(নৃগোষ্ঠী)
ইংরেজি Karen বা Kayin

কারেন জাতি সত্তা
পাডায়ুং নারী
কারেন জাতির ইতিহাস ও কারেন বিদ্রোহ
কারেন ভাষা

মায়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠী বিশেষ। এরা সিনো-তিব্বতীয় ভাষা-পরিবারের কারেন ভাষা-গোত্রের অন্তর্গত নানা ভাষায় কথা বলে। এই ভাষাভাষীর মানবগোষ্ঠী মায়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে থাইল্যাণ্ডের সীমান্ত বরাবর বসবাস করে। মায়ানমার এবং থাইল্যান্ড মিলে এই জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মায়ানমারের মূল নরগোষ্ঠ বার্মিজদের সাথে সংগ্রাম করেছে। বর্তমানে এরা মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডের উপজাতি (tribe) হিসাবেই পরিচিত। বর্তমানে কারেনদের অধিকাংশই বসবাস করে মায়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তের পার্বত্য এলাকায় এবং মায়ানমারের ইরাবতী নদীসৃষ্ট ব-দ্বীপ এলাকায় এবং থাইল্যান্ডে।

কারেন জাতি সত্তা
জাতিগত সত্তার বিচারে, কারেন গোত্রের ভাষার ভাষাভাষাভাষীর লোককে বুঝায়
। এরা মায়ানমারের রেঙ্গুন বিভাগ, বাগো বিভাগ, মান্দালয় বিভাগ, টানিন্থারয়ি, আয়ারওয়াড্ডি, পূর্ব কারেন প্রদেশ, কায়াহ রাজ্য এবং থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই প্রদেশে বসবাস করে। 

দৈহিক গড়নের বিচারে এরা মঙ্গোলীয়। পিকিং মানবের উত্তরসূরীরার খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের দিকে হিমালয়য়ের পূর্ব-শাখার উভয় উভয় দিকে এই মানবগোষ্ঠী ছড়িয়ে পড়েছিল। এরই একটি শাখা মায়ানমারের অরণ্য সঙ্কুল পার্বত্য এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিল।

কারেন নৃগোষ্ঠীর নানা রকমের গোত্রে বিভাজিত। এই গোত্রগুলো হলো কায়-আহ, গেকো, গেবা, পাডায়ুং, ব্রেস, মানু-মানুস, ইনটালে, ইনবাও, পাকু, শান এবং পাও। এছাড়া গেকো, গেবার এবং পাডায়ুং মতো বড় গোত্রও বেশ কিছু উপগোত্র আছে। এর ভিতর পাডায়ুং গোত্রের নারীরা গলায় পিতলের বলয় ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে সারা বিশ্বে পরিচিত।

পু কারেন (Pwo Karen): এরা দুটি গোত্রে বিভাজিত। এদের ভিতর পূর্ব পু কারেনরা মায়নমারের কায়ইন প্রদেশে এবং থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে। অপর গোত্রটির নাম পশ্চিম পু কারেন। এরা বসবাস করে মায়ানমারের ইরাবতী নদীর ব-দ্বীপ-অঞ্চলে বসবাস করে।

সাদা কারেন (White Karen) : এরা মায়ানমারের পিন্মানা এবং মান্দালয় বিভাগে বসবা করে। এদেরকে পু কারেন এবং স'গাও কারেন থেকে পৃথক গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এদেরকে অনেক সময় কা নিয়াও বলা হয়।

পাকু কারেন (Paku Karen) : এরা মায়নমারের কায়ইন প্রদেশে পূর্বাঞ্চলে এবং টাউঙ্গু, বাগো কায়াহ প্রদেশে বসবাস করে। এদের অধিকাংশই ধর্মান্তরিত ব্যাপিস্ট খ্রিষ্টান।

পাডায়ুং নারী
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ কারেন জনগোষ্ঠীর সাথে বিশেষভাবে পরিচিত, পাডায়ুং গোত্রের নারীদের গলায় পিতলের বলয় ব্যবহারের জন্য। সচিত্র পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল, বিভিন্ন বিশ্বকোষে এদের নিয়ে নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করা হয়। প্রায় সকল মাধ্যমে এদেরকে লম্বা-গলার নারী বা জিরাফ-গলার নারী হিসাবে পরিচয় দেওয়া হয়। সাধারণভাবে কারেন নারী বলতে 'গলায় পিতলের বলয় পরিহিতা' হিসাবে বিবেচনা করা হলেও, সকল কারেন নারী এই বলয় ব্যবহার করে না। মূলত
একমাত্র লাল কারেন (Red Karen) উপগোষ্ঠীর পাডায়ুং (Padaung) গোত্রের নারীরা গলায় পিতলের বলয় পরিধান করে।

দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কারণেও এরা এই বলয় ব্যবহার করে থাকে। এদের দেখলেও দীর্ঘ গলার অধিকারণী মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে এদের গলা লম্বা হয় না। শৈশব থেকে কারেন কন্যারা ভারী পিতলের বলয় ব্যবহার করার ফলে তাদের কাঁধ বরাবর বিস্তৃত কাঁধ ও বক্ষাস্থি সংযোগকারী অস্থি (collar bone) নিচের দিকে নেমে যায়। ফলে সাধারণভাবে এদের দেখলে গলা বড় হয়েছে বলে দৃষ্টিভ্রম হয়।

পাডায়ুং সমাজের লোক গাঁথা অনুসারে জানা যায় সদূর অতীতে কারেন নারীরা বনে-জঙ্গলে জীবিকার সন্ধানে ঘুরে বেড়াতো। এই সময় তাদের অনেকেই বাঘ ঘাড় মটকে হত্যা করতো। এই কারণে তারা এই জাতীয় বলয় ব্যবহার করা শুরু করেছিল। অন্য সূত্রমতে, অনেক সময় কারেন নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে যৌনদাসী হিসাবে বিক্রয় করা হতো। তাদের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে দাস ব্যবসায়ীরা যেন তাদের ধরে না নিয়ে যায়, এ জন্য কারেন নারীরা নিজেদের কুৎসিত করার জন্য গলায় এরূপ দীর্ঘ বলায় পড়তো। কিন্তু অধিকাংশ সমাজতাত্ত্বিকদের অভিমত হলো  কারেন নারীরা সুদূর অতীত থেকে মনে করে আসছে যে, দীর্ঘ গলা নারীর সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে। এই কারণে প্রতিটি কন্যা সন্তানকে শৈশব থেকে গলায় পিতলের বলয় ধারণ করার অভ্যাস করতো। আধুনিক কালের কারণ নারীরাও তা্‌ই মনে করেন। এবং কারেন সমাজে দীর্ঘ গলার অধিকারিণী নারী সবচেয়ে ভালো স্বামী লাভ করে থাকে। অনেক সময় ব্যভিচারের কারণে, শাস্তি স্বরূপ কারেন নারীর গলা থেকে এই বলয় খুলে নেওয়া হয়। তবে কারেন নারীরা অবৈধ যৌনচারিতা থেকে দূরে থাকে। এ ছাড় তারা স্বামীর প্রতি অত্যন্ত বিশ্বস্ত হয়। তাই ব্যভিচার বা তালাকের মতো ঘটনা কারেন সমাজে খুব বেশি দেখা যায় না। তবে আধুনিককালে অনেক কারনে নারী এই বলয় পরে না।

যদিও কারেন নারীদের গলায় পরিহিত উপকরণটি পিতলের বলয় হিসাবে বলা হয়। মূলত আংটি বলতে যেমন বলয় বুঝায়, এই বলয় তেমনটা নয়। পিতলের তৈরি একটি দীর্ঘ নমনীয় দণ্ডকে গলাকে বেষ্টন করে গোলাকার বলয়ের মতো করে রাখা হয়।

কন্যা শিশুদের গলায় ছোটো মাপের বলয় পড়িয়ে অভ্যস্থ করা হয়। প্রতি বৎসর পুরানো বলয় ফেলে দিয়ে নতুন বলয় পড়ানো হয় এবং প্রতি বৎসরই বলয় সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এই বলয় পরার ফলে শিশু কন্যাদের অনেক সময়ই গলায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে বলয় গলায় ধারণ করার কারণে, এই ক্ষতের দাগ স্থায়ীভাবে গলায় বসে যায়। সাধারণত এই বলয়ের সাথে এক টুকরো কাপড় ব্যবহার করা হয়। অবিবাহিত কন্যারা সাধারণত সাদা রঙের কাপড় ব্যবহার করে। বিবাহিতা নারীরা ভিন্ন রঙের কাপড় ব্যবহার করে। আর শিশুরা কোনো ধরনের কাপড়ই ব্যবহার করে না।

