে মুখ দেখে মনে হয় সমতল।
মঙ্গোলীয়দের দাড়ি-গোঁফ থাকে না বললেই হয়। চোখ ধূসর বা গাঢ় ধূসর। গায়ের রঙ
পীতাভ বা পীতাভ-বাদামি। দেহাবয়ব দীর্ঘ ও বিস্তৃত হলেও পা খাটো বলে এদের খর্বাকৃতি
দেখায়।
ছেলেমেয়েরা বেশ সৌখিন। মেয়েরা সাজগোছ করতে বেশি পছন্দ করে। মেয়েরা নিজেদের উদ্ভাবিত প্রচুর প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করে। এরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। এদের পূজাপার্বণ যে পুরোহিতের দ্বারা পরিচালিত হয়, তাকে রড়ি বলে। এদের ধর্মগ্রন্থের নাম 'থাদুত্তুয়াং'। মগরা অপর জাতি থেকে স্ত্রী গ্রহণ করে না বটে, কিন্তু তাদের কোনো মেয়ে যদি নিজের ইচ্ছায় ভিন্নজাতি থেকে স্বামী গ্রহণ করে তাহলে সামাজিক আইনে সেটা দোষণীয় বলে বিবেচিত হয় না।
সূত্র :