আতিয়া মসজিদ
বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন মসজিদ।

বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া নামক গ্রামে লৌহজং নদীর পূর্ব পারে এই মসজিদটি অবস্থিত। টাঙ্গাইল সদর থেকে এর দূরত্ব ৬ কিলোমিটার।

মসজিদটির আদি শিলালিপির অনুরূপ একটি শিলালিপি কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথে আছে। এই শিলালিপি থেকে জানা যায় এর নির্মাণকাল ছিল ১০১৮ হিজরী (১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দ)। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামালে বায়েজীদ খান পন্নীর পুত্র সাইদ খান পন্নী, শাহ বাবা কাশ্মীরির সম্মানার্থে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। উল্লেখ্য শাহ বাবা কাশ্মীরি এই গ্রামে এসেছিলেন এবং তাঁর আগমনের কারণে সে সময়ে আতিয়া গ্রামটির নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। মসজিদটির নির্মাণের সময় পশ্চিম পাশে একটি বড় পুকুর খনন করা হয়েছিল এবং এখনও তা আছে। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে রওশন খাতুন চৌধুরানী এবং ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে আবু আহমদ গজনভী মসজিদটি দু’বার সংস্কার করেন। এর প্রধান গম্বুজটি একবার ধ্বসে পড়েছিল। সম্প্রতি এটি পুনঃনির্মিত হয়েছে।

মসজিদটি লাল ইটে তৈরি এবং এর স্থাপত্য শৈলী অত্যন্ত চমৎকার। এর বহির্ভাগের পরিমাপ ১৮.২৯ মিটার
× ১২.১৯ মিটার। মূল মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকৃতির। এর পূর্ব দিকের মূল প্রবেশপথ বরাবর অপেক্ষাকৃত ছোট তিনটি গম্বুজ আছে। এই গম্বুজ তিনটি মূলত মসজিদের বর্ধিতাংশের আয়তাকার বারান্দার উপর অবস্থিত। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকের এই বারান্দা বরাবর রয়েছে খিলানবিশিষ্ট  তিনটি প্রবেশপথ আছে। মাঝের প্রবেশপথটি অপেক্ষাকৃত উঁচু। এছাড়া দক্ষিণ ও উত্তর দিকে আরও দুটি প্রবেশপথ আছে।

এর চারকোণায় চারটি অষ্টভুজাকৃতির পার্শ্ব বুরুজ আছে। এর প্রধান গম্বুজ খিলানভিত্তিক স্কুইঞ্জ পদ্ধতিতে নির্মিত। এর বুরুকের অধিকাংশ নকশা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পরে সাধারণ পলেস্তার করে মেরামত করা হলেও আগের নকশা আর ফিরে আসে নি।

মসজিদের কিবলা দেয়ালে রয়েছে তিনটি অলঙ্কৃত মেহরাব। এর পিছনের দেওয়াল কিছুটা পিছনের দিকে সম্প্রসারিত। এর পূর্ব ও উত্তর দেয়ালে রয়েছে চমৎকার সব পোড়ামাটির নকশা।  অসংখ্য ফুলের অলঙ্করণের এবং নানা রকম নকশা আতিয়া মসজিদের দেয়ালে লক্ষ্য করা যায়।

এর কার্নিস ধনুক বক্রাকার, এই কারণে একে বাংলার কুঁড়ে ঘরের মতো মনে হয়।  সম্মুখভাগের পাশাপাশি তিনটি গম্বুজ এবং এই ধনুকারা কার্নিস মিলে মসজিদটি নান্দনিক হয়ে উঠেছে। এর বাইরে দেওয়ালে রয়েছে, বাংলার স্থানীয় শিল্পীদের তৈরি অলঙ্কৃত টেরাকোটা।

বাংলাদেশের দশটাকার নোটে এই মসজিদের ছবি রয়েছে।


সূত্র :