আধুনিক সভ্যতার সাথে তারা অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে বিদেশী পর্যটকদের দেখে শুনে। পাডায়ুং গোত্রের নারীদের দেখার জন্য বহু আগে থেকে বিদেশী পর্যটকরা আসে। একই সাথে স্থানীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্যও পর্যটকরা নিয়মিত এই এলাকায় আসে। তাই বহুদিন ধরে এরা পর্যটকদের পথ প্রদর্শক হিসাবে কাজ করে আসছে। মায়ানমারে সামরিক সরকার আসার পর, বহু কারেন পরিবারকে উৎখাত করা হয়েছে। এই সময় মায়নমার সৈন্যরা কারেন পুরুষকে হত্যা করেছে এবং কারেন নারীদের ধর্ষণ করেছে। একই সাথে কারেনদের জমি দখল করেছে এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বিশাল সংখ্যক কারেন থাইল্যান্ডে আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং সেখানেই তারা বসবাস করে। অবশ্য এরও বহু আগে থেকে বহু কারেন থাইল্যান্ডে বসবাস করতো। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কারেনরা এসে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।

কারেন জাতির ইতিহাস ও কারেন বিদ্রোহ
কারেন লোককাহিনী মতে, এদের পূর্বপুরুষরা গোবি মরুঅঞ্চলে বসবাস করতো। সেখান থেকে অনেক আগে এরা মায়ানমারের এসে বসবাস শুরু করে। এরা মূলত মায়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্ত বরাবর পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাস করতো। গোড়ার দিকে এরা শিকার এবং বন্য ফলমুল খেয়ে জীবন ধারণ করতো। পরে এরা চাষাবাদ ও পশুপালনের মতো কাজে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। ব্রিটিশদের মায়ানমারে আসার পর এদের একটি অংশ খ্রিষ্ট-ধর্ম গ্রহণ করে এবং পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠে।

১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সব খ্রিষ্টান কারেনরা
 Karen National Associations (KNA) নামক একটি সংগঠন গড়ে তোলে। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ বার্মা উপনিবেশে প্রথম কারেন নববর্ষকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান মায়ানমার দখল করে নেয়। এই সময় কারেনরা ব্রিটিশদের সমর্ধন করেছিল। এই কারণে এরা জাপানিদের আক্রমণের শিকার হয়। এই সময় কারেন ও বার্মাজদের মধ্যে জাতিগত সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে। ফলে জাপানিদের পাশাপাশি বার্মার স্বাধীনতাকামী দল Burma Independence Army (BIA) বহু কারেনকে হত্যা করে এবং তাদের বহু গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। এই সময় প্রাকযুদ্ধ ক্যাবিনেট মন্ত্রী স পে থা (Saw Pe Tha) এবং তাঁর পরিবার এই আক্রমণের শিকার হয়। এরপর জাপনি সমরনায়ক কর্নেল সুজুকি কেইজি এবং কারেন নেতা সাও থা ডিন-এর মধ্যে এই অত্যাচর বন্ধের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

