ভীমবেদাকা গুহা
Bhimbetka rock shelters
ভারত উপমহাদেশের পাথুরে যুগের
গুহাসমূহ। গুহাগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে হিসেবে বিখ্যাত। অনেকে মনে
করেন, পৌরাণিকোত্তর যুগে মহাভারতের দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমের নামানুসারে এই গুহাগুলোর
নামকরণ করা হয়েছিল ভীমবেদক। এর অর্থ ভীমের পীঠস্থান।
বর্তমান ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাইজেন জেলায়
এই গুহাগুলো অবস্থিত। এই গুহাগুলো ভূপালের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে বিন্ধ্যাপর্বত
এবং সাতপুরা পর্বতমালার মাঝখানে অবস্থিত। পুরো এলাকা ঘন জঙ্গলে আবৃত। ১৮৮৮
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই এলাকা পরিচিত ছিল বৌদ্ধ-নিদর্শনের জন্য। পরবর্তীকালে
ভারতীয় গবেষক ভি.এস. বাকঙ্কর ট্রেনে করে ভোপাল
যাওয়ার পথে এই অঞ্চলে স্পেন ও ফ্রান্সে দেখা প্রস্তরক্ষেত্রের অনুরূপ গঠন দেখতে
পান। এরপর ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুরাতাত্ত্বিকদের একটি দল নিয়ে ওই অঞ্চলে
অনুসন্ধান শুরু করেন এবং এখানকার
প্রাগৈতিহাসিক গুহা-বসতি আবিষ্কার করেন।
পরবর্তী সময়ে
ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা এই অঞ্চলে প্রায় ৭৫০টি গুহা আবিষ্কার করেন। এর
ভিতরে ভীমবেদাকা শ্রেণিতে ফেলা হয় ২৪৩টি গুহা এবং ১৭৮টি গুহাকে ফেলা হয় লক্ষ জুয়ার
শ্রেণি। অবশিষ্ট গুহাগুলো অশ্রেণিভুক্ত গুহা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০-৩০ হাজার বৎসরের দিকে,
প্রাচীন প্রস্তরযুগে ভীমবেদাকা অঞ্চলের গুহাগুলোতে বসবাস করতো। এই সময়
গুহাচিত্রশিল্পীরা পাথরের গায়ে বাইসন, বাঘ, হাতি ইত্যাদির ছবি অঙ্কন করেছিল।
এছাড়া ছিল রয়েছে সরু রেখায় মানুষের অবয়ব। এই ছবিতে শিল্পীরা ব্যাবহার করেছিল সবুজ ও
গাঢ় লাল। এই ছবিগুলো আকারে বেশ বড় ছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা এখানে প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরাতন চিত্রটি ৩০ হাজার বছর আগে
আঁকা হয়েছিল।
এর পরবর্তী সময়ের ৬০০০ বৎসরের
ভিতরে অঙ্কিত ছবিগুলো দেখা যায় আকারে তুলনমূলকভাবে ছোটো । তবে শিল্পশৈলীর ছাপ রয়েছে
এসব ছবিতে। ছবির বিষয়বস্তু হিসেবে পাওয়া যায়, পশুপাখি, মানুষ, সামাজিক অনুষ্ঠান
উৎসব। শিকারীদের দেখা যায় বর্শা, লাঠি ও তীর ধনুক। পরবর্তী সময়ের ছবিতে দেখা যায়
লাল, সাদা ও হলুদ রঙের ব্যবহার। এই সকল ছবিতে পাওয়া যায় ঘোড়সওয়ার, ধর্মচিহ্ন,
আলখাল্লা-সদৃশ পোশাক এবং বিভিন্ন সময়ের লিপির নিদর্শন। এছাড়া যক্ষ মূর্তি,
বৃক্ষদেবতা এবং বায়ুরথের ছবি। শেষদিকার ছবিতে পাওয়া যায় রং হিসেবে ম্যাঙ্গানিজ
হেমাটাইট ও কাঠকয়লার সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। এ সকল ছবির বিষয় বস্তু ছিল হাতি,
সম্বর, হরিণ, বাইসন, ময়ুর, সাপ ইত্যাদি। সূত্র: