রক্তধারা স্মৃতিসৌধ
বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার মোলহেডের সন্নিকটে স্থাপিত স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে স্থাপিত স্মৃতিসৌধ।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, চাঁদপুর শহরের পশ্চিম প্রান্তে মেঘনা ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কয়েকটি নির্যাতন কেন্দ্র স্থাপন করে। এই সময় নদীপথ বা রেলপথে যারা চাঁদপুরে পৌঁছাতো, তাদের ভিতরে যাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সাহায্যকারী হিসেবে সন্দেহ করা হতো- তাদেরকে এ সব
নির্যাতন কেন্দ্রে আনা হতো। অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করে নদীতে নিক্ষেপ করা হতো। এমন কি অনেককে হাত-পা বেঁধে জীবন্ত, অর্ধমৃত অবস্থাতেই নদীতে ফেলে দেও হতো। এই হত্যাকাণ্ডে বিশেষভাবে সাহায্য করতো- স্থানীয় রাজাকার এবং শান্তিবাহিনীর সদস্যরা।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে, স্থানীয় জনগণ এই সব শহিদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের দাবি তুলেছিল। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণে, তা সম্ভব হয় নি। শেষ পর্যন্ত ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযোদ্ধা ও তরুণ প্রজন্মের  স্থানীয় প্রশাসনের কাছে প্রবলভাবে দাবি করে। এই সূত্রে প্রশাসনের সহযোগিতায় 'রক্তধারা' নির্মিত হয়। এই নির্মাণকাজে বিশেষভাবে সহায়তা করেছিলেন- তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহা। এ স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রক্তধারা'র স্থপতি চঞ্চল কর্মকার। এর একটি স্তম্ভে তিনটি রক্তের ফোঁটার প্রতিকৃতি দিয়ে বোঝানো হয়েছে রক্তের ধারা। টেরাকোটার মুর‍্যালে আঁকা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ সহ, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলীর চিত্র। এই স্মৃতিস্তম্ভে লেখা আছে-

'নরপশুদের হিংস্র থাবায় মৃত্যুকে তুচ্ছ করেছে যারা
এখানে ইতিহাস হয়ে আছে তাঁদের রক্তধারা
এ শুধই স্মরণ নয়
নয় ঋণ পরিশোধ
এখানে অবনত শ্রদ্ধায়
নরপশুদের জানিও ঘৃণা আর ক্রোধ।'