আড়িয়াল খাঁ
এটি বাংলাদেশের পদ্মা নদীর একটি শাখা নদ।
১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন ইংরেজ সরকার ঠগি দমনের জন্য আড়িয়াল খাঁ নামক একজন
জমাদার নিযুক্ত করে।
এই সময় ভুবনেশ্বর নদ থেকে একটি
খাল খনন করে পদ্মার দক্ষিণাংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। এই খালটিই কালক্রমে
বিস্তৃত হয়ে প্রাচীন পদ্মা ও ভুবনেশ্বরের কতকাংশ গ্রাস করে নদীতে পরিণত হয়। এই নতুন
খালটির সাধারণ জনগণের কাছে দাঁড়ায় 'আড়িয়াল খাঁ'র নদী' । পরে এর সংক্ষিপ্ত নাম হয়
'আড়িয়াল খাঁ'। উনিশ শতকের শেষ দিক পর্যন্ত আড়িয়াল খাঁ একটি নদই ছিল। পরে
মাদারিপুরের কাছে পলি ভরাট হয়ে আড়িয়াল খাঁ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। বর্তমানে বাঁ
দিকের প্রবাহিত অংশ আড়িয়াল খাঁ। আর ডান দিকের প্রবাহিত অংশের নাম টরকি।
নদটির মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ কিমি। এর
স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার পরিসর ০.৩২ মিটার। প্রস্থ ৩০০ মিটার। নদটির অববাহিকার আয়তন
১৪৩৮ বর্গ কিমি।
এর উৎসস্থল
গোয়ালন্দ থেকে প্রায় ৫১.৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পদ্মা। এখান থেকে এই নদটি ফরিদপুর
ও মাদারীপুর জেলার
মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বরিশালের উত্তর-পূর্ব কোণে তেঁতুলিয়া নদীতে পতিত হয়েছে।
নদটি সারা বছরই নাব্য অবস্থায়
থাকে। তবে মার্চ-এপ্রিল মাসে পানির প্রবাহ কমে যায়। জুলাই-আগস্ট মাসে
প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ঘনমিটার/সেকেন্ড। এ সময় নদে পানির গভীরতা ১২
মিটার পর্যন্ত থাকে। তারপরেও আড়িয়াল খাঁ বিধৌত অঞ্চলে সেচ ও বৃষ্টি উন্নয়নের
লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক আড়িয়াল খাঁ নদী পুনরুজ্জীবন প্রকল্প হাতে
নেয়া হয়েছে।
মাদরীপুর শহরটি এই নদীর তীরে অবস্থিত।
বর্তমানে এই নদের কারণে মাদারীপুর শহর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা
থাকলেও, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক এ শহর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বর্তমানে আড়িয়াল খাঁ নদের সাথে পদ্মা, নড়িয়ার খাল, পালং খাল, ভুবনেশ্বর,
ময়নাকাটা, কুমার, কাইলা, নয়াভাঙনী প্রভৃতি নদ-নদীর সংযোগ রয়েছে। ভাঙনপ্রবণ নদ
হিসেবে এর গতিপথ প্রায় আঁকাবাঁকা। এই নদীর তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো
পিঁয়াজখালী, চৌধুরীহাট, উৎরাইল, দত্তপাড়া, কবিরাজপুর, লতিখোলা, ছবিপুর, মাদারিপুর
পৌরসভা, ঘসেরহাট বন্দর ইত্যাদি।