থাং রাজবংশ
ইংরেজি : Tang Dynasty

চীনের একটি রাজবংশ। ৬১৮ খ্রিষ্টাব্দে থেকে ৯০৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই রাজবংশ চীন শাসন করেছে। এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন লি ইউয়ান (Li Yuan)

লি ইউয়ান ছিলেন সুই রাজবংশের রাজ্যের

পূর্ববর্তী সুই রাজবংশের শাসনমালের শেষার্ধে কৃষক বিদ্রোহ ঘটে। এই সুই সাম্রাজ্যের লি ইউয়ান নামক একজন এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা হস্তগত করতে সমর্থ হন। ৬১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাজত্ব লাভ করেন। এই সময় থেকে থাং রাজবংশের শুরু হয়। এই রাজবংশ স্থায়ী হয়েছিল ২৮৯ বছর।

থাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা  লি ইউয়ান আধুনিক শাংজি (Shanxi) অঞ্চলের গভর্নর ছিলেন। ইনি এই অঞ্চলের অন্যতম টাইয়ুয়ান (Taiyuan) নগরীতে ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেন। এই সময় তুর্কি সৈন্য সমৃদ্ধ Göktürks বাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি সাফল্যের সাথে এই তুর্কিবাহিনীকে দমন করতে সক্ষম হন।

এর মৃত্যুর পর, ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পুত্র লি শিমিন রাজত্ব লাভ করেন। ইতিহাসে ইনি থাই জোং (Taizong) নামে পরিচিত। তাঁর আমলে চীনে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে। এই সময় তুর্কীদের পরাজিত করে, থাং রাজ্য উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রসারিত হয়। তাঁর সময়েই সিল্ক রোডের উন্নয়ন ঘটে। ৬৪৯ খ্রিষ্টাব্দে এই সম্রাট মৃত্যবরণ করেন।

সপ্তম শতাব্দীর প্রথমার্ধে থুপো জাতির নেতা সোংজান গাম্পো তিব্বত মালভূমিতে বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং লাসা-তে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন। এই সূত্রে আধিপত্য বিস্তারেরে সূত্রে থাং রাজবংশের সাথে থুপো রাজার বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। তারপরেও থাই জোং রাজকুমারী ওয়েন ছেং-এর সাথে সোংজান গাম্পো-র বিবাহ দেন। ৭১০ খ্রিষ্টাব্দে রাজকন্যা চিন ছেংয়ের সাথেও তিব্বতের রাজার বিবাহ হয়। ফলে উভয় রাজ্যের ভিতর সখ্যতা সৃষ্টি হয় এবং কারিগরী ও সাংস্কৃতিক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে।

সম্রাট গাও জু থাং রাজবংশ স্থাপন করেন, সম্রাট লিসিমিন দশ বছর ধরে সৈন্যবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করে একীকরণের লক্ষ্য অর্জন করেন । সুয়ান উ মেন ঘটনার পর লিসিমিন সিংহাসনে আরোহন করেন । তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় সামন্ততান্ত্রিক সমাজের অভূতপুর্ব সমৃদ্ধি ঘটে । রাজনীতি , অর্থনীতি সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের অগ্রভাগে স্থান অধিকার করে । সম্রাট সিয়ানজঙয়ের শাসনামলে চীন ছিল শক্তিশালি ,জনসাধারন সচছল জীবন যাপন করতেন ।কিন্তু তাঁর রাজত্বকালে আনলুসানের চক্রান্তে দাঙগাহাংগামা সৃষ্ট হওয়ায় থাং রাজবংশ ক্রমশই দুর্বল হতে থাকে ।

  সুই রাজবংশ ও থাং রাজবংশের শাসনামলে সাংবিধানিক গঠনে লক্ষনীয় অগ্রগিত অর্জিত হয় । যেমন , দেশকে তিনটি প্রদেশে বিভক্ত করা হয় এবং ছটি পরিষদ নিয়ে রাজসভা গঠন করা হয় , পরীক্ষার মাধ্যমে রাজকর্মচারী নির্বাচন করা হয় এবং কর আইন প্রনয়ণ করা হয় ,এটা পরবর্তী রাজবংশগুলোর উপরে সুদুরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছে । সুই রাজবংশ ও থাং রাজবংশের রাজত্বকালে অপেক্ষাকৃত উন্মুক্ত নীতি কার্যকরী করা হয় ,বিদেশের সংগে চীনের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ঘনঘন চালানো হয় । সাহিত্যাঙগনে কাব্যসৃস্টির কীর্তি সর্বাপেক্ষা বেশী । থাং রাজবংশের রাজত্বকালের প্রারম্ভে জেন জি আঙ, ঐশ্বর্যময় যুগের লি পাই ও তু ফু , মধ্যভাগের পাই জু ই ও ইউয়ান চেন এবং শেষভাগের লি সাং ইং ও দু মো কাব্যাঙনের প্রতিনিধি । হান ইয়ু ও লিউ জং ইউয়ান প্রাচীনগ্রন্থ প্রচলনের যে প্রয়াস চালিয়েছিলেন পরবর্তীকালের সাহিত্য ও কৃষ্টিতে তার বিরাট প্রভাব পড়েছে । ইয়ান চেন ছিংয়ের লিপিকলা , নিয়ান লি বেন, উ তাও চি ,লি সি সুন আর ওয়াং ওয়ের চিত্রকলা , সংগীত ও নৃত্য এবং গুহা শিল্প যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ছিল । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের চারটি আবিস্কারের মধ্যেকার দুটো আবিস্কার ,অর্থাত মুদ্রন কৌশল ও বারুদের জন্ম হয়েছে এই সময়পর্বে ।

  থাং রাজবংশের শেষভাগে রাজনৈতিক হট্টগোলের সুত্রপাত ঘটে । নিউ চক্র ও লি চক্রের মধ্যকার রেষারেষি এবং খোজাদের যথেচ্ছ ক্ষমতা প্রয়োগের সময়ে একটির পর একটি কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ।অবশেষে যে হুয়াংছাও বিদ্রোহ সংঘটিত হয় তার অন্যতম নেতা জু ওয়েন প্রথমে থাং রাজদরবারের সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করেন ,পরে থাং রাজবংশকে উত্খাত করে সিংহাসন দখল করেন এবং পাঁচ যুগের প্রথম রাজবংশ-- হৌলিয়াং রাজবংশ স্থাপন করেন ।


সূত্র :
চীনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়, পেইচিং। ১৮৮৯:

http://bengali.cri.cn/
http://www.chinahighlights.com/travelguide/china-history/the-tang-dynasty.htm