খরা
ইংরেজি : Drought।
দীর্ঘকালীন শুষ্ক আবহাওয়া ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্টি
এক প্রকার সংকটময় প্রাকৃতিক অবস্থা। কোনো অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের চেয়ে বাষ্পীভবন
ও প্রস্বেদনের পরিমাণ অনেক বেশি হলে খরার সৃষ্টি হয়। অনাবৃষ্টির কারণে খরা-পীড়িত
অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কারণে, স্থানীয় জলাশয়গুলো শুকিয়ে যায়। এই সূত্রে
নদীপ্রবাহ হ্রাস পায় এবং ভূগর্ভস্থ জলস্তর নিচে নেমে যায়। তীব্র দাবদাহের ফলে
মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে শুকনো কঠিন মাটিতে পরিণত হয়। অনেক ক্ষেত্রে শুকিয়ে যাওয়া
এঁটেল ভূমির উপরিভাগে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। অন্যদিকে বালি মাটি প্রচুর ধুলার সৃষ্টি
করে। উভয় ক্ষেত্রেই ফসল উৎপাদন অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে খরার সময়
চাষাবাদ ও পশুপালনের মতো কাজের পাশাপাশি খাবার পানি সংগ্রহ করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
কোনো অঞ্চলের দীর্ঘকাল ব্যাপী অনুষ্ঠিত খরার কারণে, ওই অঞ্চল ক্রমে ক্রমে ভূমি
বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে ওই অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়। আফ্রিকার কালাহার
এবং সাহারা মরুভূমি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
আবহাওয়াবিজ্ঞানীদের মতে খরাকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এই ভাগ তিনটি হলো—
১৯৪৯ থেকে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে কখনও সারা দেশে একযোগে খরা দেখা দেয় নি। ১৯৫১, ১৯৫৭, ১৯৫৮, ১৯৬১, ১৯৬৬, ১৯৭২ এবং ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে যথাক্রমে দেশের ৩১.৬৩, ৪৬.৫৪, ৩৭.৪৭, ২২.৩৯, ১৮.৪২, ৪২.৪৮ এবং ৪২.০৪ শতাংশ অঞ্চল খরা আক্রান্ত ছিল। বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ প্রায় ২০ বার খরা কবলিত হয়েছে। ১৯৯৪-৯৫ খ্রিষ্টাব্দের খরা এবং ১৯৯৫-৯৬ খরারা ফলে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান ও পাট মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। পৃথিবীর অনেক দীর্ঘকালীন অংশের খরা জন্য দুর্ভিক্ষ দেখা যায়। ১৯৫৫ এবং ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে এরকম একটি ভয়াবহ খরার কবলে পড়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অংশে।
![]() |
খরা কবলিত অঞ্চলের এঁটেল মাটি |
বাংলাদেশের আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশের খরাজে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। এই ভাগ তিনটি হলো
- রবি খরা (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি/ অগ্রহয়ন-ফাল্গুন)
- প্রাক খরিপ খরা (মার্চ-জুন/ চৈত্র- আষাঢ়)
- খরিপ খরা (জুলাই-অক্টোবর/ শ্রাবণ-কার্তিক) বা আমন খরা
খরা প্রতিরোধের প্রধান উপাদন হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ। কোনো অঞ্চলের গাছপালা যদি ব্যাপকভাবে বিনষ্ট করা হয় বা কোনো কারণে হয়ে যায়, তাহালে ওই অঞ্চলে খরা একটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টি বৃষ্টি এবং বৃক্ষ পরস্পরের পরিপূরক। প্রচুর গাছ থাকলে বৃষ্টিপাতও প্রচুর হবে এবং মাটির আর্দ্রতা নষ্ট হবে না। ফলে খরা প্রাকৃতিকভাবে প্রতিহত হবে। পক্ষান্তরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে, জীবিত গাছ মারা যাবে, নতুন গাছ জন্মাবে না এবং দীর্ঘকালের খরা কোনো অঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করবে।