বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ
যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের
সময় মুখবিবরে সরাসরি কোথাও না কোথাও বাধা প্রাপ্ত হয়,
সে সকল
ধ্বনিকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলা হয়। কোন
স্বরধ্বনি যুক্ত না
করে,
ব্যঞ্জনধ্বনি পৃথকভাবে
সরাসরি উচ্চারণ করা যায় না। বাংলাতে এর সাথে অ ধ্বনি যুক্ত করে
উচ্চারণযোগ্য করা হয়। যেমন : ক্ খ্ গ্ ইত্যাদি।
পৃথকভাবে
উচ্চারণযোগ্য নয়, কিন্তু এর সাথে অ ধ্বনি যুক্ত করে ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো উচ্চারণ করা
হয়।
এই
ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলো লিখার জন্য যে চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হয়, তার প্রত্যেকটিকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলা
হয়। এগুলো হলো―
ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঠ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, য়, র, ল, শ, ষ, স, হ,
ড়, ঢ়, ং, ঃ,
ঁ।
প্রচলিত ব্যাকরণ বইগুলোতে ৎ-কে
পৃথক ধ্বনি হিসাবে বিবেচনা করে ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ধরা হয়
৩৯টি।
প্রকৃতপক্ষে ৎ পৃথক কোন ধ্বনি নয়। এটি ত-এর রুদ্ধ
ধ্বনি-সঙ্কেত মাত্র। উল্লেখ্য বর্তমানে ইউনিকোডে-ও ৎ-কে পৃথক সঙ্কেতের অধীনে আনা
হয়েছে।
বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনির ধ্বনিস্থান অনুসারে উচ্চারণ প্রকৃতি
উচ্চারণের প্রকৃতি ও স্থান অনুসারে বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকে কয়েকটি গোত্রে
বিভাজিত করা হয়ে থাকে।
এই ভাগগুলো হলো―
বর্গীয়ধ্বনি
:
বাংলা ভাষার প্রাচীন ব্যাকরণবিদরা এই বর্গগুলোর সাথে
উচ্চারণস্থান যুক্ত করে এর ভিন্নতর নাম দিয়েছিলেন এবং আজও তা অনেকেই নিষ্ঠার
সাথে অনুসরণ করে চলেছেন।
গোড়া থেকেই পাণিনির সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণ করায়, বর্গের এই
উচ্চারণস্থান ভিত্তিক নামকরণটি বাংলাতে অবিকৃতভাবেই স্থান লাভ করেছে।
কিন্তু অন্ধের মতো সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণ করে, আমাদের কতটা যে
অসত্যের দিকে পরিচালিত করা হয়েছে, তা একটু বিবেচনা করলেই বিষয়টি উপলব্ধি করা
যায়।
উল্লেখ্য পাণিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দের দিকের ব্যাকরণবিদ।
সেই সময়ে সংস্কৃত ভাষার উচ্চারণ রীতি যেমনটা ছিল, সে সূত্রে
পাণিনির মতামত হয়তো ঠিকই ছিল।
কিন্তু প্রাকৃত ভাষার দীর্ঘ ক্রমবিবর্তনের ধারায়, পাণিনির
সংস্কৃতের সাথে বাংলা ধ্বনির গড়মিল হওয়াটাই স্বাভাবিক।
বর্তমানে যাঁরা সংস্কৃত চর্চা করেন, তাঁদের সংস্কৃত উচ্চারণ
হয়তো কিছুটা বিকৃত হয়েছে, কিন্তু এই উচ্চারণও যে আধুনিক কালের প্রমিত বাংলার
মতো নয়, তা কিন্তু বুঝা যায়।
বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের প্রথম
২৫টি বর্ণকে (ক থেকে ম) উচ্চারণের প্রকৃতি অনুসারে ৫টি বর্গে ভাগ করা হয়েছে। এই
পাঁচটি বর্গের প্রথম বর্ণানুসার বর্গের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন―
উল্লেখ্য
ধ্বনি-প্রকৃতি অনুসারে এই ২৫টি বর্ণই
প্রতিহত ধ্বনি
বা স্পর্শ ধ্বনি।
এছাড়া
পার্শ্বিক ধ্বনি: ফুসফুস থেকে আগত বাতাস মুখবিবর দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময়,
জিহ্বার অগ্রভাগ তালু অংশের দিকে স্পর্শ করে বাধা প্রদান করলে, বাতাস জিহ্বার
দুই পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
এই সময় হঠাৎ করে জিহ্বার ডগা উপরের অংশ থেকে সরিয়ে নিলে যে
ধ্বনির সৃষ্টি হয়, তাকেই পার্শ্বিক ধ্বনি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাতে এই জাতীয় ধ্বনি হলো ল।
এটি তরল ধ্বনি নামেও চিহ্নিত করা হয়।
বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ অ-কার ব্যতীত স্বরবর্ণের অন্যান্য কারচিহ্নের সাথে বসে। এছাড়া দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনবর্ণ একত্রিত হয়ে যুক্ত বর্ণ তৈরি করে।
দেখুন : যুক্তব্যঞ্জন বর্ণ ও তালিকা