গান্ধি-আরউইন চুক্তি
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে ৫ই মার্চ
মহাত্মা গান্ধী
এবং আরউইনের মধ্যে একটি রাজনৈতিক চুক্তি।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে ২৭শে মে (মঙ্গলবার ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৭) সাইমন কমিশনর রিপোর্ট প্রকাশিত হলে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাইমন কমিশনের রিপোর্ট বিচার বিবেচনার জন্য ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর
(বুধবার ২৬ কার্তিক ১৩৩৭) ভারতের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের একটি বৈঠকের আহ্বান করেন।
এটি ছিল
লণ্ডনে প্রথম ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে গোলটেবিল বৈঠক হয়। এই বৈঠকের
উদ্বোধন করেছিলেন ব্রটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ। বৈঠকটি বসেছিল হাউস অফ লর্ডসে। বৈঠকের
সভাপতিত্ব করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড। কংগ্রেস ব্যতীত
দেশীয় রাজ্যের প্রতিনিধিগণ এই বৈঠকে যোগদান করেছিলেন ।
কংগ্রেসের এই বৈঠক বর্জনের একটি কারণ ছিল। ইতিমধ্যে লবণ
আন্দোলনের সূত্রে
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ (সোমবার ২২ বৈশাখ ১৩৩৭)
মহাত্মা গান্ধীকে
গ্রেফতার করে
বিনা বিচারে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়ে।
এর ফলে সারা দেশে বিক্ষোভ হলে, প্রায় লক্ষাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রফতার করা হয়।
এই কারণে
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বরের এই বৈঠকে জাতীয় কংগ্রেসের কোনো প্রতিনিধি অংশগ্রহণ
করেন নি। তৎকালীন ভারতের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করার ফলে এই বৈঠক
ব্যর্থ হয়ে যায়।
এরপর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড নতূন
করে আলোচনা সভার আয়োজন করেন। তবে তার আগে
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারিতে (সোমবার ১২ মাঘ ১৩৩৭)
মহাত্মা গান্ধীকে
কে
বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়।
এই সময় সরকার
গান্ধীজির
সাথে সমঝোতা করার জন্য লর্ড এডওয়ার্ড আরউইনকে প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ
করে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বড়লাট লর্ড আরউইনের সঙ্গে তাঁর অনেকগুলি
সাক্ষাৎকার ঘটে এবং অবশেষে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে ৫ই মার্চ (২১
ফাল্গুন ১৩৩৭) গান্ধী-আরউইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
গান্ধী-আরউইন চুক্তি মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্তসমূহ:
- সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া
- দমনমূলক আইন ও অর্ডিনান্স প্রত্যাহার করে নেওয়া
- আইন অমান্য আন্দোলনে যাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া
- সরকারের লবণের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করা এবং লবণ তৈরির অনুকূল পরিবেশ থাকলে সেখান থেকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য লবণ তৈরি করতে
দেওয়া
চুক্তি সম্পন্ন হলেও আরউইন
গান্ধীজির দেওয়া
সকল শর্ত মেনে নেয় নি।
বিশেষ করে আরউইন রাজবন্দীদের উপর নির্যাতন বন্ধ করা,
বাজেয়াপ্ত বিষয় সম্পত্তি আন্দোলনকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া
এবং সমুদ্রতীর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসবাসকারী ব্যক্তিদের বিনা শুল্কে লবণ
উৎপাদনের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে আরউইন
আপত্তি তুলেছিলেন। ফলে জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতা
জনস্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে
গান্ধী-আরউইন চুক্তি কংগ্রেসের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা।
এছাড়া কংগ্রেসের অধিকাংশ সমর্থক এই চুক্তিকে প্রহসন মনে করেছিলেন।
তবে
আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ হবার ফলে কংগ্রেসের পক্ষে মুখ রক্ষার উপায় হিসাবে
দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের সিদ্ধান্ত সহ গান্ধি-আরউইন চুক্তি কংগ্রেসে
অনুমোদিত হয়েছিল। এই চুক্তির অপেক্ষাকৃত ভালো দিক ছিল, এই সময়
বহু রাজনৈতিক বন্দী মুক্তি পেয়েছিলেন।