মারি
প্রাচীন সিরিয়ার একটি সেমেটিক শহর

খ্রিষ্টপূর্ব ২৯০০ অব্দের দিকে ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম তীরে আবু কামাল থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে , দেইর ইজ-জোরের প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এই নগরীটি এই শহরটি গড়ে উঠছিল। রাজবংশীয় রাজ্যের বিচারে মারির রাজতন্ত্রের বিকাশকালকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।

মারির প্রথম রাজ্য
খ্রিষ্টপূর্ব ২৯০০-২৭০০ অব্দের ভিতরে এই স্থানটি দক্ষিণ সুমের এবং লেভান্ট অঞ্চলের মধ্যে ইউফ্রেটিস নদী দিয়ে বাণিজ্যের সংযোগ নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছিল। ইউফ্রেটিসের বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নদীতীর থেকে ১ বা ২ কিলোমিটার দূরে এই নগরী তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া একটি বৃত্তাকার বন্যার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এই বাঁধের 
অভ্যন্তরীণ প্রাচীর ছিল ৬.৭  মিটার পুরু এবং ৮ থেকে ১০ মিটার উঁচু। শহরে প্রবেশের জন্য ছিল একটি ফটক। নগরীরর ভিতরে চলাচলের জন্য প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। বেড়ি বাঁধের ভিতরে বাগান ছিল এবং কারিগরদের বসবাসের জন্য ৩০০ মিটার দীর্ঘ স্থান জুড়ে বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। নদীর জল ব্যবহারের জন্য ঘুরিয়ে পেচিয়ে প্রায় ৭ থেকে ১০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছিল।

শহরের কেন্দ্রে একটি ঢিবি। এই ঠিবি কেন তৈর করা হয়েছিল, তা আনা যায় নি। ৩৪ x২৫ মিটার মাপের একটি অট্টালিকা ছিল। ধারণা করা হয়, এটি ছিল নগরীর প্রশাসনিক ভবন। এটিতে ১২ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ মিটার চওড়া মাপের পাথরের ভিত্তি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় এটি ছিল কোনো কক্ষের ভিত্তি। অজ্ঞাত কারণে এই নগরীটি ২৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নগরটি পরিত্যাক্ত হয়েছিল।

মারির দ্বিতীয় রাজ্য
মারিতে পুনরায় জনবসতি গড়ে উঠেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দের দিকে। দ্বিতীয় রাজ্যের প্রথম রাজা ইকুন শামাশ খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দের দিকে দ্বিতীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

এই সময় নগরীটির প্রাচীন স্থাপনা ও দেওয়ালের কাঠামোর অক্ষুণ্ণ রেখেই নতুন অনেক কিছু যুক্ত করা হয়েছি। আগের ১.৯ কিমি ব্যাস পরিমাপের বাইরের বৃত্তাকার বাঁধটি সংস্কার করে উপরি ভাগে দুই মিটার পুরু প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল। এর ফলে শহর রক্ষাকারী তীরন্দাজদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিতে সক্ষম হয়েছিল।

শহরে অভ্যন্তরীণ নগর কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। নগরীর রাস্তা সংস্কারের পর- উঁচু ভবনগুলো থেকে রাস্তায়  আসার জন্য ভবনের ফটকগুলোকে সংস্কার করা হয়েছিল। এছাড়া বৃষ্টির জলের নিষ্কাশনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

শহরের কেন্দ্র নির্মিত হয়েছিল রাজপ্রাসাদ। পুরোহিতদের সুবিধার্থে এই প্রাসাদটি মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার খননকার্যের সূত্রে দ্বিতীয় রাজ্যের এই নগরটির দুটি স্তরে নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। এই দুটি স্তরের স্থাপত্যসমূহ আক্কাদিয়ান যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব ২৩৩৪ থেকে ২১৪৭ অব্দ) নির্মিত হয়েছিল। এই অনুসন্ধানের মাধ্যেম পাওয়া গেছে একটি অজ্ঞাত দেবতার জন্য নির্মিত মন্দির তথা পবিত্র ঘর। এই মন্দির সংলগ্ন স্থানে পাওয়া গেছে সিংহাসনের ঘর। আর মন্দিরের প্রবেশের জন্য দুটি কাঠের সমন্বিত তিনটি স্তম্ভ।

এই নগরীতে পাওয়া গেছে প্রায় ৬টি মন্দির। ম্যাসিফ রুজ নামক একটি মন্দির। এই মন্দিরের দেবতার নাম জানা যায় নি।

মারির রাজাদের উপাধি ছিল লুগাল। এই রাজাদের ভিতরে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় এবা-দাগনকে। এই রাজার একটি চিঠি প্রাচীন সিরিয়ার এবালা রাজ্যের রাজা ইরকাম দামুর কাছে পাঠানো হয়েছিল। এই চিঠিতে মারির রাজা তার পূর্বসূরিদের এবং তাদের সামরিক অর্জনের কথা উল্লেখ করেছেন। এই চিঠি থেকে জানা মারির দ্বিতীয় রাজা (লুগাল) আনসুদের কথা। এই রাজার রাজত্বকাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ২৪২৩-২৪১৬ অব্দ। কিন্তু এই চিঠিতে আগের দুইজন রাজা- কুন শামাশ  এবং ইকু-শামাগান-এর কথা উল্লেখ করা হয় নি। এই বিচারে মনে হয়, আগের দুইজন রাজা যথার্থ সার্বভৌম রাজ ছিলেন না।

মারির দ্বিতীয় রাজবংশের রাজাদের কালানুক্রমিক তালিকা

আনসুদ তাঁর রাজত্বকালে  ইবালা রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। মারি রাজ্যের ঐতিহ্য অনুসারে এই যুদ্ধ দীর্ঘতর হয়েছিল। এই যুদ্ধে আনসুদ এবালা রাজ্যের বেশকিছু শহর দখল করে নিয়েছিলেন। আনসুদের পরে রাজা সাউম এবালার রাক এবং নিরুপম দখল করেন। পরে এবালার রাজা কুন দামু সাঊমকে পরাজিত করেন।  মারিওর পরবর্তী রাজা ইশতুপ-ইশারএর সাথে এবালার যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। এই সময় এবালার রাজা এনা-দাগানের লেখা একটি চিঠি থেকে, ইশার লালানিয়াম এবং ইমারের এব্লাইট শহরগুলি জয় ও ধ্বংস করার কথা জানা যায়।