যুদ্ধের শেষে কারেন সংখ্যা গরিষ্ঠ এলাকাগুলো নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠনের জন্য, কারেন নেতারা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে কারেন নেতা সাও থা ডিন এবং সাও বা উ গাই লণ্ডনে যান। কিন্তু ব্রিটিশরা কারেনদের দাবী অগ্রাহ্য করে। তবে বিশ্বযুদ্ধের শেষে ব্রিটিশরা কারেনদের বিষয়ে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের শেষে যখন ব্রিটিশরা বার্মা ছেড়ে চলে যায়, তখন ব্রিটিশরা কারেনদের স্বপক্ষে কিছু করে যায় নি।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে জানুয়ারিতে বার্মার স্বাধীনতার বিষয়ে লণ্ডনে সভা হয়। পরবর্তী সময়ে প্যাংলোং-এ যখন বার্মা সরকার প্রধান হিসাবে অং সান এবং শান, কচিন ও চিন প্রদেশের নেতাদের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তখন কারেনদের অধিকারের দাবীকে প্রায় অগ্রাহ্য করা হয়। এই সময় কারেন নেতারা শুধু পর্যবেক্ষক হিসাবে সেখানে উপস্থিত ছিল। উল্লেখ্য এই সময় মোন এবং আরাকানদের কোন প্রতিনিধিই সেখানে ছিল না।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে Karen National Union (KNU) প্রতিষ্ঠত হয়। এই সময় কারেন ব্যাপ্টিষ্ট এবং বৌদ্ধ সংগঠন, কারেন কেন্দ্রীয় সংগঠন (Karen Central Organisation (KCO)), কারেন যুব সংগঠন (Karen Youth Organisation (KYO)) থেকে প্রায় ৭০০ প্রতিনিধি নিয়ে কারেন কংগ্রেসের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল রেঙ্গুনের ভিন্টোন মেমোরিয়াল হলে। এই সভা আহুত হয়েছিল মূলত একটি পৃথক কারেন রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য। এর সাথে অন্যান্য বিষয় ছিল বার্মা জাতীয় সংসদে কারেনদের আসন সংখ্যা ২৫% বৃদ্ধ করা, নতুন করে ভাষাগত জাতীয়তা ভিত্তিক লোক গণনা এবং বার্মা সেনাবাহিনীতে নিয়মিত ভাবে কারেন গোষ্ঠী লোক অন্তর্ভুক্ত করা। এই সকল দাবি-দাওয়া ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করলে, ব্রিটিশ সরকার তিন মাস কোনোই উত্তর দেয় নি। এরপর KNU -এর প্রেসিডেন্ট  সাও বা য়ু গভর্নর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল থেকে  পদত্যাগ করেন।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে বার্মা আইনসভার নির্বাচনে  Anti-Fascist People's Freedom League (AFPL) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই সময় এই দলের সামরিক নেতা অং সান মায়ানমারের অস্থায়ী সরকারের প্রধান ছিলেন। এই দলের মাধ্যমেই তিনি মায়ানমারের পূর্ণ স্বাধীনতার ডাক দেন। ১৯৪৭ সালের ১৯শে জুলাই বার্মার স্বাধীনতা-চুক্তি স্বাক্ষরের মাত্র ছয় মাস আগে আততায়ীর গুলিতে অং সান ও তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীসহ নিহত হন। এরপর এই দলের নেতৃত্বে আসেন য়ু নু (U Nu। এই বৎসরের জুলাই মাসেই তৈরি হয়েছিল Karen National Defence Organisation (KNDO)

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে বার্মার স্বাধীনতা বিষয়ক একটি চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে য়ু নু-এর সাথে ব্রিটিশ প্রধনমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এ্যাটেল স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিটি
Nu-Attlee Treaty নামে পরিচিত।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি মাসে বার্মা ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা লাভ করে এবং য়ু নু বার্মার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু এই বৎসরের শেষের দিকে বার্মার সেনাবাহিনীর ভিতর বিভাজন শুরু হয়। এই সময় প্রধান দুই সেনা নায়ক নে উইন (Ne Win) এবং বো যেয়া ( Bo Zeya) প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। প্রধানমন্ত্রী য়ু নু বার্মার সেনাবাহিনীর সেকেন্ড-ইন কমান্ডের দায়িত্ব অর্পণ করেন নে উইন-কে।

এরপর বার্মা সেনাবাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি তারিখে, নে উইননের নেতৃত্বে  Sitwundan (Socialist militia battalions) নামে একটি সেনাদল গঠিত হয়। এরপর সশস্ত্র বাহিনীর (Tatmadaw) চিফ অফ স্টাফ -এর দায়িত্বরত কারেন সেনাপতি জেনারেল স্মিথ ডুন (General Smith Dun)-কে অপসারণ ও বন্দী করা হয়। নতুন চিফ অফ স্টাফ -এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন নে উইন। এই সময় কারেন সৈন্য ও সাধারণ মানুষদের উপর বার্মিজ সেনারা বিমাতাসূলভ আচরণ শুরু করে। ফলে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে গঠিত কারেনদের প্রতিরক্ষামূলক সংগঠন KNDO উজ্জীবিত হয়ে উঠে। কারেন রাইফেল, মিলিটারি পুলিশ ইউনিয়ন এবং KNDO সম্মিলিতভাবে বার্মার কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই যুদ্ধে এই সম্মিলিত বাহিনী দ্রুত রেঙ্গুনের নয় মাইলের ভিতরে চলে আসে। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসের শেষ নাগাদ ১১২ দিন তাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে রাখতে সক্ষম হয়। পরে এই বাহিনী এই অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয়। এরপর সামরিক রসদ এবং খাদ্য সরবরাহ না থাকায়, তারা দক্ষিণ-পূর্ব বার্মায় সরে আসে।

