বৈশালী
প্রাচীন ভারতের একটি নগরী এবং জনপদ বিশেষ। বর্তমানে ভারতের বিহার রাজ্যের একটি জেলা ও প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র।

বৈশালী বৌদ্ধস্তূপ

অনেকের মতে মহাভারতের বিশাল নামক রাজার নাম থেকে, তার রাজধানী এবং রাজ্যের নামকরণ করা হয়েছিল  বৈশালী। খ্রিষ্টীয় ৫ম শতাব্দীর থেরবাদী বৌদ্ধ টীকাকার ও পণ্ডিত বুদ্ধঘোষের মতে, এই শহরটি বিশাল হওয়ার জন্য এই শহরের নামকরণ হয়েছিল ‘বৈশালী’।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে লিচ্ছবি রাজবংশের শাসনামলে, এই জনপদের কেন্দ্রীয় নগরী হিসেবে বৈশালী নগর গড়ে উঠেছিল। পরে এই নগরী লিচ্ছবি রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়।

খ্রিষ্টপূর্ব ৫৩৯ অব্দে বৈশালী প্রজাতন্ত্রের কুণ্ডল গ্রামে জৈনধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীর তীর্থঙ্কর জন্মগ্রহণ করেন। তাই নগরী ছিল জৈনধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র স্থান। এই নগরীতে গৌতমবুদ্ধ ধর্মপ্রচারের জন্য এসেছিলেন। বুদ্ধ যখন বৈশালীতে আসেন তখনই এই নগরী সমৃদ্ধ ও সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত ছিল।  এই শহরে বিনোদনের জন্য ৭৭০৭টি কেন্দ্র ছিল। একই সাথে ছিল পদ্মফুলে ভরা বড় বড় পুকুর।

কথিত আছে যে ক্ষত্রিয় বংশের সাত হাজার সাতশত সাত জন রাজা বৈশালীকে ক্রমান্বয়ে শাসন করেছিলেন। ধনধান্যে পরিপূর্ণ বৈশালীতে হিংসাত্মক তাণ্ডব, বিবাদ-বিসংবাদ বলতে কিছুই ছিল না। এক সময় বৃষ্টির অভাবে শষ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে থাকে। এই সূত্রে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়, সেই তস্করদের উপদ্রবে রাজ্যের শান্তি বিঘ্নিত হতে থাকে। এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের কোনো পথ না পেয়ে রাজা এবং তাঁর অমাত্যবর্গ গৌতম বুদ্ধের পরামর্শের গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। বৈশালীবাসীর পক্ষে মহালি লিচ্ছবির রাজা, পুরোহিত পুত্রকে বিম্বিরারে অবস্থানরত বুদ্ধের কাছে পাঠান। এরপর বুদ্ধ পাঁচশত শিষ্যসহ বৈশালীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কথিত আছে বুদ্ধ বৈশালীতে পৌঁছানোর পর বৃষ্টি শুরু হয়। পরে তাঁর উপস্থিতে রাজ্যের সকল উপদ্রব দূরীভূত হয়। এরপর বুদ্ধ বৈশালী ত্যাগ করেন।
৪৮৩ খ্রিষ্ট-পূর্বাদে গৌতমবুদ্ধ মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ উপদেশ দেন এই নগরীতে। তাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এ নগরী পবিত্র ছিল।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৬ অব্দে রাজা কালাশোক বৈশালী নগরে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বৈশালীতে একটি সুসংরক্ষিত অশোকস্তম্ভ রয়েছে। এই স্তম্ভের শীর্যে একটি মাত্র এশীয় সিংহের মূর্তি দেখা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৩ অব্দে রাজা কালাশোক এখানেই দ্বিতীয় বৌদ্ধ সঙ্গীতির আয়োজন করেছিলেন।

স্বাধীন ভারতে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে মুজফ‌ফর জেলে ভেঙে, বৈশালী জেলা তৈরি করা হয়। বর্তমানে এর আয়তন আয়তন ২,০৩৬ বর্গকিলোমিটার (৭৮৬ বর্গমাইল)। এই জেলাটি বৈশালী জেলা তিনটি মহকুমায় বিভক্ত। এগুলি হল- হাজিপুর, মাহনার ও মহুয়া। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, বৈশালী জেলার জনসংখ্যা ৩,৪৯৫,২৪৯।