ভূমিকম্প
আক্ষরিক অর্থে ভূমিকম্প (Earthquake) হলো ভূমির কম্পন। ভূতত্ত্বে ভূমিকম্পের ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে, ভূ-অভ্যন্তরে ভূ-পাতের ধাক্কার কারণে, ভূত্বকের উপরিভাগে যে কম্পন অনুভূত হয়, তাই ভূমিকম্প। এটি হতে পারে পৃথিবী বা অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে। এক্ষেত্রে ভূ-পাতের ধাক্কার স্থলকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয়। পৃথিবীতে সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিলোমিটারে মধ্যে ভূকম্পন তৈরি হয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো ৭০০ মিটার গভীরে গুরুমণ্ডলে এই কম্পনের সৃষ্টি হতে পারে। এই কেন্দ্রবিন্দুতে কম্পনের মাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি। ভূকম্পনের কেন্দ্রস্থল থেকে কম্পন তরঙ্গাকারে এবং বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে । কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে ভূকম্পন সঞ্চালিত হওয়ার সময় কম্পনের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের পরে, ভূম্পন অনুভূত হয় না।

ভূমিকম্পের তীব্রতাজ্ঞাপক পরিমাপক হলো রিখটার স্কেল। মার্কিন পদার্থবিদ চার্লস ফ্রান্সিস রিখটার (১৯০০-১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ) ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি এই স্কেল আবিষ্কার করেন। পরে এই বিজ্ঞানীর নামানুসারে স্কেলটির নামকরণ করা হয় 'রিখটার স্কেল'।

পাতসঞ্চালনজনিত সংঘাতের কারণে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে উৎপন্ন বা সঞ্চিত শক্তির মুক্তি ঘটে। এর ফলে যে তরঙ্গ উৎপন্ন উৎপন্ন হয়, তাকে সিসমিক তরঙ্গ বলে। এই তরঙ্গ ভূস্তরের ভিতর দিয়ে বহুদূর সঞ্চালিত হয়। সিসমোমিটার নামক একটি যন্ত্রের সাহায্যে এই বিশেষ ধরনের তরঙ্গের বিস্তার পরিমাপ করা হয়। সিসমোমিটারে ধারণকৃত তরঙ্গ বিস্তারের পরিমাপের অনুপাতকে রিখটার স্কেলে ১০ভিত্তিক লগারিদমে প্রকাশ করা হয়। ১০ভিত্তিক লগারিদমে প্রকাশের অর্থ হলো এই স্কেলের প্রতি এককের পার্থক্য ১০। অর্থাৎ রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের চেয়ে একই স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী। প্রকৃত অর্থে রিখটার স্কেলের কোনো ঊর্ধ্বসীমা না থাকলেও সাধারণভাবে বোঝানোর জন্য এতে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা ব্যবহৃত হয়।

ভূকম্পনের তীব্রতার হেরফেরে ভূত্বকের উপরিভাগে নানা ধরণের প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটে। কম্পনের তীব্রতায়, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে, মাটির পাহাড়ে ধ্বস নামতে পারে। পাথুরে পাহাড় থেকে পাথরের পতন ঘটতে পারে। সমতল ভূমির উত্থান বা দেবে যেতে পারে। এই জাতীয় পরিবর্তনে ভূত্বকের উপরি তলে জীবজগতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এই বিপর্যয়ের তীব্রতাকে মানুষ ধ্বংসযজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। কারণ এর ফলে প্রচুর প্রাণহানি ঘটে। একসাথে মানুষের বসতবাড়ি-সহ সকল স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

নিচে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ১০টি ভূমিকম্পনের তালিকা দেওয়া হলো।