হিমবাহ
Glacier
চলমান বরফের স্তূপকে বলা হয় হিমবাহ।
উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বা মেরু ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে শীতকালে প্রচুর বরফ জমা হয়। এ
সকল বরফ গ্রীষ্মকালে পুরোপুরো গলে যেতে পারে না।
ফলে প্রতি বছরই সেখানে পুরানো বরফের উপর নতুন বরফ পড়ে বিশাল বরফক্ষেত্র তৈরি করে এবং
বিশাল বিশাল বর্ফের স্তূপ তৈরি হয়। শুরুর দিকে এই বরফস্তূপগুলো স্থির অবস্থায় থাকে।
কিন্তু এই বরফস্তূপ যখন
মাধ্যাকর্ষণের টানে নিচু স্থানের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তখন
বরফস্তূপের স্থানচ্যুতি ঘটে। বরফস্তূপগুলো চলার সময় এর তলেদেশ নিচের জমাটবদ্ধ
বরফপাতের উপর দিয়ে চলতে থাকে। এর তলদেশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অত্যন্ত পিচ্ছিল হয়ে যায়।
এই অবস্থায় বিশাল বরফস্তূপ চলা শুরু করে। এরূপ চলমান বরফস্তূপকে হিমবাহ বলা হয়।
হিমবাহ শুধু ডাঙ্গাতেই হয় না। গ্রীষ্মকালে মেরু এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে জমাট বরফ গলে
গিয়ে সরোবর বা নদীর সৃষ্টি করে। এই সময় বিশাল বিশাল বরফের স্তূপ পানিতে ভাসতে থাকে
এবং এই বরফস্তূপগুলো পানির স্রোতের সাথে প্রবাহিত হতে থাকে। এই চলমান বরফস্তূপকেও
হিমবাহ বলা হয়। তবে এ সকল হিমবাহকে বলা হয় হিমশৈল
(iceberg)।
কোনো কোনো
সময়
হিমবাহের কোন অংশ আলগা হয়ে ভেঙ্গে পড়ে। একে বলা হয়
হিমানী সম্প্রপাত
(avalanche)।
পার্বত্য এলাকার হিমবাহের ক্ষেত্রে এরূপ ঘটনা প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া মেরু সংলগ্ন
অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে মেরু হ্রদ বা নদীর পাশে জমে থাকা বরফস্তূপ ভেঙে পড়ে। এর ফলে
হিমানী সম্প্রপাত ঘটে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে,
মেরু অঞ্চলে
হিমানী সম্প্রপাতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে
অনেক সময় হিমানী সম্প্রপাতের কারণে প্রাণহানি ও
সম্পদের ধ্বংস সাধিত হয়।
ভূমিতে হিমবাহের গতি নির্ভর করে ভূমির ঢালুর পরিমাণের উপর। ঈষৎ সমতল অঞ্চলের উপর
দিয়ে বরফস্তূপ ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়। পক্ষান্তের পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ অনেক দ্রুত
অগ্রসর হয়। নদী বা সাগরের হিমবাহের গতি নির্ভর করে, সেখানের স্রোতের গতির উপর।
হিমবাহ সৃষ্টির পিছনে ভূবিজ্ঞানীরা বিশেষ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে
থাকেন। যেমন-
১. বিশাল কোনো বরফস্তূপের তলদেশের বরফে যখন অন্য বস্তুর সূক্ষ্ণ কণা মিশ্রিত থাকে, তখন বরফস্তূপটি সুস্থির কোনো ভিত্তি পায় না। কারণ এ সকল বর্ফস্তূপের নিচে একটি ক্ষয়িষ্ণু স্তর তৈরি করে। বরফস্তূপের বিপুল ভারের কারণে এর ভিত্তি থেকে বিচ্যুত হয়। আর একবার বিচ্যুতির কারণে বরফস্তূপ সামান্য চলমান দশায় চলে গেলে, তাকে থামানো যায় না। বিপুল ভরবেগের কারণে এর গতি সচল দশায় থেকে যায়। সাধারণত কোনো উপত্যাকায় জমে থাকা বরফস্তূপে এরূপ ঘটনা ঘটে। এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলের পানির ভিতরে নানা ধরনের খণিজ কণা, পাথরের সূক্ষ্ণ কণা থাকে। এই পানি জমাট বেঁধে প্রথমে সমতল ক্ষেত্র তৈরি করে। এরপর তুষারপাতের ফলে, ওই ক্ষেত্রে উপর বিশাল বরফের স্তূপ তৈরি হয়। ফলে এই বরফস্তূপ অনিবার্যভাবে হিমবাহ তৈরি করে।
২. ভূমিকম্প বা বিপুল বর্স্তূপের ভরের কারণে, এর তলদেশের শিলার বিচ্যুতি ঘটে। এই অবস্থায় স্তূপীকৃত বরফের স্থানচ্যুতি ঘটে। এর ফলে হিমবাহের সৃষ্টি হয়।
৩. উচ্চভূমির বরফস্তূপের কোনো কোনো অংশ এমনভাবে সৃষ্টি হয়, যাদের তলদেশে উপযুক্ত ভিত্তি থাকে না। ফলে ওই অংশ হিমানী সম্প্রপাতের দ্বারা নিচে নেমে আসে। অল্প উঁচু থেকে ভেঙে পরা এই বরফস্তূপ কোনো সমতল বা ঈষৎ ঢালু এলাকায় পতিত হলে, তা হিমবাহে পরিণত হয়।
সূত্র :
http://en.wikipedia.org