চীনের মহাপ্রাচীর
পৃথিবীর
মধ্যযুগী
সপ্তম আশ্চর্যে একটি।
এটি যে কোনো দেশের বিচারে প্রতিরক্ষা প্রকল্পের অধীনে নির্মিত সর্ববৃহৎ প্রাচীর। এই কারণে একে মহাপ্রাচীর বলা হয়।
১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব মানব
উত্তরাধিকারের তালিকায় এই মহাপ্রাচীরটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
খ্রিষ্টপূর্ব ২২১ অব্দে ছিন রাজবংশের প্রথম রাজা শি হুয়াং তি চীনের ছয়টি রাজ্য (হান, চাও, ওয়েই, ছু, ইয়ান এবং ছি) জয় করে একটি একত্রীভূত শাসন ব্যবস্থার অধীনে আনেন। এই সময় উত্তরাঞ্চলের শাসকদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, তিনি রাজ্যের উত্তর সীমান্ত বরাবর পার্বত্য এলাকায় এই মহাপ্রাচীর তৈরির উদ্যোগ নেন। শি হুয়া তিং এবং তার উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় সম্রাট ৩,০০,ooo লোককে এই মহাপ্রাচীর তৈরিতে নিয়োগ করেছিলেন। এই দুই সম্রাটের সময় এই প্রাচীরের ৫,০০০ কিলোমিটার নির্মিত হয়েছিল। এরপর হান রাজবংশ এই মহাপ্রাচীরকে আরও ১০ হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দেয়। এর পরবর্তী সম্রাটদের প্রায় সবাই এই প্রাচীর খণ্ড খণ্ড বৃদ্ধি করেছে। এইসব প্রাচীর একত্রিত করলে এর দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ৫০,০০০ কিলোমিটার। অবশ্য এর অনেকাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে।
বর্তমানে চীনের মহাপ্রাচীর বলতে মিন রাজবংশ আমলে (১৩৬৮-১৬৪৪) নির্মিত মহাপ্রাচীরকেই বুঝায়। এটা চীনের পশ্চিমাংশের গানসু প্রদেশের চিয়াইউ চোকা থেকে চীনের উত্তর-পূর্ব লিওনিন প্রদেশের য়ালোচিয়াং নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই মহাপ্রাচীর চীনের ৯টি প্রদেশ, শহর, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে এর মোট দৈর্ঘ্য ৭৩০০ কিলোমিটার। প্রতিরক্ষা প্রকল্প হিসেবে এই মহাপ্রাচীর চীনের বহু পাহাড় এবং চীনের কতিপয় মরুভূমি, মালভূমি, জলাভূমি অতিক্রম করে গেছে।
মহাপ্রাচীরের বেশিরভাগ অংশই
আঁকাবাঁকা এবং উচু-নিচু পাহাড়ের ভিতর দিয়ে গেছে। এই প্রাচীর বিভিন্ন পাহাড়কে
সংযুক্তও করেছে। এই মহাপ্রাচীরে ব্যবহার করা হয়েছে বড় বড় ইট আর লম্বা লম্বা পাথর।
এর গড় উচ্চতা প্রায় দশ মিটার। তার প্রস্থ ৪ থেকে ৫ মিটার। যুদ্ধের সময় খাদ্য আর
অস্ত্র সরবরাহের সুবিধার জন্য প্রাচীরে উপরের অংশে সমান পথের সৃষ্টি করা হয়েছিল।
এছাড়া দেওয়ালের ভিতরে উঠা নামার উপযোগী পাথরের সিড়ির পথও আছে। প্রাচীরের কিছু দূর
পর পর টাওয়ার রয়েছে। এ সব টাওয়ারে অস্ত্র, খাদ্য রাখার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া রয়েছে
সৈন্যদের বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা। এছাড়া যুদ্ধের সময় সৈন্যরা এই টাওয়ারগুলোকে ছোটো
বাংকারের মতো ব্যবহার করতে পারতো। প্রয়োজনে টাওয়ারে আগুন বা ধোঁয়া সৃষ্টি করে সতর্ক
সংবাদ জারি করতে পারতো। উল্লেখ্য, আধুনিক যুদ্ধে চীনের প্রাচীর একটি অর্থহীন
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পরিণত হলেও, মানুষের তৈরি বিশাল স্থাপনা হিসাবে একে আশ্চর্য
লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই কারণে বর্তমানে চীনের মহাপ্রাচীর শুধু
ভ্রমণপিপাসুদের তৃপ্তই করে।
সূত্র :