বোণ্ডা
ভারতের আদিবাসী নৃগোষ্ঠী। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উড়িষ্যার মালকানগিরি জেলার অরণ্যবেষ্টিত পাহাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এরা বাস করে।

নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে এরা ভারতবর্ষে আগত নেগ্রিটো জনগোষ্ঠীর বংশধর। এদের দেহের আকার ছোট, ত্বক মসৃণ ও কালো, দেহ লোমহীন, চুল কর্কশ কুঞ্চিত এবং গুচ্ছাকার। ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সেন্টিনেলিজ আদিবাসীদের বেশ মিল রয়েছেল  এছাড়া আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলের মাশাইদের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্বভাবে এর বেশ হিংস্র এবং প্রায় নগ্ন-অবস্থায় থাকে।

ভারতে এদের দুটি শ্রেণি রয়েছে। এদের একটি দল থাকে পাহাড়ের শীর্ষদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট উপরে বাস করে।  এদের অপর দলটি থাকে পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার ফুট উপরে। এরা জানালাবিহীন মাটির কুটিরে বাস করে। বাড়ির ছাদ হিসেবে ব্যবহার করে শন বা খড় জাতীয় উপকরণ।

বোণ্ডাদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। এই সমাজে বিয়ের আগে কোনো বৃদ্ধার তত্ত্বাবধানে বিয়ের কনে কোনো নির্জনস্থানে বাস করে। এরপর কনের পছন্দ অনুসারে বিবাহ হয়। নারীরা তাদের চেয়ে ১০-১৫ বৎসরের কমবয়সী ছেলেদের বিবাহ করে। অল্পবয়সী স্বামীর বৃদ্ধা স্ত্রীদের পরিচর্যা করে।

বোণ্ডা পুরুষরা উগ্র ও হিংস্র হয়। বেশির ভাগ সময় এর চোলাই মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় থাকে। বোণ্ডা-পুরুষদের প্রিয় বিষয়- নাচ, গান, শিকার।

বোণ্ডা নারী

বোণ্ডা পুরুষ

বোণ্ডারা বেশ রঙচঙে পোশাক পড়তে ভালোবাসে। সাধারণত পোশাক রঙিন করার জন্য এরা বনজ রঙ ব্যবহার করে। মেয়েরা হাতে, কানে ও গলায় প্রচুর অলঙ্কার পরে। অলঙ্কার তৈরি করার ক্ষেত্রের কাঠ, রূপা ও তামা ব্যবহার করে। মেয়েরা কোমরের নিচে দুই-তিন ইঞ্চি চওড়া কাপড় ঝুলিয়ে রাখে। এই ঝুলন্ত কাপড়ের টুকরাকে বলা হয় ঝিঙ্গা। এই কাপড় এরা নিজেরাই তৈরি করে। ঊর্ধাঙ্গে কোনো কাপড় ব্যবহার করে না। তবে প্রচুর অলঙ্কার দিয়ে ঊর্ধাঙ্গ আবৃত করে রাখে। বোণ্ডা পুরুষরা বিয়ের আগে মালাজাতীয় অলঙ্কার পরিধান করে। বিয়ের পর এরা উর্ধ্বাঙ্গে কাপড় বা অলঙ্কার পড়ে না।  সাধারণত শিশুরা উলঙ্গ থাকে।

এদের দ্রব্যাদির বিনিময় প্রথায় কেনাবেচা হয়। গরুকে এরা সম্পদের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। সাধারণ যার গরু যত বেশি, তার সামাজিক প্রতিপত্তিও বেশি।

বোণ্ডারা মূলত প্রকৃতি পূজারী। তবে সনাতন হিন্দু ধর্মের কিছু কিছু বিশ্বাস এরা বহন করে। এরা মনে করে দণ্ডকারণ্যে রাম-লক্ষ্মণ সাথে সীতার অবস্থানকালে, একদিন সাবেরী নদীতে সীতা নগ্না হয়ে স্নান করছিলেন। বোণ্ডারা লুকিয়ে তা দেখে হাসতে থাকলে, সীতা অভিশাপ দিয়ে বলেন যে- এখন থেকে তাদের নগ্ন ও মুণ্ডিত মস্তকে থাকতে হবে। এই কারণে বোণ্ডারা নগ্ন ও মুণ্ডিত মস্তকে থাকাকে ধর্মীয় আচার হিসেবে মান্য করে।

 

এদের ভাষার নাম রেমো। জাতিগতভাবে এরা নেগ্রিটো হলেও তাদের ভাষা অস্ট্রা-এশিয়াটিক ভাষা পরিবারের মুণ্ডা ভাষার শাখা হিসেব বিবেচনা করা হয়।


সূত্র: