তেরশ্রী স্মৃতিস্তম্ভ
বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে নভেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর
উপজেলার ৩ কিলোমিটারের উত্তরে অন্তর্গত
তেরশ্রী গ্রামে, রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘিরে ফেলে। এরপর
প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে নারকীয় কর্মকাণ্ড চালায় এই গ্রামে। গ্রামের প্রায় অধিকাংশ বাড়ি
পুড়িয়ে দেয় এবং তেরশ্রী এস্টেটের তত্কালীন
জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী, কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
হানাদাররা চলে যাওয়ার পর আশপাশের গ্রামের
লোকজন এসে মৃত দেহগুলো নিয়ে স্থানীয় শ্মশানে ও কবরস্থানে মাটি চাপা দেয়। এলাকাবাসীর
দাবির মুখে ৪১ বছর পর ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে শহিদদের স্মরণে তেরশ্রী গ্রামে নির্মিত হয়
সরকারিভাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি),
তেরশ্রী শহীদ স্মৃতি পরিষদ ও প্রগতিশীল মানুষদের সহযোগিতায় , মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক
মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তা এবং এলজিইডির কারিগরি সহায়তায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। এই স্তম্ভের গায়ে ৩৬ জন শহদের নাম লিপিবদ্ধ
রয়েছে, বাকি ৭জনের নাম জানা যায় নি। জ্ঞাত শহিদরা হলেন- ঘিওর থানার পয়লা ইউনিয়নের তেরশ্রী গ্রামের কালীনারায়ণ প্রসাদ
চৌধুরীর ছেলে তেরশ্রী জমিদার সিধেশ্বরী প্রসাদ রায় চৌধুরী, তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ
আতিয়ার রহমান, সাধন কুমার সরকার, বিপ্লব কুমার সাহা, শচীন্দ্র নাথ গোস্বামী, মাখন
চন্দ্র সরকার, রমজান আলী, মহন্দ্রে দাস, নিতাই চন্দ্র দাস, শ্যামলাল সূত্রধর, জগদীশ
চন্দ্র দাস, যোগেশ সূত্রধর, নারায়ণ সূত্রধর, রামচরণ সূত্রধর, দেলবার আলী, মধাব
দত্ত, যাদব দত্ত, যোগেশ দত্ত, শ্যামাপদ নাগ, মোঃ গেন্দা মিয়া, মোঃ কছিম উদ্দিন, মোঃ
একলাছ মোল্লা, তফিল উদ্দিন, মোঃ ওয়াজ উদ্দিন, সাধু চান দাস, সুখন দাস, সুরেন্দ্র
দাস, যোগেশ চন্দ্র দাস, গৌর চন্দ্র দাস, মনীন্দ্র চন্দ্র দাস, শ্রীমন্ত দাস, প্রান
গোবিন্দ সাহা, যোগেশ ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্র ঘোষ, তজিম উদ্দিন প্রমুখ।
৩০ ফুট ও ১৭ ফুট উচ্চতার দুটি স্তম্ভ মূল বেদির ওপর
দাঁড়ান দৃষ্টিনন্দন নক্সায় নির্মিত হয়েছে এ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি। ঢাকা, মানিকগঞ্জ,
ঘিওর, তেরশ্রী-দৌলতপুর, নাগরপুর, টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের কোলঘেঁষে তেরশ্রী হাই
স্কুল ও তেরশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন তেরশ্রী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম
পাশে এই স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপন করা হয়েছে।