গ্লাস টাওয়ার
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা মহানগরী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত বাংলাদেশের
স্বাধীনতার স্মারক স্মৃতিস্তম্ভ। উল্লেখ্য, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উত্তর পাশে
স্থাপিত শিখা চিরন্তন-এর বরাবর দক্ষিণ দিকে এটির অবস্থান। সন্ধ্যা বেলায় কাঁচ
নির্মিত স্তম্ভটি একটি আলোকস্তম্ভে পরিণত হয়। এ থেকে বিচ্ছুরিত শক্তিশালী
বৈদ্যুতিক আলোক রশ্মি চারপাশের আকাশকে আলোময় করে তোলে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তাঁর 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির
সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম', বাক্যই ছিল প্রকৃত পক্ষে স্বাধীনতার
ঘোষণা। এই উদ্যানেই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানী বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ
করেছিল। এছাড়া
পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান এখানেই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন। এখানেই
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বক্তৃতা করেছিলেন। এ সকল
ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে এই স্মারকস্তম্ভটি স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে স্মারকস্তম্ভটি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের
৭ই মার্চ এই স্তম্ভটি স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করা হয় প্রজ্বলন ও মশাল র্যালির
মাধ্যমে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই টাওয়ারের কাজের প্রায় ৬০ ভাগ শেষ
হয়েছিল। পরবর্তী বিএনপি শাসনামলে এই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিন বছর এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার পর ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে পুনরায় এ
প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে প্রকল্প ব্যয় কাটছাঁট করে ১৭১ কোটি টাকার পরিবর্তে ৭৬
কোটি ১২ লাখ ৭১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। স্বাধীনতা স্তম্ভের কাচের টাওয়ারের
উচ্চতা দেড়শ ফুটের স্থলে একশ ফুট করা হয়। এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের শেষ সময়সীমা ধরা
হয় ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে
এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। কিন্তু শেষ
পর্যন্ত টাওয়ার নির্মাণ ছাড়াই প্রকল্পের কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার
পরে গ্লাস টাওয়ার নির্মাণের জন্য নতুন করে ব্যয় নির্ধারণের পাশাপাশি মূল প্রকল্প
নকশা অনুযায়ী এ টাওয়ারের উচ্চতা দেড়শ ফুট নির্ধারণ করা হয়। স্বাধীনতা স্তম্ভ
নির্মাণ প্রকল্পের এ দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৮১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
শেষ পর্যন্ত ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দে এটি সম্পূর্ণ হয়।
এর নকশা করেছিলেন স্থপতি মেরিনা তাবাস্সম ও
কাশেবি মাহাবুব চৌধুরী। ইস্পাতের কাঠামোর ওপর
এই গ্লাস টাওয়ারের দাঁড়িয়ে আছে। স্তম্ভটি চৌকোণা। অনুভূমিক প্রান্তীয় দৈ্র্ঘ্য ১৬
ফুট। মূল স্তম্ভটি একটি উচ্চ চাতালের উপর স্থাপন করা হয়েছে।
এর স্বচ্ছ কাঁচের পাতগুলোকে আলোকময় করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ৪টি ৭০০০ ওয়াট
ক্ষমতার
Kolorjet 7000 white
বাল্ব।
এই চাতালের পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি কৃত্রিম জলাশয়। আর পূর্ব পাশে রয়েছে এর পাশে
রয়েছে ২৭০ ফুট দীর্ঘ 'জনতার দেওয়াল'। এই দেওয়ালে রয়েছে টেরাকোটা। এই
টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ। আর দেওয়ালের পিছনে
রয়েছে ভূগর্ভস্থ স্বাধীনতা যাদুঘরে যাওয়ার সিঁড়ি।