চীনের নদ-নদী
চীন একটি নদী বহুলদেশ । চীনের নদীর সংখ্যা প্রায় ১৫০০। চীনের স্থলভাগের মোট আয়তনের ৬৪শতাংশ জুড়ে রয়েছে এসকল নদ-নদী। এর ভিতরের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।
ছাংচিয়াং (Cháng
Jiāng)
অন্য নাম ইয়াংজি (Yangtze,
Yangzi)
এটি চীনের দীর্ঘতম
নদী। এর মোট দৈর্ঘ্য ৬৩০০ কিলোমিটার। আফ্রিকার নীল নদী আর দক্ষিণ
আমেরিকার আমাজান নদীর পর ছাংচিয়াং বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম
নদী। তিব্বতের কিংঘাই
হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে চীনের দক্ষিণ-পূর্ব বরাবর অগ্রসর
হয়েছে। এরপর চীনের মধ্যভাগ বরাবর অগ্রসর হয়ে পূর্ব চীন সাগরে পতিত হয়েছে।
কিয়ানটাং নদী (Qiantang
River)
অন্য নাম : প্রথাগতভাবে চীনা ভাষায় এর নাম পিনয়িন (pinyin)
বা কিয়ান নদী (Qian River)।
চীনের আনহুই এবং জিয়াংজি প্রদেশের সীমান্ত থেকে
এই
নদী উৎপন্ন হয়ে জেজিয়াং প্রদেশের রাজধানী জিয়াংগসি শহরের পাশ দিয়ে হাংঝোউ
উপত্যাকা পার হয়ে পূর্ব চীন সাগরে পতিত হয়েছে। জেজিয়াং প্রদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত
এই নদীর নিম্নভাগের নাম ফুচুন। এর দৈর্ঘ্য ৪৫৯ কিলোমিটার।
এর উপনদী পুয়াং এর দৈর্ঘ্য ১৫০ কিলোমিটার। প্রবল বন্যা সৃষ্টিকারী এই নদী লিনপু
নামক স্থানে কিয়ানটাং নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
হুয়াং হো
(Huang He,
Hwang Ho) :
অন্য নাম পীত নদী (Yellow
River )।
এটি চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম
নদী। পশ্চিম চীনের কিংঘাই প্রদেশের বেয়ান হার (Bayan
Har Mountains) পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন
হয়ে চীনের নয়টি প্রদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রায় ৫৪৬৪ কিলোমিটার পথ
অতিক্রম করে বোহাই সাগরে পতিত হয়েছে। ভয়ঙ্কর প্লাবন সৃষ্টিকারী নদীর এক সময় বলা হতো
'চীনের দুঃখ'। বর্তমানে নদী-শাসন প্রক্রিয়ায় এই ভয়ঙ্কর প্লাবনকে অনেকাংশে প্রতিরোধ
করা সম্ভব হয়েছে।
মেকং (Mekong)
উৎপত্তির বিচারে এটি চীনের নদী। কিন্তু আন্তর্জাতিকতার বিচারে এটি ৬টি দেশের নদী। এই দেশগুলো হলো— চীন, মায়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েৎনাম। দৈর্ঘ্যের বিচারে পৃথিবীর ১২তম এবং এশিয়ার ৭ম দীর্ঘ নদী। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪,৩৪০ কিলোমিটার।
এই নদীটি চীনের তিব্বত উপত্যাকা থেকে উৎপন্ন
হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে চীনের য়ুন্নান (Yunnan)
প্রদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর মায়ানমার ও লাউসের সীমান্ত বরাবর ১০০
কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে লাওস-থাইল্যান্ড সীমান্তে প্রবেশ করেছ। এখান থেকে
দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কিছুদূর লাওস-থাইল্যান্ড সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে নদীডি পূর্ব
দিক ঘুরে গেছে। এরপর লাওসের ভিতর দিয়ে ৪০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে পুনরায়
লাওস-থাইল্যান্ড সীমান্তে প্রবেশ করেছে। এরপর কিছুদূর অগ্রসর হয়ে, নদীটি ৮৫০
কিলোমিটার ঘুরে লাউসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েন শহরের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর
দক্ষিণ দিক দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এরপর লাওস সীমান্ত
অতিক্রম করে নদীটি কম্বোডিয়াতে প্রবেশ করেছে। এর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে কম্বোডিয়ার
রাজধানী নমপেন শহরের কাছে টোনলে (Tonle
sap)
সরোবর-নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই সরোবর নদীর সাথে মেকং-এর ঋতুভিত্তিক জল-বিনিময়
ঘটে। যখন টোনলে-এর জলপ্রবাহ বেশি থাকে, তখন টোনলে থেকে মেকং-এ
জলধারা এসে মিলিত হয়। আবার যখন মেকং-এর জলপ্রবাহ বেশি থাকে, তখন মেকং থেকে টোনলে-তে
জলপ্রবাহ হয়। মেকং এবং টোনলের মিলিত স্রোতধারার দক্ষিণ দিক থেকে ব্যাস্যাক (Bassac)
নামক একটি শাখা নদী বের হয়ে ভিয়েৎনামে প্রবেশ করেছে। উত্তর দিক দিয়ে মূল মেকং
নদী কিছুটা ঘুরে ভিয়েৎনামে প্রবেশ করেছে। আর এই দুই নদীর স্রোত ধারা মিলিত হয়ে তৈরি
করেছে মেকং বদ্বীপ। উভয় নদী দক্ষিণ চীন সাগরে পতিত হয়েছে।
ইয়ালোঙ (Yalong)
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের একটি
দীর্ঘ নদী। এর অপর নাম ইয়া-লুঙ। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮২২ মাইল (১,৩২৩ কিলোমিটার)। চীনের
উত্তর-পূর্ব কিংঘাই অঞ্চলের তিব্বত-কিংঘাই অঞ্চলের উচ্চ মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে
সিচুয়ান প্রদেশে ছ্যাংচিয়াং (ইয়াংজি) নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
হেইলুংচিয়াং
নদী উত্তর চীনের বড় নদী। এর মোট দৈর্ঘ্য ৪৩৫০ কিলোমিটার।
এর মধ্যে ৩১০১ কিলোমিটার
চীনের অভ্যন্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । হেইলুংচিয়াং" কথাটির অর্থ কৃষ্ণ ড্রাগনের নদী। এটি প্রকৃতপক্ষে আমুর নদীর চীনা নাম। হেইলুংচিয়াং প্রদেশের দক্ষিণে আছে চিলিন প্রদেশ এবং পশ্চিমে অন্তর্দেশীয় মঙ্গোলিয়া। উত্তরে ও পূর্বে রাশিয়ার সাথে সীমান্ত আছে। আমুর নদী চীন-রুশ উত্তর সীমান্ত নির্ধারণ করেছে।