নাগর নদ
নারদ ঐতিহাসিক নদ। এর মোট তিনটি প্রবাহ।
এর প্রথম প্রবাহ রাজশাহীতে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়টি নাটোরে।
রাজশাহী শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে শাহপুর গ্রামে পদ্মা নদী থেকে এটির
উৎপত্তি। শাহাপুর থেকে কাঁটাখালি, কাপাশিয়া, জামিরা, হলিদাগাছি, মৌগাাছি, পুঠিয়ার
তাতারপুর, বিড়ালদহ, ভাড়রা, কান্দ্রা পীরগাছা হয়ে নাটোরের ভেতর দিয়ে নন্দকুজা নদীতে
পড়েছে। নারদের তৃতীয় প্রবাহটি নাটোরের বাগাতিপাড়ার আটঘোরিয়া গ্রামের নন্দকুজা নদী
থেকে উৎপত্তি লাভ করে ১৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে নাটোরের ধরাইল গ্রামে নারদের
দ্বিতীয় প্রবাহে মিলিত হয়েছে।
এই নদীর রাজশাহীর প্রায় ৩৫ কিলোমিটার প্রবাহ পথে পাঁচটি নীলকুঠি ছিল। বর্তমানে এর
উৎসমুখসহ প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশ সম্পূর্ণ বেদখল হয়ে ফসলি মাঠ ও বিভিন্ন স্থাপনা
নির্মিত হয়েছে। বাকি অংশ এখনো নদীর আদলে মৃতপ্রায়। নদীর এই অংশ স্থানীয়
প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে দিঘিতে রূপান্তর করে মাছ চাষ করছে। মৌগাছি পূর্বপাড়া
গ্রামের আনিসুর রহমান সরকার (৬৬) বলেন, তিনি বাবার কাছে শুনেছেন, এটি এই এলাকার
একটি উল্লেখযোগ্য নৌপথ ছিল।
মৌগাছি পশ্চিমপাড়া পেরিপাটনির ঘাট নামে একটি খেয়াপারাপারের ঘাট ছিল। সন্ধ্যা নদী
নারদের একটি শাখা। এটির উৎসমুখ পুঠিয়া উপজেলার রঘুরামপুর বাগিচাপাড়ায়। পুঠিয়ার
শিবপুর বাজারের পাশ দিয়ে বাঁশপুকুরিয়া, নন্দনপুর হয়ে কান্তার বিলে পতিত হয়েছে।
নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার। এই নদীর ধারে নন্দনপুর গ্রামেই বিখ্যাত সেই
ধনপতি সওদাগরের বসত রয়েছে। মুসা খানের উৎসমুখ বড়াল নদ।
নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রাম থেকে উৎপত্তি লাভ করে নদীটি
রাজশাহীর পুঠিয়ার ঝলমলিয়া, কানাইপাড়া, নাটোরের আগদিঘা ছাতনি হয়ে ত্রিমোহনী নামক
স্থানে এসে গদাই নাম ধারণ করে আত্রাই নদীর সঙ্গে মিশে চলন বিলে পড়েছে। নদী গবেষকদের
ধারণা মুসা খান প্রাকৃতিক কোনো প্রবাহ নয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষে কিংবা সপ্তদশ
শতাব্দীর একেবারে শুরুতে ইশাখাঁর ছেলে মুসা খাঁন বড়াল থেকে নারদ নদের সঙ্গে সহজ
যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সামরিক প্রয়োজনে এটি খনন করেছিলেন। পরে ১৮৩৮ সালের প্লাবনে
এটি নদীর রূপ লাভ করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উৎসমুখ হাঁপানিয়া ও ভাটিতে বাকসর নামক স্থানে দু’টি সস্নুইসগেট
স্থাপন করে। ফলে এর প্রবাহ বিঘ্নিত হয়ে নদীটি ভরাট হয়ে যায়। এরই সুযোগ নিয়ে এখন
মাঝেমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এটি খননের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। নদী গবেষক
মাহবুব সিদ্দিকী জানান, এই সাতটি নদীর হাজার হাজার হেক্টর সরকারি খাস জমি এখনো
দখলমুক্ত রয়েছে। বেদখল হওয়া জমিগুলো উদ্ধার ও খনন করে বর্ষার পানি ধরে কৃষিকাজে
ব্যবহার করা সম্ভব। একই সঙ্গে খুলে দিতে হবে এ নদীগুলোর উৎসমুখ। প্রবাহ ফিরিয়ে দিয়ে
নদীগুলো শাসন করা সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল হান্নান জানান, নদীর যে অংশ লোকজন দখল করে কাগজপত্র
তৈরি করে ফেলেছে সেটা পুনর্দখল করা কঠিন হবে। আর যেটুকু দখলমুক্ত আছে তার উৎসমুখ
খোলা না থাকলে খনন করে লাভ হবে না। তবে বড় নদীগুলোর অংশ বিশেষ খনন করতে পারলেও পানি
ধারণ করে কৃষিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে বড় নদীগুলো খননের জন্য সরকার উদ্যোগ
রয়েছে। ২৫ কিলোমিটার শিব নদী ও সাড়ে ৮ কিলোমিটার মুসাখান নদী খননের জন্য সাড়ে ৩৩
কোটি টাকা বরাদ্দে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়েছে গত অর্থবছরে। চলতি
অর্থবছরে এ খনন কাজ শুরু হতে পারে। এছাড়াও আরো দুইটি নদীর ১৬০ কিলোমিটার খননের জন্য
২৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।