গুগল ম্যাপ দেখার জন্য Shift ধরে, উপরের ছবির উপরে মাউসের ডান বোতাম ক্লিক করুন

আখাউড়া
ব্রাহ্মণবাড়ি জেলার একটি উপজেলা এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। এই জংশনের সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহের সাটে রেল যোগাযোগ রয়েছে। জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২২ কিলোমিটার।

উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা, দক্ষিণে কসবা উপজেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে কসবা, নবীনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা।

অবস্থান : ২৩.৮৮৩৩ ডিগ্রি উত্তর ও ৯১.২১৬৬ পূর্ব। এর আয়তন ৯৯.২৮ বর্গ কিমি।

এই উপজেলাটি পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।  মৌজা সংখ্যা ১০২টি। গ্রামের সংখ্যা ১৩০টি।

প্রধান নদী: পাগলা, হাওড়া। মান্দাইলের বিল উল্লেখযোগ্য।

উপজেলা শহর:  ১০টি মৌজা নিয়ে উপজেলা শহরটি গঠিত। বর্তমানে এটি পৌরসভা। আয়তন ২.৩৫ বর্গ কিমি।

 

ইতিহাস : এই অঞ্চলটি হরিকেল নামক জনপদের অংশ ছিল। কালক্রমে এই অঞ্চলটি ত্রিপুরা রাজ্যের জমিদার মহারাজা বীর বিক্রম রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরের জমিদারের অংশে পরিণত হয়। এই জমিদারের চাকলা রৌশনাবাদ এষ্টেটের মোগড়া রাজকাচারী ও আখাউড়াস্থ তহশীল কাচারীর ছিল বর্তমান আখাউড়া সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। এই কাচারী দুটির মাধ্যমে এই অঞ্চলের জমিদারীর যাবতীয় খাজনাদি আদায়সহ জমিদারী ব্যবস্থা কার্যাদি পরিচালিত হত। মহারাজার জমিদারীর দ্বিতীয় রাজধানী ছিল কুমিল্লা। কুমিল্লার রাজবাড়ীতে যাতায়তের জন্য সে সময় আখাউড়া-আগরতলা সড়ক ব্যবহৃত হতো। এছাড়া আসাম বেঙ্গল রেলপথে চলাচলের জন্য জমিদার সপরিবারে আখাউড়া কাচারীতে অবস্থান করতেন। তিনি এ অঞ্চলের রাধানগরে রাধামাধবের আখড়া, দুর্গাপুরে দুর্গাদেবীর আখড়া, মোগড়া হাওড়া নদীর পাড়ের আখড়া, মনিয়ন্দের আখড়া ইত্যাদি নিজ খরচে নির্মাণ করেছিলেন। সে সময়ে এ অঞ্চলে আখড়ার আধিক্যের কারণে  এটি কালক্রমে আখাউড়া নামে পরিচিতি লাভ করে।  এছাড়া  এটি সে সময়ের পূর্ববঙ্গের প্রবেশদ্বার  বলে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমান আখাউড়া বাংলাদেশের সর্ব পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী  আগরতলা সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত।

ব্রিটিশ আমলে আখাউড়া থেকে প্রচুর পাট সুদূর বিলেতের শিল্পনগরী ডাণ্ডিতে রপ্তানি হতো। ফলে ব্রিটিশ শাসনামলে এই রেলস্টেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

 

ইংরেজ শাসনামলে  আখাউড়া ৫টি কসবা থানার অন্তর্গত ছিল। এই সময় একটি পুলিশ ফাঁড়ির মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হত।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে৪ ২০শে জুনে তারিখে মনিয়ন্দ, ধরখার, মোগড়া, আখাউড়া উত্তর ও  আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে আখাউড়া  থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর এই থানেকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। 

 

নদী : এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য ৫টি নদী রয়েছে। এগুলো হলো

১. তিতাস নদী: এই নদীটি উত্তরে সরাইল উপজেলার আজবপুর নামকস্থান থেকে মেঘনা নদী হতে উৎপত্তি হয়ে সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহাবাজপুর হয়ে আখাউড়াতে প্রবেশ করেছে। এরপর নদীটি ধরখার উজানিসার পেরিয়ে নবীনগর উপজেলার ময়দাগঞ্জ নামক স্থানে পুনরায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে। বর্তমানে নদীটি মৃতপ্রায়।


২. হাওড়া নদী:  এই নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ত্রিপুরা পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে আগরতলার শহরে পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থেকে মোগড়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে গঙ্গাসাগর হয়ে ধরখার ইউনিয়নের উপর দিয়ে উজানিসার নামক স্থানে তিতাস নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে।

৩. বিজনা নদী: এই নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়িয়া অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এই রাজ্যের উপর দিয়ে নদিটি প্রবাহিত হয়ে, ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত এলাকা দিয়ে কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিতাস নদীতে মিলিত হয়।


৪. সাইন্দারা নদী: এই নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় হতে নেমে এসে, রাজ্যের রাজধানী আগরতলার বুক চিরে আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে আখাউড়া পৌর এলাকায় অবস্থিত খড়মপুর মাজার শরীফের সম্মুখ দিয়ে তিতাস নদীতে পতিত হয়েছে।


প্রাচীন নিদর্শনাদি : কেল্লা শহীদ (রঃ) এর দরগাহ, মোগড়ার মঠখোলা, মহারাজের কাচারি, কালীমন্দির। এছাড়া আখাউড়া শহরে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মাদ মোস্তফা কামালের মজার অবস্থিত।

স্বাধীনতা ১৯৭১-এর স্মৃতি


সূত্র :
http://akhaura.brahmanbaria.gov.bd/