এরপর রেঙ্গুনের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ২০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। বর্তমানে এদের এই সম্মিলিত বাহিনীটি Karen National Liberation Army (KNLA) নামে পরিচিত। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ২০,০০০। কিন্তু বার্মা বাহিনীর ধারাবাহিক আক্রমণে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৪,০০০-এ। এই সময়ের ভিতর বার্মা সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৪ লক্ষ।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে KNLA-এর বৌদ্ধ সৈনিকরা পৃথক হয়ে যায়। এদের এই নতুন দলটির নামকরণ করা হয় Democratic Karen Buddhist Army (DKBA)। এরপর এরা বার্মা সেনা-শাসিত সরকারের সাথে যুদ্ধ-বিরতী চুক্তি করে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে, বার্মা সেনাবাহিনী DKBA -এর সহায়তায় KNLA-এর শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ম্যানের্প্লাউ (কারেন রাজ্যের সদর দফতর) দখল করে নেয়। এই শহরে ছিল কারেন জাতীয় সংগঠন KNU-এর কেন্দ্রীয় অফিস।  ম্যানের্প্লাউ-এর পতনের পর,  KNU-এর সদর দফতর বার্মা-থাইল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত মু আয়ে পু (Mu Aye Pu) -তে সরিয়ে নেওয়া হয়। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের বিবিসি-র পর্তিবেদন থেকে জানা যায়, এই সংঘতের ফলে প্রায় ২ লক্ষ কারেন গৃহচ্যুত হয়েছে। এর ভিতর থাইল্যান্ডের লা টাক প্রদেশে বার্মার কারেন উদ্বাস্তু বসবাস করে।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বার্মিজ সেনাবাহিনী বিভিন্ন কারেন গ্রামে হানা দিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, গৃহদাহ ইত্যাদির মাধ্যমে কারেনদের নিশ্চিহ্ন করার কাজ চালয়ে যাচ্ছে। 

কারেন ভাষা
ভাষা-তাত্ত্বিকদের মতে, কারেন ভাষা
সিনো তিব্বতীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত তিব্বত্তীয়-ব্রুমান উপপরিবারের একটি ভাষা গোত্র। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুসারে এই ভাষা গোত্রের মোট লোকসংখ্যা ছিল ১,৪৮০,০০০ জন্য। এই ভাষগোত্রে ভাষাগুলো সুরাঘাত ভাষা (tonal languages) হিসাবে পরিচিত। এই ভাষায় বার্মিজ বর্ণচিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

এই ভাষা গোত্রের অধীনে রয়েছে মোট ২০টি ভাষা।  এই ভাষাগুলিকে তিনটি শাখায় বিভক্ত। এই শাখাগুলো হলো
পা'ও (Pa'o), পু (Pwo) এবং স'গাও-ব'ঘাই (Sgaw-Bghai )। নিচের ছকে এই ভাষাগোত্রের ভাষগুলোর তালিকা তুলে ধরা হলো।

ভাষা পরিবার উপ-ভাষা পরিবার গোত্র শাখা উপ-শাখা         গণ ভাষা নাম
সিনো তিব্বতীয় ভাষা তিব্বত্তীয়-
ব্রুমান
কারেন পা'ও পা'ও পা'ও পা'ও
      পু পু পু ফ্র্যা পু
পু উত্তরাঞ্চল
পু পশ্চিমাঞ্চল
পু পূর্বাঞ্চল
      স'গাও-
ব'ঘাই
ব'ঘাই পূর্বাঞ্চলীয় লাহ‌্‌টা
কায়্‌আন
          অনির্ধরিত ব'উই
গেকো
          পশ্চিমাঞ্চলীয় গেবা
        ব্রেক ব্রেক  ব্রেক
        কায়-আহ কায়-আহ মানুমানাউ
ইনবাও
ইন্টালে
কায়-আহ পূর্ব
কায়-আহ পশ্চিম
        স' গাও স' গাও পাকু
স'গাও
উইওয়াও
     

অনির্ধারিত

অনির্ধারিত অনির্ধারিত পাকু

সূত্র :
http://www.ethnologue.com/show_language.asp?code=ksw
http://missions.itu.int/~myanmar/tourism/THE%20PADAUNG_files/THE%20PADAUNG.htm
http://www.peoplesoftheworld.org/text?people=Karen
http://www.talesofasia.com/thailand-padaung.htm
http://en.wikipedia.org/wiki/Sino-Tibetan_languages