দুর্জয় পাবনা
বাংলাদেশের পাবনা শহরের কালেক্টর অফিসের পাশে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, পাবনা জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা অবদানের স্মরণে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন. তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুবুর রহমান। ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরের বাজেটে এই স্মৃতিসৌধের জন্য প্রকল্প হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এই অনুমোদন লাভের পর, তৎকালীন জেলা পরিষদ সচিব সৌরীন্দ্র মোহন বর্মা, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি একটি সাধারণ সভা আহ্বান করেন। এই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নকশা আহ্বান করা হয়। বিজ্ঞাপনের সূত্রে ২৪টি নকশা এবং ৩টি মডেল জমা পড়ে। এর ভিতরে ঈশ্বরদী সুগারকেন ইন্স্টিটিউটের ডিপুটি চিফ নিজাম উদ্দিন খানের মডেল চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ ঠকাদার আব্দুল কাদের মণ্টু ও মোসাদ্দেক আলী খান খসরু স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং এই বছরের ৫ই ডিসেম্বর কাজটি শেষ করেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ডিসেম্বর তৎকালীন শাক, টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম  অতিথি হিসেবে এই স্মৃতসৌধটি উদ্বোধন করেন।

এই স্মৃতিসৌধের মূল বেদীটি ২৫ ফুট ব্যাসের। এই বেদীটি ৭টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের প্রতীকচিহ্ন হিসেবে। আর ২৫ ফুট ব্যাস হলো- ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত্রিতে অপরাশেন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকবাহিনী বাঙালি নিধনে নেমেছিল, তারই প্রতীক হিসেবে। শোকের প্রতীক হিসেবে বসানো হয়েছে কালো মার্বেল।

এর দ্বিতীয় বেদীর ব্যাস ১৬ ফুট। এই ১৬ সংখ্যা হলো- বিজয় দিবস অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বরের প্রতীক হিসেবে। এই বেদীর উপরে রয়েছে ৯ ফুট উচ্চতার ৪টি মানব প্রতিকৃতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৯ মাসের প্রতীক হিসেবে এই উচ্চতা রাখা হয়েছে। আর বাংলাদেশে মোট ৪টি মূলনীতির প্রতীক হলো- ৪টি মানবমূর্তি। এই দ্বিতীয় বেদী থেকে ২৬ ফুট স্তম্ভটি হলো- ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রতীক। আর সবার উপরে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের পতাকা।

এর বেদীর গায়ে লেখা আছে পাবনা জেলার ১৪৩ জন শহিদমুক্তিযোদ্ধার নাম। এর ভিতরে রয়েছে পাবনা সদর উপজেলার ৫১জন, ঈশ্বরদী উপজেলার ২৭ জন, আটঘরিয়া উপজেলার ৬ জন, সাঁথিয়া উপজেলার ২৪ জন, ভাঙ্গুড়া উপজেলার ৪ জন, বেড়া উপজেলার ১৫ জন, চাটমোহর উপজেলার ১৩ জন এবং ফরিদপুর উপজেলার ৩ জনের নাম।

এছাড়া পৃথক ৪টি পাথরে উপরে লেখা আছে স্বাধীনতার ঘোষণা, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের অংশ বিশেষ, পাকবাহিনীর আত্মসম্পর্ণের দলিল, এবং রবীন্দ্রনাথে কবিতা-র ৪টি পংক্তি- 'উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ভয় নাই ওরে ভয় নাই/নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।'